ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার ৭০ বছরের বৃদ্ধা মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ মুক্তিযুদ্ধে রনাঙ্গনে যুদ্ধ করেছেন। এবারে তার যুদ্ধ- করোনার সাথে।
বলছিলেন, জীবনে প্রথমবার নিজ বাড়িতে থেকেও যেনো বাড়িতে নেই, এমন পরিবেশে ঈদ করছি। নিয়মিত নামাজ পড়ি অথচ আজ আমি ঈদের নামাজই পড়তে পারিনি। জানালা দিয়ে দেখি; মানুষ কোরবানি নিয়ে কতো ব্যস্ত সময় পার করছে। এমন সময় আসবে ভাবিনি কখনো। এখন সৃষ্টিকর্তাকে ডাকছি। তিনি যেনো আমার ও দেশের মানুষের উপর রহম করেন।
কেমন ঈদ কাটছে করোনায় কোয়ারেন্টাইনে থাকা রোগীদের- তা জানতে দ্য বিজনেস স্টেন্ডার্ড কথা বলেছে ময়মনসিংহ জেলার কয়েকজন করোনা রোগীর সাথে। তাদেরই একজন ত্রিশাল উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ।
টেলিফোনে জানান, একটি রুমে বন্দি তার ঈদ। সকাল থেকে মানসিকভাবে বিপর্যস্থ তিনি। পাশাপাশি আছি অথচ সন্তানদের ঈদের দিন একটু আদরও করতে পারছিনা। আজ কতো ব্যস্ততা থাকার কথা ছিল। স্বজন ও বন্ধুরা এখন ফোন দিচ্ছে, খোজ খবর নিচ্ছে- এটাই একমাত্র যোগাযোগ বা ঈদ আনন্দ।
ভালুকা উপজেলার মরিয়ম বেগম জানান তিনি ও তার স্বামী মোহাম্মদ আবু তালিব করোনা আক্রান্ত। বাড়িতেই কোয়ারেন্টাইনে আছেন তারা। স্বামীর শরীর খুব একটা ভালো না। সকাল থেকে কাশিটা বেড়েছে। বললেন, এমন দিন দেখতে হবে ভাবিনি কখনো। স্বজনরা সান্তনা জানিয়ে ফোন দিচ্ছে সকাল থেকেই। এতে আরো খারাপ লাগছে। অন্য সময়ে এই দিনটা আমার শুরু হতো রান্নাঘরে। পরিবারের সবার জন্য রান্না করেছি। কোরবানির মাংস ঠিকঠাক করে রেখেছি। আর এখন নিজ ঘরেই বন্দি।
মোহাম্মদ কামাল হোসেন ময়মনসিংহ শহরের চোকাইতলায় নিজ বাড়িতেই থাকেন। ঈদের দুই দিন আগে করোনা পজেটিভ আসে তার। ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি আবেগতারিত কণ্ঠে বলেন, আপনিই প্রথম কেও- যে আমার খোঁজখবর নিল। মনটা খারাপ সকাল থেকে। আল্লাহকে ডাকছি আর নামাজ পড়ছি। এই সংকট থেকে তিনি যেনো আমাকে ও দেশের মানুষকে রক্ষা করেন।
আরো কথা হয় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তার শহিদুল ইসলামের সাথে। অন্যদের চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে করোনা আক্রান্ত হয়ে নিজ বাসায় কোয়ারেন্টাইনে আছেন তিনি। বললেন, নিয়মিত ডিউটি করেছেন তাই মানুসিকভাবে প্রস্তুত ছিলেন। তবে ঈদের আগের দিন করোনা পজেটিভ ধরা পড়বে, তা ভাবেননি। আগামী ঈদ পরিবারের সাথে কাটাতে পারবেন- তিনি এ আশা প্রকাশ করেন।
শামসুল হুদা মিয়া উথুরা বাজারের ব্যবসায়ী। করোনা আক্রান্ত হয়ে একাই থাকছেন ঘরে। তিনি জানান, সকালে তার জন্য সেমাই রান্না করা হয়েছে। দুপুরে কোরবানির মাংস দিয়ে খেয়েছেন। তবে ঈদের দিন ঘরে বসে থাকতে থাকতে অজানা ভয় কাজ করছে তার মধ্যে। সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন তিনি।