সিলেট প্রতিনিধি
অপকর্মে নিজেকেই ছাড়িয়ে যাচ্ছিলেন আকবর
ফাইল ছবি
সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনের শিকার হয়ে রায়হান আহমদ নামে এক যুবকের মৃত্যুর বিষয়টির তদন্ত এখনো চলমান। যদিও রায়হানের মরদেহ দুই দফায় ময়নাতদন্ত করেও নির্যাতনের সত্যতা মিলেছে। এ অভিযোগের মূল আসামি ওই ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক আকবর হোসেন ভুইয়াকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি বর্তমানে পলাতক।
ওই অঞ্চলে আকবেরর কৃত অপকর্মে অতিষ্ঠ ছিলো জনগণ। তবে বলার সাহস ছিলো না কারো। রায়হান হত্যার পর মুখ খুলতে শুরু করে সবাই। আর উঠে আসতে থাকে তার সব অপকর্মের ঘটনা। ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর অভিযোগ থাকা জানা যায়- নিজের কৃত অপকর্মকেই
দিনে দিনে ছাড়িয়ে যাচ্ছিলেন তিনি।
বন্দরবাজার ও জিন্দাবাজারের রাস্তার হকার এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, ফাঁড়ির নিয়মিত চাঁদাবাজির কথা। মিথ্যা মামলার হয়রানি থেকে বাঁচতে বাধ্য হয়েই চাঁদা দিতে হতো তাদের।
শুধু রাস্তা বা দোকান নয়, আকবরের অপকর্ম প্রসারিত হয়েছিল সাধারণ মানুষের ঘর পর্যন্ত। তেমনই এক ভুক্তভোগী নগরীর বারুতখানা এলাকার আব্দুল আলিম মুক্তা। গত ১৫ এপ্রিল রাতে তার বাড়িতে ঢুকে ৪০ হাজার টাকা না দিলে মাদক মামলা দেবেন বলে হুমকি দেন আকবর। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় তার বাসা থেকে ২১টি ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে উল্লেখ করে মাদক মামলা দায়ের করেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীর ভাই।
তেমন আরেক ভুক্তভোগী খাদিমপাড়া এলাকার জিনাস লিসা। গত ১৭ এপ্রিল সিলেটের মিরবক্সটুলা এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে তার স্বামীর কথা কাটাকাটি হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা তার স্বামীর ওপর হামলা চালালে লিসা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করেন। এরপর ঘটনাস্থলে আসেন আকবর। এসেই তিনি হামলাকারীদের পক্ষ নেন। পাঁচ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা ওই নারীর পেটে লাথি মারেন স্থানীয় আরেক নারী। কিন্তু আকবর লিসার স্বামীকে আটক করে নিয়ে যান। দাবি করা ১০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে না পারায় সেদিনই ওই নারী ও তার স্বামীকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন আকবর।
ভুক্তভোগী ওই নারী জানান, পরদিন আদালত থেকে জামিন পান। এক সপ্তাহ পরে তার গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে যায়। আরও বেশি হেনস্থার ভয়ে তারা কোনো আইনি ব্যবস্থা নেননি।
ফাঁড়ি ইনচার্জ হিসেবে যোগ দেওয়ার আগে কোতোয়ালী থানায় কর্মরত অবস্থায় এসআই আকবরের বিরুদ্ধে সুরতহাল রিপোর্ট পরিবর্তন ও অসত্য তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুতের অভিযোগ রয়েছে।
গত বছরের ১৫ জানুয়ারি নগরীর কাজলশাহ এলাকায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর বর্ষের শিক্ষার্থী তাইফুর রহমান প্রতীকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পর থেকে তাইফুরের পরিবারের অভিযোগ, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আকবর হোসেন ভুইয়া ঘটনাটিকে আত্মহত্যা প্রমাণের জন্য সুরতহাল প্রতিবেদনে মিথ্যা তথ্য প্রদান করেন এবং তদন্ত প্রতিবেদনে অনেক তথ্য গোপন করেন।
রায়হান হত্যাকাণ্ডের পর গত ১৬ অক্টোবর এসব বিষয় উল্লেখ করে ফেসবুকে পোস্ট দেন তাইফুরের বোন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শান্তা তাওহিদা। তিনি উল্লেখ করেন যে, আকবর প্রথম থেকেই রহস্যজনক কারণে এটি আত্মহত্যা হিসেবে প্রমাণের চেষ্টা করেন, সুরতহালে ভুল তথ্য প্রদান করেন। তাইফুরের মৃত্যু ও তার আগের দিন ওই বাসার সিসিটিভি ফুটেজ রহস্যজনকভাবে গায়েব হওয়ার বিষয়ও তিনি তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেননি। মানসিক চাপে আত্মহত্যা উল্লেখ করলেও প্রতিবেদনে তিনি তা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হন।
তাইফুরের বোনের দাবি, তাইফুরের হত্যা বাইরে কোথাও হয়েছে এবং তার হত্যাকে আত্মহত্যা হিসেবে প্রমাণ করে ধামাচাপা দিতে সহযোগিতা করেছেন এসআই আকবর।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার বগইর গ্রামের আকবর ২০০৭ সালে কনস্টেবল হিসেবে পুলিশে যোগ দেন। ২০১৪ সালে তিনি উপপরিদর্শক হিসেবে পদোন্নতি পান। গত বছরের ৬ নভেম্বর থেকে বন্দরবাজার ফাঁড়ির দায়িত্ব নিয়ে যোগ দেওয়ার পর থেকে আকবর অপকর্মের পথে হেঁটেছেন।
রায়হান হত্যায় জড়িত থাকার প্রাথমিক প্রমাণ পেয়ে আকবরকে বরখাস্ত করার পর ১৪ অক্টোবর শাহীন মিয়া নামে এক উপপরিদর্শককে বন্দরবাজার ফাঁড়ির দায়িত্ব দেওয়া হয়। সঙ্গে সঙ্গে তাকে নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠে। গত বছর জুয়ার আসরে বসে তার জুয়া খেলার ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল সে বিষয়টিও সামনে চলে আসে।
পরদিনই তাকে প্রত্যাহার করে দায়িত্ব দেওয়া হয় বন্দরবাজার ফাঁড়িতে দায়িত্বরত আরেক উপপরিদর্শক হাসান উদ্দিনকে। গত বুধবার আকবর পালিয়ে যাওয়ায় ঘটনা খতিয়ে দেখতে পুলিশ সদর দপ্তর তদন্ত দল সিলেটে আসে। তদন্তে উঠে আসে, হাসান উদ্দিন আকবরকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছেন। এই অভিযোগে হাসানকে বরখাস্ত করার পরে ফাঁড়িতে নতুন করে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলন সিলেটের সমন্বয়ক আব্দুল করিম কিম বলেন, সিলেটের কোনো পুলিশ ফাঁড়িই জনসেবার উদ্দেশ্যে নয় বরং পুলিশ বাহিনীর অবৈধ অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে কাজ করছে। তিনি বলেন, যখন একজন পুলিশ সদস্য অনেক টাকা খরচ করেন ফাঁড়িতে যোগ দিতে, তখন সে টাকা আদায়ে তিনি সর্বোচ্চ অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়াবেন। যে চক্র এই ব্যবস্থা সৃষ্টি করেছে, তাদের থামাতে হবে এবং এসব অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধ করতেই হবে।
এ দিকে রায়হান হত্যায় জড়িত থাকা এবং মূল সন্দেহভাজন আকবরকে পালিয়ে যেতে সহাতাকারীসহ ওই ফাঁড়ির মোট পাঁচ জনকে এখন পর্যন্ত সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ১১ অক্টোবর রায়হান হত্যাকাণ্ডের পরদিন দুপুর থেকেই পালাতক আকবর হোসেন। বাকিদের পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়।
রায়হান হত্যার পরদিন তার স্ত্রী তাহমিন আক্তার অজ্ঞাতনামা আসামিদের অভিযুক্ত করে কোতোয়ালী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, বন্দরবাজার ফাঁড়িতে হত্যার শিকার হয়ে রায়হানের মৃত্যু হয়েছে।
এর দুই দিন পর মামলার তদন্ত ভার দেওয়া হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর কাছে। আকবর যেন দেশ ছেড়ে পালাতে না পারেন সে কারণে পিবিআই গত ১৫ অক্টোবর দেশের সব ইমিগ্রেশন চেকপোস্টকে সতর্ক করে। ইতোমধ্যে সাময়িক বরখাস্ত দুজন কনস্টেবলকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ডে নিয়েছে পিবিআই।
পিবিআইয়ের বিশেষ পুলিশ সুপার মুহাম্মদ খালেদ-উজ-জামান বলেন, মামলায় এখন পর্যন্ত দুই জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ওই ফাঁড়িতে কর্মরত আরো তিন কনস্টেবলের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে।
- মেয়ের বাড়িতে ইফতার: সিলেটি প্রথার বিলুপ্তি চায় নতুন প্রজন্ম
- অবশেষে ক্লাস করার অনুমতি পেল শ্রীমঙ্গলের শিশু শিক্ষার্থী নাঈম
- দেশের চতুর্থ ধনী বিভাগ সিলেট
- শ্রীমঙ্গল টু কাতারে গড়ে তুলেছেন শক্তিশালি নেটওয়ার্ক
মৌলভীবাজারে অনলাইন জুয়ায় রাতারাতি কোটিপতি সাগর - বিজ্ঞাপন
মৌলভীবাজারে হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসায় লাইফ লাইন হাসপাতাল (ভিডিও) - মৌলভীবাজারে ট্যুরিস্ট বাসের উদ্বোধন বৃহস্পতিবার
- ১ ঘন্টার জন্য মৌলভীবাজারে শিশু কর্মকর্তা হলেন তুলনা ধর তুষ্টি
- মৌলভীবাজার শহরে একদিনে ৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত
- বন্ধ থাকবে মৌলভীবাজারের ‘এমবি’
- করোনা জয় করে সুস্থ হয়েছেন মৌলভীবাজারের ৩ চিকিৎসক