সোনিয়া মান্নান
আপডেট: ২০:০৭, ২৫ নভেম্বর ২০২০
খাবারের মেলার উদ্যোক্তারা
ফুড ফেস্টিভ্যালে উদ্যোক্তারা
“চায়ের দেশে খাবারের মেলা” এমনই এক শিরোনাম ছিল দেশের প্রভাবশালী এক জাতীয় পত্রিকায় । একটা অসম্ভব ভালো লাগা আর তৃপ্তি ছিল পত্রিকার পাতাটা চোখে দেখে। আসলে বলতে গেলে একরকম অসম্ভব কাজটা সম্ভব করেছিলাম আমরা সবাই মিলে গত বছর অর্থাৎ ২০১৯ এর ২৫ ও ২৬ শে নভেম্বর।
বিভিন্ন দেশে ফুড ফেস্টিভ্যাল হয়ে থাকে আমরা সবাই জানি। কিন্তু নিজের শহরে এমনটা কখনও হয়নি। যদিও ক্যাফে বা রেস্টুরেন্টের ট্রেন্ডটাও অল্প কয়েকবছর হলো এখানে জমে উঠেছে। এই আমরাই যখন অন্য জায়গায় যাই তখন নতুন খাবার চেখে দেখি, আর যারা ফুডিস তারা তো নিত্য নতুন খাবারের স্বাদ পরখ করেই থাকেন।
বিগত কয়েক বছরে আমাদের খাবার নির্বাচন বা বানানোর ক্ষেত্রেও বেশ পরিবর্তন লক্ষণীয়। খাদ্য গ্রহণের অভ্যাসেও বেশ চেঞ্জ এসেছে। বিভিন্ন ফুড ম্যাগাজিন, খাবার তৈরীর অনুষ্ঠান, ইউটিউব, ফুড ব্লগ বা ভ্লগ ইত্যাদি দেখে প্রায় সবাই ভিন্নধর্মী খাবার সামান্য হলেও চেখে দেখেন, নিজে বানানোর চেষ্টা করেন। এমনই একটা ব্যাতিক্রমী ভাবনা নিয়ে আমরা মৌলভীবাজার অনলাইন অন্ট্রাপ্রিনিউর্স ফোরাম এর পক্ষ থেকে প্রথম এই উদ্যোগটি গ্রহণ করি।
সাথে পাই বেশ কয়েকজন নারী উদ্যোক্তাকে। মোট ১২টি স্টলে বিভিন্ন দেশী বিদেশী হোম মেড খাবারের সম্ভার নিয়ে সাজানো হয়েছিল এই ফুড ফ্যাস্টিভ্যালটি।
প্রথম যখন আমরা এরকম একটা মেলার পরিকল্পনা মৌলভীবাজার পৌরসভার অভিভাবক মাননীয় মেয়র মো. ফজলুর রহমানের সঙ্গে আলাপ করি, উনি সানন্দে পৌর জনমিলনায়তন হলসহ সার্বিক সহযোগিতায় মৌলভীবাজার পৌরসভা আমাদের পাশে থাকবে এই আশ্বাস প্রদান করেন এবং বাস্তবেও তিনি অনেক সহযোগীতা প্রদান করেন। বেঙ্গল ফুড, আইনিউজ ছিল এই আয়োজনের স্পন্সর ও মিডিয়া পার্টনার।
MOEF এর সেক্রেটারী ফারহাত আহমেদকে স্মৃতিচারণ করতে বললে তিনি বলেন, ‘অনেক জল্পনা কল্পনার পর গত বছর নভেম্বর এ আমরা ফুড ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করি। এর উদ্দেশ্য ছিল ফুডিজরা যাতে একসাথে ভিন্ন রকমের খাবারের স্বাদ চেখে দেখতে পারেন । পাপড়ি চাট , বেকড হালুয়া ও লাজানিয়ার মত ভিন দেশীয় খাবার ছিল যা সচরাচর এই শহরে পাওয়া যায় না।
আরও ছিল অরিজিনাল মন্ডা, হোমমেড কাঁচাগোল্লা, বিভিন্ন রকম পিঠা আর লাইভ মোমো ও বার-বি-কিউ এর আয়োজন। প্রথমবার এমন কিছু হচ্ছে তাই অনেকে ভয় পাচ্ছিলেন আমাদের সাথে যোগ দিতে। আমাদের ও অনেক বড় করে করার ইচ্ছা ছিল। তবে যতটুক করতে পেরেছি আমরা সফল হয়েছি আলহামদুলিল্লাহ্ । এতো বেশি সাড়া পাব কল্পনা করিনি।’
মৌলভীবাজারে আয়োজিত প্রথম ফুড ফেস্টিভ্যালে যারা অংশ নিয়েছিল এক বছর পর তাদের কয়েকজনের কথা শুনি এবার।
sweet sensation পেইজের স্বত্তাধিকারী সুলতানা ফরহাদ বলেন, ‘শুরুটা ছিল একদম হঠাৎ করে মৌলভীবাজার MOFE এর আয়োজিত ফুড ফেস্টিভ্যাল এর মধ্যে দিয়ে। প্রথম বার নিজেকে নিয়ে কিছু করার ইচ্ছে আর আয়োজকদের সাপোর্ট এর মধ্যে দিয়ে আজ আমার পেইজ এক বছর সফলতার সাথে শেষ করছে। একটা কথা না বললেই নয় মাইশা ফারজানা আপু এর অনেক বেশি সাপোর্ট ছিলো আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো । আর আমার মনে হয় সব থেকে পরিচ্ছন্ন মেলা ঐ টাই ছিলো।’
‘ফুড ফেস্টিভ্যাল এর অভিজ্ঞতা অনেক ভালো আর বেস্ট ছিল। প্রথম কোন মেলায় আমরা অংশ নিয়েছিলাম। আমাদের তৈরী খাবার অন্যদের কাছে ভালো লেগেছে এটা অনেক আনন্দের ছিল। আমি আর আমার বান্ধবীর স্টল ছিল ‘ বললেন Snack Hack স্টলের এস.এন. উর্মি।
Creative Creations এর নাবিলা কুরাইশি বলেন, ‘এক্সপেরিয়েন্স অনেক বেশি ভাল ছিল। শীতের শুরুতেই একটা উৎসব আমেজ লাগছিল ফুড ফেস্টের মাধ্যমে যা এর আগে মৌলভীবাজারে কখনো পাওয়া হয় নি। সেই সাথে কাস্টমার রেসপন্স ও অনেক ভাল পেয়েছিলাম।’
Mimo’s Momo এর প্রিয়াংকা সেনগুপ্ত দাস বলেন, ‘মানুষকে খাইয়ে যে তৃপ্তি পাওয়া যায় তা আর কিছুতেই নেই। আমার মূলধারার কাজ যদিও খাবার নিয়ে নয় তবে এই ফেস্টিভ্যালে অংশ নিয়ে খাবার নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা খুব বেড়েছে।’
নবান্ন স্টলের স্বত্তাধিকারী নিহাত সুলতানা নীরা বলেন ‘এই ফেস্টিভালটা ছিল আমার প্রথম বারের মত ফুড ফেস্টিভ্যাল এ অংশগ্রহণ। এই ফেস্টিভ্যালে ছিল দেশি-বিদেশি হরেক রকমের খাবার যা ভোজন রসিকদের কাছে উপভোগ্য ছিল। গ্রুপের সকল সদস্যদের আন্তরিকতায় আমি মুগ্ধ।’
Baking Story পেইজের স্বত্তাধিকারী মায়িশা ফারজানা চৌধুরী বলেন, ‘২০১৯ এর অক্টোবরের শেষ কিংবা নভেম্বরের প্রথম দিকে MOEF এর তিন কান্ডারির মুখে "Food Fest" এর ব্যাপারে শুনি। আমাদের ছোট্ট এ শহরে গতানুগতিক মেলার বাইরে একদম নতুন একটা আইডিয়া! ফেস্টের ডেইট ঠিক হলো, পার্টিসিপেট তো করবোই- এক্সাইটেড ছিলাম, সাথে উৎকণ্ঠাও ছিল। একদম নতুন কোনোকিছুর জন্য যেটা খুব স্বাভাবিক! ফেস্টের দু'দিন কেটে যাওয়ার পর মনে হচ্ছিল, এই দু'টি দিন যেন কীভাবে কীভাবে কিছু বুঝে উঠার আগেই আবার চলে গেল! সবার এতো এতো সাড়া পাওয়ার সাথে পাল্লা দিয়ে মুহূর্তে মুহূর্তে বাড়ছিল নিজ স্টলের ব্যস্ততা। মানুষে গমগম করা এই ফুডফেস্টে নিজে ভালোভাবে অন্য স্টলগুলোর খাবার খেতে পারিনি। শহরে ভিন্নরকম এই আয়োজন শুরু করার জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা আয়োজকদের।’
MOEF এর সমন্বয়ক সূবর্ণা আক্তারের কাছে গতবছরের অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা জানতে চাইলে বলেন, ‘আসলে ফুডিজদের জন্য ফুড ফ্যাস্টিভ্যাল একটি অভিনব চিন্তা। পাশ্চাত্য দেশ থেকে শুরু করে বাংলাদেশেরও ঢাকা, চিটাগাং বিভাগীয় শহরগুলাতে আজকাল ফুড ফ্যাস্টিভ্যাল খুবই জনপ্রিয়, সেই ধারা বজায় রেখে নিজেদের শহর মৌলভীবাজারে এমন কিছু করার ইচ্ছা থেকেই আমাদের এ প্রচেষ্টা ছিল। খুবই রিস্ক নিয়ে কাজ টা করা। মোটেও ধারণা ছিল না এই ফ্যাস্টিভ্যালটা আসলেও সফল হবে কি না, তবে নতুন কিছু করবো এই প্রচেষ্টায় মৌলভীবাজার এন্ট্রাপ্রিনিউর্স ফোরামের সবসময় থেকেই ছিল। কিন্তু সর্বোপরি আমাদের এই উদ্যেগ সফল হয়েছিল এবং এটি এতো জনপ্রিয়তা পাবে তা ছিল আমাদের কল্পনার বাইরে।
সবচেয়ে বড় কথা মৌলভীবাজারের মতো মফস্বল শহরে প্রথমবার এই আয়োজনটা করা এবং প্রথমবারেই এতো সফলতা সত্যি আমাদের জন্য ছিল অনেক বড় পাওয়া। আমাদের ফেস্টিভ্যালের অন্যতম আকর্ষণ ছিল হোম মেড ফুড। এমনকি আমাদের এখান থেকে শুরু করেই অনেকেই তাদের অনলাইন ফুড বিজনেস শুরু করেন যা ছিল আমাদের জন্য এক বিশেষ কৃতিত্ব।
গতবছর প্রথমবারের মতো আমরা মৌলভীবাজার শহরে ফুড ফেস্টিভ্যাল এর প্রচলন করি। ইচ্ছা ছিল প্রতিবার আমরা এই ফেস্টিভ্যালটা করবো। কিন্তু কোভিড এর এই সময়টায় যখন পুরো পৃথিবী এক অন্যরকম দুর্ভোগে ভুগছে তখন এই ধরণের ফেস্টিভ্যাল বা এক্সিভিশন নিতান্তই বিলাসিতা ছাড়া আর কিছু মনে হচ্ছে না।
তাই আমরা অপেক্ষায় আছি, পৃথিবীটা আবারো সুস্থ হয়ে উঠবে, আবারো হেসে উঠবো আমরা, তখন ফিরে আসবো আপনাদের মাঝে নতুনভাবে।’ আমরা MOEF পরিবারও এই আশা রাখি একদিন এই পৃথিবী সুস্থ হয়ে উঠবে।
আবারও আমরা নতুন কোন আয়োজন নিয়ে আসব। লোকমান হোসেন ফকিরের মত বলতে ইচ্ছে করে - আবার জমবে মেলা-/ বটতলা হাট খোলা/ বটতলা হাট খোলা অঘ্রাণে নবান্নে উৎসবে/ সোনার বাংলা ভরে উঠবে সোনায় বিশ্ব অবাক চেয়ে রবে ।
আবার জমবে মেলা- বটতলা হাট খোলা বটতলা হাট খোলা অঘ্রানে নবান্নে উৎসবে/ সোনার বাংলা ভরে উঠবে সোনায়/ বিশ্ব অবাক চেয়ে রবে।।
- মেয়ের বাড়িতে ইফতার: সিলেটি প্রথার বিলুপ্তি চায় নতুন প্রজন্ম
- অবশেষে ক্লাস করার অনুমতি পেল শ্রীমঙ্গলের শিশু শিক্ষার্থী নাঈম
- দেশের চতুর্থ ধনী বিভাগ সিলেট
- শ্রীমঙ্গল টু কাতারে গড়ে তুলেছেন শক্তিশালি নেটওয়ার্ক
মৌলভীবাজারে অনলাইন জুয়ায় রাতারাতি কোটিপতি সাগর - বিজ্ঞাপন
মৌলভীবাজারে হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসায় লাইফ লাইন হাসপাতাল (ভিডিও) - মৌলভীবাজারে ট্যুরিস্ট বাসের উদ্বোধন বৃহস্পতিবার
- ১ ঘন্টার জন্য মৌলভীবাজারে শিশু কর্মকর্তা হলেন তুলনা ধর তুষ্টি
- মৌলভীবাজার শহরে একদিনে ৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত
- বন্ধ থাকবে মৌলভীবাজারের ‘এমবি’
- করোনা জয় করে সুস্থ হয়েছেন মৌলভীবাজারের ৩ চিকিৎসক