মুনমুন মতিন
আপডেট: ২২:৫৮, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১
আত্মহত্যা প্রতিরোধে একসঙ্গে
‘আত্মহত্যা’ এ যেন আমাদের কাছে এখন নিত্যদিনের পরিচিত শব্দ। খবরের কাগজ বা টিভিতে প্রতিদিন খুব জমকালো আয়োজনের সাথে আমাদের কাছে উপস্থাপন করা হয়। কারো প্রিয়জন বা কারো পরিচিত মুখের আত্মহননের ছবিখবরের কাগজের ফ্রন্ট পেজে বড়বড় অক্ষরে ছাপা হয়। সমসাময়িক এই পরিস্থিতিতে আমাদের সকলকে একজোট হয়ে আত্মহত্যা প্রতিরোধ করতে এগিয়ে আসা দরকার। আমার এই ক্ষুদ্র জ্ঞান থেকে আপনাদের সামনে কিছু বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আসুন আত্মহত্যা নিয়ে কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
‘আত্মহত্যা’এর ইংরেজি প্রতিশব্দ suicide । ল্যাটিন শব্দ সুই-সেইডেয়ার থেকে suicide শব্দটি এসেছে। যার অর্থ হচ্ছে নিজেকে নিজে হত্যা করা। বিশ্বায়নের এই যুগে এসেও আমরা দেখতে পাই, বিশ্বে প্রতি সেকেন্ডে একজন করে মানুষ আত্মহত্যা করছে এবং বছর শেষে এই মৃত্যুর হার গিয়ে দাড়াচ্ছে প্রায় আট লাখ মানুষের মতো।
একটি জরিপে দেখা যায়, ১৫-২৯ বছর বয়সীদের জন্য আত্মহত্যা হল মৃত্যুর দ্বিতীয় কারণ। বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত আত্মহত্যার প্রবণতা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। জরিপ অনুযায়ী দেখা যায়, সারাবিশ্বে আত্মহত্যায় বাংলাদেশের অবস্থান দশম। কিন্তু ২০১১ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৩৪তম। সুতরাং বোঝা যাচ্ছে যে, আত্মহত্যা বাংলাদেশে দিনদিন ব্যাপকহারে বাড়ছে।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের দেয়া তথ্য মতে, বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ৩১ শতাংশ বা প্রায় ৫ কোটি মানুষ কোনো না কোনো মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত যার মধ্যে বিষন্নতা অন্যতম। সভ্যতার পরিক্রমায় আমাদের জটিলতা বেড়েই চলছে, তাই আত্মহত্যাও বাড়ছে।
আত্মহত্যার মুখ্য কারণ
পারিবারিক কলহ, অর্থনৈতিক সমস্যা, প্রেমে ব্যর্থতা, চাকরিচ্যুত হওয়া, বিবাহ বিচ্ছেদ, বেকারত্ব, পরীক্ষায় আশানুরূপ ফলাফল না পাওয়া, ইভটিজিং, যৌতুকের জন্য চাপ, হতাশা, সামাজিক নির্যাতন, নেশাগ্রস্ততা প্রভৃতি আত্মহত্যার উল্লেখযোগ্য কারণ। আপনারা জানলে অবাক হবেন যে, ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের আত্মহত্যার প্রবণতা অনেক বেশি।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে কেন মেয়েদের ক্ষেত্রে বেশি? একটি গবেষণায় দেখা গেছে, অধিকাংশ মেয়ে ডিপ্রেশনে ভোগে এবং নানা কারণে মানসিক চাপে থাকে। এদের মধ্যে প্রায় ৬১.৫৪ শতাংশ আত্মহত্যা করে থাকে বা আত্মহত্যার চেষ্টা করে। এছাড়াও যৌতুকের চাপ, ইভটিজিং, ধর্ষণ, পারিবারিক কলহ এসকল কারণ তো আছেই ।
সম্প্রতি আমরা দেখতে পাই, এক বাবা আত্মহত্যা করেছে তার ছেলের চাকরিজনিত সমস্যার কারণে। এভাবেই দেশে প্রতিদিন অহরহ মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন নানা রকম সমস্যার কারণে। তাই আত্মহত্যা প্রতিরোধে সকলে একসাথে হতে হবে।
আত্মহত্যা প্রতিরোধে করণীয়
আত্মহত্যা প্রতিরোধে আমাদের সর্বপ্রথম পরিবারকে সচেতন করতে হবে। কারণ পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় না হলে কোন সমস্যায় পড়লে তখন শেয়ার করার জন্য কাউকে পাওয়া যাবে না। সুতরাং আত্মহত্যা প্রতিরোধে পারিবারিক ভিত দৃঢ় করা অতিব জরুরী।
সমাজের সচেতন মানুষজন এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। আত্মহত্যার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সকলকে জানাতে হবে। কীভাবে সামাজিক সম্পর্ক দৃঢ় করা যায় সেইসকল দিক সম্পর্কে আলোচনা করতে হবে। পাশাপাশি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে আত্মহত্যা প্রতিরোধে কর্মশালার আয়োজন করা যেতে পারে। আমাদের আশেপাশে কেউ বিষণ্নতায় ভুগলে তাকে সাহায্য করতে হবে।
অনেকক্ষেত্রে আত্মহত্যা প্রবণ ব্যক্তি আমাদের নানাভাবে তার পরিস্থিতি সম্পর্কে সংকেত দেয়। কিন্তু সময়ের অজুহাতে আমরা তা খেয়াল করি না। তাই এই ব্যপারে আমাদের সচেতন হওয়াটা খুবই জরুরি।
আত্মহত্যা প্রতিরোধে রাষ্ট্রের ভূমিকা
আত্মহত্যা প্রতিরোধে রাষ্ট্রেরও কিছু মুখ্য ভূমিকা রয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে অবগত আছি যে, কেউ আত্মহত্যা করতে চাইলে বা কেউ আত্মহত্যায় প্ররোচিত করলে দেশের আইন অনুযায়ী কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে।
গণমাধ্যম বা সোশ্যাল মিডিয়াগুলোকে আত্মহত্যার খবর প্রচার করার সময় অনুমিত নির্দেশিকা মেনে প্রচারণা চালাতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যক্তির আত্মহত্যার ছবি প্রকাশ না করাই উত্তম। এই ব্যাপারে সকলে একসাথে সংঘবদ্ধভাবে আত্মহত্যা প্রতিরোধে কাজ করতে হবে।
প্রত্যেক ধর্মেই আত্মহত্যা মহাপাপ, তাই ধর্মীয় দিকটা তুলে ধরা যেতে পারে।
আমাদের সবার উচিত মানসিক সাস্থ্যের প্রতি সচেতন হওয়া। যেহেতু ৭০ শতাংশ আত্মহত্যা মানসিক সমস্যার জন্য হয়ে থাকে। তাই মানসিক চাপ কমানোর জন্য নানারকম কাজ করতে পারি আমরা। প্রতিদিন শরীরচর্চা, সুষম খাবার গ্রহণ, মেডিটেশন এবং নিজেদেরকে সৃজনশীল কাজে ব্যস্ত রাখতে পারি।
এভাবে মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেয়ার মাধ্যমে আত্মহত্যা অনেকাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব। সম্প্রতি ১০ সেপ্টেম্বর ‘বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস’ পালিত হয়েছে। সারাদিন অনলাইন, অফলাইনে অনেক সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে।
তাই আসুন, ব্যক্তিপর্যায় থেকে শুরু করে সমাজের সকল শ্রেণির মানুষ নিজ নিজ জায়গা থেকে আমাদের তরুণ প্রজন্মকে রক্ষা করতে সাধ্যমত এগিয়ে আসি। কাছের মানুষ বা সহপাঠী যে কেউ আত্মহত্যা প্রবণ বুঝতে পারলে তাকে সময় দেই। একটি সুখী-সমৃদ্ধ, আত্মহননমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলি।
মুনমুন মতিন, শিক্ষার্থী, ৩য় বর্ষ, মনোবিজ্ঞান বিভাগ, বশেমুরবিপ্রবি, গোপালগঞ্জ।
- মাস্টার্স পরীক্ষার ফলাফল ২০২৩
- এসএসসি বোর্ড চ্যালেঞ্জ এর রেজাল্ট ২০২৩
- এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট ২০২৩ | এসএসসি ফলাফল
- অনার্স ১ম বর্ষ পরীক্ষা রুটিন ২০২৩
- এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট ২০২৩ কবে হবে
- চবি ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্ট ২০২৩
- ‘বাঁচতে চাইলে পরীক্ষায় এ্যাটেন্ড কর’, ছাত্রীকে শাবি শিক্ষক
- গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্ট ২০২৩
- কেন পড়ব সমাজকর্ম?
- মধ্যরাতে শাবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ