Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০১ মে ২০২৫,   বৈশাখ ১৮ ১৪৩২

মো. আজিজার রহমান

প্রকাশিত: ১৮:৫৩, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২
আপডেট: ১৮:৫৪, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২

বিলুপ্তির পথে খানসামার ঝিনুকের তৈরি ‘যুগির’ চুন

এক সময় দেউলগাঁও গ্রামের শত পরিবার চুন তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করত

এক সময় দেউলগাঁও গ্রামের শত পরিবার চুন তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করত

খানসামা উপজেলার ঝিনুকের (যুগির) তৈরি চুন একসময় স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি হত দেশের বিভিন্ন জেলায় ও উপজেলায়। দিনাজপুরের খানসামায় এখনও ঝিনুক দিয়ে চুন তৈরি করা হয়। আগে এই চুন স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি হতো বিভিন্ন জেলার বাজারে।

তবে বর্তমানে উপকরণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় খরচ বেশি অথচ বাজারে দাম কম হওয়ায় এখন তেমন লাভ হচ্ছে না বলে জানান পেশাদারী চুন তৈরির কারিগররা। ফলে তাই অনেকে ছেড়ে দিয়েছেন এই তিনপুরুষের পেশা।

এখন বাজারে পাথরের চুন এসে আমাদের চুনের বাজার নষ্ট হয়েছে গেছে।

যুগিপাড়া ঢুকলেই দেখা মিলবে গোপাল দেবনাথের চুনের তৈরির ভাটা, কাছে স্তুপ করে রাখা আছে অসংখ্যক ঝিনুক। পাশের বাড়িতে ভাটায় ঝিনুক পুড়ছেন শশী দেবনাথ। ভোন্দা দেবনাথের বাড়িতে পোড়ানো চুন পরিস্কার করে গুড়ো করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন পরিবারের সদস্যরাও। আর প্রতিবেশী গোপেন দেবনাথের স্ত্রী আরতি বালা দেবনাথ গুড়ো ঝিনুক বড় মাটির পাত্রে পানি দিয়ে বেটে ছেকে তৈরি করছেন খাওয়ার চুন।

একই গ্রামের শ্যাম বাবু দেবনাথ বলেন, এক সময় দেউলগাঁও গ্রামের শত পরিবার এবং আঙ্গারপাড়া যুগিপাড়ার ১২টি পরিবার চুন তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করত। এখন পাথরের চুন এসে আমাদের চুনের বাজার নষ্ট হয়েছে গেছে। সেজন্যেই আঙ্গারপাড়া যুগিপাড়ার যুগিরা চুন তৈরি করা ছেড়ে দিয়েছে ।

বর্তমানে গ্রামগঞ্জে আগের মত ঝিনুকও আর পাওয়া যায় না। খরার সময় চিরিরবন্দর উপজেলার রাবার ড্যাম, সাইতাড়া, ভূষিরবন্দর, মাধবের ঘাট, মালি জলের ঘাট, জন্তিয়ার  ঘাট  এবং খানসামা ঘাট এলাকা থেকে ঝিনুক সংগ্রহ করতে হয়।

স্থানীয়রা এসব ঝিনুক সংগ্রহ করে, তাদের কাছ থেকে ৪শ' টাকা মণ দরে আমাদের কিনতে হয় উল্লেখ করে গোপাল দেবনাথ বলেন, আমরা এখন ১১টি  পরিবার চুনের কাজ করি। এক মণ ঝিনুকের চুন তৈরি করতে কমপক্ষে তিন দিন লাগে। এক সময় আমাদের তৈরি চুন স্থানীয় বাজারে পান দোকান ছাড়াও পার্শ্ববর্তী নীলফামারী, তারাগঞ্জ , বীরগঞ্জ , গোলাপগঞ্জ ,দেবিগঞ্জ , রাণীরবন্দর,কাচিনীয়া, ভুষিরবন্দর  ও পাকেরহাট এলাকায় বিক্রি হতো। এখন বাজারে পাথুরী চুন ফলে কমেছে এই চুনের চাহিদা।

গোপাল দেবনাথ বলেন, আমার তিন পুরুষ ধরে চুন তৈরির কাজ করছি। পরিশ্রম আর খরচ অনেক। হাতেও কড়া পড়ে। চামড়া পুড়ে যায়। জায়গা-জমি নাই, অন্য কাজও করতে পারি না। তাই তিন পুরুষের পেশাটা ধরে আছি। দেউলগাঁও মাত্র ১১টি পরিবার চুন তৈরির কাজ করি ।

গোপাল দেবনাথের ছেলে  বলেন, এ পেশায় আর লাভ নাই, ভালো লাগে না তাই আমি অন্য কাজ করি। আমার মত অনেকে পেশা বদল করেছেন। কেউ ব্যবসায়ী, কেউ দিনমুজুর আবার কেউ রাজমিস্ত্রির কাজ করে এখন  সংসার চালায়। এতে আমাদের জীবনযাত্রার মান এখন ভালোই কাটতেছে। তাছাড়া আমাদের এই শিল্পের প্রতি সরকারেরও কেন নজরদারি নাই, নাই কোন সরকারি সহযোগিতা।

আইনিউজ/এইচএ

আইনিউজে আরও পড়ুন-


দেখুন আইনিউজের ভিডিও গ্যালারি

সৌদি আরবে মেয়েকে নির্যাতনের খবরে মায়ের আহাজারি-কান্না

গ্রিসের বস্তিতে বাংলাদেশীদের মানবেতর জীবন, অধিকাংশই সিলেটি

গ্রিসে পাঁচ বছরের ভিসা পাবে বাংলাদেশিরা

Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়