Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, রোববার   ১৫ জুন ২০২৫,   আষাঢ় ১ ১৪৩২

রুপম আচার্য্য

প্রকাশিত: ১৬:৪২, ৬ জুন ২০২৫

ঈদুল আজহার টানা ছুটিতে পর্যটক বরণে প্রস্তুত চায়ের দেশ শ্রীমঙ্গল

ঈদুল আজহার ছুটিতে শ্রীমঙ্গলের রিসোর্টগুলো প্রায় শতভাগ আগাম বুকিং হয়ে গেছে। ছবি: বালিশিরা রিসোর্ট

ঈদুল আজহার ছুটিতে শ্রীমঙ্গলের রিসোর্টগুলো প্রায় শতভাগ আগাম বুকিং হয়ে গেছে। ছবি: বালিশিরা রিসোর্ট

পবিত্র ঈদুল আজহার দীর্ঘ ছুটিতে ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকদের বরণে প্রস্তুত চায়ের দেশ শ্রীমঙ্গল। আগত পর্যটকদের জন্য এবার পাঁচতারকা হোটেল, মোটেল ও গেস্ট হাউসগুলোতে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা ঘোষণা করা হয়েছে। এরই মধ্যে একাধিক হোটেল, রিসোর্ট ও কটেজগুলো শতভাগ বুকিং হয়ে গেছে। তবে কিছু হোটেল-মোটেল ও রিসোর্ট প্রায় ৭০ থেকে ৯০ শতাংশ বুকিং সম্পন্ন হয়েছে। 

এদিকে পর্যটকদের নিরাপত্তা ও নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করতে ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা সার্বক্ষণিক মাঠে সক্রিয় থাকবে।

ঈদের টানা ১০ দিনের ছুটি থাকায় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন স্থানীয় পর্যটন শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। সিলেটের সাদা পাথর, সাজেকের কিছু স্পট বন্ধ ও সেন্টমার্টিনসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পটে নিষেধাজ্ঞা থাকায় এক বিশাল সংখ্যক পর্যটক শ্রীমঙ্গলমুখি হবে বলে সম্ভবনা রয়েছে। তবে চলমান বৈরী আবহাওয়ার কথাও চিন্তা করছেন এই শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। সাদা পাথর বন্ধ থাকায় শ্রীমঙ্গলের কিছু হোটেল রিসোর্টের বুকিং বাতিল হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে বলে জানায় রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ।

জেলার শ্রীমঙ্গলে গড়ে উঠা অসংখ্য রিসোর্ট, কটেজ, হোটেল, গেস্ট হাউসে রাত্রিযাপন করতে সহস্রাধিক পর্যটক আসেন। তাছাড়া জেলার পাশাপাশি শ্রীমঙ্গলের ১৫ থেকে ২০টি দর্শনীয় পর্যটন কেন্দ্রও প্রস্তুত রয়েছে পর্যটকদের বরণে। এ উপজেলায় পাঁচতারকা মানের রিসোর্টসহ শতাধিক রিসোর্ট, কটেজ, হোটেল ও গেস্ট হাউস রয়েছে।

এদিকে ঈদ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন নামি-দামি চাইনিজ ও থাই খাবারের রেস্টুরেন্টগুলো আলোর সাজসজ্জায় সজ্জিত হয়েছে। পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে খাবারে নতুনত্ব আনা হয়েছে। বাংলা-চাইনিজ, থাইয়ের পাশাপাশি আদিবাসী খাবারও মেন্যুতে রাখা হয়েছে। তাছাড়া, ঘুরতে আসা পর্যটকদের বাড়তি আনন্দ দিতে নতুন করে সাজানো হয়েছে রেস্টুরেন্টগুলো।

মৌলভীবাজার জেলায় হাওড়, পাহাড় এবং টিলাবেষ্টিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমিতে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন শতাধিক পর্যটন স্পট। জেলার সবচেয়ে বেশি পর্যটক সমাগম ঘটে চায়ের দেশ শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলায়। সবুজের সমারোহে গালিচা বিছানো উচুঁ-নিচু নান্দনিক চা বাগানে ঘেরা শহর শ্রীমঙ্গলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং জীববৈচিত্র্য ভ্রমণ পিপাসু দেশি-বিদেশি পর্যটকদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে। প্রতিবছর বিশেষ দিনগুলি ঈদ কিংবা সরকারি ছুটিতে পর্যটকদের পদচারণা বাড়িয়ে তোলে।

শ্রীমঙ্গলের চা বাগান, হাইল হাওর, বাইক্কা বিল, চা কন্যার ভাস্কর্য, রমেশ রাম গৌড়ের আবিষ্কৃত সাত রঙের চা, বধ্যভূমি ৭১, বাংলাদেশ চা গবেষণা কেন্দ্র, রাবার বাগান, গোল টিলা, হজম টিলা, সীতেশ বাবুর বন্যপ্রাণী সেবাকেন্দ্র, খাসিয়া পুঞ্জি, মনিপুরী সম্প্রদায়ের তাঁতশিল্প, গারোপল্লী, ভাড়াউড়া লেক, শংকর টিলাসহ শ্রীমঙ্গলের অসংখ্য পর্যটন স্পটগুলো ঘুরে দেখতে ঈদের ছুটিতে প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা চায়ের দেশে আসেন। এছাড়াও, জেলার বিভিন্ন পর্যটন স্পট ও কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, সীমান্তবর্তী ধলই চা বাগান, বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ এবং মাধবপুর লেকও ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে।

বালিশিরা রিসোর্টের পরিচালক (পরিচালনা ও প্রশাসন) জাহানারা আক্তার বলেন, “ঈদ উপলক্ষ্যে আমদের প্রস্তুতি বরাবরের চেয়েও আরো চমকপ্রদ। নতুন আঙ্গিকে রিসোর্টকে সাজিয়েছি। ঈদের দিনগুলোকে কেন্দ্র করে খাবারে নতুনত্ব আনা হয়েছে। রিসোর্টে ঈদ করেও যেন সবাই ঘরের স্বাদ মিস না করতে পারেন সে ক্ষেত্রে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। ফল মিষ্টান্ন তো থাকছেই, সেই সাথে থাকছে একদম ফ্রেশ নতুন মেনু।”

তিনি বলেন, “যদি অন্যান্য অবস্থা অপরিবর্তিত থাকে তবে শ্রীমঙ্গলে রোজার ঈদের চেয়েও বেশি পরিমাণ লোকের সমাগম হবে বলে আমরা আশা করছি। ৯ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত আমাদের শতাংশ বুকিং রয়েছে। তাছাড়া বাকি দিনগুলোতেও ৮০ ভাগের উপরে বুকিং রয়েছে। যেহেতু দেশের বিভিন্ন জায়গায় অনেক পর্যটন স্পট বন্ধ রয়েছে তাই শ্রীমঙ্গলের উপর একটি বাড়তি প্রেশার রয়েছে।”

শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও গ্র্যান্ড সেলিম রিসোর্টের মালিক সেলিম আহমেদ বলেন, ঈদের ছুটিতে ৯ তারিখ থেকে বুকিং শুরু হয়েছে। বেশী বুকিং রয়েছে ১০, ১১ ও ১২ তারিখ। এই তিনদিন সবারই হাউসফুল পর্যটক থাকে। তাছাড়া শ্রীমঙ্গলে মূলত দুই ধরনের পর্যটক আসে। যেমন- কেউ শুধু ঘুরতে আসে, তারা থাকবে না। আবার শ্রীমঙ্গলে যারা থাকার চিন্তাভাবনা করে আসে তারাই শুধু থাকেন। তবে ধারণা করা হচ্ছে এই ঈদে সবমিলিয়ে প্রায় অর্ধ লক্ষ (৫০ হাজার) এর মতো পর্যটক সমাগম ঘটার সম্ভবনা রয়েছে।”

ট্যুরিস্ট পুলিশ শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ জোনের ওসি মো. কামরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, “ঈদে পর্যটকদের নিরাপত্তায় আমাদের সক্ষমতা অনুযায়ী চেষ্টা করছি যাতে এই অঞ্চলে আগত পর্যটকেরা নির্বিঘ্নে আনন্দ উপভোগ করতে পারেন। তাছাড়া লাউয়াছড়া, মাধবপুর লেক, বধ্যভূমি, দার্জিলিং টিলাসহ বিভিন্ন চা বাগানগুলোতে আমরা আমাদের সার্বক্ষণিকভাবে টহল অব্যাহত থাকবে।”

আই নিউজ

Green Tea
সিলেট বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়