Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০১ মে ২০২৫,   বৈশাখ ১৮ ১৪৩২

আই নিউজ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৮:৩২, ২৭ জানুয়ারি ২০২৪

গাছের কথা বলা রেকর্ড করলেন বিজ্ঞানীরা!

এই প্রথমবার এমন আন্তঃউদ্ভিদ যোগাযোগ ক্যামেরায় রেকর্ড করা হয়েছে এই চিত্র।

এই প্রথমবার এমন আন্তঃউদ্ভিদ যোগাযোগ ক্যামেরায় রেকর্ড করা হয়েছে এই চিত্র।

এতোদিন মানুষ জেনেছে গাছের প্রাণ আছে। গাছের কথা বলা এতোদিন আমরা সাহিত্যে পড়েছি, গল্পে কিংবা আষাঢ়ে গল্পে শুনেছি। কিন্তু, সত্যিই যে গাছ কথা বলে তর শক্তপোক্ত প্রমাণ এবার পেলেন বিজ্ঞানীরা। গাছের কথা বলা রেকর্ড করে সাড়া ফেলে দিয়েছেন জাপানের একদল বিজ্ঞানী। 

গাছের কথা রেকর্ড করে সাড়া ফেলে দেওয়া বিজ্ঞানীরা জাপানের সাইতামা বিশ্ববিদ্যালয়ের। বিশ্ববিদ্যালয়ের আণবিক জীববিজ্ঞানী মাসাতসুগু টয়োটার নেতৃত্বে করা এই গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে বৈজ্ঞানিক জার্নাল নেচার কমিউনিকেশনে। গবেষক দলের অন্য সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন PhD শিক্ষার্থী ইউরি আরতানি এবং পোস্টডক্টরাল গবেষক তাকুয়া উয়েমুরা।

সায়েন্স অ্যালার্ট ও সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বায়ুবাহিত যৌগের একটি গন্ধযুক্ত সূক্ষ্ম কুয়াশা নির্গত করে উদ্ভিদ। এটির মাধ্য়মেই একে অপরের কাছে পৌঁছে দেয় বার্তা। এই যৌগসমূহত উদ্ভিদকে সম্ভাব্য নিকটবর্তী বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করার জন্য ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করে। 

বিজ্ঞানীদের গবেষণা বলছে, 'এয়ারবোর্ন কম্পাউন্ড' এক্ষেত্রে যোগাযোগের মাধ্যম। সফল ভাবে ভিডিয়ো ফুটেজ ধারণ করেছেন গবেষকরা। সেই ফুটেজে দেখা গিয়েছে কী ভাবে গাছপালা বাতাসের মাধ্যমে সংকেত চিহ্নিত করে এবং পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানায়। এই প্রথমবার এমন আন্তঃউদ্ভিদ যোগাযোগ ক্যামেরায় রেকর্ড করা হয়েছে এই চিত্র।

অনুসন্ধানী দলের পর্যবেক্ষণ, কী ভাবে সুস্থ গাছ প্রতিক্রিয়া জানায় পোকামাকড় বা অন্য কোনও ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত গাছপালা থেকে নির্গত উদ্বায়ী জৈবযৌগের (ভিওসি) প্রতি। গবেষণায় লেখকের ব্যাখ্য, 'উদ্ভিদ গাছপালা পোকামাকড় বা অন্যান্য উপায়ে ক্ষতিগ্রস্ত নিকটবর্তী উদ্ভিদ দ্বারা নির্গত উদ্বায়ী জৈবযৌগ শনাক্ত করতে সক্ষম। এই VOC গুলো উদ্ভিদ অনুভব করতে পারে। প্রতিক্রিয়া হিসেবে নিজেদের স্ব-প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা চালু করে দেয়। অর্থাৎ, নিজেকে রক্ষা করে। এই ধরনের আন্তঃউদ্ভিদ যোগাযোগ পরিবেশগত হুমকি থেকে সহায়তা করতে গাছপালাকে রক্ষা করতে।'

যেভাবে রেকর্ড করা হলো গাছের কথা 

এই প্রক্রিয়াটি বোঝার জন্য দু'টি গাছ নেন বিজ্ঞানীরা। কিছু পোকার উপদ্রবের ব্যবস্থা করেন একটি গাছে । কিছু শুঁয়োপোকা গাছটির পাতায় ছেড়ে দেওয়া হয়। পরীক্ষায় দেখা যায়, শুঁয়োপোকা সেই গাছটির পাতা খেতে শুরু করতেই অন্য একটি গাছে তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। একটি টমোটো গাছের পাতায় ছাড়া হয়েছিল শুঁয়োপোকা। শুঁয়োপোকা সেই টমেটো গাছের পাতাগুলি খেতে থাকে। পাশেই ছিল আরাবিডোপসিস থালিয়ানা গাছ। তাতে ব্যবহার করা হয় ক্যালসিয়াম আয়ন। দুই গাছের কথাবার্তা ধরা পড়ে বায়োসেন্সরের ব্যবহারে। টমোটো পাতা থেকে আরাবিডোপসিসে 'ভোলাটাইল অরগ্যানিক কম্পাউন্ড' ছড়িয়ে পড়ে। এই যৌগ বা 'কম্পাউন্ড' গ্রহণ করে আরাবিডোপসিস গাছটি বুঝতে পারে যে পাশের টমেটো গাছটি আক্রান্ত। যার জেরে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়া শুরু হয় আরাবিডোপসিস গাছটিতে। গাছের গোটা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে সতর্কতা। শরীরকে সতর্ক করতে শুরু করে গাছটি। টয়োটার ব্যবহার করা ক্যালসিয়াম আয়নে আরাবিডোপসিসে পাতায় উজ্জ্বল হলুদ সঙ্কেত দিতে থাকে। এই প্রক্রিয়া হয় বায়বীয় যৌগের আদানপ্রদানে। 

মলিকিউলার বায়োলজিস্ট বলছেন, 'কখন কীভাবে উদ্ভিদ নিজেদের মধ্যে সতর্কবার্তা পাঠায় তা আবিষ্কার হল। এর থেকে প্রমাণিত যে, একটা বড় জিনিস আমাদের চোখের আড়ালে রয়েছে। গাছ সঠিক সময় নিজেদের তথ্য আদানপ্রদান করে। সেই তথ্য গ্রহণ করে নিজেদের সতর্ক করে।'

সুতরাং, এখন থেকে আর 'গাছ কথা বলে' বিষয়টি হালকা করে নিলে ভুল হবে। বরং, আমাদের বিশ্বাস করতে হবে যে, গাছেরও আমাদের মতোই কথা বলারও শক্তি আছে বা তাঁরাও কথা বলে।

আই নিউজ/এইচএ 

Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়