Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, শুক্রবার   ১১ জুলাই ২০২৫,   আষাঢ় ২৭ ১৪৩২

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৩:৩৭, ১৪ জুন ২০২০
আপডেট: ১৫:২৪, ১৪ জুন ২০২০

১৪ জুন ভয়াল মাগুরছড়া দিবস

কালের পরিক্রমার আবার ঘুরে এলো ১৪ জুন। আর সেই সাথে যোগ হলো মাগুরছড়া বিপর্যয়ের আরো একটি বছর। মাগুরছড়া গ্যাসকূপ বিষ্ফোরণের ২৩ বছর অতিক্রান্ত হলেও চুক্তি মোতাবেক মার্কিন কোম্পানি অক্সিডেন্টালের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করা যায় নি।

অক্সিডেন্টালের উত্তরসূরী সেভরন ইতোমধ্যে দেশ ছেড়ে চলে গেছে। এ অবস্থায় ক্ষতিপূরণ আদায়ে তৈরী হয়েছে অনিশ্চয়তা। ১৯৯৭ সালের এইদিন মধ্যরাতে মৌলভীবাজারের মাগুরছড়া গ্যাসকুপে ভয়াবহ বিষ্ফোরণ ঘটে। বিষ্ফোরণে মুর্হুতে আগুনের লেলিহান শিখা চারিদিকে ছড়িয়ে নিমিষেই পুড়ে ছাই হয়ে যায় লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের প্রায় ২৫ হাজার গাছ জীবজন্তুসহ আশেপাশের প্রায় ৮৭.৫০ একর এলাকা।চা বাগান, বনাঞ্চল, বিদ্যুৎলাইন, রেলপথ, সড়কপথ, গ্যাসকূপ, পরিবেশ, প্রতিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

পুড়েছিলো মাগুরছড়া খাসিয়াপুঞ্জির (আদিবাসী গ্রাম) বাড়িঘর ও পানগাছ। মাগুরছড়া পুঞ্জির মন্ত্রী (পুঞ্জিপ্রধান) জিডিশন প্রধানসুচিয়াঙ বলেন, ’সেই দিনের কথা মনে হলে এখনও আমরা আতকে ওঠি। সারা জীবনই হয়তো সেই দুঃসহ স্মৃতি বয়ে বেড়াতে হবে।’

তিনি আরো জানান তারা ক্ষতিপূরণ বাবদ কিছু টাকা পেয়েছিলেন।স্থানীয়রা জানান, মাগুরছড়া বিষ্ফোরণের পর লাউয়াছড়া জাতীয়উদ্যান এলাকায় অনেক পশুপাখি কমেছে। আগে দেখা যেতো এমন অনেক পশুপাখি এখন আর দেখা যায় না।

মার্কিন কোম্পানি অক্সিডেন্টালের অদক্ষতায় লাগা আগুন গ্যাসকূপের ৮৫০ফুট গভীরতায় পৌঁছালে বিস্ফোরণ ঘটে। পুড়ে যায় উত্তোলনযোগ্য ২৪৫.৮৬ বিসিএফ গ্যাস। যার সে সময়কারমূল্য ছিল প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা। গ্যাস ছাড়াও পরিবেশ ও অন্যান্য ক্ষতির পরিমাণ সেই সময় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার ১১৬কোটি টাকা।

অক্সিডেন্টাল যৎসামান্য ক্ষতিপূরণ দিয়ে ইউনিকলনামে আরো একটি কোম্পানির কাছে ফিল্ড বিক্রি করে বাংলাদেশ থেকে চলে যায়। পরবর্তীতে ইউনিকল উত্তরসূরি মার্কিন কোম্পানি সেভরনের কাছে গ্যাসকূপ বিক্রি করে এদেশ ত্যাগ করে। সেভরনও তাদের সম্পদ বিক্রি করে চলে গেছে। কিন্তু ক্ষতিপূরণ আদায়ে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেনি সরকার।

তবে পরিবেশবাদী ও বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক সংগঠন ক্ষতিপূরণ আদায়ের দাবিতে এখনও আন্দোলন করছেন। লাউয়াছড়া জীববৈচিত্র্য রক্ষা আন্দোলনের আহবায়ক জলি পাল বলেন, ’সেইবিষ্ফোরণে লাউয়াছড়ার প্রায় ২৫ হাজার গাছ পুড়েছিলো আর জীববৈচিত্র্যের ক্ষতির কোন সঠিক হিসেব কেউ করেনি। সেইধ্বংসযজ্ঞের ছাপ এখনো লাউয়াছড়া বয়ে বেড়াচ্ছে। কিন্তু এতদিনেও ক্ষতিপূরণ আদায় না করা রাষ্ট্রের ব্যর্থতা।’

 
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতিসংরক্ষণ বিভাগ) আ ন ম আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ’ তৎকালীন সময়ে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের প্রায় ৭শ একর সংরক্ষিত বনাঞ্চল গাছপালা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় এবং জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। পরবর্তীতে একটি কমিটির মাধ্যমে ক্ষয়-ক্ষতি নিরূপণ করে পরিশোধের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হলেও এখন পর্যন্ত কোন ক্ষতিপূরণ বন বিভাগ পায় নি। সেই চেষ্টা এখনো অব্যাহত আছে।

Green Tea
সর্বশেষ