Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, শুক্রবার   ০২ মে ২০২৫,   বৈশাখ ১৯ ১৪৩২

বিশেষ প্রতিবেদক, মৌলভীবাজার

প্রকাশিত: ১৯:২৮, ১৬ মার্চ ২০২৩
আপডেট: ১৮:৪৯, ১৯ মার্চ ২০২৩

বনায়নের নামে বন বিভাগের লাগানো আগুনে পুড়ছে পাথারিয়া বন

পাথারিয়া বনে আগুন লেগে এ পর্যন্ত বনের সাড়ে ৪ একর জায়গা পুড়ে গেছে। ছবি- আই নিউজ

পাথারিয়া বনে আগুন লেগে এ পর্যন্ত বনের সাড়ে ৪ একর জায়গা পুড়ে গেছে। ছবি- আই নিউজ

মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলায় অবস্থিত পাথারিয়া হিলস রিজার্ভ ফরেস্ট বনের ধলছড়ির মাকাল জোরায় ৪ দশমিক ৫ একর জায়গার বন আগুনে পুড়ে গেছে। কয়েকদিন ধরে পুড়তে থাকা বনের খবর দেশের গণমাধ্যমগুলোতেও এসেছে। এ ঘটনায় ব্যবস্থা নেয়ার কথা বন বিভাগ জানালেও অভিযোগ খোদ বন বিভাগের বিরুদ্ধেই। 

মৌলভীবাজারের জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলার উত্তর পূর্ব প্রান্ত জুড়ে থাকা পাথারিয়া হিলস রিজার্ভ ফরেস্টেটিকে আছে চারটি বন্য হাতি, যা সিলেটের আর কোথাও নেই। সম্প্রতি এই বনে আগুন লাগানোর বিষয়টি ক্ষুব্ধ করেছে স্থানীয় এলাকাবাসীসহ সচেতন পরিবেশকর্মীদের। বনবিভাগের উপর এ অভিযোগ উঠেছে যে, সামাজিক বনায়নের নামে এই আগুন লাগিয়ে তারা সংরক্ষিত বনের বিশাল একটি অংশ পুড়িয়ে দিয়েছে। 

স্থানীয় পরিবেশকর্মীরা বলছেন, আগুন লাগার স্থানটি ছিল প্রাকৃতিক হাতির আবাসস্থল। তাছাড়া এখানে যে বাঁশবাগান ছিল, তা ছিল হাতির খাবার।

পাথারিয়া হিলস রিজার্ভ ফরেস্টের বড়লেখা রেঞ্জের সমনভাগ এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, আট দিন ধরে আগুন জ্বলে বন পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।বিষয়টি জেনেও আগুন নেভানোর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বন বিভাগের বিরুদ্ধে। উল্টো বিভিন্নভাবে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে তাদের উপর। প্রথমে তারা দাবি করেছিল বিষয়টি বড় নয়। কিন্তু যখন এটি আলোচনায় আসে তখন ধামাচাপা দিতে নানা উদ্যোগ নেয় বন বিভাগ।

বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, "আমি বনে আগুন লাগার বিষয়টি জেনেছি। এটি সাধারণ বন বিভাগের অধীনে। তবে যেহেতু সংরক্ষিত বন এলাকায় আগুন লেগেছে, এতে সরীসৃপ প্রজাতির প্রাণীসহ বিভিন্ন কীটপতঙ্গ, পাখির বাসার ব্যাপক ক্ষতি হবে। বিশেষ করে হাতির খাবার নষ্ট হওয়ার কারণে মানুষ-হাতির দ্বন্দ্ব বাড়তে পারে। খাদ্যাভাবে হাতি যদি লোকালয়ে আসে অনেক বড় ক্ষতিও হতে পারে।"

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বড় গাছের গুঁড়ি পড়ে মাটির সাথে মিশে আছে। ছোট-বড় মিলিয়ে অন্তত ২০ হাজার গাছ পুড়েছে, কাটা হয়েছে লাখ লাখ বাঁশ। আগুন লাগানোর আগে বনবিভাগ গাছগুলো কেটে নেয় বলে জানা গেছে। তাছাড়া, স্থানীয়দের সাথে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতেও কৌশলে বাধা দিচ্ছে বনবিভাগ।

সেখানে নিয়মিত যাওয়া-আসা করা কামাল আহমদ বলেন, "এক সপ্তাহ আগে বনে আগুন দেখতে পাই। আগুনের তীব্রতা বেশি থাকায় তা বনের অনেক জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি বন বিভাগকে জানালেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।"

এর আগে গত শনিবার ১১ মার্চ সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মিশ্র চিরহরিৎ সমনভাগ এলাকায় ধলছড়ি ও মাকাল জোরা এলাকায় বনভূমি আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। একপাশে দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন। আগুনে পুড়ে অজগর সাপ, চশমাপরা হনুমান, মায়া হরিণ, কচ্ছপ, বনরুই, সজারুসহ বিভিন্ন সরীসৃপ প্রজাতির আবাস্থল এবং বিরল কীটপতঙ্গ ও বেশ কিছু প্রজাতির বৃক্ষের ক্ষতি হয়।

সেদিন আরো দেখা যায়, বনের আরেক পাশে চলছে বাঁশ কাটার মহোৎসব। প্রায় ৪০ জন শ্রমিক দিয়ে সরকারি সম্পত্তিগুলোকে বিনষ্ট করা হচ্ছে। এসব বাঁশ পরবর্তীতে আগুন দিয়ে পোড়ানো হবে।

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, লাঠিটিলা, সমনভাগ, বড়লেখা, মাধবছড়া বিট নিয়ে এই সংরক্ষিত বন। পরিবেশগতভাবে মিশ্র চিরহরিৎ সমনভাগ বনাঞ্চলের এ অংশটি ইন্দো-বার্মা জীববৈচিত্র্য হটস্পটের একটি অংশ এবং এটি ভারত-বাংলাদেশের আন্তঃসীমান্তব্যাপী ছয়টি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মধ্যে একটি।

পরিবেশকর্মীরা বলছেন, স্থানীয় বন বিভাগ বনায়নের নামে অর্থ আত্মসাতের জন্য এই কাজ করছে। গত বছরও তারা একই কাজ করেছে কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

আই নিউজ/এইচএ 


Eye News YouTube Channel : মৌলভীবাজারে হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসায় লাইফ লাইন হাসপাতাল | ICU | CCU | Dialysis | Emergency Call

Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়