Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০১ মে ২০২৫,   বৈশাখ ১৮ ১৪৩২

পূর্ণা রায় ভৌমিক

প্রকাশিত: ১১:৪৭, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
আপডেট: ২২:৪৩, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

অকপট সত্যি ২৩/১

শিশুকে সত্য বলতে সক্ষম করে তোলা খুব বেশি প্রয়োজন

 কেস স্টাডি ১.

আমার স্কুলে একদিন এক অভিভাবক জানালেন  তার সন্তান খাতায় ভুল লিখেছিলো শিক্ষক সেখানে রাইট দিয়েছেন।। তাঁর বক্তব্য হলো শিক্ষক যদি ভুলকে চিহ্নিত না করে দেন শিশু ভুল শিখবে। আমি বিষয়টি দেখবো বলে আশ্বাস দিলাম।

শিশুর সাথে আলাদা কথা বললাম। অভিভাবকের সাথে অনেকক্ষণ আলাদা কথা বললাম। বুঝতে পারলাম অভিভাবক শিশুর সামর্থ্যকে এড়িয়ে গিয়ে নিজের মান সম্মান আর ভবিষ্যৎ নিয়ে ব্যাকুল। শিশুটি কি দ্বিধাগ্রস্ত নয়?

আমি যখন আমার সহকর্মী শিক্ষকের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বললাম; তখন তিনি পুরো বিষ্ময়ের সাথে আমাকে জানালেন যে, তিনি এমন করেন নি! তার সময়ের ভেতর জমা দেয়া সব খাতা তিনি দেখেছেন সত্যি এমন ভুল তো হওয়ার কথা নয়!  তখন আমার সহকর্মী নিজেই আবিষ্কার করলেন, শিশুটি সময়মতো তার খাতা দেখায় নি। কিন্তু বাসায় অভিভাবক মারবেন তাই নিজে ক্লাসের পরে লিখে, ভুল শুদ্ধ যাচাই না করে, বন্ধুর কাছে থাকা অন্য রঙের কালির কলম দিয়ে রাইট দিয়ে শিক্ষকের স্বাক্ষরের মতো কিছু একটা করে নিয়ে অভিভাবককে দেখিয়েছে। 

বিষয়টি অনেক ঘেঁটে  দেখতে আমাকে ওইদিনের ওই বিষয়ের খাতাগুলো চেক করতে হলো। দেখলাম আমার সহকর্মী নির্দোষ। সহকর্মী যে রঙের কালি দিয়ে খাতা দেখেছেন ওই শিশুর খাতায় রাইট দেয়া কালির রঙ ছিলো সম্পূর্ণ আলাদা। সহকর্মীর নির্দোষ প্রমাণ হওয়া যতোটা না স্বস্তির ছিলো কয়েকগুণ অস্বস্তির ছিলো শিশুর এমন আচরণ। 

শিশুর সাথে আলাদা কথা বললাম। অভিভাবকের সাথে অনেকক্ষণ আলাদা কথা বললাম। বুঝতে পারলাম অভিভাবক শিশুর সামর্থ্যকে এড়িয়ে গিয়ে নিজের মান সম্মান আর ভবিষ্যৎ নিয়ে ব্যাকুল। শিশুটি কি দ্বিধাগ্রস্ত নয়?

কেস স্টাডি ২.
সময়টা আসলেই উপলব্ধির। এই শহরেরই কোনো এক নামকরা স্কুলের এক শিক্ষার্থী তার ফলাফল শিট কম্পিউটার ব্যবহার করে, প্রাপ্ত নম্বর বাড়িয়ে বাসায় নিয়ে গিয়েছে। এদিকে স্কুলে সে অকৃতকার্য! এবার শিক্ষক এবং অভিভাকের মধ্যে সৃষ্টি হলো দ্বন্দ্ব! অবশেষে শিশুটি স্বীকার করলো সত্য ঘটনা কি ছিলো! 

এই শিশুর পিতামাতার ভবিষ্যৎ কি তার হাতে নিরাপদ?

কেস স্টাডি ৩.
একটা বখে যাওয়া ছেলেকে চিনতাম, যে তার মাকে পর্যন্ত মারধোর করতো প্রায়শই। এক সময় ছেলেটি প্রেম করে বিয়ে করলো, অতঃপর মদ্যপ অবস্থায় বৌকে পেটাতো। প্রায়শঃই বৌয়ের চেহারায় নীলচে কালচে দাগ পড়তো। 

বিষয়গুলো  গভীর ভাবনার:  
তাঁদের পরিবার কেমন ছিলো? শিশুর শৈশব নিরাপদ ছিলো কি? শিশুর ইচ্ছাকে মূল্যায়ন করা হয়েছে কি? মনস্তত্ব কী বলে! শিশুদের নিয়ে কাজ করছি ত্রিশ বছর... অভিজ্ঞতা থেকেই বলছিঃ

  • একজন অভিভাবকের অতৃপ্তি ও অপ্রাপ্তি শিশুর ওপর চাপানো যাবে না।
  • শিশুকে তার মেধাকে বিকশিত করার সময় দিতে হবে। 
  • শিশুকে তার যে দিকে ঝোঁক আছে সে দিকে উৎসাহিত করলেই সে ভালো করবে।
  • শিশুকে সত্য কথা বলতে দিতে হবে।
  • প্রয়োজনে সত্য বললে পুরস্কৃত করতে হবে।
  • শিশুর সামনে তার গুরুজন বা শিক্ষকের সমালোচনা করা যাবে না।
  • শিশুকে এমন অভয় দিতে হবে যেনো সে সত্যিটা বললে অভিভাবক কষ্ট পাবেন না। কারণ, শিশু যখন বুঝতে পারে আমার খারাপ ফলাফল আমার পিতামাতাকে পীড়া দেবে তখন সে নিজের মতো করে মনগড়া কথা দিয়ে পিতামাতাকে সান্ত্বনা দেয় আর এর ফলে সে মিথ্যা কথায় পারদর্শী হয়।

শিশুর খারাপ ফলাফলে অভিভাবককেই বেশি ইতিবাচক সাপোর্ট দিতে হবে,যেনো সে আত্মবিশ্বাস না হারায়। 

শিশুকে তার নিজেকে পরিমাপ করতে শেখাতে হবে। তার বন্ধুরা তার চেয়ে কোনদিকে এগিয়ে কোনদিকে পিছিয়ে সে বিষয়টি তাকেই উপলব্ধি করতে দিতে হবে। সেক্ষেত্রে অভিভাবক হিসেবে মন খারাপ হলেও বুঝতে দেয়া যাবে না। 

আসুন একটু ভাবি প্রত্যেক শিশুর ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবোধ আছে। তারা প্রত্যেকে পৃথক সত্তা নিয়ে আপন জগতে বিচরণ করে. যে শিশু শিক্ষকের কাছে ভুল বলে বাসায় গিয়ে শিক্ষকের ওপর দোষ চাপায় সে বড় হয়ে বংশগতির প্রভাবে বেশি প্রভাবিত হলে সমাজে অমঙ্গল ডেকে আনার সম্ভাবনাই বেশি। 

এসব শিশুর ওপর ভালো ইতিবাচক পরিবেশের প্রভাব বেশি বেশি পড়ুক, অনেক বড় হোক, শুদ্ধ মানুষ হোক এটাই শুধু প্রত্যাশা।

পূর্ণা রায় ভৌমিক, শিক্ষক ও লেখক 

  • খোলা জানালা বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। eyenews.news-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে eyenews.news আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আই নিউজ/এইচএ  

Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়