আবদুচ ছালাম
আপডেট: ১৭:৩২, ১৮ অক্টোবর ২০২১
রাসেল থাকুক বাংলার প্রতিটি শিশুর মাঝে
আজ শেখ রাসেল দিবস। 'শেখ রাসেল দীপ্ত জয়োল্লাস, অদম্য আত্মবিশ্বাস' এই প্রতিপাদ্য নিয়ে প্রথম বারের মত জাতীয়ভাবে প্রতিপালিত হচ্ছে।
১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর। চরম উৎন্ঠার কাল তখন। সামনে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। স্বৈরাচারী আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে সর্বদলীয় মোর্চা গঠন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী করা হয়েছে ফাতেমা জিন্নাহকে। বাংলার অবিসংবাদিত নেতা তৎকালীন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক শেখ মুজিবর রহমান নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত। দলীয় মিটিং, সমাবেশের জন্য তিনি তখন চট্টগ্রামে অবস্থান করছিলেন। এদিকে তাঁর ধানমন্ডি বত্রিশ নম্বরের বাড়ী আলোকিত করে ভূমিষ্ট হয় এক শিশু পুত্র। শিশুটির নাম রাখা হয় রাসেল। স্বামী মুজিবের কাছে বার্ট্র্যান্ড রাসেলের লেখনীর ব্যাখ্যা ও ফিলোসপি শুনে শুনে বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব তাঁর ভক্ত হয়েছিলেন। পারমানবিক যুদ্ধ বিরোধী বিশ্বনেতা, দার্শনিক ও বিজ্ঞানী বারট্রান্ড রাসেলের নামানুসারে তার সদ্যজাত শিশুটির নাম রাসেল।
শিশু রাসেলের বেড়ে ওঠার সময়টাতেই তার কিছু অসাধারণত্ব ধরা পড়ে। সাধারনত কোন শিশু হাঁটতে শেখার প্রথম দিকে কয়েক কদম হেঁটেই বসে পড়ে। কিন্তু রাসেল প্রথম যেদিন হাঁটতে শুরু করেন অনেকটা সারা বাড়ীময় বিরামহীন হেঁটেছে। তাকে খাবার দিলে সে কখনোই সবটা নিজে খেতনা। বাসায় একটা কুকুর ছিল, এই কুকুরটাকে সে তার খাবার ভাগ দিত। ধানমন্ডির বাসা ও টুঙ্গিপাড়ার গ্রামের বাড়ীতে সবসময় শত শত কবুতর পোষা হত। শিশু রাসেল এই কবুতরের পিছন পিছন ছুটে খেলত এবং তাদের খাবার খাওয়াত। বাড়ীর পোষা পশু পাখিদের প্রতি তার ছিল প্রগাঢ় বন্ধুত্ব ও মমত্ববোধের সম্পর্ক। তাই কখনো বাড়ীতে কবুতরের মাংস কিংবা স্যুপ তৈরী করা হলে শিশু রাসেলের মন খারাপ হত এবং কখনোই সে এসব মুখে তোলেনি। বাসার কুকুর টমি একদিন সজোড়ে ঘেউ ঘেউ করলে রাসেল খুব কষ্ট পায়, সে ভাবে কোন কারনে টমি বুঝি তার উপর রাগ করেছে এবং তাকে বকাবকি করেছে। শেখ রাসেলের বড় আপু হাসু'পা তথা আমাদের আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধু তনয়া জননেত্রী শেখ হাসিনার স্মৃতিকথা 'আমাদের ছোট রাসেল সোনা' থেকে আমরা তার বিকশমান অসাধারন কিছু গুন ও মানবিকতার কথা জানতে পারি। আজকের শিশুদের মাঝে এ স্মৃতি কথাটি গবেষনা করে শিশুতোষ কাহিনীরূপে পৌঁছে দিয়ে তাদের সুন্দর মানসিক বিকাশের সুযোগ হতে পারে। এ ব্যাপারে বিশেষ মনযোগ দেয়া প্রয়োজন মনে করি। এখানে আমরা দেখি রাসেল সকলের সাথে মিলে মিশে থাকতে পছন্দ করত। এমন কি, একজন শিশু হিসেবে তাকে যখন খাইয়ে দেয়া হত তখনও সে একাকী খেতে চাইতনা। সকলে খেতে বসলে তাদের সাথে বসিয়ে খাওয়াতে হত। পরিবারের সাথে গ্রামের বাড়ীতে বেড়াতে গেলে পাড়ার সব শিশুদের ডেকে নিয়ে বাড়ীর আঙ্গিনায় তাদের প্যারেড করাত। ঢাকা থেকেই সবার জন্য প্যারেডের পোষাক কিনিয়ে নিয়ে যেত রাসেল। প্যারেড শেষে সবাইকে চকলেট, বিস্কুট খাওয়াত রাসেল। গ্রামের লোকজন আদর করে ডেকে বড় হয়ে কি হতে চায় জানতে চাইলে রাসেল বলত সে আর্মি অফিসার হতে চায়। এতে তার নেতৃত্বের গুন, সাহসিকতা ও দেশ প্রেমের গুন প্রকাশ পায়।
দুঃখ, কষ্টকে লুকিয়ে রেখে নিজে নিজে সহ্য করার মত অসাধারন গুন ছিল রাসেলের। বাবার অনুপস্থিতি কিংবা যে কোন কারণে মনে কষ্ট এলে নিরবে চোখের জল ফেলত। কেউ দেখে জিজ্ঞেস করলে সে বলত চোখে পোকা বা ময়লা কিছু পগেছে।
১৯৭১সালে মহন মুক্তিযুদ্ধের সময় শিশু রাসেলের বয়স ছিল মাত্র ৬/৭ বছর। তখনও তার মধ্যে বুদ্ধিবৃত্তির বহিঃপ্রকাশ ঘটে। আকাশে যখন মিত্র বাহিনীর বিমান উড়ত এবং বোমা বর্ষন করত তখন বিকট শব্দে সদ্যজাত ভাগিনা জয় (বর্তমানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা) কেঁপে ওঠত, অনেক সময় ফুঁপিয়ে কাঁদত। এটি দেখে রাসেল পকেটে সবসময় তুলা রাখত এবং বিমানের শব্দ হলে জয়ের কানে তুলা গুজে দিত।
দেশ স্বাধীনের পর একজন প্রেসিডেন্টের আদরের কনিষ্ট সন্তান হয়েও কোন প্রটোকল ছাড়াই নিজে সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাওয়া আসা করত। তার পোষাক পরিচ্ছদে ছিল বিশেষ পছন্দ, তাতে তার অনন্য ব্যাক্তিত্বের অভিব্যাক্তি প্রকাশ পেত। যাতে বোঝা যেত বড় হলে রাসেল অনন্য মাপের একজন হয়ে ওঠতে পারে।
১৯৭৫ সালে ঘাতকেরা মূহুর্মূহূ গুলি বর্ষণে হত্যার তান্ডবে ৩২নম্বর বাড়ীটিতে রক্তের হোলি খেলায় মত্ত ভয়ার্ত শিশু রাসেল প্রথমে মায়ের কাছে যেতে চাইল। ঘাতকেরা যখন তাকে মায়ের লাশের কাছে নিয়ে যায় তখন রাসেল বার বার আকুতি জানাচ্ছিল, আমাকে আমার হাসু'পার কাছে নিয়ে চল। আমি হাসু'পার কাছে যাব। শিশু রাসেল বুঝেছিল এখন তার একমাত্র নিরাপদ আশ্রয় শেখ হাসিনা। ঘাতকেরা সেদিন রাসেলকে তার হাসু আপার কাছে নিয়ে যায়নি। তাকে গুলিতে হত্যা করে মায়ের লাশের উপর ফেলে যায়। এ জঘন্য হত্যাকান্ডে সদ্যজাত বাংলাদেশ হারায় তার জনক জননীকে। নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ে বাংলার স্বাধীনতা ও জনগন। অনেক চড়াই উৎড়াইয়ের রক্তাক্ত সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে প্রিয় বাংলাদেশ এখন সেই রাসেলের প্রিয় হাসু'পা জাতির জনকের কন্যা জননেত্রেী শেখ হাসিনার হাতে নিরাপদ হয়েছে, উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় তাঁর হাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছে অদম্য গতিতে।
জয় বাংলা
জয় বঙ্গবন্ধু
জয়তু শেখ হাসিনা।
আবদুচ ছালাম, সাবেক চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও কোষাধ্যক্ষ, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ।
- বরিশালে সন্ধ্যা নদীতে জেলের জালে ধরা পড়লো হাঙর
- বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ২০২৩ ফলাফল : নৌকা ৮৭৭৫৩, হাতপাখা ৩৪৩৪৫
- গাজীপুর সিটি নির্বাচন প্রাপ্ত ফলাফল
- বাড়িতে ফোন দিয়ে জানলেন তিনি বাঘের থাবায় মারা গেছেন, চলছে দাফনের প্রস্তুতি
- দেলোয়ার হোসেন সাঈদী মারা গেছেন
- নির্বাচন ফলাফল লাইভ ২০২৪ | BD election result 2024
- প্রেমের টানে বরিশালে, ‘দেশি প্রেমিকের’ হাতে মার খেয়ে পালালেন ভারতীয় প্রেমকান্ত
- রোজার মধ্যে চার তলায় না উঠায় ফুডপান্ডা রাইডারকে মারধর
- দেশে লাল কাঁঠাল চাষে ব্যাপক সম্ভাবনা
- পাখির বাসায় বিষাক্ত সাপ, হাত দিয়ে প্রাণ হারালো শিশু