Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, শুক্রবার   ১১ জুলাই ২০২৫,   আষাঢ় ২৭ ১৪৩২

আই নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:২৯, ২ মে ২০২৩

আসামে মুসলিম বেড়েছে অনুপ্রবেশের কারণেই? 

ভারতে এনআরসি বিরোধী আন্দোলনে একজন মুসলিম নাগরিক। ছবি- Getty Images

ভারতে এনআরসি বিরোধী আন্দোলনে একজন মুসলিম নাগরিক। ছবি- Getty Images

আসামে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশকে দেখা হচ্ছে। ভারতের গুয়াহাটি হাইকোর্টে চলমান এক মামলায় এরিমধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আসামে মুসলিম জনসংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে এবং এ জন্য ‘সীমান্তের ওপার থেকে আসা’ লোকজনরাই দায়ী।

শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) ওই মামলার শুনানিতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে ডেপুটি সলিসিটর জেনারেল রঞ্জিত কুমার দেব চৌধুরী আদালতে এই বক্তব্য পেশ করেন। বক্তব্যে তিনি এটিও বলেন যে, ভারতের এই অংশটিকে দেশের থেকে ছিনিয়ে নিয়ে আলাদা করার জন্যই এই ষড়যন্ত্র করা হয়েছে।  

আসামে যারা বিদেশি বা অবৈধ অভিবাসী হিসেবে ইতিমধ্যেই শনাক্ত হয়েছেন তাদের ডিপোর্টেশনের আগে ভারতে থাকাকালীন কী কী অধিকার প্রাপ্য, সেই সংক্রান্ত একটি মামলাতেই কেন্দ্রীর সরকারের তরফ থেকে তাদের এই অবস্থানের ব্যাপারে জানানো হয়েছে। 

যদিও এই বক্তব্যকে 'হিংসাত্মক' হিসেবে দেখছেন দেশের বহু আইন বিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকার আইনজীবীরা। তারা কেন্দ্রীয় সরকারের এই বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

অন্যদিকে আসামের মুসলিম সোসাইটির নেতারা কেন্দ্রীয় সরকারের এই বক্তব্যকে ভিত্তি ও প্রমাণহীন বলে মন্তব্য করেছেন। তারা বলছেন, রাজ্যের মুসলিম জনসংখ্যা যদি বেড়েও থাকে তাহলে সেটার জন্য সীমান্তের অন্য দিক থেকে হওয়া অনুপ্রবেশ দায়ী – এরকম দাবির কোনও ভিত্তি নেই, প্রমাণও নেই!

উল্টোদিকে এসব মামলার সাথে সম্পৃক্ত আইনজীবীদের কেউ কেউ আবার মনে করেন, আসামে যে বছরের পর বছর ধরে বেআইনি অনুপ্রবেশ ঘটেছে এনআরসি বা জাতীয় নাগরিকপঞ্জীর খসড়া পরিসংখ্যান থেকেই তা স্পষ্ট।

আসামে অনুপ্রবেশ : বাস্তবতা কতোটা সত্য? 
অবৈধ অনুপ্রবেশ বস্তুত আসামে বহু পুরনো ও স্পর্শকাতর একটি রাজনৈতিক ইস্যু। টানা বেশ কয়েক বছর ধরে রাজ্যে এনআরসি অভিযান চালানোর পরও সেই বিতর্কের কোনও মীমাংসা হয়নি – এখন আদালতে কেন্দ্রের এই অবস্থান সেই বিতর্কেই নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে পর্যবেক্ষকরা ধারণা করছেন।

আসাম তথা ভারতের বহু বিশ্লেষকই কিন্তু মনে করেন, অবৈধ অনুপ্রবেশ আসামের ক্ষেত্রে একটা বিরাট সমস্যা এবং সেটাকে উপেক্ষা করার কোনও সুযোগ নেই। ভারতের সুপ্রিম কোর্টের একজন সিনিয়র আইনজীবী শুভদীপ রায়, তিনি বার্তাসংস্থা বিবিসিকে বলছিলেন, ভারতের শীর্ষ আদালতও এই পরিস্থিতির (আসামে অনুপ্রবেশের) কথা স্বীকার করে নিয়েছে।

তিনি জানান, ২০০৫ সালে সর্বানন্দ সোনোওয়াল বনাম ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়া মামলায় সুপ্রিম কোর্ট পরিষ্কার বলেছিল আসাম বৈদেশিক আগ্রাসনের ভিক্টিম। সাবেক পূর্ব পাকিস্তান এবং বর্তমান বাংলাদেশ থেকে ব্যাপক হারে অভিবাসনের কারণেই আসামে জনসংখ্যার চরিত্র বদলে গেছে বলেও বিচারপতিরা স্বীকার করে নিয়েছিলেন।

জাতীয় নাগরিকপঞ্জী বা ‘এনআরসি অভিযান’
বস্তুত ওই মামলার জেরেই পরে আসামে জাতীয় নাগরিকপঞ্জী তৈরির কাজ শুরু হয়, যা ‘এনআরসি অভিযান’ নামেও পরিচিত।

শুভদীপ রায় বলেন, “এনআরসি-তে প্রথমে আসামের মোট ৪০ লক্ষ বাসিন্দার নাম বাদ পড়ে, যারা নিজেদের বৈধ নাগরিকত্বের দাবির পক্ষে ঠিকঠাক কাগজপত্র পেশ করতে পারেননি। পরে তাদের আপিলের ভিত্তিতে সংখ্যাটা ১৯ লাখে নেমে এসেছে ঠিকই, কিন্তু এটাও কোনও চূড়ান্ত পরিসংখ্যান নয়।”

“তবে ১৯ লক্ষ ধরে নিলেও বলতেই হবে ৩ কোটি ৩০ লক্ষ জনসংখ্যার রাজ্যে আসামে অন্তত ৬ শতাংশ বাসিন্দাই ভারতের বৈধ নাগরিক নন – তারা অবশ্যই অনুপ্রবেশকারী”, যোগ করেন শুভদীপ রায়। 

তিনি আরও বলেন, “আমি অবশ্যই কেন্দ্রীয় সরকারের মুখপাত্র নই। কিন্তু আমার ধারণা আদালতে ডেপুটি সলিসিটর জেনারেলের বক্তব্যে আসামের এই বাস্তবতারই প্রতিফলন ঘটেছে।”

আই নিউজ/এইচএ 

Green Tea
সর্বশেষ