১৪ বছর ধরে বাংলাদেশের জন্য খেলে আসছেন সাকিব আল হাসান। তার নাম দিয়ে নতুন করে বাংলাদেশকে চিনেছে ক্রিকেট বিশ্ব। অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে বড় তারকা হয়ে উঠেন ইসলামপুর দলের এই ক্রিকেটার।

সাকিব আল হাসান বাংলার এক ক্রিকেট টাইগার এর নাম। সাকিব বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। টানা দশ বছর ধরে বিশ্বের শীর্ষ অলরাউন্ডার রেকর্ডের অধিকারী সাকিব এখনো একদিনের আন্তর্জাতিক ও টেস্ট ফরম্যাটে সর্বোচ্চ র‍্যাংকিং ধরে রেখেছে। দেশের মাটিতে টেস্ট এবং ওয়ানডে দুই ফরম্যাটেই দুই হাজার রান এবং এক শত উইকেট নেওয়ার অনন্য কীর্তি তার। ক্রিকেট ইতিহাসে দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে এই অনন্য রেকর্ড গড়েন তিনি। তার আগে এ রেকর্ড গড়েন সর্বকালের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার জ্যাক ক্যালিস। একই সময় টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে এক নম্বরে থাকা একমাত্র ক্রিকেটার তিনি।

এবারের ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও নতুন রেকর্ড গড়লেন সাকিব। পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে ৪ উইকেট নিয়ে গড়লেন বিশ্বকাপের সর্বচ্চ উইকেট রেকর্ডটি। এ রেকর্ডটি আগে শহিদ আফ্রিদি গড়েছিলেন। কিন্তু তার রেকর্ডটি ভেঙ্গে দিলেন ২৮ ম্যাচেই। বিশ্বকাপে শহিদ আফ্রিদি ও সাকিবের উইকেট সংখ্যা ৩৯। উইকেট একই হলে ম্যাচ কিন্তু এক নয় আফ্রিদির ৩৯ টি উইকেটগুলো শিকার করতে খেলতে হয়েছিল ৩৪ টি ম্যাচ। সাকিব সেই জায়গায় ২৮ ম্যাচে শিকার করে উইকেটগুলো। তার দুর্দান্ত ব্যাটিং, বুদ্ধিদীপ্ত, বোলিং সাথে অসাধারণ ফিল্ডিং সব মিলিয়ে আক্ষরিক অর্থে সাকিব অলরাউন্ডার এতে কারো দ্বিমত নেই।

এই খেলোয়াড় বাংলাদেশের খুলনা জেলায় ১৯৮৭ সালের ২৭শে মার্চে জন্মগ্রহণ করেন। তরুণ বয়স থেকে সাকিব ছিলেন খেলাপাগল। সাকিবের ক্রিকেট দক্ষতা অসাধারণ ছিলো বলে গ্রামান্তরে তাকে খেলার জন্য ভাড়া করে নেওয়া হত। এরকমই এক খেলায় সাকিব এক আম্পায়ারকে নিজের দক্ষতা দেখিয়ে সন্তুষ্ট করেন। তিনি পরবর্তীতে সাকিবকে ইসলামপুর পাড়া ক্লাব (মাগুরা ক্রিকেট লীগের একটি দল) এর সাথে অনুশীলন করার সুযোগ করে দেন। সেখানে তিনি স্পিন বোলিং নিয়ে পরিক্ষা-নিরিক্ষা করেন এবং সফল হন। ফলস্বরূপ, ইসলামপুর দলে খেলার সুযোগ পান। এই প্রথম তিনি সত্যিকারের ক্রিকেট বল দিয়ে খেলার সুযোগ পান। এখান থেকে তার খেলার ক্যারিয়ার যাত্রা  শুরু হয়। 

আইসিসি ওয়ার্ল্ডকাপ ২০১৯-এ সাকিব। ফাইল ছবি।

সাকিব বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি) ছয়মাস প্রশিক্ষণ নেন। ২০০৪ সালে ১৭ বছর বয়সে জাতীয় লীগে খেলার জন্য খুলনা দলে নাম লিখান। ২০০৫ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ দলে ত্রি-দেশীয় টুর্নামেন্টের ফাইনালে ৮৬ বলে সেঞ্চুরি করে তিনটি উইকেট নিয়ে দলকে জিতাতে সাহায্য করেন। সাকিব ২০০৫-২০০৬ সালের মধ্যে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে ১৮টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেন।

২০০৬ সালের জিম্বাবুয়ে সফরে সাকিব প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পান। একই সফরে ওয়ানডে অভিষেক হয় ফরহাদ রেজা ও মুশফিকুর রহমানের। ৬ই আগস্ট একদিনের আন্তর্জাতিক খেলায় সাকিবের অভিষেক হয়। তার প্রথম শিকার হন এলটন চিগুম্বুরা। সাকিব ২০০৬ সালের সেপ্টম্বর মাসে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন। তার সাথে চুক্তিবদ্ধ হন ফরহাদ রেজা ও মেহরাব হোসেন জুনিয়র। ফলে বোর্ডের সাথে চুক্তিবদ্ধ খেলোয়াড় সংখ্যা দাঁড়ায় ২৩ জন। ২০০৭ সালের মে মাসে তার টেস্ট অভিষেক হয় চট্টগ্রামে ভারতের বিপক্ষে। ২০০৯ সালে প্রথমবারের মতো ভারপ্রাপ্ত অধিনায়কে দ্বায়িত্ব পালন করেন সাকিব। তার নেতৃত্বে সেবার বাংলাদেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজ জিতে আসে। মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে এসে একে সাফল্যের সিঁড়ির ডিঙ্গিয়ে সাকিব আজ বাংলাদেশের সবচেয়ে দামী তারকার একজন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন।

২০১৫ সালে আইসিসির খেলোয়াড়দের র‍্যাংকিং অনুসারে টেস্ট, ওডিআই ও ২০টি প্রত্যেক ক্রিকেট সংস্করণে প্রথম ও একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে এক নম্বর অলরাউন্ডার হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। প্রথম বাংলাদেশী ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডে ক্রিকেটে চার হাজার করার কৃতিত্ব অর্জন করেন। ২০১৭ সালের ১৩ই জানুয়ারি টেস্টে সাকিব ২১৭ রান করে সর্বোচ্চ ব্যাক্তিগত রান সংগ্রাহক হন। তিনি টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে হাজার রান পূর্ণ করেন পূর্ণ করেন। দ্বিতীয় অলরাউন্ডার হিসেবে টি-২০ তে ১০০০ রান ও ৫০ উইকেট লাভ করেন। ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে ওয়ানডেতে পাঁচ হাজার রান ও দুই শত উইকেট করেন তিনি। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত ওয়ানডেতে ২৩৫টি  উইকেট সাকিবের। টেস্টে সাকিবের উইকেট ১৮৮টি। টেস্টে বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের পক্ষে সর্ব্বোচ্চ ইনিংসটিও সাকিবের। সাকিব ইতিহাসের সেই চতুর্থ বোলার যে টেস্টে নয় প্রতিপক্ষের সবার বিপক্ষে ইনিংসে পাঁচ উইকেট নেয়। ২০১৯ সালে জুন মাসে সাকিব কৃতিত্ব অর্জন করেন ১৯৯ ম্যাচে ৫,০০০ রান ও ২৫০ উইকেট নেওয়া দ্রুততম খেলোয়াড়।

২০১১ সালে কলকাতার নাইট রাইডার্স সাকিবকে ৪ লাখ ২৫ হাজার ডলারে কেনা হয়। দুই কোটি রুপিতে আইপিএলের নিলামে সাকিবে কিনে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। এছাড়াও অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ, পাকিস্তানের পিএসএল, ওয়েস্ট ইন্ডিজের সিপিএল, শ্রীলঙ্কার এসএলপিএল লিগগুলোতে খেলেছেন সাকিব। এর মধ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এর সিপিএলে তার ৬ রানে ৬ উইকেট টি-টোয়েন্টির সেরা বোলিংগুলোর একটা হয়ে আছে। 

কলকাতা নাইট রাইডার্সের (কেকেআর) জার্সিতে বাংলাদেশের পোস্টারবয় সাকিব।

এই লম্বা ক্যারিয়ারে অনেকবার অনেক সমালোচনায় জড়িয়ে পড়েন সাকিব। মাঠে ও মাঠের বাহিরে বিভিন্ন কার্যকলাপের  কারণে সাকিব সমালোচিত হয়েছেন। ২০১৪ সালের জুলাইয়ে তাকে জাতীয় দল থেকে ছয় মাসের জন্য ও বাংলাদেশের বাইরের ক্লাব ক্রিকেটের জন্য ২০১৫ সালের জুলাই পর্যন্ত পুরো এক বছরের জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড তাকে নিষিদ্ধ করে।

• আরও পড়ুন- সুপার টুয়েলভে লড়বে কারা? জেনে নিন বিশ্বকাপের সময়সূচি

বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান বলেছিলেন- জাতীয় দলের কোচ চণ্ডিকা হাথুরাসিংহার সাথে দুর্ব্যবহার, মাঠে অশোভন আচরণসহ আরো বিভিন্ন অভিযোগে তাকে এ শাস্তি দেয়া হয়েছে। এই শাস্তি দেওয়ার জন্য পরবর্তীতে বোর্ডকেই সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়। পরে ২৬ আগস্ট বিসিবির বোর্ড সভায় সাকিবের ইতিবাচক আচরণের কথা বিবেচনা করে, নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ কমানো হয়। একই বছরে ১৫ সেপ্টেম্বর সাকিব আবার মাঠে নামেন। এছাড়া আরো বিভিন্ন সমালোচনা, বহিষ্কার, নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হন সাকিব। ১৪ বছর ধরে বাংলাদেশের জন্য খেলে আসছেন সাকিব আল হাসান। তার নাম দিয়ে নতুন করে বাংলাদেশকে চিনেছে ক্রিকেট বিশ্ব। অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে বড় তারকা হয়ে উঠেন ইসলামপুর দলের এই ক্রিকেটার।

বাংলাদেশের সুপারম্যান।

জাতীয় দলের হয়ে খেলার পাশাপাশি বাংলাদেশের একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে বিদেশি লিগ গুলোতে নিয়মিত খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে একমাত্র সাকিব আল হাসানের। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ক্রিকেটারদের একজন হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন তিনি।

আইনিউজ/তনিমা রশীদ/এসডি

তামিমকে টপকে দুইয়ে সাকিব

বিশ্বকাপ থেকে কেন সরে দাঁড়িয়েছিলেন তামিম?

কেন খেলা শুরুর ৭ মিনিটের মাথাতেই আর্জেন্টিনার সাথে ম্যাচ বন্ধ করে দিলো ব্রাজিল?