Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, সোমবার   ৩০ জুন ২০২৫,   আষাঢ় ১৬ ১৪৩২

স্পোর্টস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:০৪, ২৯ অক্টোবর ২০২১
আপডেট: ২০:৪৩, ২৯ অক্টোবর ২০২১

আশা শেষ বাংলাদেশের, ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতলো ৩ রানে

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করতে নেমেছিলো টাইগাররা, কিন্তু ধরা দিল না স্বস্তির জয়। শেষ ওভারে ১৩ রানের সমীকরণ মিলল না। ম্যাচ হারল ৩ রানে। শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে যে আনন্দের ঢেউ উপচে উঠছিল, শেষে এসে হতাশা সঙ্গী হলো। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে টানা তিন ম্যাচ হেরে বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে খেলার সম্ভাবনা শেষ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদদের।

শুক্রবার (২৯ অক্টোব) শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতল ৩ রানে।

খেলার শুরুতে টস জিতে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে প্রথমে বল হাতে নেন মাহমুদউল্লাহ। উইন্ডিজ ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে করে ১৪২ রান। জবাব দিতে নেমে ২০ ওভারের ৫ উইকেট হারিয়ে ১৩৯ রান তুলে শুধু শেষ ওভারে রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনা উপহার দিল, জেতা আর হলো না।

কেমন ছিলো বাংলাদেশের ব্যাটিং

জবাবে স্বীকৃত ওপেনার লিটন ও সৌম্য সরকার থাকতেও ইনিংস শুরু করেন সাকিব-নাঈম। তবে তারাও ঘুরলেন একই বৃত্তে। ধীর শুরুর পর ইনার সার্কেলের ভিতর বাজে শটে ফিরেন সাকিব, তার ব্যাট থেকে আসে মাত্র ৯ রান। পরে ১৯ রান করে পাওয়ার প্লের মাঝেই ফিরেন নাঈম। এদিন প্রথম ৬ ওভারে দল তোলে মাত্র ২৯ রান। হারায় দুটি মূল্যবান উইকেট।

উইকেট কিপার নুরুল হাসানের চোটের কারণে ছন্দহীন সৌম্য সরকার পান আরেকটি সুযোগ। তবে কাজটা ঠিকঠাক করতে পারেননি। ব্যাট হাতে ১৩ বলে ২ চারে করেন ১৭ রান। কিন্তু বরাবরের মতো ফিরেন বাজে শটে। পরে বিতর্কিত সুইপ শটে ফিরেন মুশফিকও।

মুশফিকুর রহিম যখন আউট হয় তখন বাংলাদেশের প্রয়োজন ৩০ বলে ৪৪ রান। তখন দলের হাল ধরতে আসেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ক্রিজে ততক্ষণে থিতু হওয়া লিটন কুমার দাশও। বাংলাদেশও অপেক্ষা করছিল বিশ্বকাপের মূল পর্বের দ্বিতীয় জয়ের। কিন্তু শেষটা টাইগারদের হলো না। স্নায়ু চাপ কাটিয়ে আঠারো ওভার পর্যন্ত খেলায় থাকলেও শেষ বলে খেই হারায় বাংলাদেশ। ১৯তম ওভারে বাউন্ডারি লাইনে ধরা পড়েন লিটন। তার ব্যাট থেকে আসে দলীয় সর্বোচ্চ ৪৩ রান। ৩১ রান করেন মাহমুদউল্লাহ।

কেমন ছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সপ্তম আসরে  সুপার টুয়েলভে গ্রুপ-১এর নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৪২ রান করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

একাদশে থেকে দু’টি পরিবর্তন এনে শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সুপার টুয়েলভে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচ খেলতে নামে বাংলাদেশ। নুরুল হাসান ও নাসুম আহমেদের  পরিবর্তে একাদশে সুযোগ পান  সৌম্য সরকার ও তাসকিন আহমেদ। টস জিতে প্রথমে বোলিং করতে নামে বাংলাদেশ। 

তৃতীয় ওভারেই প্রথম সাফল্য পেতে পারতো বাংলাদেশ। মুস্তাফিজুর রহমানের বলে পয়েন্টে ঠেলে রান নিতে দৌঁড় দিয়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওপেনার ক্রিস গেইল। কিন্তু অপরপ্রান্তে গেইলের ডাকে সাড়া দেননি আরেক ওপেনার এভিন লুইস। পয়েন্টে থাকা সাকিব আল হাসান বল থ্রো করেছিলেন, কিন্তু তার থ্রো স্টাম্প খুঁজে পায়নি। ফলে এ যাত্রায় বেঁচে যান গেইল। 

তবে  একই  ওভারের শেষ বলে উইকেট শিকারের আনন্দে ভাসে বাংলাদেশ। ফিজের লেগ স্টাম্পের বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে আকাশে তুলে দেন  ৯ বলে ৬ রান করা লুইস। স্কয়ার লেগে সেই ক্যাচটি নেন মুশফিকুর রহিম। 

নিশ্চিত রান আউট থেকে বাঁচলেও চতুর্থ ওভারে বিদায় ঘন্টা বাজে গেইলের। দ্বিতীয়বারের মত আক্রমনে এসে গেইলকে বোল্ড করেন স্পিনার মাহেদি হাসান। ১০ বল খেলে ৪ রান করে আউট হন  আত্মস্বীকৃত  ইউনিভার্স বস। 

বাংলাদেশী বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিং পাওয়ার-প্লেতে সুবিধা করতে  না পারা  ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২ উইকেটে ২৯ রান সংগ্রহ করে। 

এ অবস্থায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের চাপ আরও বাড়িয়ে দেন মাহেদি। সপ্তম ওভারের চতুর্থ বলে মাহেদির বলে লং-অফে সৌম্যকে হাতে ক্যাচ দেন ৭ বলে রা৯ রান করা  শিমরোন হেটমায়ার। এতে ৩২ রানে ৩ উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অবশ্য উইকেট সংখ্যাটা ৪ হতে পারতো। একই  ওভারের তৃতীয় বলে রোস্টন চেজ ক্যাচ দিয়েছিলেন মাহেদিকে। তবে  সেটি ধরতে পারেনি টাইগার স্পিনার। 

দ্রুত ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে লড়াইয়ে ফেরানোর চেষ্টা করেন চেজ ও অধিনায়ক কাইরন পোলার্ড। বড় জুটির প্রয়োজনে সর্তকতার সাথে খেলছিলেন তারা। হেটমায়ারের আউটের পর ২৩ বলে কোন বাউন্ডারি ও ওভার বাউন্ডারি পায়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। মুস্তাফিজুরের করা ১১তম ওভারের শেষ বলে বাউন্ডারি মারেন অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা চেজ। এ সময় বল হাতে উইকেট নিতে না পারলেও, কৃপণ ছিলেন দলের সেরা খেলোয়াড় সাকিব। ২ ওভারে মাত্র ৭ রান দেন তিনি। 

১৩তম ওভারে আক্রমনে আসেন বাংলাদেশের পেসার তাসকিন। ঐ ওভারের তৃতীয় বলে ১ রান নিতে গিয়ে অসুস্থতায় আহত অবসর নেন পোলার্ড। ১৬ বল খেলে ৮ রান করেন তিনি। 

পোলার্ডের জায়গায় ব্যাটিংয়ে আসেন আন্দ্রে রাসেল। আগের বলে পোলার্ড ১ রান নেয়ায় নন-স্ট্রাইকেই থাকতে হয় রাসেলকে। দুভার্গ্য সেখানেই পেয়ে বসে রাসেলকে। 

তাসকিনের ডেলিভারিতে বোলার ব্যাক-ড্রাইভ শট নিয়েছিলেন চেজ। সেই শটে বল পায়ে লাগিয়ে নন-স্ট্রাইকের উইকেট ভাঙ্গেন তাসকিন। তখন লাইনের বাইরে ছিলেন রাসেল। তাতে রান আউট হন রাসেল। তাই কোন বল না খেলেই খালি হাতে ফিরেন বিগ হিটার রাসেল। ৬২ রানে চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন রাসেল। 

পরের ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের চাপ আরও বাড়ানোর সুযোগ তৈরি করেছিলেন সাকিব। দ্বিতীয় ডেলিভারিতে স্লগ-সুইপ করেছিলেন চেজ। বল হাওয়ায় ভাসলেও  মিড উইকেটে সেই ক্যাচ ফেলেন মাহেদি। তখন ২৮ রানে ছিলেন চেজ। 

একই ওভারে আবারো উইকেট পাওয়ার সুযোগ হাতছাড়া হয় সাকিবের। ওয়েস্ট ইন্ডিজের নিকোলাস পুরান উইকেটে ছেড়ে আসায় চতুর্থ ডেলিভারিটি ওয়াইড দিয়েছিলেন সাকিব। এতে স্টাম্পের সুযোগ তৈরি হয়েছিলো। কিন্তু সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি উইকেটরক্ষক লিটন দাস। ফরে ব্যক্তিগত ৩ রানে জীবন পান পুরান।

জীবন পেয়ে মারমুখী হয়ে উঠেন পুরান। সাকিবের করা ১৬তম ওভারের প্রথম দুই বলে ছক্কা মারেন তিনি। ১৮তম ওভারে মাহেদিকেও দু’টি ছক্কা হাঁকান পুরান। 

এতে ১৮ ওভার শেষে ৪ উইকেটে ১১৯ রান পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তাই শেষ দুই ওভারে পুরান ও চেজের কাছ থেকে চার-ছক্কার ঝড় দেখায় অপেক্ষায় ছিলো ক্যারিবীয়রা। যাতে বাংলাদেশের সামনে লড়াকু দেয়া যায়। 

কিন্তু ১৯তম ওভারের প্রথম দুই বলে পুরান ও চেজের বিদায় নিশ্চিত করেন বাংলাদেশের বাঁ-হাতি পেসার শরিফুল ইসলাম। ডিপ কভারে নাইমকে ক্যাচ দেন পুরান। আর বোল্ড হন চেজ। ২২ বলে ১টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৪০ রান করেন পুরান। ৪৬ বলে ২টি চারে ৩৯ রান করেন চেজ। পঞ্চম উইকেটে ৫৭ রান যোগ করেন তারা। 

ইনিংসের শেষ ওভারে বল হাতে নিয়েছিলেন মুস্তাফিজ। প্রথম বলে ডোয়াইন ব্রাভোকে শিকার করেন ফিজ। কিন্তু পরের দুই বলে ছক্কা আদায় করে নেন জেসন হোল্ডার। ব্রাভোর আউটে উইকেটে আসেন আহত অবসর নেয়া পোলার্ড। শেষ বলে ছক্কায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস শেষ করেন পোলার্ড। ফলে শেষ ওভার থেকে ১৯ রান তুলেন হোল্ডার ও পোলার্ড। এতে ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৪২ রানের লড়াকু স্কোর পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। 

হোল্ডার ৫ বলে ২টি ছক্কায় অপরাজিত ১৫ এবং পোলার্ড ১টি ছক্কায় অপরাজিত ১৪ রান করেন। বাংলাদেশের মাহেদি-মুস্তাফিজুর-শরিফুল ২টি করে উইকেট নেন। উইকেটশুন্য ছিলেন তাসকিন ও সাকিব। ৪ ওভার করে বল করে তাসকিন ১৭ ও সাকিব ২৮ রান দেন।

আইনিউজ/এসডি

Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়