Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০১ মে ২০২৫,   বৈশাখ ১৮ ১৪৩২

প্রকাশিত: ১৬:৪৬, ২৩ আগস্ট ২০২৩

নজর নেই কতৃপক্ষের 

চায়না জালের দখলে খাল-বিল, হারিয়ে যাচ্ছে দেশি প্রজাতির মাছ

চায়না দুয়ারী টেপাই জাল উঠিয়ে নিয়ে আসছেন একজন স্থানীয় ব্যক্তি। ছবি-  আই নিউজ

চায়না দুয়ারী টেপাই জাল উঠিয়ে নিয়ে আসছেন একজন স্থানীয় ব্যক্তি। ছবি- আই নিউজ

কারেন্ট  জাল ও চায়না দুয়ারী টেপাই জালের দখলে নীলফামারীর ডিমলার বিভিন্ন নদী, খাল বিল ও জলাশয়। উপজেলার প্রতিটি নদী, খাল-বিল ও জলাশয়ে চলছে নিষিদ্ধ ঘোষিত কারেন্ট জাল ও চায়না দুয়ারী টেপাই জাল দিয়ে মাছ শিকারের প্রতিযোগিতা। প্রতিটি নদীসহ খাল বিলে এসব জাল দিয়ে অবাধে নিধন করা হচ্ছে মা ও পোনা মাছ। 

জাল দিয়ে মাছ শিকার করার ক্ষেত্রে ডিমলায় মানা হচ্ছে না মৎস্য অধিদপ্তরের মৎস্য  নিধন আইন। স্থানীয় বাজার থেকে অবৈধ এসব জাল ব্যবহার করে খাল-বিলে ও নদীতে নির্বিকারে নিধন করা হচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ আর এ জালের ফাঁদে বিলুপ্ত হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির জলজপ্রাণীও।

উপজেলার পানিবন্দী আবাদী জমির এক তৃতীয়াংশ জলাশয়ে কারেন্ট জাল আর চায়না দুয়ারী টেপাই জালে ছেঁয়ে গেছে। দেশীয় প্রজাতির নানা প্রকার মাছের পোনাসহ ডিমওয়ালা মা মাছ সহ দেশীয় প্রজাতির অন্যান্য মাছ এই জালের ফাঁদে আটকা পড়ে নিধন হচ্ছে। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলা মৎস্য বিভাগের উদাসীনতা ও জাল ব্যবসায়ীদের সাথে সংশ্লিষ্টদের গভীর সখ্যতায় প্রতিটা বাজারে প্রকাশ্যে ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে নিষিদ্ধ ঘোষিত অবৈধ কারেন্ট জালসহ বিভিন্ন প্রকার নিষিদ্ধ ঘোষিত এসব জাল।

দেশের বৃহত্তম তিস্তা সেচ প্রকল্পের ক্যানেল, বুড়ি তিস্তা নদী, ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের হরিশের বাঁধ, পূর্ব বাইশ পুকুর, মধ্য বাইশ পুকুর, তিস্তা, নাউতার নদী, সৌল্লার ঘাট, খোকশার ঘাট, সুন্দর খাতার কচুবাড়ীর দলা, পশ্চিম ছাতনাই, বালাপাড়া, ছাতনাই, পচারহাট, কুঠিরডাঙ্গা, সিলট্যাবসহ বেশ কয়েকটি জলাশয় ও নদীর তীর ঘুরে দেখা  মিলে এসব নিষিদ্ধ জাল পানিতে পেতে রাখা হয়েছে। কেউ কেউ জমিতে জাল পাতছে, কেউবা জাল থেকে মাছ ঝাড়ছে, কেউবা সেই মাছ স্থানীয় বাজারে নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। সংবাদকর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে অনেক তাড়াহুড়া করে জাল নিয়ে সটকে পড়ে। 

খালিশা চাপানি ইউনিয়নের মধ্য বাইশপুকুর গ্রামের কামাল আহমেদ নামের এক ব্যক্তির সাথে কথা হলে তিনি আই নিউজ প্রতিবেদককে, বাইশপুকুর সহ উপজেলার চারিদিকে যদি ঘুরে দেখেন নদীর তীর ও দোলায় প্রায় শতাধিক থেকে কয়েক হাজারের বেশি শুধু চায়না দুয়ারী টেপাই জাল পাবেন। আমার ২টি জাল রয়েছে। অনেকের ১০/১২টি জাল রয়েছে। 

জাল ক্রয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ডিমলা বাবুর হাট থেকে কিনে এনেছি। একটি জালের মূল্য ৭ হাজার আরেকটি জালের মূল্য ১২ হাজার টাকায় কিনেছি।

একই গ্রামের আব্দুর রহমান জানান, আগে নদীর পাড়ে অনেক মাছ পাওয়া যেত কিন্তু এখন আর সে রকম মাছ নেই। ২/৩ বছর থেকে চায়না ম্যাজিক টেপাই এর কারণে সকল প্রকার মাছ, পোকামাকড়, ব্যাঙ, সাপ, কুচিয়া ইত্যাদি মারা পড়ছে। এ কারণে মাছ নতুন পানিতে ডিম ফুটাতে পাড়ছে না। আর ডিম ফুটাতে না পারলে কিভাবে মাছ বৃদ্ধি পাবে? তিনি আশঙ্কা করে বলেন, আগামী আর ২/৩ বছর পর দেশি প্রজাতির মাছ দেখতে পাবো কিনা বলা যাচ্ছে না!

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রাইমারি শিক্ষক জানান, মাঝে মধ্যে অনেকে আসেন ঘুরে ফিরে যান। এ অঞ্চলের প্রধান সমস্যা হলো আইপিএস (ব্যাটারি) দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে মাছ শিকার করছেন। বড় মাছ তো মরছেই তার সাথে সকাল বেলা নদীর তীরে গেলে ছোট মোলা মাছ মরে ভেসে বেড়ায়। এছাড়াও সমস্যা হলো চায়না দুয়ারী জাল, কারেন্ট জাল। এগুলোর দিয়ে সকল ধরনের জলজপ্রানী ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। প্রশাসন যদি কোনো প্রকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন না করেন তাহলে দেশি প্রজাতির মাছ শুধু স্মৃতি হয়ে রবে।

তিনি আরো বলেন, কখনো কখনো কোথাও গণসচেতনতা মূলক ২/১টি চায়না দুয়ারী অথবা কারেন্ট জাল ধ্বংসের ঘটনা ঘটলেও মাঠ পর্যায়ে বিস্তার প্রতিরোধে তা অপ্রতুল।

এ বিষয়ে মৎস্য অধিদপ্তরের ডিমলা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোছা. শামীমা আক্তার বলেন, ইতিপূর্বে একাধিক জায়গায় বেশ কিছু চায়না দুয়ারী ও কারেন্ট জাল পুড়িয়েছি। গত কয়েকদিন মৎস্য সপ্তাহ গেল তাই একটু ব্যস্ত সময় পার করছি। আর আমার অফিসে জনবল সংকটও রয়েছে। একজন সহকারী ছিলেন তিনিও প্রশিক্ষণে রয়েছে। আপনি যেহেতু জানালেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্তকর্তা এসেছেন তার  সহযোগিতায় এখন থেকে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হবে।

আই নিউজ/এইচএ 

Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়