Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, শুক্রবার   ০২ মে ২০২৫,   বৈশাখ ১৯ ১৪৩২

হেলাল আহমেদ

প্রকাশিত: ১১:৪৭, ২৭ আগস্ট ২০২৩

নজরুল অনুবাদিত রুবাইয়াত্‌-ই-ওমর খৈয়াম থেকে ১০টি কবিতা

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৭তম প্রয়াণ দিবস আজ। ১৯৭৬ সালের আজকের এই দিনে জগতের সাথে তাঁর সম্পর্ক ছিন্ন করে অন্তলোকে পাড়ি জমান। কবি নজরুল তাঁর বৈচিত্র্যময় সৃষ্টিশীল জীবনে রচনা করেছেন কবিতা, গান, প্রবন্ধ, গজলসহ নানা সাহিত্যকর্ম। অনুবাদ করেছেন পারস্যের খ্যাতিমান কবি ওমর খৈয়ামের রুবাইয়াত্‌-ই-ওমর খৈয়াম। 

যুবক বয়সে পল্টনে চাকরি করার সময় কবি নজরুল ইসলাম অনুবাদ করেন ওমর খৈয়ামের বেশকিছু পার্সি কবিতা। আই নিউজের পাঠকদের জন্য আজকের থাকছে কাজী নজরুল অনুবাদিত ওমর খৈয়ামের রুবাইয়াত্‌-ই-ওমর খৈয়াম থেকে ১০টি কবিতা। 


খামকা ব্যথার বিষ খাসনে, মুষড়ে যাসনে নিরাশায়,
ফেরেব-বাজির এই দুনিয়া তুই ধরে থাক সত্য ন্যায়
আখেরে তো দেখলি বিশ্ব শূন্য ফাঁস ফক্কিকার,
তুইও মায়ার পুতুল যখন – ভয় ভাবনা যাক চুলায়!


সিন্ধু হতে বিচ্ছেদেরই দুঃখে কাঁদে বিন্দুজল,
‘পূর্ণ আমি’, কইলে হেসে বিন্দুরে সিন্ধু অতল।
সত্য শুধু পূর্ণ, বাকি অন্য যা তা নাস্তি সব,
ঘূর্ণ্যমান ওই এক সে বিন্দু বহুর রূপে করছে ছল।


আমার রানি (দীর্ঘায়ু হন দগ্ধে মারতে দাসকে তাঁর!)
হঠাৎ খেয়াল হল, দিলেন সস্নেহ এক উপহার!
গেলেন চলে অনুগ্রহের চাউনি হেনে! তার মানে –
‘তার চেয়ে ওই নালার জলে দাও ভাসিয়ে প্রেম তোমার!’


তোমার আদরিণী বধূ ছিল, প্রভু আত্মা মোর,
কাজ হতে তায় তাড়িয়ে দিলে কোন দোষে হায়, হে মনোচোর!
পূর্বে কভু ছিলে না তো এমন কঠোর, হে স্বামী!
বিরহিণী বাস করিব প্রবাসে কি জীবনভর?


যেমনি পাবি মন দুই মদ – যেখানে হোক যদিই পাস –
অমনি পানোন্মত্ত ওরে, সে মদ-স্রোতে ডুবে যাস!
যেমনি খাওয়া অমনি হবি আমার মতো মুক্ত-প্রাণ,
ভেসে যাবে রাশভারি তোর ঋষির মতো দাড়ির রাশ।


মানব-স্বভাব জড়িয়ে বহে মন্দ ভালোর দুই ধারা,
শুভাশুভ দুঃখ ও সুখ দান নিয়তির – কয় যারা,
তাদের বলি – অপরাধী করছ খামকা কুগ্রহে,
তোমার চেয়ে হাজার গুণ যে অসহায় সে বেচারা!


তোমার নিন্দা করতে সাহস করবে না আর কেউ কোথাও!
এক সে উপায় আছে যদি বিশ্বে খুশি করতে চাও
এন্তার সব শ্রদ্ধা পাবে বড়ো ছোটো সকলকার
মুসলিম খ্রিস্টান ইহুদি সবার যশোগাথ গাও।


বলতে পার! টক সে কেন আঙুর যখন কাঁচা রয়?
পাকলে ভরে মিষ্টি রসে, তারই শরাব তিক্ত হয়।
কাঠকে কুঁদে কুঁদে যখন শিল্পী গড়ে রবাব বীণ
সেই কাঠে সেই শিল্পী বেণু গড়তে পারে? নয় গো নয়!


খ্যাতির মুকুট পরলে হেথায় নিন্দা-গ্লানির পাঁক হানে,
বলবে ষড়যন্ত্রকারী রোস যদি তুই গোরস্থানে।
‘খিজির’ হও আর ‘ইলিয়াস’ হও ; সব সে-আচ্ছা এই ধরায়
জানতে চাসনে কারেও আর তোরেও কেহ না জানে।

১০
খৈয়াম! তুই কাঁদিস কেন পাপের ভয়ে অযথা?
দুঃখ করে কেঁদে কি তোর ভরবে প্রাণের শূন্যতা?
জীবনে যে করল না পাপ নাই দাবি তার তাঁর দয়ায়
পাপীর তরেই দয়ার সৃষ্টি, আনন্দ কর ভোল ব্যথা।

নজরুল ছিলেন চির প্রেমের কবি। তিনি যৌবনের দূত। তিনি প্রেম নিয়েছিলেন, প্রেম চেয়েছিলেন। মূলত তিনি বিদ্রোহী, কিন্তু তার প্রেমিক রূপটিও প্রবাদপ্রতিম। তাই মানুষটি অনায়াসেই বলতে পারেন, ‘আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন খুঁজি তারে আমি আপনায়।’

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর পরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে সপরিবারে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। তিনি রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বাংলাদেশে তার বসবাসের ব্যবস্থা করেন এবং ধানমণ্ডিতে কবির জন্য একটি বাড়ি বরাদ্দ দেন।

মৃ ত্যুর পরে জাতীয় কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়। এখানেই তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন।

আই নিউজ/এইচএ 

Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়