আশরাফ আলী, মৌলভীবাজার:
আপডেট: ১২:১৩, ১১ জুন ২০২২
দেশে ব্যাঙের ৬২ প্রজাতির মধ্যে ২৫ প্রজাতিই রয়েছে মাধবকুণ্ডে

বাংলাদেশে ৬২ প্রজাতির ব্যাঙ রয়েছে। তার মধ্যে ২৫টিরও বেশি প্রজাতির ব্যাঙের আবাসস্থল খুঁজে পাওয়া গেছে মাধবকুণ্ডের পাথারিয়া পাহাড়ে। মাধবকুণ্ডে সোনাব্যাঙ, কোলাব্যাঙ, মুরগি ডাকা ব্যাঙ, কোনো ব্যাঙ, লাল চোঁখা ব্যাঙ ইত্যাদিসহ বিভিন্ন প্রজাতির ব্যাঙ রয়েছে।
পরিবেশ রক্ষা, সামাজিক উন্নয়ন এবং দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে কাজ করা ইসাবেলা ফাউন্ডেশন এমন তথ্য জানিয়েছে। এই গবেষণাটি করেছেন ফাউন্ডেশনের একদল গবেষক। মাধবকুণ্ডের পাথারিয়া পাহাড় ও লাঠিটিলায় তাদের গবেষণা কার্যক্রম অব্যাহত আছে।
দেশ থেকে বিভিন্ন ভাবে ব্যাঙের সংখ্যা লোপ পাচ্ছে। পিছনে রয়েছে নানান মানব সৃষ্ট কারণ। জঙ্গলে রয়েছে নানান ব্যাঙের আবাস। নির্দ্বিধায় আবাসস্থল ধ্বংস, রাস্তায় গাড়ি চাপায় ব্যাঙের প্রাণ নাশ, খাবারের জন্য শিকার ও কীটনাশক ব্যবহার ব্যাঙ বিলুপ্তির প্রধান হুমকি।
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) ২০১৫ সালে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, দেশে ৪৯ প্রজাতির ব্যাঙ রয়েছে। তথ্যের রেড লিস্ট বা লাল তালিকা অনুসারে, এর মধ্যে ১০ প্রজাতির ব্যাঙ বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে।
জার্নাল অব এশিয়া-প্যাসিফিক বায়োডিভার্সিটির ২০২১ সালের ডিসেম্বরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ৬০ প্রজাতির ব্যাঙ রয়েছে। এছাড়া দুটি উভচর প্রজাতির ব্যাঙ রয়েছে। যা দেখতে কেঁচোর মতো। সবমিলিয়ে দেশে ৬২ প্রজাতির ব্যাঙ রয়েছে। এই গবেষণায় নেতৃত্ব দেন চায়নিজ একাডেমি অব সাইন্স ইউনিভার্সিটির মো. মিজানুর রহমান। সাথে ছিলেন কয়োটো ইউনিভার্সিটির কান্ত নিশিকায়া, প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির ল্যাটানা মিকাহ নেজি ও শের-ই বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী আহসান হাবিব।
আমরা যদি ব্যাঙ সংরক্ষণ করতাম তাহলে আমাদের কৃষি কাজে ও শাক-সবজি কোনোকিছুতেই পোকামাকড় দমনে কীটনাশক ব্যবহার করতে হতো না। আমরা আমাদের এই ফসলের মাঠ রক্ষক ব্যাঙকে সংরক্ষণ করতে হবে। এখনো বাংলাদেশে অনেক প্রজাতির ব্যাঙ রয়েছে যেগুলো আমাদের সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।
২০২০ সালে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে একটি নতুন প্রজাতির ব্যাঙ পাওয়া যায়। নতুন পাওয়া এ ব্যাঙটির বৈজ্ঞানিক নাম (Raorchestes longchuanensis) বা বুশ ব্যাঙ। ব্যাঙটি খুঁজে পেতে কাজ করেন ইউনাইটেড আরব আমিরাত ইউনিভার্সিটির শিক্ষক প্রফেসর সাবির বিন মুজাফফর। সাথে ছিলেন গবেষক হাসান আল রাজী এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের তখনকার দুই শিক্ষার্থী সাবিত হাসান ও মারজান মারিয়া।
২০২০ সালের শেষের দিকে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে অবস্থিত লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে Raorchestes রেজাখানী ব্যাঙ পাওয়া যায়। পরে ২০২১ সালের মে মাসে জার্নাল অব ন্যাচারাল হিজটরির একটি নিবন্ধ থেকে জানা যায়, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে অবস্থিত লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান থেকে একটি ব্যাঙ খুঁজে পান হাসান আল রাজী, মারজান মারিয়া ও মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটির নিকোলয় পয়ারকভ। নতুন পাওয়া এ ব্যাঙটির বৈজ্ঞানিক নাম (Leptobrachium sylheticum) বা লেপ্টোব্রাকিয়াম ব্যাঙ। যা বাংলাদেশের সিলেট বিভাগ ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে পাওয়া যায়।
সর্বশেষ ২০২১ সালের ডিসেম্বরে চট্টগ্রামের চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য থেকে Occidozyga swanbornorum ব্যাঙের আবিষ্কার হয়। যাতে নেতৃত্ব দেন বন্যপ্রাণী গবেষক হাসান আল রাজী।
আরও পড়ুন- বাসার ছাদে অপরূপ কালনাগিনী
ব্যাঙ যেভাবে প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে
বন্যপ্রাণী গবেষকরা জানান, ব্যাঙ প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করে। ফসলের মাঠ রক্ষা করে । তবে বর্তমানে ব্যাঙের দেখা খুব একটা পাওয়া যায় না। অনেকেই প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষাকারী ব্যাঙগুলোকে মেরে ফেলেন। এ বিষয়ে সচেতনতার অভাব রয়েছে বলে জানান গবেষকরা।
ইসাবেলা ফাউন্ডেশনের বন্যপ্রাণী গবেষক সাবিত হাসান বলেন, ব্যাঙ বিষাক্ত পোকামাকড় খেয়ে আমাদের কৃষি জমিকে রক্ষা করে। বাংলাদেশে ১৯৭০ থেকে ৮০ সাল পর্যন্ত বিদেশে প্রচুর ব্যাঙ পাচার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বিদেশিরা ব্যাঙ পাচারের মতো এই কর্মকাণ্ড গুলো করেছে আমাদের দেশে কীটনাশক ঢুকানোর জন্য। দেশের মানুষকে ব্যাঙ দমনে আসক্ত করেছিল। আমাদের দেশে আজ ব্যাঙ বিলুপ্তির পথে।
তিনি আরও বলেন, আমরা যদি ব্যাঙ সংরক্ষণ করতাম তাহলে আমাদের কৃষি কাজে ও শাক-সবজি কোনোকিছুতেই পোকামাকড় দমনে কীটনাশক ব্যবহার করতে হতো না। আমরা আমাদের এই ফসলের মাঠ রক্ষক ব্যাঙকে সংরক্ষণ করতে হবে। এখনো বাংলাদেশে অনেক প্রজাতির ব্যাঙ রয়েছে যেগুলো আমাদের সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।
প্লাম্পলরিস জার্মানী এর প্রজেক্ট ম্যানেজার ও বন্যপ্রাণী গবেষক হাসান আল রাজী বলেন, ব্যাঙ দেখে পরিবেশের অবস্থা সম্পর্কে জানা যায়। যে এলাকায় ব্যাঙ বেশি সে এলাকার পরিবেশ ভালো আর যে এলাকায় ব্যাঙ নেই সে এলাকার পরিবেশের অবস্থা ভালো নয়।
তিনি বলেন, ব্যাঙের উপকারিতা অনেক। খাদ্যশৃঙ্খলের অনেক বড় জায়গা দখল করে আছে ব্যাঙ। ব্যাঙ হত্যা বন্ধ করার জন্য স্কুল লেভেলের বাচ্চাদের বুঝাতে পারলে তারা মানুষকে বুঝাবে।
চা বাগানে ও পাহাড়ে কীটনাশক ব্যবহারের ফলে মারাত্মক প্রভাব পড়ে। যা ছোট খাল হয়ে নদীতে পড়ে ব্যাঙের প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট করে। যা পরিবেশের জন্য হুমকি বলে জানান এই গবেষক।
আইনিউজ/এইচএ
- এবার কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে চলে এসেছে তিমি
- ঘুমন্ত মানুষের ঘামের গন্ধে আসে এই সাপ, দংশনে নিশ্চিত মৃত্যু
- মারবেল ক্যাট: শ্রীমঙ্গলে দেশের একমাত্র এবং সবচেয়ে বিরল বিড়াল
- তৌহিদ পারভেজ বিপ্লবের ক্যামেরায় সুন্দরবনের চিত্রা হরিণ
- পটকা মাছ কেন বিষাক্ত?
- পটকা মাছ বিষাক্ত কিনা বুঝবেন যেভাবে
- মাছরাঙা হত্যা: যুবকের বিরুদ্ধে মামলা
- মৌলভীবাজারে গরুর দলের সাথে চিত্রা হরিণ শাবক...
- গ্রামবাসি মেরে ফেলে মা গোখরাকে, ডিম ফোটে জন্ম নিলো ৪৪টি বাচ্চা
- সাপুড়ের বাড়ি থেকে কিং কোবরা, খৈয়া গোখরাসহ কালনাগিনী উদ্ধার