Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, সোমবার   ৩০ জুন ২০২৫,   আষাঢ় ১৬ ১৪৩২

তনিমা রশীদ

প্রকাশিত: ১১:৫০, ২৫ অক্টোবর ২০২১
আপডেট: ১২:২২, ২৫ অক্টোবর ২০২১

দিনাজপুরের গিলি খেলোয়াড় লিটন দাস

ইএসপিএনের মতেও `ক্লাসি` খেলোয়ার লিটন দাস।

ইএসপিএনের মতেও `ক্লাসি` খেলোয়ার লিটন দাস।

দশ জুন ২০১৫ বাংলাদেশ বনাম ভারত সিরিজের একমাত্র টেস্ট ম্যাচ। টান টান উত্তেজনাপূর্ণ সেই বাংলাদেশ ম্যাচ হারলেও ক্রিকেট বিশ্বকে চমকে দিয়েছিলো তরুণ বাংলাদেশী ওপনার লিটন দাস। অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে মাঠে নেমে প্রথম ইনিংসে ৮টি চার আর ১ ছক্কার সাহায্যে ৪৫ বলে ৪৪ রান করেন তিনি। অশ্বিন ও হরভজনকে দারুণ হাতে সামলে নিয়েছিলেন সেদিন।

সেই ম্যাচের পর বাংলাদেশ খুঁজে পায় প্রতিভাবান, আত্নবিশ্বাসী উদীয়মান খেলোয়াড় লিটন দাসকে। জন্মস্থান দিনাজপুর থেকে ক্রিকেটের যাত্রা শুরু করেন বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলোয়াড় লিটন দাস। ক্রিকেট খেলার অনুপ্রেরণা খুঁজে পেয়েছেন বড় ভাই বাপ্পি দাসের কাছ থেকে। যিনি দ্বিতীয় বিভাগের ক্রিকেটার। কিন্তু যার হাত ধরে আজ তিনি ক্রিকেটার হয়েছেন তিনি হলেন বর্তমান দিনাজপুর জেলা ক্রিকেট টিমের কোচ আবু সামাদ মিঠু, লিটনের জীবনের সর্বপ্রথম কোচ। যার কারণে লিটন আজ দিনাজপুরের গিলি ক্রিকেটার থেকে বাংলাদেশের জাতীয় দলের ক্রিকেটার।

লিটন বাংলাদেশ ক্রীড়া প্রতিষ্ঠানের (বিকএসপি) যাত্রা শুরু করেন ‘প্রচেষ্টা ক্রিকেট ক্লাব' থেকে। বয়সভিত্তিক প্রায় সব দলে খেলেছেন তিনি। ২০১০ সালে অনুষ্ঠিত স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডা ইয়াং টাইগার্স জাতীয় স্কুল ক্রিকেটে ৮ ম্যাচে ৪১৪ রান আর ১৫ ডিসমিসাল ৫৩৯ করে স্কুলের মধ্যে টুর্নামেন্ট সেরা হন লিটন। পরবর্তী বছরে ১৭ অক্টোবরে ঢাকা বিভাগের বিপক্ষে তার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের অভিষেক ঘটে।

পরে ১৭ বছর বয়সে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ২০১২ সালে আন্তর্জাতিক মাঠে নামেন লিটন৷ সেই খেলায় রেকর্ড গড়ে নিজেকে প্রমাণ করলে দিনাজপুরে গিলি খেলোয়াড় লিটন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এই খেলায় ৬ ম্যাচে ১ সেঞ্চুরি ও ২ হাফ সেঞ্চুরিসহ ২৬২ রান করে দ্বিতীয় বাংলাদেশী হয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের তালিকায় নিজের নাম লিখেন লিটন দাস। যাত্রা সেখানে থেমে থাকেনি ঠিক দু’বছর পর ২০১৪ সালের অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে প্লেট ফাইনালে ৭৫ বলে ৮০ সহ ৬ ম্যাচে ৫০ গড়ে তিনি করেন ২০০ রান। সেখানেও দ্বিতীয় বাংলাদেশী হয় রেকর্ড গড়েন। এরপর থেকে বয়স ভিত্তিক দল ছাড়াও ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলছেন। ২০১৪-২০১৫ সালের ডিপিএলে ১৬ ম্যাচে ১টি সেঞ্চুরি আর ৫টি হাফসেঞ্চুরিতে ৪৩ গড় আর ৯১ স্ট্রাইকরেটে তোলেন ৬৮৬ রান যা ওই টুর্নামেন্টের ২য় সর্বোচ্চ রান ছিলো। এছাড়াও পাঁচটি সেঞ্চুরি করে দুটো নতুন রেকর্ড গড়েন তিনি।

২০১৫ লিগের শেষ রাউন্ডের ম্যাচে ঢাকা মেট্রোর বিপক্ষে ১ম ইনিংসে ১০৭ করে এক আসরে সব থেকে বেশি ৫টি সেঞ্চুরি করেন। তারপর দ্বিতীয় ইনিংসে ৭৭ রান ও ৩ টি হাফ সেঞ্চুরি করেন। ১৩ ইনিংসে মোট রান করেন ১০২৪। জাতীয় লিগে এর আগে কোনো ব্যাটসম্যান ৪টির বেশি সেঞ্চুরি করতে পারেননি। এছাড়াও চট্টগ্রামের মিনহাজুল আবেদীন নান্নুর করা ১৫ ইনিংসে ১০১২ রান দিনাজপুরের গিলি লিটন ২ ইনিংস কম ব্যাট করে ১০২৪ রান করেন।

বাংলাদেশের ৭৭তম টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে ১০ জুন ২০১৫ সালে তার অভিষেক ঘটে। ভারতের বিপক্ষে খেলেন তিনি। যখন ৯০ রানের প্রয়োজন ছিলো তখন মাঠে নামেন লিটন। অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৪৪ রান তোলেন ৪৫ বলে, ৮ চার আর ১ ছক্কার সাহায্যে। যদিও ঐ ম্যাচ আমরা জিততে পারিনি। কিন্তু লিটনের খেলার প্রসংশা করেছে সকলে। অশ্বিন, হরভজনকে দারূণ হাতে সামলে ছিলেন তিনি। কমেন্ট্রি বক্সে বসা হার্শা ভোগলে গিলি লিটনের প্রসংশায় বলেন ‘এতটা ক্লাসি প্লেয়ার আমি কখনোই দেখিনি’। খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এ টেস্টে তার এ রানটি অভিষেকে বাংলাদেশী উইকেট কিপারদের মধ্যে সর্বোচ্চ।

টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২১ এ লিটন দাস

৫ জুলাই ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশী ৪৬তম ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেক ঘটে লিটনের। শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত দুটি খেলার টি ২০ আই সিরিজের প্রথমটিতে কুইন্ট ডি কককে ক্যাচ আউট করেন নাসির হোসেনের বলে। ঐ খেলায় ডেভিড উইস'র বলে এবি ডি ভিলিয়ার্সের ক্যাচে আউট হন লিটন। আউট হবার সময় ২২ রান তুলেন এক ছক্কারর সাহায্যে। সাকিব আল হাসানের পর দলে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তুলেন তিনি। ২০১৮ সালে একদিনের ক্রিকেটে প্রথম সেঞ্চুরি করেন লিটন। ম্যাচটি ছিলো ভারতের বিপক্ষে ২৮ সেপ্টেম্বরে।

১৭ জুন ২০১৯ সালে তার প্রথম বিশ্বকাপে অভিষেক হয়। টানটনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে খেলেছেন তিনি। পঞ্চমতম ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতে নেমে ৯৪ রান করেন। সেই খেলায় বাংলাদেশ দল সাত উইকেটের বিশাল জয়লাভ করে। অভিষেক খেলায় হ্যাট্রিক বাউন্ডারীর রেকর্ড গঠনের একমাত্র বাংলাদেশী ক্রিকেটার লিটন দাস।

আইনিউজ/তনিমা রশীদ/এসডি

Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়