নিজস্ব প্রতিবেদক, মৌলভীবাজার
আপডেট: ২১:২৬, ১৫ জুলাই ২০২১
মৌলভীবাজারে কাঁঠালের ফলন ভালো হলেও দাম নিয়ে চাষীরা হতাশ

মৌলভীবাজারে পাহাড়ি এলাকায় বৃদ্ধি পেয়েছে কাঁঠালের চাষ। জেলায় এবছর ফলটির ভালো ফলন হলেও করোনা সতর্কতায় আসছেন না দূর-দূরান্তের ব্যবসায়ীরা। যার কারণে স্থানীয় বাজারেই কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে রসালো এই ফল। বাজারে দাম না পাওয়ায় লোকসানের মুখে পড়েছেন চাষীরা।
সরেজমিনে কুলাউড়ায় ব্রাক্ষণ বাজার, কমলগঞ্জের শমসেরনগর, মুন্সিবাজারসহ কয়েকটি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বাজার ভর্তি কাঁঠাল। বিভিন্ন বাগান থেকে জিপ ও ছোট ট্রাকে করে কাঁঠালসহ অন্যান্য ফল নিয়ে আসা হচ্ছে এবং খুচরো ও পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। চাষী ও ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এসব বাজারে ফলের মৌসুমে তাজা ফল বিক্রি হয়। কাচা পাকা সব ফল সরাসরি বাগান থেকে চাষীরা নিয়ে আসেন। স্থানীয় পাইকার ছাড়াও ঢাকা, সিলেট, রাজশাহীসহ দূর-দূরান্তের ব্যবসায়ীরা এসব বাজার থেকে ফল কিনে নিয়ে যান। কিন্তু কভিড পরিস্তিতির কারণে গতবছর থেকে দূর-দূরান্তেরা ব্যবসায়ী আসছেন না বাজারে। যার কারণে স্থানীয় ব্যবসায়ীরাই একমাত্র ভরসা। এতে বাজারে সরবরাহ বাড়লেও চাহিদা রয়েছে কম।
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরসূত্র জানায়, এবছর জেলার কুলাউড়া, বড়লেখা, জুড়ি, কমলগঞ্জ, শ্রীমঙ্গলসহ পাহাড়ি এলাকায় মিষ্টি ও রসালো ফল কাঁঠালের ভালো ফলন হয়েছে। বাড়ির অভ্যন্তরে ও বাণিজ্যিকভাবে লাগানো প্রায় ৫০০ বাগান মিলে এবছর জেলায় প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর জমিতে কাঁঠালের চাষ হয়েছে।
স্থানীয় জাতের এই ফলের সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে কুলাউড়া উপজেলায় ৮শ হেক্টর। বড়লেখা উপজেলায় ২শ হেক্টর, জুড়িতে ২শ, কমলগঞ্জে ৩শ হেক্টর, শ্রীমঙ্গলে ৩শ, রাজনগর উপজেলায় ৩শ হেক্টর এবং সদর উপজেলায় ১শ পঞ্চাশ হেক্টর। প্রতি হেক্টরে উৎপাদন ২০টন করে হিসেব করে উৎপাদন লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার মেট্রিক টন। কাঁঠাল চাষী, শ্রমিক, ব্যবসায়ী ও বাজারজাতের সাথে যুক্ত সবমিলে রয়েছেন প্রায় ৪০ হাজার মানুষ। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ফলের মান ও আকার ভালো হয়েছে। উৎপাদন ইতিবাচক তারপরও ফলের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় হাসি নেই চাষীদের মুখে।
শ্রীমঙ্গলের ডলুবাড়ী এলাকার চাষী ধনঞ্জয় বর্মা জানান, মৌসুমের শুরুতে ফসলের ভালো দাম মিলেছে কিন্তু এখন ভরা মৌসুমে দাম পড়েেেগছে। দূর-দূরান্তের ব্যবসায়ীরা এখান থেকে এসে ফল নিয়ে যেতেন কিন্তু গতবছরের মতো এবার লকডাউন ও করোনার ভয়ে ক্রেতারা আসছেন না। এজন্য স্থানীয় বাজারে চাহিদা কমেছে ফলটির। দুবছর আগে যে কাঁঠাল ১০০ টাকা বিক্রি করেছি সেটি এবার ৫০-৭০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।
কমলগঞ্জের কাঁঠাল ব্যবসায়ী লতিব মিয়া বলেন, ভরা মৌসুমে এমনিতেই দাম কিছুটা কম থাকে কিন্তু এবছর দাম বেশি কমে গেছে। বাজারে করোনার প্রভাব। মৌসুমী পাইকার আসেননি। স্থানীয় ক্রেতাও কম। তিনি আরো বলেন গত বছরও করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি এবারও একই অবস্থা।
চাষীরা জানান, ব্যবসায়ীদের থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন চাষীরা। কারণ ফল উৎপাদন ও বিক্রি করতে যে খরচ হয়েছে কম দামে ফল বিক্রি করায় বাণিজ্যিক বাগানগুলো পড়েছে বেশি লোকসানের মুখে। ব্যবসায়ীরা বাগান বা আরৎ থেকে ফল ক্রয় করেন তারা কম দামে কিনলে বিক্রি করেন কম দামে আবার বেশি দামে কিনলে বেশি দামে বিক্রি করেন।
ব্যবসায়ী জানান, ফলের বাজারে দাম কমার উল্লেখযোগ্য একটি কারণ হচ্ছে, করেনাকালে বাবার বাড়ি থেকে মেয়ের বাড়ি আম কাঁঠাল পাঠানো হচ্ছে না। যেটি সিলেটের আদি ও পুরনো ঐতিহ্য। স্থানীয়ভাবে যেটিকে ’জৈঠারী’ বলা হয়। প্রতিবছর এই মৌসুমে বাবার বাড়ি থেকে মেয়ের বাড়ি জৈঠারীর ফল পাঠানোর জন্য বাজারে আম কাঁঠাল আনারসের চাহিদা থাকতো কিন্তু করোনাকালে গত বছর থেকে ছেদ পড়েছে প্রাচীন সেই প্রথায়।
শ্রীমঙ্গল আড়ৎ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ভরা মৌসুমে বাজারগুলোতে প্রতিদিন প্রায় কোটি টাকার কাঁঠাল বেচাকেনা হলেও চাহিদা ও দাম কমায় বিকিকিনি কমে অর্ধেকে নেমেছে। করোনা পরিস্থিতির আগে যে আকারের ১০০ কাঁঠাল তিন থেকে চার হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে সেই ফল এবার দুই থেকে আড়াই হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তিনি দাবি করেন মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমেছে যার কারণে বাজারে ফলের চাহিদা কমেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের উপ-পরিচালক কাজী লুৎফুল বারী করোনাকালে বাজারে কাঠাঁলের দামের নিম্নমুখী প্রবণতা স্বীকার করে বলেন, সরকার চাষীদের পাশে আছে। গতবছরের প্রায় সমান ফলন হয়েছে এবার। চাষীরা দাম কম পেলেও ভোক্তা পর্যায়ে ঠিকই দাম বেশি। এতে মধ্যসত্ত্বভোগীরা লাভবান হচ্ছে। কাঁঠালের চাষ বৃদ্ধিতে চাষীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সব ধরনের সহযোগীতার আশ্বাস দেন তিনি।
আইনিউজ/এসডি
- প্লাস্টিক বোতলে সহজেই চাষ করুন পুঁই শাক
- এলাচ চাষ করবেন যেভাবে
- ঔষধি গুণধর কালো মোরগের চাষ হচ্ছে বাংলাদেশেও
- মাটি ছাড়া শুধু পানি দিয়ে ঘাস চাষ
- বাড়ির টবে ক্যাপসিকাম চাষ পদ্ধতি
- ৬৫ মণ ওজনের বাংলার বস
- বাড়ির ছাদে ড্রাগন ফলের চাষ পদ্ধতি
- দেশেই বিদেশি ড্রাগন ফলের বাম্পার ফলন
- ভাদ্র মাসে চাষ করতে পারেন যেসব সবজি
- মাছ রফতানি বেড়েছে ১৩৫ গুণ
কৃষিতে ঘটছে নীরব বিপ্লব