আই নিউজ প্রতিবেদক
আপডেট: ১৮:২১, ৯ অক্টোবর ২০২৪
টাইগার মুরগী দিয়ে জাবেদ ভুঁইয়ার মাসে লাখ টাকা আয়ের গল্প
নিজের খামারের টাইগার মুরগী হাতে উদ্যোক্তা জাবেদ ভুঁইয়া।
বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার এক সফল তরুণ উদ্যোক্তা মো. জাবেদ ভূঁইয়া। যার সফলতার পেছনে আছে টাইগার মুরগীর লালনপালনের গল্প। এই টাইগার মুরগীর ব্যবসা করে সরকারি চাকুরি ছেড়ে উদ্যোক্তা হওয়া জাবেদ ভুঁইয়া বর্তমানে মাসে আয় করেন ৫ থেকে ৭ লক্ষ টাকা। সেইসঙ্গে করে দিয়েছেন এলাকার আরও ৮ জন বেকারের কর্মসংস্থান।
সম্প্রতি কৃষি খামার নামক এক ইউটিউব চ্যানেলে নিজের টাইগার লালনপালন ও সফলতার গল্প শোনান উদ্যোক্তা মো. জাবেদ ভুঁইয়া। জানান, পথচলার শুরুর গল্পও। মাত্র ১ হাজার টাইগার মুরগী দিয়ে যাত্রা শুরু করা এই উদ্যোক্তার কাছে বর্তমানে একাধিক শেডে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার টাইগার মুরগী আছে। টাইগার মুরগীর বাচ্চা তৈরি ও মাংসের জন্য মুরগী বিক্রি করে আয় করছেন লক্ষ টাকা। আয়ের সঙ্গে এই মুরগী লালনপালনে আছে খরচেরও দীর্ঘ হিসাব।
মো জাবেদ ভুঁইয়া জানান, তিনি সরকারের ডিফেন্স বিভাগের চাকরি ছেড়ে ইউরোপে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এরমাঝে একদিন টাইগার মুরগীর ব্যাপারে একটি ভিডিও দেখে তারও আগ্রহ জন্মে এই ব্যাপারে। পরিবারের লোকজনের সাথে কথা বলে শুরু করেন প্রথম ধাপে টাইগার মুরগীর লালনপালন। শেড নির্মাণ করে প্রথম চালানে ১ হাজার টাইগার মুরগীর বাচ্চা কিনে আনেন জাবেদ ভুঁইয়া। তবে, অদক্ষতার কারণে তিনি সঠিক বাচ্চা কিনতে পারেননি।
ব্যবসায় নামার আগে কিছুদিন এলাকার প্রাণীসম্পদ বিভাগের কার্যালয়ে গিয়ে টাইগার মুরগী লালনপালন সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। যা পরবর্তীতে তাকে বেশ সহযোগিতাও করেছে। এখানে বলে রাখা ভালো, বাণিজ্যিকভাবে টাইগার মুরগী পালনের ক্ষেত্রে এই মুরগীকে নিয়মিত টিকা/ভ্যাকসিন দিতে হয়। প্রশিক্ষণ থাকলে এসব ব্যাপারে জানা ও সহজে সেবা পাওয়া যায়।
খামারী জাবেদ ভুঁইয়া জানান, বর্তমানে তাঁর কাছে তিনটি শেডে ৩৪০০ টাইগার মুরগী আছে। এরমধ্যে ৭০ ভাগ মুরগীই ডিম দিচ্ছে। প্রতিদিন মাসে ২০ থেকে ২২ হাজার ডিম তিনি তাঁর এই খামার থেকে সংগ্রহ করেন। যদিও এসব ডিম বিক্রি করেন না জাবেদ। তিনি তাঁরই খামারে মেশিনের মাধ্যমে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটিয়ে তা বিক্রি করেন। টাইগার মুরগীর চাহিদা বর্তমানে বাড়তে থাকলেও এর ভালো জাতের বীজ বা বাচ্চা পাওয়া মুশকিল। এক্ষেত্রে জাবেদ ভুঁইয়া নিজের খামারেই ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা তৈরি করে বিক্রি করেন।
বাংলাদেশে মাংসের বাজারে এখন পোল্ট্রি মোরগের তুলনায় টাইগার মোরগের চাহিদা বেড়েছে আগের চেয়ে বেশি। ফলে, দেশে টাইগার মুরগী পালনের দিকে ঝুঁকছেন অনেক উদ্যোক্তা। মাংসের চাহিদা থাকায় এর বাজারদরও অন্য মুরগীর চেয়ে বেশি। একটি পূর্ণবয়স্ক টাইগার মুরগী অন্তত ১ হাজার টাকায় বিক্রি করা যায়। সবথেকে বড় কথা এই মুরগী পালনে মাংসের পাশাপাশি অল্পসময়ে অনেক ডিমও সংগ্রহ করা যায়।
একেকটি টাইগার মুরগীর ওজন হয় প্রায় এক থেকে দেড় কেজি। আর মোরগ প্রতিটি সাড়ে চার থেকে ৫ কেজি ওজনের হয়ে থাকে। টাইগার মুরগী ডিম দেওয়া শুরু করে ৫ মাস বয়স থেকে। এই পাঁচ মাস পর্যন্ত টাইগার মুরগীকে বিশেষ যত্নের সঙ্গে বড় করে তোলতে হয়। এরমধ্যে আছে সময়মত খাবার দেওয়া, টিকা/ভ্যাকসিন দেওয়া, নোংরা-আবর্জনামুক্ত রাখা ইত্যাদি। তবে জন্মের ৪২ দিনের মধ্যেই টাইগার মুরগী ১ কেজি ওজনের হয়ে যায়। পরের মাসগুলোতে ওজন বাড়তে থাকে। যা সর্বোচ্চ সাড়ে ৫ থেকে ৬ কেজি ওজনের হতে পারে।
উদ্যোক্তা মো. জাবেদ ভুঁইয়া জানান, টাইগার মুরগী পালন করে স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব যদি এই মুরগীর সঠিক পরিচর্যা করা যায়। কেননা, যেকোনো ধরনের একটু অবহেলার কারণে এসব মুরগী মারা যেতে পারে। বর্তমানে তাঁর তিনটি শেডের মধ্যে একটি শেডে ১৫০০ মোরগ, দ্বিতীয় শেডে ১২০০ এবং তিন নম্বর শেডে ৭০০ টাইগার মুরগী আছে। এগুলোকে নির্দিষ্ট সময় পরপর নানা ভ্যাকসিন/টিকা দিতে হয়। এরজন্য তাঁর খামারে বর্তমানে কর্মকরত আছেন ৮ জন।
টাইগার মুরগী পালনের ক্ষেত্রে কিছুদিন পরপর এগুলোকে রাণীক্ষেত, বার্ড ফ্লু, ব্রুন কটিস, গাম্বুরা, কৃমির ডোজ, ফাউল পক্স, ফাউল কলেনা ইত্যাদি ভ্যাকসিন দিতে হয়। নিয়মিত না দিলে মুরগী মারা যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
উদ্যোক্তা মো. জাবেদ ভুঁইয়া জানান, টাইগার মুরগী থেকে বর্তমানে তিনি মাসে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা আয় করছেন। তবে, এ পর্যন্ত এই খামারের পেছনে তাঁর খরচ হয়েছে ৩৫-৪০ লাখ টাকার মতো। এই ব্যবসা শুরুর আগে জাবেদ ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করলেও বর্তমান পরিকল্পনা টাইগার মুরগীর খামার নিয়ে।
আই নিউজ/এইচএ
- এলাচ চাষ করবেন যেভাবে
- প্লাস্টিক বোতলে সহজেই চাষ করুন পুঁই শাক
- কমলগঞ্জে,
আমন ধানে মাজরা পোকার আক্রমণ, চিন্তায় আছেন কৃষকরা - বঙ্গবন্ধু ব্রি ধান ১০০ চাষে সময় কম লাগে, খরচ বাঁচে
- বাড়ির টবে ক্যাপসিকাম চাষ পদ্ধতি
- ঔষধি গুণধর কালো মোরগের চাষ হচ্ছে বাংলাদেশেও
- বাড়ির ছাদে ড্রাগন ফলের চাষ পদ্ধতি
- দেশের বাজারে সারের দাম বেড়েছে আরও ৬ টাকা
- মাটি ছাড়া শুধু পানি দিয়ে ঘাস চাষ
- ভাদ্র মাসে চাষ করতে পারেন যেসব সবজি