Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, বুধবার   ৩০ জুলাই ২০২৫,   শ্রাবণ ১৪ ১৪৩২

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৬:৫৯, ২৭ মে ২০২১
আপডেট: ১৭:১৩, ২৭ মে ২০২১

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্ব ভোঁদড় দিবস পালিত

জলজ স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট প্রাণী ভোঁদড় সম্পর্কে জানতে ও সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে World Otter Day উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নেচার কনজারভেশন ক্লাব, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক অনলাইন আয়োজনের মাধ্যমে ২৪, ২৫ ও ২৬ মে তিনদিন ব্যাপী পালিত হয়েছে "বিশ্ব ভোঁদড় দিবস ২০২১"।

বিশ্বের ১৩ প্রজাতির ভোঁদড়ের মাঝে বাংলাদেশের ৩ ধরনের প্রজাতি পাওয়া যায়। প্রজাতিগুলো হচ্ছে ইউরেশীয় ভোঁদড় (Eurasian Otter), স্মল-ক্লড ভোঁদড় (Small-clawed Otter) এবং স্মুথ-কোটেড ভোঁদড় (Smooth-coated Otter)। বাংলাদেশের ভোঁদড়ের প্রতিটিই হুমকির সম্মুখীন।

আইইউসিএন বাংলাদেশ ২০১৫ সালে ইউরেশীয় ভোঁদড় এবং স্মুথ-কোটেড ভোঁদড়কে মহাবিপন্ন (Critically Endangered) ঘোষণা করেছে। অপর প্রজাতিটি স্মল-ক্লড ভোঁদড় যা এদেশে বিপদাপন্ন (Vulnerable)। বিশ্বব্যাপী ভোঁদড়রা ভালো নেই, ১৩ প্রজাতির মাঝে একটি বাদে প্রতিটির অস্তিত্ব হুমকির মুখে।

বাংলাদেশে একসময় সব নদী, ঝিরি-যুক্ত বনে ভোঁদড় পাওয়া যেতো। এখন সুন্দরবন এবং উপকূলীয় বাদাবন স্মল-ক্লড ভোঁদড় (Small-clawed Otter) এবং স্মুথ-কোটেড ভোঁদড় (Smooth-coated Otter)-এর একমাত্র শেষ নিরাপদ আবাসস্থল।

ইউরেশীয় ভোঁদড়ের সর্বশেষ নমুনা দুইদশকের বেশী পুরনো। দেশে ভোঁদড়ের অবস্থা সঙ্কটের মুখে হলেও, এ প্রাণীদের নিয়ে দেশে গবেষণা ও সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা এখনো সীমিত।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সুন্দরবনে ভোঁদড় নিয়ে একমাত্র কাজটি ২০১৮ সালের, যেখানে ৩৫০ কিমি নদী সার্ভে করে ৫৩ টি স্মল-ক্লড ভোঁদড় (Small-clawed Otter)- এর উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে। গত বছর রাজশাহীতে নদীচর-ঘাসবন সার্ভে করে ৯০ বর্গ কিমি এলাকায় ৫০-৬০ টি স্মুথ-কোটেড ভোঁদড় (Smooth-coated Otter) এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়, যা আগে জানা ছিলনা। এ বছর রেমা-কালেঙ্গায় স্মল-ক্লড ভোঁদড় (Small-clawed Otter) একটি নতুন পপুলেশন আবিস্কৃত হয়েছে। সুন্দরবনের বাইরে এ প্রজাতিটি এই প্রথম বাংলাদেশের অস্তিত্ব সন্ধান পাওয়া গেল।

এ বিষয় গুলোকে সামনে রেখে, তিন দিন ব্যাপী আয়োজনে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নিয়ামুল নাসের, ক্লাব কো-অর্ডিনেটর প্রফেসর ড. আলেয়া বেগম, বিভাগীয় শিক্ষকগণ এবং ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ। ভোঁদড় নিয়ে গবেষণার নানা তথ্য পরিবেশন করেন জনাব মুনতাসির আকাশ, প্রভাষক, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

অধ্যাপক ড. আলেয়া বেগম বলেন,  "আমি বিশ্বাস করি, সৃষ্টিকর্তা প্রতিটা প্রাণীকে সৃষ্টি করেছেন কোনো না কোনো প্রয়োজনে। প্রকৃতির এই উদবিড়াল বিলুপ্তির জন্য আমরাই দায়ী। এদেরকে সংরক্ষণের জন্য আমাদের থাকতে হবে সদিচ্ছা।"

"ভোঁদড় সংরক্ষণে ইকোলোজিক্যাল এনালাইসিস গুলো আমরা শুরু করেছি। বিশ্ব ভোঁদড় দিবসকে সামনে রেখে আমাদের এই প্রোগ্রাম থেকে আমাদের যে তরুণ গবেষক আছে তারা যেন কাজ করতে এগিয়ে আসে। শুধু ভোঁদড় নয় আরও অনেক কাজের সুযোগ রয়েছে", বলে জানান মুনতাসির আকাশ। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে জিনোম সিকোয়েন্সের বিষয়টি সামনে তুলে ধরেন অধ্যাপক ড. মুর্শিদা বেগম।

"বন্যপ্রাণী সংরক্ষণকে ফলপ্রসূ করতে ছোট মাংশাসী প্রাণীদের নিয়ে কাজ করতে হবে।"—এ বিষয়টি তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. এম. নিয়ামুল নাসের। ভোঁদড় সম্পর্কে তিনি আরো বলেন, ভোঁদড় বাঁচলে বন বাঁচবে, নদী বাঁচবে, ঝিরি বাঁচবে, মৎস্য সম্পদ বাঁচবে।

অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিলো বিভিন্ন প্রতিযোগিতার বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে ছিলো কুইজ প্রতিযোগিতা, ভোঁদড় সম্পর্কে সচেতনতামূলক পোস্টার তৈরী,রচনা প্রতিযোগিতা, প্রেজেন্টেশন, এবং বিতর্ক প্রতিযোগিতা। এছাড়া প্রথম সেশনেগুলোয় ক্যামেরা ট্র্যাপিং কৌশল এবং বাংলাদেশের ভোঁদড় নিয়ে অনলাইন সেমিনারের আয়োজন করা হয়। 

ডকুমেন্টারি, মুক্ত আলোচনা ও বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য। উক্ত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সকল স্তরের মানুষ এই বিলুপ্তির সম্মুখীন জেলেদের বন্ধু ভোঁদড়কে সংরক্ষণে এগিয়ে আসবে বলে আশা করা যায়।

Green Tea
সর্বশেষ