Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, রোববার   ২৭ জুলাই ২০২৫,   শ্রাবণ ১২ ১৪৩২

এস আলম সুমন, কুলাউড়া

প্রকাশিত: ১৩:১৫, ২ জুলাই ২০২১
আপডেট: ১৫:১১, ২ জুলাই ২০২১

প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষাবৃত্তি পেয়ে স্বপ্নের জাল বুনছে মা-বাবাহীন পূজা

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী শরীফপুরের তিলকপুরের বাসিন্দা পূজা সাঁওতাল (১৩)। শৈশবে চা শ্রমিক বাবা সুনীল সাঁওতাল ও মা মঙ্গলা সাঁওতালকে হারিয়েছে। নেই নিজের কোন বসতঘর। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ক্ষুদ্র নৃ- গোষ্ঠি শিক্ষার্থীদের শিক্ষাবৃত্তি পেয়ে উচ্ছ্বসিত পিতা-মাতা হারা পূজা স্বপ্ন দেখছে পড়াশুনা করে স্ব-নির্ভর হওয়ার।

পূজা স্থানীয় কানিহাটি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। বুধবার উপজেলা পরিষদে প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি শিক্ষার্থীদের বিতরণকৃত শিক্ষা বৃত্তি নিতে এসেছিলো পূজা সাঁওতাল। 

জীবনে প্রথমবার শিক্ষাবৃত্তির চেক পেয়ে উচ্ছ্বসিত পূজা জানায়, মা বাবা যখন মার যান তখন ছোট ছিলাম। বড় হয়েছি আত্মীয় দাদা দাদির কাছে। তাঁরাও দরিদ্র। তবুও তাঁরা আমাকে বড় করেছেন, পড়াচ্ছেনও। কতদিন তাঁদের কাছে বোঝা হয়ে থাকবো। নিজের ঘর নেই। চিন্তা হতো ইচ্ছে থাকলেও পড়াশুনার খরচের অভাবে বেশি দূর এগোতে পারবোনা। এখন অনেকটা সাহস পাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে পড়াশুনার জন্য ছয় হাজার টাকা দিয়েছেন। এখন একটাই স্বপ্ন পড়ালেখা শেষ করে চাকুরী করবো।’

তার মতো শিক্ষাবৃত্তি পেয়ে উচ্ছ্বসিত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি চা শ্রমিক সন্তান ও  উপজেলার কর্মধার হায়দরগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাবনুর ওড়াং ও ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী শিপা ওড়াং। এ সময় সাথে থাকা শাবনুরের বাবা স্থানীয় মুড়ইছড়া চা বাগানের শ্রমিক হিরালাল জানান, ‘সারাদিন বাগানে কাজ করে যে হাজিরী (মজুরী) পাই সেটা দিয়ে সংসার চালানো কষ্ট। এর মাঝে তিন সন্তানের খরচ চালানো অসম্ভব। প্রধানমন্ত্রী আমার বড় মেয়ের পড়াশুনার জন্য যে টাকা দিয়েছেন আগামী এক বছর তার পড়ার খরচের জন্য চিন্তা করতে হবেনা।’ 

শিপা ওড়াংয়ের মা পুষ্প ওড়াং ও বাবা সৈত্য ওড়াং জানান, ‘বৃত্তির টাকা পাওয়ায় আমাদের মেয়ের পড়াশুনা চালাতে পারবে।’

বুধবার (৩০ জুন) দুপুর ১ টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে কুলাউড়া উপজেলা পরিষদের সভাকক্ষে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির শিক্ষার্থীদের  মধ্যে শিক্ষা উপকরণ ও বৃত্তি প্রদান করা হয়। এ সময় দরিদ্র আদিবাসী ও চা শ্রমিকদের গৃহ সংস্কারের জন্য ঢেউটিন ও নগদ অর্থ প্রদান করা হয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) এটিএম ফরহাদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী খোয়াজুর রহমান, ডেইলী স্টারের মৌলভীবাজার প্রতিনিধি মিন্টু দেশোওয়ারা, উপজেলা কার্যালয়ের হিসাব রক্ষক নাজমুল করিম, দৈনিক ইনকিলাবের প্রতিনিধি নাজমুল ইসলাম প্রমুখ।

ইউএনও এটিএম ফরহাদ চৌধুরী জানান, প্রধানমন্ত্রীর প্রকল্প থেকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীবন মানোন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী বিশেষ প্রকল্প নিয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় কুলাউড়ার পাহাড়ে থাকা জনগোষ্ঠি ও চা শ্রমিকদের সন্তানদের পড়াশুনার জন্য শিক্ষা উপকরণ এবং শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়েছে। 

তিনি জানান, উপজেলা পরিষদের আয়োজনে ৪৮জন শিক্ষার্থীকে শিক্ষা বৃত্তি ও ১১৭ জন শিক্ষার্থীকে শিক্ষা উপকরণ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও এই জনগোষ্ঠীর দরিদ্র ২০ জনকে ঘর মেরামতের জন্য ঢেউটিন ও অর্থসহায়াতা দেওয়া হয়েছে।

আইনিউজ/এস আলম সুমন/এসডি

Green Tea
সর্বশেষ