Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, বুধবার   ১৪ মে ২০২৫,   বৈশাখ ৩১ ১৪৩২

সুমন্ত গুপ্ত

প্রকাশিত: ১৬:১৬, ১ জানুয়ারি ২০২২

পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ভ্রমণ

ঘুম থেকে উঠেছি ঘণ্টা খানেক হলো, মনে মনে ভাবছিলাম বন্ধের দিনটি কিভাবে কাজে লাগানো যায়। কোথায় যাওয়া যায় ঘুরতে, মনে হলো চলতি পথে কোথাও একবার চোখে পড়েছিল পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এর নাম।দিলাম ফোন পৃথুকে। বললাম, ঘড়ির কাঁটায় বাজে সকাল দশটা, ঠিক সকাল এগারোটায় বের হবো তোমায় নিয়ে। পৃথুও আমার মতো ভ্রমণ পাগল তাই কোথায় তা না জানতে চেয়েই বলে উঠলো ঠিক সময়ে পাবে তুমি আমায়।নির্ধারিত সময়েই আমরা বেড়িয়ে পড়লাম।

গুগল ড্রাইভে লোকেশন ম্যাপ এ পুলিশ জাদুঘর খুঁজে ঠিকই চলে এলাম সেখানে। যখন ঢুকলাম, ঘড়িতে বেলা এগারোটা ত্রিশ। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পুলিশের প্রথম প্রতিরোধ ও মুক্তিযুদ্ধে পুলিশ বাহিনীর গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের স্মারক নিয়েই বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে অবস্থিত এই চেতনার বাতিঘর।

টিকিট কেটে পদব্রিজে এগিয়ে যেতে লাগলাম পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এর সদর দরজার দিকে। দরজার সামনেই বড় বড় করে লেখা আছে ছবি তোলা নিষিদ্ধ। মনটা খারাপ লাগলো, পরে ভাবলাম ছবি না তুলতে পারি ইতিহাস টুকুতো জানতে পারবো। আপনা-আপনি খুলে গেল জাদুঘরের কাচের তৈরি স্বয়ংক্রিয় দরজাটি। ভেতরে ঢুকেই প্রথমে বঙ্গবন্ধু গ্যালারি। বাঁ দিক থেকে শুরু হয়েছে প্রদর্শনী। আলোকচিত্র ও পোস্টারে দেওয়া তথ্যে এক লহমায় জানা যায় বাঙালি জাতির এই মহান নেতা সম্পর্কে। আমরা পদব্রজে এগিয়ে গেলাম। 

আরও পড়ুন- ঘুরে এলাম বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ

বঙ্গবন্ধু গ্যালারির ঠিক মাঝখানে গোলাকার জায়গা দিয়েই রয়েছে নিচে নামার সিঁড়ি। মুক্তিযুদ্ধের মূল প্রদর্শনীর জন্য সিঁড়ি ভেঙে যেতে হয় ভূগর্ভে। আমরা চলছি এগিয়ে।আমাদেরকে জানানো হল অডিও ভিজ্যুয়াল কক্ষ ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ এবং ১৯৭৫ সালে পুলিশ সপ্তাহে দেওয়া জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতা দেখানো হবে। তাই আগ্রহী হলে যেতে। আমরা সানন্দে গ্রহণ করলাম আমন্ত্রণ। স্বল্প সময়ের প্রায় চল্লিশ মিনিটের হবে কিন্তু তথ্য বহুল অডিও ভিজ্যুয়াল দেখলাম আমরা। এখানেও প্রদর্শনী শুরু বাঁ থেকে। শুরুতে রয়েছে একটি ‘লেটার ডিস্ট্রিবিউশন বক্স’। ১৮৬৩ সালে তৈরি চিঠি ও দলিল বিতরণের এই বক্স পুলিশের ঐতিহ্যের অংশ। ১৯৭১ সালেও ঢাকা জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ব্যবহৃত হয়েছে এটি। 

এরপরই শুরু হয়েছে পুলিশের বিবর্তনের ইতিহাস। ছবি ও লেখায় তুলে ধরা হয়েছে সুলতানি আমল, মোগল আমল, ব্রিটিশ আমল হয়ে আধুনিক পুলিশের ইতিবৃত্ত। আমরা একটির পর একটি ইতিহাসের সাক্ষী হচ্ছি। গৌরবে মনটা ভরে যাচ্ছে। এদিকে বেজে চলছে দেশের গান।

আরও পড়ুন- শীতকালে সিলেটের দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ

এর মধ্যেই চোখ আটকে যায় কাচঘেরা শেলফে রাখা ৩৮ বোর রিভলবারটি। এ অস্ত্রটি ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী কন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের। ব্রিটিশ পুলিশের হাত হয়ে এটি এখন বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে। 

একদম সামনেই দেশভাগ নিয়ে দ্য স্টেটমেন্ট ও যুগান্তর পত্রিকার দুটি খবরের কাটিং—জানান দিল পাকিস্তান সৃষ্টির। এরপর পূর্ব পাকিস্তানে রাজনৈতিক টানাপোড়েন ও আন্দোলন-সংগ্রামে পুলিশের ভূমিকার বর্ণনা রয়েছে আলোকচিত্রে। সামনে এগোতে থাকলে জাদুঘরের প্রতিটি স্মারক, আলোকচিত্র ও পোস্টারই আলাদা করে দাঁড়িয়ে দেখার মতো। মনে হবে এর প্রতিটিই ইতিহাসের এক অমূল্য স্মারক। যেগুলোর তথ্য ও তাৎপর্য যে কাউকেই ভাবিয়ে তুলবে। সময়ের পরিক্রমায় চোখের সামনে ভেসে উঠবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধকালীন ঘটনা প্রবাহ। জাদুঘরের পাশেই আছে পুলিশ স্মৃতিসৌধ আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী বীর শহীদদের স্মরণে তৈরি করা হয়েছে এই শহীদ মিনার।

মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়কার কিছু সংগ্রহ- 

পাগলা ঘণ্টা

পাকা লোহার একটা দণ্ড—এটাই পাগলা ঘণ্টা। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনীর পুলিশ লাইনস আক্রমণের মুহূর্তে এই পাগলা ঘণ্টা বাজিয়ে পুলিশ সদস্যদের একত্র করে প্রতিরোধের আহ্বান জানানো হয়। সেখানে ঝুলিয়ে দেওয়া তথ্যে বলা হয়েছে, পাগলা ঘণ্টার আওয়াজ শুনে রাজারবাগের পুলিশ সদস্যরা সালামি গার্ডের পাশে জড়ো হন এবং অস্ত্রাগার থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে প্রতিরোধ গড়তে অবস্থান নেন। পাগলা ঘণ্টা বাজানোর কাজটি করেছিলেন পুলিশ সদস্য আবদুল আলী।

বেতারযন্ত্র

রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণের খবর পাঠানো হয় কন্ট্রোল রুমে রাখা এই বেতারযন্ত্রের মাধ্যমে। রাত সাড়ে ১১টার দিকে ‘হেলিকপ্টার ব্যাজ’ মডেলের একটি বেতারযন্ত্র থেকে এই বার্তাটি পাঠান সে সময়ের বেতার অপারেটর মো. শাহজাহান মিয়া।

স্মৃতির বেঞ্চ

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী আহত দুই পুলিশ সদস্যকে নেওয়া হয় মতিঝিল টিঅ্যান্ডটি কলোনির হাসপাতালে। সে মুহূর্তে হাসপাতালে কোনো শয্যা ছিল না। তাঁদের দুজনকে এ দুটি বেঞ্চের ওপর রেখেই চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ হয়ে অজ্ঞাত ওই দুই পুলিশ সদস্য সেখানেই শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন।

থ্রি নট থ্রি রাইফেল

সেই কালরাতে পুলিশ সদস্যদের হাতে ছিল থ্রি নট থ্রি রাইফেল। পাকিস্তানি বাহিনীর আধুনিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে এই অস্ত্র দিয়েই লড়েছিলেন বাঙালি পুলিশ সদস্যরা। 

বীরদের স্মারক

মুক্তিযুদ্ধের সময় পুলিশ সদস্যদের ব্যবহৃত রাইফেল, বন্দুক, মর্টার শেল, হাতব্যাগ, টুপি, চশমা, মানিব্যাগ, অণুবীক্ষণযন্ত্র, সার্চলাইট, ট্রাংক ও ইউনিফর্ম রাখা হয়েছে। দেয়ালজুড়ে সেঁটে দেওয়া হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা পুলিশ সদস্যদের যুদ্ধের সময়ের ডায়েরি, হাতে লেখা বিভিন্ন বার্তা, আলোকচিত্র ও পোস্টার। এর মধ্যেই পাওয়া যাবে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পুলিশ কর্মকর্তাদের ব্যবহৃত নানা জিনিস। সেসব স্মারকের তালিকায় রয়েছে তৎকালীন পিরোজপুর মহকুমার সাব-ডিভিশনাল পুলিশ অফিসার শহীদ ফয়জুর রহমান আহমেদের ব্যবহৃত রেডিও ও ডায়েরি। শহীদ ফয়জুর রহমান আহমেদ কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ ও লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবালের বাবা। 

দর্শনার্থীদের জন্য গ্রীষ্মকালে (মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৬টা এবং শীতকালে (অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত জাদুঘরটি খোলা থাকে। বুধবার এর সাপ্তাহিক বন্ধ। এছাড়া শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে জাদুঘরটি। এর প্রবেশ মূল্য ১০ টাকা। তবে ডিসেম্বরে শিক্ষার্থীদের জন্য এবং সব জাতীয় দিবসে সবার জন্য বিনামূল্যে এই জাদুঘর দেখার ব্যবস্থা রয়েছে।

আইনিউজ ভিডিও

ঘুরে আসুন মৌলভীবাজারের পাথারিয়া পাহাড়

হাইল হাওরের বাইক্কাবিলে পর্যটক আর পদ্মটুনার ভিডিও ভাইরাল

Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়