তনিমা রশীদ
শীতকালে সিলেটের দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর আমাদের এই দেশ বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন রূপে সাজে। একেক ঋতুতে দেশের একেকটি অঞ্চল তার রূপ পরিবর্তন করে। আর এসব রূপ দেখতে দর্শনার্থীরা ভ্রমণ করে সেসব অঞ্চলে। বিশেষ করে শীতের ঋতুতে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে দর্শনীয় স্থান দেখতে আসে পর্যটকরা। শীত মানেই বছরের শেষ আর ঘুরাঘুরি শুরু। এসময় স্কুল কলেজ বন্ধ থাকে বলে সকলেই ঘুরাঘুরি পরিকল্পনা করে। সেসময় দেশের অন্য সব অঞ্চলের মতো সিলেটও তার রূপ পাল্টায়।
শীতে সিলেটে ভ্রমণ করার মতো রয়েছে সিলেটের দর্শনীয় স্থান। বর্ষাকালের মতো খাল-বিলে তেমন পানি না থাকলেও অতিথি পাখির কোলাহল ঠিকই থাকে। এছাড়া সিলেটের অপরূপ চা-বাগান দেখার জন্য উপযুক্ত সময় শীতকাল। আর মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত তো আছেই যেখানে সারাবছরই জল থাকে। এই শীতে সিলেটের দর্শনীয় স্থান দেখতে সিলেট ভ্রমণ করুন। শীতে সিলেটের রূপ দেখতে মনোমুগ্ধকর।
এছাড়াও এখানে দেওয়া হয়েছে একদিনে সিলেট ভ্রমণের আইডিয়া এবং সিলেট শহরে ঘুরাঘুরির বিস্তারিত তথ্য।
লালাখাল ভ্রমণ
সিলেট জেলার জৈন্তাপুর উপজেলায় অবস্থিত লালাখাল। এটি সিলেটের দর্শনীয় স্থান এর মধ্যে অন্যতম। ভারতের চেরাপুঞ্জি পাহাড় থেকে এই নদী উৎপন্ন হয়ে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। লালাখাল স্বচ্ছ নীল পানির বিভিন্ন রঙের জন্য খুব জনপ্রিয়। এর পানি কোথাও নীল রঙের, কোথাও নীলচে সবুজ রঙের আবার কোথাও আকাশী নীল রঙের হয়ে থাকে। জৈন্তিয়া পাহাড় থেকে আসা প্রবহমান পানির সাথে মিশে থাকা খনিজ ও কাদার বদলে নদীর বালুময় তলদেশের কারণে এর রঙ এরকম দেখায়। প্রতি বছর প্রচুর পর্যটক আসে লালাখালের এই পানির রঙ আর তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখার জন্য। তবে এই নীল রঙ দেখতে হলে শীতকালে যেতে হবে। বর্ষাকালে পানি ঘোলা থাকায় দেখার মতো কিছু থাকে না। তাই লালাখাল ভ্রমণ উপযুক্ত সময় শীতকাল।
লালাখালের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে সারি গোয়াই নদী। আর এই নদীরই একটা অংশ লালাখাল। এই নদীর নামের সাথে “খাল” শব্দ যোগ থাকলেও মূলত এটি একটি নদী। এ নদী দিয়েই পরিব্রাজক ইবনে বতুতা বাংলাদেশে এসেছিলেন। লালাখালের নদীতে রয়েছে অসংখ্য বাঁক। প্রতিটি বাঁকে দেখা যায় সারি সারি পাহাড়। পাহাড় গুলো দেখলে মনে হবে কেউ যেনো নিজের হাতে একের পর এক একটি করে সাজিয়ে রেখেছে। একটু কাছ থেকে দেখলে দেখা যাবে সেখানের পাহাড়ের গায়ে মেঘেরা দল বেঁধে ঠেস লাগিয়ে থেমে আছে। দুই পাহাড়ের মধ্য দিয়ে নদী পথে নৌকায় ভ্রমণ করার সময় সকলেরই নজর কেড়ে নেয় লালাখালের মনোরম প্রকৃতি দৃশ্য। স্বচ্ছ নীল জলরাশি আর তার দুই ধারে পাহাড়ি বন, চা-বাগান ও নানা প্রজাতির বৃক্ষরাজির অপরূপ সৌন্দর্যময় এই দৃশ্য দীর্ঘ নৌপথে ভ্রমণের সাধকে করে তোলে আরো আনন্দময়। রাতে লালাখালের দৃশ্য মনোমুগ্ধকর। কিন্তু পূর্ণিমার রাতে জ্যৌৎসনা ধোয়া লালাখালের নদীর রূপ সারাজীবন মনে রাখার মতো।
কিন্তু সন্ধ্যার পর নদীতে কোনো নৌকা থেকে না আর লালাখাল এলাকার আশেপাশে দর্শনার্থীদের থাকার কোন জায়গা নেই। তাই সন্ধ্যার আগে ঘোরাঘুরি শেষ করে নেওয়া উত্তম। আর যদি লালাখালের রাতে রূমে মুগ্ধ হতে চান তাহলে আগে প্রস্তুতি নিয়ে আসা বুদ্ধিমানের কাজ। সিলেটের এই দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ করতে প্রতি বছর শীতে এখানে দর্শনার্থীর ভিড় জমে।
কিভাবে লালাখাল যাবেন
দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে এই দর্শনীয় স্থানে আসতে হলে প্রথমে আসতে হবে সিলেটে। আপনি বাস, রেল বা প্ল্যানে করে যেকোনো ভাবে আসতে পারবেন সিলেট।
সিলেট থেকে লালাখাল
সিলেট থেকে লালাখাল ৩৫ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। সিলেট শহর থেকে লালাখালে যেতে হলে প্রথমে নগরীর ধোপাদিধীর ওসমানী শিশু উদ্যানে বা শিশু পার্কের সামনে থেকে লেগুনা, মাইক্রোবাস বা জাফলংগামী বাসে চড়ে আপনি সারিঘাটে যেতে হবে। সিলেট ও জাফলং এর মধ্যবর্তী স্থানকে সারিঘাটে অবস্থিত। সারিঘাঠে যেতে খরচ হবে ৪০-৬০ টাকা।
সারিঘাট থেকে লালাখালে দুই পথে যাওয়া যায় পানি পথে ও সড়ক পথে। সড়ক পথে যেতে হলে সারিঘাট ব্রিজ পার হয়ে উত্তর দিকে মসজিদ থেকে একটু এগিয়ে ডান দিকে লালাখালের রাস্তা পাওয়া যাবে। সেখানে দেখবেন সারি সারি অটোরিকশা দাঁড়িয়ে আছে। এসব অটোরিকশা দিয়ে আপনি লালাখাল পৌঁছে যাবেন। অটোরিকশা গুলো জনপ্রতি ১৫ টাকা ভাড়া নেয়।
আর পানি পথে যেতে চাইলে সারিঘাট থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় বা স্পিডবোটে যেতে পারেন। নৌকায় যেতে হলে ১২০০-১৫০০ টাকা খরচ হবে আর স্পিডবোটে গেলে ১৫০০-২০০০ টাকা খরচ হবে।
লালাখালের নীল, নীলচে সবুজ ও আকাশী নীল রঙের জলে ঘোরে বেড়ানো জন্য নৌকা ভাড়া করে নিতে পারেন। এখানের রঙিন ছাউনি নৌকা ভাড়া করতে লাগবে ৫০০-৭০০ টাকা। আর ছাউনি বিহীন নৌকা ৩০০-৪০০ টাকায় ইচ্ছেমতো সময়ের জন্য ভাড়া নিতে পারেন।
কোথায় থাকবেন
যেহেতু লালাখালের আশেপাশে দর্শনার্থীদের থাকা মতো কোনো জায়গা নেই আর সন্ধ্যার পর নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে যায় তাই আপনাকে সন্ধ্যার আগে শহরে ফিরে যেতে হবে। কিন্তু আপনি যদি রাতের লালাখালের অপরূপ সৌন্দর্য দেখার জন্য নদী পাড়ে রাত কাটাতে চান। তাহলে নর্দার্ন রিসোর্টে বুকিং দিতে পারেন। এই রিসোর্টি অতিথিদের সিলেট যাওয়া আসার জন্য নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা রয়েছে।
এছাড়া লালাখালের খুব কাছে নাজিমগড় নামক একটি রিসোর্ট রয়েছে। লালাখালের কাছে খাদিমনগরে এটি অবস্থিত। এটি একটি বিলাসবহুল রিসোর্ট। এখানে আধুনিক সবধরনের সুযোগ সুবিধা রয়েছে। এক রাতের জন্য নাজিমনগর রিসোর্টের প্রিমিয়ার কক্ষের ভাড়া প্রায় ৭০০০ হাজার ও প্রেসিডপন্সিয়াল স্যুইটের ভাড়া প্রায় ১৫০০০ টাকা। এক কক্ষে থাকতে পারবেন সর্বোচ্চ তিনজন। আট বছরের নিচের শিশুর জন্য কোনো ভাড়া লাগবে না। কিন্তু এই রিসোর্টে সহজ রুম পাওয়া যায় না। তাই আগে থেকে বুকিং করে নেওয়া ভালো।
তবে কম টাকা খরচ করতে চাইলে। থাকার জন্য সিলেটে ফিরে আসাই ভালো। সিলেটের লালা বাজার, কদমতলী ও দরগা রোডে কম টাকায় মানসম্মত অনেক রেস্ট হাউজ পাওয়া যাবে। এখানে আপনি ৪০০-১০০০ টাকায় বিভিন্ন ধরনের রুম পাবেন। এছাড়াও হোটেল হিল টাউন, গুলশান, দরগা গেইট, সুরমা, কায়কোবাদ ইত্যাদি হোটেলে আপনার সামর্থানুযায়ী রুম পাবেন।
কোথায় খাবেন
লালাখালের আশেপাশে খাবারের হোটেলে তেমনি ভালো খাবার পাওয়া যায় না। তাই ভালো খাবার খেতে হলেও আপনাকে সিলেটে ফিরে আসাতে হবে। সেখানে বিভিন্ন মানে রেস্টুরেন্টে রয়েছে আপনার পছন্দ মতো যেকোনো জায়গায় খেয়ে নিতে পারেন।
জাফলং ভ্রমণ
প্রকৃতির কন্যা বলা হয় জাফলং কে। সিলেট ভ্রমণে আসলে সকলেই জাফলং ঘোরে যায়। সিলেট জেলার গোয়াউনঘাট উপজেলায়, ভারতের মেঘালয় সীমান্ত ঘেঁষে খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে জাফলং অবস্থিত। সীমান্তের অপর পাশে ভারতের ডাওকি অঞ্চল। এ অঞ্চলের পাহাড় থেকে বয়ে যাওয়া ডাওকি নদী জাফলং দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশে এসে এ নদীর নাম হয় পিয়াইন নদী। মূলত এই নদীর অববাহিকায় গড়ে উঠেছে জাফলং।
ডাওকি নদীর উপরে ঝুলন্ত ব্রিজ, ভারতের পাহাড় টিলা, পাথুরে নদী, ঝর্না, পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ পানি, একপাশে নদী অন্যপাশে উঁচু পাহাড়ে গহীন অরণ্য সব মিলিয়ে জাফলং সত্যিই প্রকৃতির কন্যা। একেক ঋতুতে জাফলং একেক রূপ ধারণ করে। এই দর্শনীয় স্থান দেখার জন্য সারা বছরই দর্শনার্থীরা আগ্রহী থাকেন।
জাফলং-এ পাওয়া যায় কঠিন শিলা নুড়ি। বর্ষাকালে ভারতীয় সীমান্তবর্তী শিলং মালভূমির পাহাড় গুলোতে প্রবল বৃষ্টিপাত হলে ঐসব পাহাড় থেকে বড় বড় গণ্ডশিলা ডাওকি নদীর প্রবল স্রোতে জাফলং-এ চলে আসে। তাই জাফলং এর নদীতে প্রচুর পরিমাণে পাথর পাওয়া যায়। তাই এ অঞ্চলের মানুষের এক বৃহৎ অংশের জীবিকা গড়ে উঠেছে এই পাথর উত্তোলন করে। পাথর ছাড়াও জাফলং-এ সাদামাটি বা চীনামাটি পাওয়া যায়। যদিও সেখানে মাটি বা বালি পরিশোধন করার মতো কোনো অবকাঠামো নেই।
জাফলং থেকে আসার সময় চোখে পড়বে গৌর গোবিন্দ রাজ প্রসাদ। ১৮শ শতকের জৈন্ত রাজ বংশের বাসভবন ছিলো এই প্রাসাদ। জৈন্তাপুর ছিলো তখন রাজধানী। এখনো এখানে জৈন্ত রাণীর বাড়ি ও দিঘি আর কিছু নিদর্শন রয়েছে।
কীভাবে জাফলং যাবেন
জাফলং যেতে হলে প্রথমে আসতে হবে সিলেটে। জাফলং সিলেট থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। যেতে সময় লাগবে দেড় থেকে দু’ঘন্টা। সিলেট থেকে বাস বা মাইক্রোবাস অথবা সিএনজি করে যেতে পারেন জাফলং-এ। জাফলং যাওয়ার বাস ভাড়া জনপ্রতি ৮০ টাকা পড়বে এবং গেইটলক বিরতিহীন বাস ভাড়া ১০০ টাকা।
আবার রিজার্ভ গাড়িতে যেতে চাইলে সিলেটের বন্দরবাজার শিশুপার্কের সামনে মাইক্রোবাস, সিএনজি বা লেগুনা পাওয়া যাবে। যাওয়া-আসার জন্য মাইক্রোবাস ভাড়া ৩০০০-৩৫০০ টাকা। লেগুনা ভাড়া লাগবে ২০০০-২৫০০ টাকা। সিএনজি ভাড়া পড়বে ১০০০-১২০০ টাকা। লেগুনায় ১০ জন করে, সিএনজিতে ৫ জন করে আর মাইক্রোবাসে আসন অনুযায়ী বসে যেতে পারেন।
বর্তমানে জাফলং যাওয়ার রাস্তা বেশ ভালো। গুচ্ছগ্রাম বিজিবি ক্যাম্প হয়ে জাফলং এর জিরো পয়েন্টে যাওয়ার রাস্তাটি খুব জনপ্রিয়।
কোথায় থাকবেন
সাধারণত জাফলং ভ্রমণকারীরা রাতে থাকার জন্য সিলেটে ফিরে আসে। সিলেট শহরে মানসম্মত অনেক রেস্ট হাউজ ও হোটেল রয়েছে।
আর আপনি যদি জাফলং-এ থাকতে চান তাহলে, জাফলং এর কাছে সরকারি রেস্ট হাউজ রয়েছে সেখানে থাকতে পারে। তবে আগে থেকে অনুমতি নিতে হবে। এছাড়া মামাবাজার এলাকায় জাফলং ইন হোটেল, হোটেল প্যারিস ও জৈন্তিয়া হিল রিসোর্ট রয়েছে। আপনি চাইলে সেখানে থাকতে পারেন।
কোথায় খাবেন
জাফলং-এ এখন কিছু রেস্টুরেন্টে রয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য জাফলং ভিউ রেস্টুরেন্টে, সীমান্ত ভিউ রেস্টুরেন্টে ও পর্যটক রেস্টুরেন্টে। এছাড়া আপনি সিলেট শহরে খেতে পারবেন। এখানে সকালে নাস্তা জনপ্রতি ৫০-১০০ টাকা আর দুপুরের ও রাতের খাবারে জনপ্রতি ১৫০-৩০০ টাকা।
মালনীছড়া চা-বাগান
সিলেটের দর্শনীয় স্থানের মধ্যে চা-বাগান অন্যতম। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য চা-বাগান হলো মালনীছড়া চা-বাগান। ভারত উপমহাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন, বৃহত্তম ও সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠিত চা-বাগান হলো মালনীছড়া চা-বাগান। ১৮৪৯ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। লর্ড হার্ডসন ১৫০০ একর জায়গায় নিয়ে এটি প্রতিষ্ঠিত করেন। সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে অল্প দূরত্বে অবস্থিত এই প্রাচীন চা-বাগান।
মালনীছড়া চা-বাগানে ঢুকার জন্য রয়েছে অনেক প্রবেশদ্বার। আপনি যেকোনো একটা দিয়ে ভিতরে ঢুকতে পারবেন। তবে পূর্ব দিকে ঢুকলে দেখা যাবে হারং হুরং গুহা। এটি সিলেটের একটি প্রাচীন গুহা। মূলত এটি গুহা নয় একটি সুড়ঙ্গ। কথিত আছে, ১৩০৩ সালে হজরত শাহজালাল (র.) এর সিলেট আগমনের খবর যখন রাজা গৌড় গৌবিন্দ পান। তখন তার সৈন্যবাহিনীসহ পেঁচাগড় গিরিদুর্গের এই সুড়ঙ্গপথ দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার পর নিরুদ্দেশ হয়ে যান। হারং-হুরং শব্দ দুটি সিলেটের প্রাচীন আঞ্চলিক ভাষার শব্দ। সিলেটের প্রাচীন আঞ্চলিক ভাষায় ‘হারং’ শব্দের অর্থ সাঁকো বা বিকল্প পথ আর ‘হুরং’ অর্থ সুড়ঙ্গ। অর্থাৎ ‘হারং-হুরং’ শব্দের অর্থ ‘বিকল্প সুড়ঙ্গ পথ’। সুড়ঙ্গটি বাগানের প্রধান বাংলোর পাশের রাস্তা দিয়ে তিন কিলোমিটার পূর্বদিকে গেলেই পাওয়া যাবে।
মালনীছড়া চা-বাগানের রাস্তার ওপাশে রয়েছে লাক্কাতুরা চা-বাগান। এই চা-বাগানের মধ্যখানে যেতে হলে গল্ফ ক্লাবের রাস্তা দিয়ে যেতে হয়। গল্ফ ক্লাব মাঠ পেরিয়ে একটু সামনে এগুলেই দেখবেন সিলেট বিভাগীয় স্টেডিয়াম। চারিদিকে চা-বাগান আর মাঝখানে স্টেডিয়ামটি অবস্থিত। মালনীছড়া চা-বাগানের কাছেই রয়েছে আলী বাহার চা-বাগানও। চাইলে সেটিও ঘুরে আসতে পারেন।
কিভাবে মালনীছাড়া যাবেন
সিলেট শহর থেকে সহজেই রিকশা, অটোরিকশা বা সিএনজি ভাড়া করে যাওয়া যাবে চা-বাগানে। আম্বরখানা থেকে রিকশায় গেলে ২৫ মিনিট আর সিএনজিতে গেলে ১০ মিনিট লাগে।
কোথায় থাকবেন
মালনীছড়া চা-বাগান এলাকায় কোনো আবাসিক হোটেল নেই। তাই সিলেট শহরে থাকতে হবে।
কোথায় খাবেন
মালনীছড়া চা-বাগানে খাবারেরও কোনো ভালো ব্যবস্থা নেই। তাই সিলেটে গিয়ে খেতে হবে। সিলেটের জিন্দাবাজার এলাকায় বেশ কিছু জনপ্রিয় রেস্টুরেন্টে রয়েছে।
মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত
বাংলাদেশের একমাত্র জলপ্রপাত যেখানে সারাবছর পানি থাকে সেটা হলো মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত। সিলেটসহ দেশের অন্যান্য জলপ্রপাতের সৌন্দর্য দেখার উপযুক্ত সময় বর্ষাকাল। কিন্তু সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলায় অবস্থিত মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে যাওয়ার কোনো উপযুক্ত সময়ের প্রয়োজন নেই। এখানে সারাবছর পানি থাকে বলে যেকোনো সময় এই দর্শনীয় স্থানে ভ্রমণ করতে পারবেন।
মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের সাথে সেখানে রয়েছে শ্রী শ্রী মাধবেশ্বরের তীর্থস্থান, মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক, খাসিয়া পল্লী। আরো রয়েছে পান সুপারি, কমলা ও লেবুর বাগান। এই দর্শনীয় স্থানে সারাবছরই দর্শনার্থীরা আসেন।
কিভাবে মাধবকুণ্ড যাবেন
সিলেট থেকে মাধবকুণ্ড যেতে হলে কদমতলী বাস স্ট্যান্ড থেকে বড়লেখা হয়ে যে বাস কুলাউড়া যায় সেই বাসে করে বড়লেখা আসতে পারেন। বড়লেখা এসে সেখান থেকে রিজার্ভ সিএনজি দিয়ে মাধবকুণ্ড যেতে পারবেন অথবা লোকাল সিএনজি করে বড়লেখা থেকে কাঠলতলী বাজারে এসে সেখান থেকে রিজার্ভ সিএনজি করে মাধবকুণ্ডে যাওয়া যায়। রিজার্ভ সিএনজি ভাড়া পড়বে ১৫০-১৮০ টাকা আর লোকাল সিএনজি জনপ্রতি ২০-২৫ টাকা ভাড়া।
ঢাকা থেকে মাধবকুন্ডে আসতে হলে বিয়ানীবাজার গামী বাসে করে সরাসরি কাঠলতলী বাজারে এসে সিএনজি করে যেতে পারেন।
কোথায় থাকবেন
মাধবকুণ্ডে থাকার জন্য জেলা পরিষদ দুটি বাংলো ও দুটি আবাসিক হোটেল আছে। সেখানে থাকার জন্য আগে থেকে বুকিং দিতে হবে। তবে সবথেকে হয় যদি মৌলভীবাজার, শ্রীমঙ্গল বা সিলেট গিয়ে থাকেন। এতে পরের দিন আপনার যেকোনো জায়গায় যাওয়া সহজ হবে।
কোথায় খাবেন
মাধবকুণ্ডে খাবার ব্যবস্থা ভালোই আছে তবে সেখানে খাবারের মূল্য একটু বেশি। তাই ভালো হয় খাবার সাথে নিয়ে যাওয়া বা আপনি শহরে এসে খেতে পারেন। বড়লেখাও অনেক মানে হোটেল আছে।
একদিনে সিলেট ট্যুর
একদিনের সিলেট ট্যুরের জন্য আপনি সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলায় যেতে পারেন। সেখানে প্রচুর দর্শনীয় স্থান রয়েছে। শুরু করতে পারেন মৌলভীবাজারের বাইক্কা বিল থেকে শীত মৌসুমে এখানে বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখি আসে। পাখির কলকাকলি আর শীতে বাইক্কা বিলের মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য দেখার জন্য প্রতি বছর এখানে পর্যটকের ভিড় থাকে। বিভিন্ন মৌসুমে বাইক্কা বিল বিভিন্ন রূপে সাজে। পর্যটদের তার এই রূপ দেখার সুবিধার জন্য বিলের কাছে নির্মাণ করা হয়েছে দুতলা অবজারভেশন টাওয়ার। এই টাওয়ার থেকে পুরো বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। মৌলভীবাজারে বিল ছাড়াও রয়েছে অনেক হাওর। এসব হাওরে শীতে অনেক অতিথি পাখি ও পরিযায়ী পাখি আসে।
আপনি অতিথি পাখি ও পরিযায়ী পাখির কোলাহল শুনতে চাইলে হাওরগুলো ঘুরে আসতে পারেন। বর্ষার মতো হাওরগুলো পানিতে ভরপুর না হলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে কিন্তু ভরপুর।
হাওর বিল ছাড়াও শ্রীমঙ্গলের চা-বাগান তো রয়েছেই তার সাথে রয়েছে শ্রীমঙ্গলের সাতরং এর চা। নীলকন্ঠ টি কেবিনে পাওয়া যায় এই সাতরং এর চা তার সাথে রয়েছে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধ, মাধবপুর হ্রদ, সিতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা আর সবচেয়ে আকর্শণীয় স্থান হলো মণিপুর পল্লী। পর্যটকদের মণিপুরী জীবন প্রণালী খুব বেশি আকৃষ্ট করে। মণিপুরীদের ঐতিহ্য নাচ ও রাস মেলা উপভোগ করার জন্য দূরদূরান্ত থেকে অনেক পর্যটকরা আসেন এখানে। প্রতি বছর নভেম্বর মাসে মণিপুরী পল্লীতে রাস মেলা বসে। সেখানে মণিপুরীদের ঐতিহ্যবাহী বস্ত্র ও নানাধরনের পন্য পাওয়া যায়।
কিভাবে মৌলভীবাজার যাবেন
বাসে, ট্রেনে, প্ল্যানে যেকোনো ভাবে মৌলভীবাজারে আসা যায়। ঢাকা থেকে মৌলভীবাজারে আসতে হলে সিলেটগামী বাস করে এসে মৌলভীবাজারে নেমে যাবে। আর ট্রেনে এলে শ্রীমঙ্গল এসে নামতে হবে। মৌলভীবাজারে কোনো রেলস্টেশন নেই বলে শ্রীমঙ্গলে নেমে যেতে হবে। শ্রীমঙ্গলে নেমে শ্রীমঙ্গল ঘুরে বাসে বা সিএনজিতে মৌলভীবাজারে আসতে পারেন।
সিলেট থেকে মৌলভীবাজারে আসতে হলে যেকোনো বাসে করে আসতে পারবেন। আর ট্রেনে আসলে কুলাউড়ায় নামতে হবে। আর যদি আপনি মৌলভীবাজারে না এসে শ্রীমঙ্গল যেতে চান তাহলে কুলাউড়া না নামে সোজা ট্রেনে শ্রীমঙ্গলে যেতে পারেন। এছাড়া আপনি প্ল্যানেও আসতে পারেন মৌলভীবাজার শমসেরনগরে একটি এয়ারপোর্ট রয়েছে।
কোথায় খাবেন
মৌলভীবাজারের কিছু কিছু দর্শনীয় স্থানে খাবারের সুব্যবস্থা রয়েছে আবার কোথাও নেই। যেখানে খাবারের সুব্যবস্থা রয়েছে সেখানে খাবারের মূল্য একটু বেশি। তাই সাথে খাবার নিয়ে যাওয়া ভালো। তাছাড়া মৌলভীবাজার, শ্রীমঙ্গলে অনেক নামীদামী রেস্টুরেন্ট রয়েছে আপনি সেখানে খেতে পারেন।
সিলেটে ঘুরাঘুরি
সিলেট শহরে ঘুরাঘুরির মতো জায়গার অভাব নেই। একদিনে সিলেট ট্যুরের জন্য সিলেট শহর দর্শন যথেষ্ট। সিলেটের ব্রিজ, মাজার, পার্ক, ঈদগাহ, জাদুঘর ইত্যাদি দেখার জন্য প্রচুর দর্শনার্থী এখানে আসেন।
সিলেটের হজরত শাহজালাল (রঃ) এর মাজার শরিফ দর্শনের জন্য দূরদূরান্ত থেকে সব ধর্মের লোকেরা এখানে আসেন। মাজারটি সিলেট শহরের ঠিক মধ্যস্থলে অবস্থিত। স্থানীয়রা মাজার এলাকাটিকে দরগা এলাকা এবং প্রবেশপথটিকে দরগা গেইট বলেন।
হজরত শাহজালাল (রঃ) ভারত উপমহাদেশের একজন বিখ্যাত সুফি দরবেশ। তার পুরো নাম শেখ শাহ জানাল কুনিয়াত মুজাররদ। তিনি ৭০৩ হিজরী মোতাবেক ১৩০৩ খ্রিষ্টাব্দে ৩২ বছর বয়সে ইসলাম ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে এসেছিলেন।
হজরত শাহজালালের মাজারের উত্তর দিকে একটি পুকুর আছে। পুকুরে রয়েছে অনেক গজার মাছ। কথিত আছে, হজরত শাহজালাল (রঃ) ৩৬০ আউওলিয়া এর সাথে সিলেট আসার সময় গজার মাছ নিয়ে এসেছিলেন। দর্শনার্থীরা এসব মাছকে খাবার খেতে দেন। মাজারের আরেকটি পাশে রয়েছে একটি কূপ যেখানে সোনালী রূপালী রঙের মাছ দেখা যায়। হজরত শাহজালাল (রঃ) এর মাজারে প্রচুর কবুতর দেখা যায়। এসব কবুতরকে জালালী কবুতর বলা হয়। ঝাঁকেঝাঁকে কবুতরগুলো আগতদের মুগ্ধ করে।
সিলেটে আরো একটি বিখ্যাত মাজার রয়েছে। হজরত শাহ পরাণ (রঃ) এর মাজার। হজরত শাহ পরাণ (রঃ) হজরত শাহজালাল (রঃ) এর ভাগ্নে ও প্রধান অনুসারী। সিলেট শহরের পূর্ব দিকে খাদিম নগর বড় একটা টিলার উপর হজর শাহন পরাণ (রঃ) এর মাজার অবস্থিত। হজরত শাহজালাল (রঃ) এর মাজার থেকে ৮ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত হজরত শাহ পরাণের মাজার। মাজারের টিলায় উঠা-নামার সিঁড়ি মোগল আমলে নির্মিত বলে প্রচলিত। এই দু’টি মাজারই সিলেটের দর্শনীয় স্থানের মধ্যে অন্যতম। সিলেট ভ্রমণে আসলে সকলেই এই দুটি মাজারের দর্শন করে যায়।
সিলেটের প্রবেশদ্বার ক্বিন ব্রিজ স্থাপত্যশৈলী ও নানন্দিকতা সিলেট নগরীর ঐতিহ্যের অন্যতম অংশ। এই ব্রিজের নির্মাণ কাজ ১৯৩৩ সালে শুরু হয়ে ১৯৩৬ সালে শেষ হয়। আসামের গভর্নর মাইকেল ক্বিন সিলেট সফরে আসতে অসুবিধা হয় বলে এ ব্রিজ নির্মাণ করান। তাই তার নামেই এই ব্রিজকে ক্বিন ব্রিজ বলা হয়। প্রতিদিন শত দর্শনার্থীরা এই ক্বিন ব্রিজ দেখতে আসেন।
ক্বিন ব্রিজের নিকট একটি ঘরের চূড়ায় স্থাপিত একটি বিরাট ঘড়ি। আলী আমজাদ ঘড়ি নামে এটি পরিচিত। যে সময় ঘড়ির অবাধ প্রচলন ছিলো না সে সময় এই ঘড়ি নির্মিত হয়। ১৮৭৪ সালে কুলাউড়ার পৃথিমপাশার জমিদার আলী আহমদ খান, তার ছেলে আলী আমজাদের নামে এ ঘড়ি তৈরী করেন। ঘড়িটির ডায়ামিটার আড়াই ফুট এবং ঘড়ির কাঁটা দুই ফুট লম্বা। সিলেটে ঢুকার সময় লোহার খুঁটির উপর ঢেউটিন দিয়ে সুউচ্চ গুম্বজ আকৃতির স্থাপত্যশৈলীর ঘড়িঘরটি সকলের নজর কেড়ে নেয়।
সিলেটের সবচেয়ে প্রাচীনতম ঈদগাহ ‘শাহী ঈদগাহ’। ১৭০০ সালে প্রথম দশকে সিলেটের তদানীন্তন ফৌজদার ফরহাদ খাঁ নিজ উদ্যোগে ও তত্বাবধানে এই শাহী ঈদগাহ নির্মাণ করেন। কেল্লার মতো দেখতে এই ঈদগাহে একসাথে এক লাখ লোক নামাজ পড়তে পারবে। ১৫ টি গম্বুজ বিশিষ্ট এই ঈদগাহে সীমানা প্রাচীরের চারদিকে সর্বমোট ১০ টি দরজা রয়েছে। এটিকে সিলেটের একটি দর্শনীয় স্থান বলে গণ্য করা হয়।
এছাড়াও সিলেট ঘুরাঘুরির জন্য রয়েছে নানান শিশুপার্ক ও যাদুঘর। রয়েছে ড্রিমলেন্ড পার্ক, টিলাগড় ইকোপার্ক, উসমানী শিশু পার্ক, উসমানী যাদুঘর, মিউজিয়াম অব রাজাস রয়েছে মোগ স্থাপত্যশৈলীর অনন্য নিদর্শন জিতু মিয়ার বাড়ি ইত্যাদি।
আইনিউজ/এসডি
- সিলেট ট্রেনের সময়সূচি ২০২৩ দেখুন
- ঢাকা টু সিরাজগঞ্জ ট্রেনের সময়সূচী এবং ভাড়ার তালিকা
- চট্টগ্রাম টু ঢাকা ট্রেনের সময়সূচী এবং ভাড়ার তালিকা
- শীতকালে সিলেটের দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ
- ঢাকা টু পাবনা ট্রেনের তালিকা এবং সময়সূচী
- এবার মাল্টার ভিসা পাওয়া যাবে ঢাকা থেকেই!
- ‘লাসুবন’- শ্রীমঙ্গলে প্রাচীন গিরিখাতের সন্ধান!
- টাঙ্গাইল টু ঢাকা ট্রেনের সময়সূচী এবং ভাড়া তালিকা
- ঢাকা টু দিনাজপুর ট্রেনের সময়সূচী এবং ভাড়ার তালিকা ২০২৩
- ঘুরে আসুন ঝর্ণার স্বর্গ মিরসরাই সীতাকুণ্ডে