হাটহাজারী মাদরাসায় পিবিআই’র তদন্ত দল

হেফাজতে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলার তদন্তে হাটহাজারী মাদরাসা পরিদর্শন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

পিবিআই চট্টগ্রাম- এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইকবালের নেতৃত্বে তদন্ত দলটি মঙ্গলবার বেলা ১১টা ৪০ মিনিট থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তদন্ত টিম প্রথমে হাটহাজারী মাদরাসার অভ্যন্তরে আল্লামা শফির ব্যবহৃত কক্ষসহ ছাত্র বিক্ষোভে ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পরিদর্শন করে ও অন্যান্য আলামত পর্যবেক্ষণ করে।

সূত্র জানিয়েছে, আরও আগেই পিবিআই দল তদন্তের জন্য হাটহাজারী মাদরাসায় যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিল। কিন্তু মাদরাসা কর্তৃপক্ষ কৌশলে আলামত নষ্টের জন্য কালক্ষেপণ করে।

মাদরাসা কর্তৃপক্ষের এমন ভূমিকার নেপথ্যে হেফাজতের কিছু নেতার ইন্ধন ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।

তদন্ত টিম মাদরাসাটির শিক্ষা পরিচালক ও হেফাজতে ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরীর কক্ষে বসে সিনিয়র শিক্ষক দিদার কাসেমী, মাদরাসা পরিচালনা পর্ষদের সদস্য শেখ আহমদ, মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা ওমর ও সিনিয়র শিক্ষক আশরাফ আলী নিজামপুরীর কাছে সাক্ষ্য গ্রহণ করে।

এ সময় তদন্ত কর্মকর্তারা জুনায়েদ বাবুনগরীর সাক্ষ্যও গ্রহণ করেন। তাদের সকলেই ছাত্র আন্দোলনের সময় অর্থ লুটপাটের ঘটনা ছাড়া আল্লামা শফী ও তার আশেপাশের কক্ষ ভাঙচুরের ঘটনা স্বীকার করেন।

সাক্ষ্যদান কালে জুনায়েদ বাবুনগরী ও আশরাফ আলী নিজামপুরী বলেন, ‘মামলার এজাহারে যে আসামিদের নাম রয়েছে তাদের পরিচয় আমরা জানি না এবং আসামিরা হাটহাজারী মাদরাসার কোনো ছাত্র, শিক্ষক ও কর্মচারী নন।’

ছাত্র আন্দোলনের সময় আল্লামা শফীর ওপর কোনো নির্যাতন করা হয়নি উল্লেখ করে মামলাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট বলে দাবি করেন সাক্ষ্যদাতারা।

এ সময় হেফাজত নেতার মৃত্যুকে অস্বাভাবিক ও হত্যাকাণ্ড হিসেবে উল্লেখ করে শফী অনুসারী ও সাধারণ মানুষ ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। পাশাপাশি নিরপেক্ষ ও প্রত্যক্ষদর্শী আলেম, শিক্ষক ও ছাত্ররা আল্লামা শফীর মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত এবং দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সিনিয়র শিক্ষক দুঃখ করে বলেন, আমার চোখের সামনে মাদরাসার ছাত্ররা আল্লামা শফীর কক্ষ ভাঙচুর করেছে। উশৃঙ্খল ছাত্রদের দিয়ে পুলিশের মতো ব্যড়িকেড সাজিয়ে অপরাধের আলামত নষ্ট করেছে। অথচ সাক্ষ্য প্রদানকারী ব্যক্তিরা কেন বিষয়টিকে অস্বীকার করছে তা আমার বোধগম্য নয়।

এ সময় অনেকেই মন্তব্য করেন- আল্লামা শফীর মতো বুজুর্গ ব্যক্তিকে ‘হত্যা’র যদি সুষ্ঠু বিচার না হয় তাহলে এ দেশে এরকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে।

এদিকে, পিবিআই টিমের সাক্ষ্য গ্রহণের সময় ছাত্র বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী অনেক ছাত্রকেও ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়।

ওই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী কতিপয় ছাত্র আল্লামা শফীর ছেলে আনাস মাদানীর বিরুদ্ধে গত ১ জানুয়ারি প্রচারিত আট পাতার লিফলেটটি আজ তদন্তকালীন সময়ে পুনরায় মাদরাসার ছাত্র, সাংবাদিক ও উপস্থিত সাধারণের মধ্যে বিতরণ করে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাদরাসার হাদিস বিভাগের একজন শিক্ষক বলেন, তার গাফেল ছেলের কারণে আল্লামা শফীর মতো একজন বুজুর্গ মানুষের এমন মৃত্যু আলেম সমাজে কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে।

আল্লামা শফীর মৃত্যুর ঘটনাটি অস্বাভাবিক উল্লেখ করে প্রত্যক্ষদর্শী দাবিকারী একজন ছাত্র বলেন, বড় হুজুরকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটি হাসপাতালে নিতে অনুমতি নেওয়ার কথা বলে উল্টো বাধা প্রদান করেছিল জুনায়েদ বাবুনগরীর খাদেম ইনামুল হাসান ফারুকী।

ওই ছাত্র আরো যোগ করেন, ইনামের মতো এমন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী আরো অনেকেই বর্তমানে ঢাকার বারিধারা, যাত্রাবাড়ী, লালবাগ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সক্রিয়। এরা যে কোনো মুহূর্তে হাটহাজারী মাদরাসার মতো ঘটনা ঘটাতে পারে।

পিবিআই তদন্ত টিম হাটহাজারী মাদরাসা পরিদর্শন শেষে ফটিকছড়ি উপজেলার বাবুনগর মাদরাসায় যান। সেখানে তারা গত ১১ সেপ্টেম্বর জুনায়েদ বাবুনগরীর ছেলের বিয়েতে মামুনুল হকসহ অন্যান্যদের গোপন বৈঠকের বিষয়টি তদন্ত করেন। তদন্তকালীন সময়ে তারা বাবুনগর মাদরাসার পরিচালক ও হেফাজতের প্রধান উপদেষ্টা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর সঙ্গে কথা বলেন।