রাকিবুর রহমান
প্রকাশিত: ১৯:০৯, ৮ মার্চ ২০২১
শূন্য থেকে উঠে আসা অদম্য দুই নারী
শূন্য থেকে উঠে আসা অদম্য দুই নারী বেবী হাসান ও সাজেদা বেগম
বেবী হাসান। লালন করতেন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন। তা বাস্তবায়নে করতেন কঠোর পরিশ্রমও। সেই পরিশ্রমই আজ তাকে নিয়েছে স্বপ্নচূড়ায়। এখন কাজ করছেন নারীদের ভাগ্য উন্নয়নে।
বাকি জীবনও এভাবে কাজ করতে চান জানিয়ে বেবী হাসান বলেন, আমাদের দেশে একজন নারী নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাইলে অনেক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়। আমার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী একজন নারী হলেও সমাজ এখনো পুরুষশাসিত। বিশ্বের প্রতিটি আধুনিক সমাজের পেছনে নারীদের অপরিসীম ভূমিকা রয়েছে।
তিনি বলেন, আমার পথচলা শুরু ১৯৮৩ সালে। তখন একটি পোশাক কারখানায় কোয়ালিটি কন্ট্রোলার (কিউসি) হিসেবে কাজ শুরু করি। পরে ফ্লোরের সুপারভাইজার, ইনচার্জ এবং প্রোডাকশন ম্যানেজার হিসেবে পদোন্নতি পাই।
আমার চাকরি জীবনটা ছিল অনেক কষ্টের। সকাল ৮টা থেকে শুরু করে টানা ১২-১৪ ঘন্টা কাজ করতাম।
বেবী হাসান বলেন, আট বছর সেই কারখানায় চাকরি করি। এরপর ১৯৯১ সালে একটি বায়িং হাউজে যোগ দেই। বিদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে চুক্তি থেকে শুরু করে প্রোডাকশনের সবকিছু দেখা লাগতো আমার। কিন্তু একটা সময় নিজের মধ্যে তাড়না কাজ করতো। সেই তাড়না থেকেই ২০০৫ সালে নিজে একটি বায়িং হাউজ গড়ে তুলি।
তিনি বলেন, বায়িং হাউজটি প্রথম দিকে যৌথভাবে চালিয়েছিলাম। পরে নিজে এককভাবে চালাই। সে সময় আমার প্রতিষ্ঠানে ৫-৭ জন কাজ করতেন। বর্তমানে সেই সংখ্যা ৬৫।
সফল এ উদ্যোক্তা বলেন, ২০০০ সালের দিকে চট্টগ্রাম উইম্যান চেম্বারের সঙ্গে যুক্ত হয়ে মনোয়ারা হাকিম আলীর সান্নিধ্য পাই। তার সহায়তা ও উৎসাহ-অনুপ্রেরণায় আমার এতদূর আসা।
যতই বাধা-বিপত্তি আসুক না কেন, সব পেরিয়ে নারীরা ঠিকই এগিয়ে যাচ্ছে। এটাই উইম্যান স্পিরিট।
আরেক নারী উদ্যোক্তা সাজেদা বেগম। তার সফলতার পেছনেও রয়েছে সংগ্রামের গল্প। যার পুঁজি ছিল একটিমাত্র সেলাই মেশিন। সেই মেশিনটি সাজেদা বেগমকে নিয়ে গেছে বহুদূর। তারও স্বপ্ন নারীদের ভাগ্য উন্নয়নে ভূমিকা রাখা।
নারী উদ্যোক্তা সাজেদা বেগম বলেন, আমার ব্যবসার শুরু প্রায় ৩০ বছর আগে। তখন পুঁজি বলতে ছিল একটিমাত্র সেলাই মেশিন। সে সময় বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে অর্ডার নিয়ে কাজ করতাম। এভাবে কাজ করতে করতে একসময় চট্টগ্রাম উইম্যান চেম্বারের মনোয়ারা হাকিম আলীর সান্নিধ্য পাই। তিনি আমার মধ্যে কাজ করার অদম্য ইচ্ছাটুকু দেখে একটি ওভারলক মেশিন এবং তিন হাজার টাকা দেন। পরে সেই টাকা আমি শোধ করি।
তিনি বলেন, একজন নারী হিসেবে আমার এগিয়ে যাওয়া খুব একটা সহজ ছিল না। অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে আমার এতদূর আসা। খুলশী কলোনির বাসায় জননী ক্রাফট নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়েছিলাম নিজেই। তখন আমার সঙ্গে কাজ করতো মাত্র দুজন। পরে ধীরে ধীরে আরও একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলি। যেটির নাম রাখি এসআর ক্রিয়েশন। সেখানে হতো বুটিক, ব্লক ও এমব্রয়ডারির কাজ।
ক্রেতা সন্তুষ্টিই ছিল আমার কাছে মুখ্য। ক্রেতাদের যা কথা দিতাম, তা ধরে রাখার চেষ্টা করতাম। ফলে ব্যবসায় কখনো পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
সাজেদা বলেন, একজন নারী হয়েও ব্যবসার কাজে আমাকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ যেতে হয়েছে। এক্ষেত্রে আমার স্বামীর সাপোর্ট ছিল বেশি।
তিনি আরও বলেন, শূন্য থেকে আমার এতদূর আসার পেছনে অবদান মনোয়ারা হাকিম আলী আপার। তাকি আমি ধন্যবাদ দিতে চাই। আরও ধন্যবাদ দিতে চাই গুলশান আরা আলী, কামরুন মালেক, আবিদা মোস্তফা ও খালেদা আওয়ালকে। তাদের সহায়তা, উৎসাহ ও অনুপ্রেরণায় আমার এতদূর আসা।
সংগ্রামী এ নারী বলেন, নিজে যতটুকু আয় করেছি, তা দিয়ে ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠান বড় করেছি। আমার সন্তানরাও ব্যবসার কাজে আমাকে সহযোগিতা করে। এছাড়া করোনার কারণে ব্যবসায় কিছু ধাক্কা লেগেছে। এরপরও থেমে যাইনি। এখনো কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।
আইনিউজ/আরআর
আরও পড়ুন
সারাবাংলা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
- বরিশালে সন্ধ্যা নদীতে জেলের জালে ধরা পড়লো হাঙর
- বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ২০২৩ ফলাফল : নৌকা ৮৭৭৫৩, হাতপাখা ৩৪৩৪৫
- গাজীপুর সিটি নির্বাচন প্রাপ্ত ফলাফল
- বাড়িতে ফোন দিয়ে জানলেন তিনি বাঘের থাবায় মারা গেছেন, চলছে দাফনের প্রস্তুতি
- দেলোয়ার হোসেন সাঈদী মারা গেছেন
- নির্বাচন ফলাফল লাইভ ২০২৪ | BD election result 2024
- প্রেমের টানে বরিশালে, ‘দেশি প্রেমিকের’ হাতে মার খেয়ে পালালেন ভারতীয় প্রেমকান্ত
- রোজার মধ্যে চার তলায় না উঠায় ফুডপান্ডা রাইডারকে মারধর
- দেশে লাল কাঁঠাল চাষে ব্যাপক সম্ভাবনা
- পাখির বাসায় বিষাক্ত সাপ, হাত দিয়ে প্রাণ হারালো শিশু
সর্বশেষ
জনপ্রিয়