Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, শনিবার   ২১ জুন ২০২৫,   আষাঢ় ৭ ১৪৩২

ডেস্ক নিউজ

প্রকাশিত: ১২:০৫, ২৩ আগস্ট ২০২০

পিরোজপুরের শতবর্ষী নৌকার হাট নিয়ে আরব নিউজে প্রতিবেদন

পিরোজপুর জেলার আটঘর ইউনিয়নের বিখ্যাত নৌকার হাটের খবর এবার দেশের গণ্ডি ছাড়িয়েছে। শতবর্ষী এই হাট নিয়ে এবার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সৌদি আরব ভিত্তিক প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিক আরব নিউজ।

উপকূলীয় ও নিম্নাঞ্চল হওয়ায় প্রতি বছরই বর্ষার মৌসুমে প্লাবিত হয় পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরিশাল এবং এর আশপাশ জেলাগুলো। স্থানীয় রাস্তাঘাট প্লাবিত হওয়ায় দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জনসাধারণের একমাত্র মাধ্যম হয়ে ওঠে নৌকা।

আর নৌকা কিনতে মানুষ প্রতি শুক্রবার ভিড় জমায় পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার সন্ধ্যা নদীর তীরের আটঘর নৌকার হাটে, যা রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ২৬৪ কিলোমিটার দূরে। ১০০ বছরের পুরোনো এই হাটকেই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় নৌকার হাট হিসেবে মনে করা হয়।

সারা বছর প্রতি শুক্রবার কয়েক ঘণ্টার জমে এই হাট। তবে বর্ষাকালে নৌকার পাইকার ও ক্রেতাদের সমাগমে অন্যরকম এক দৃশ্যে পরিণত হয় আটঘরের সন্ধ্যা নদীর তীর।

নৌকা যে ওই অঞ্চলের মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ তা বোঝা গেল নৌকা কিনতে আসা ৭২ বছর বয়সী মোহাম্মদ দালিল উদ্দিনের কথায়। আরব নিউজকে তিনি বলেন- “নৌকা আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বর্ষার মৌসুমে নিম্নাঞ্চলের অধিকাংশ বাড়িঘর ডুবে যায়। তখন নৌকাই চলাচলের একমাত্র উপায়।”

বাংলাদেশ নদী মাতৃক দেশ। পদ্মা, যমুনা, ধলেশ্বরী, ইছামতী, কালি গঙ্গাসহ দেশজুড়ে রয়েছে অসংখ্য নদী। এসব নদী যেমন অসংখ্য মানুষের জীবিকার উৎস, তেমনি বর্ষা মৌসুমে নদীগুলো বড় বিপদের কারণ হয়েও দাঁড়ায়। নদী ভাঙন, বন্যার পাশাপাশি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে হাজার হাজার মানুষ।

বন্যা কবলিত দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বর্ষা মৌসুমে প্রতিটা বাড়িতে অন্তত একটি করে ডিঙি নৌকা থাকে। শুধু নৌকা কেনার জন্যই নয়, প্রতি শুক্রবার আটঘর নৌকা বাজারে মানুষজনের এমনিতে আসাটাও যেন ঐতিহ্যের অংশ।

দালিল উদ্দিন বলেন, “আমার বয়স যখন মাত্র ৭, তখন আমি দাদার সঙ্গে প্রথমবার এই হাটে এসেছিলাম। এখন এই হাটে আসাটা মানুষের ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে।”

নৌকা কিনতে আসা ৫৯ বছর বয়সী কামরান আহমেদ এসেছেন ঝালকাঠি জেলা থেকে। জানালেন, তার বাড়িতে থাকা নৌকাটি খুব পুরোনো হয়ে গেছে। ফলে আরেকটি নৌকা খুব দরকার হয়ে পড়েছে।

“বর্ষা মৌসুমে অনেক দূর থেকে গবাদিপশুর জন্য খাবার সংগ্রহ করতে হয় আমাকে। কেননা এই সময়ে আমার গ্রামের ঘাস ক্ষেত্রগুলো নদীর পানিতে তলিয়ে যায়। এ ছাড়া বাগান থেকে পেয়ারা সংগ্রহের জন্য ছোট এই নৌকা নৌকা দরকার হয় আমার।”

নৌকার হাটটি দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জনমানুষের জন্য প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। এখানে যেমন নৌকার অনেক পাইকার পাওয়া যায়, তেমনি আসেন অনেক ক্রেতা। আর হাতে বানানো এসব বেশ টেকসই এবং মূল্যও মানানসই।

নৌকাগুলোর গড় দৈর্ঘ্য হয়ে থাকে ৭ থেকে ৮ মিটার। দীর্ঘ-প্রস্থ এবং মানের ওপর নির্ভর করে দাম হয়ে থাকে ২০ থেকে ৬০ ডলার বাংলাদেশি মুদ্রায় সতেরোশো থেকে ৫ হাজার টাকা।

হাটের নৌকার পাইকার রমেশ সাহা আরব নিউজকে বলেন, “দেশের এই অঞ্চলে পর্যাপ্ত কাঠ পাওয়া যাওয়ায় আমরা সস্তায় নৌকা বিক্রি করতে পারি। এ ছাড়া এসব কাঠে অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যায় না। ফার্নিচার বানানোর কাজে ব্যবহার করা যায় না।”

এই হাটে যারা নৌকা বিক্রি করেন তারা বংশ পরম্পরায় ব্যবসাটি চালিয়ে আসছেন বলে জানালেন ৬২ বছর বয়সী রমেশ, “আমার বাবা এই বাজারে নৌকা বিক্রি করতেন। এখন আমি পারিবারিক ব্যবসাটি চালাচ্ছি। আমার ছেলে আমাকে সহযোগিতা করছে।”

রমেশ জানালেন, একটি নৌকা বানাতে তাদের সময় লাগে একদিন বা দুই দিন। আর এসব ডিঙি নৌকা বানাতে সিদ্ধ হস্ত হাটের পার্শ্ববর্তী মুক্তাহার, চামি, বলদিয়া, ইনদেরহাট, বইঠা কাটা, দুবি ও কাঠালি গ্রামের মানুষজন।

আকবর হোসেন নামের এক নৌকা বিক্রেতা বললেন, “কখনো নৌকা বানাতে একটু বেশি সময় লাগে। ব্যাপারটি নির্ভর করে নৌকাটি কত বড় সেটার ওপর।”

৫৪ বছর বয়সী আকবর জানালেন, প্রতি শুক্রবার আটঘর হাটে প্রতি শুক্রবার সাধারণত ১০০ থেকে ২০০ নৌকা বিক্রি হয়। তবে চলমান করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বিক্রিতে কিছুটা প্রভাব পড়েছে।=

Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়