Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৫ আগস্ট ২০২৫,   শ্রাবণ ২১ ১৪৩২

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৮:৫৩, ১৭ জুলাই ২০২০

যেভাবে ভাসমান প্রাণীদের পাশে ওয়াসিফ

ছবি- সংগৃহীত

ছবি- সংগৃহীত

বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ এর কারণে স্থবির পুরো বিশ্ব। বাংলাদেশেও সবকিছু চলছে সীমিত পরিসরে। বেশিরভাগ হোটেল রেস্তোরাঁঁগুলো বন্ধ থাকায় সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হচ্ছে ভাসমান প্রাণীদের। 

বিভিন্ন মোড়ে শুয়ে  দিন যেন যাচ্ছে যেন তাদের। ঠিক এমন সময় অভুক্ত প্রাণীদের খাদ্য সরবারাহের উদ্যোগ নিয়েছেন রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) এনিম্যাল সায়েন্স এন্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন (এএসভিএম) অনুষদের শিক্ষার্থী আল ওয়াসিফ। 

১৭ মার্চ শেকৃবি ক্যাম্পাস বন্ধ হওয়ার পর থেকে খাদ্যসংকটে পড়ে ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়ানো কুকুর, বিড়ালগুলো। শেরেবাংলা হলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের একজন আল ওয়াসিফ। মানবিক দিক এবং নিজে একজন প্রাণিচিকিৎসক হওয়ায় ভাসমান প্রাণীদের প্রতিদিন খাবার দেওয়ার উদ্যোগ নেন। একটানা ৬২ দিন ধরে চলছে ভাসমান প্রাণীদের খাবার সরবারহ।

এ বিষয়ে আল ওয়াসিফ বলেন, ‘ঢাকা শহরে অলিতে গলিতে ঘুরে বেড়ায় অসংখ্য ভাসমান প্রাণী যেমন কুকুর, বিড়াল, কাক, চিল ইত্যাদি। অধিকাংশের আহার জুটতো রাস্তার পাশে পড়ে থাকা উচ্ছিষ্ট খাবারের অংশ, কারোর আবার সিটি কর্পোরেশন এর ময়লার ডাস্টবিন হতে, রাস্তার পাশের খাবার হোটলের উচ্ছিষ্ট অংশ হতে। লকডাউনের কারণে ওদের খাবারের উৎসগুলো বন্ধ হয়ে আছে। পুরো ক্যাম্পাস ফাঁকা পড়ে আছে। শেরেবাংলা হলে আছি ১৫-১৬ জন ছাত্র আর ক্যাম্পাসের অতন্দ্র প্রহরী অনেকগুলো কুকুর ও বিড়াল। রুমের সামনে  দেখি ৭-৮ টা বিড়াল ও ৩-৪ কুকুর আসে প্রায়ই। আমি একজন প্রাণি চিকিৎসক, ওদের ভাষা বুঝতে দেরি হলো না। রান্নার সময় দুই পট চাল বেশি দিতাম। খাওয়া শেষ হলে একটু ঝোল আর আলু ভাতের সঙ্গে মাখিয়ে খাওয়াতে থাকলাম। রুমের সামনের কুকুর বিড়ালগুলো মোটামুটি খেতে পাচ্ছে। প্রতিদিন বাজার থেকে আসার সময় গেটের সামনে, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের কুকুরগুলো আমার হাতের খাবার গুলার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতো। কিন্তু কিছুই করার ছিল না, বেকার ছাত্র হিসেবে ওদের দায়িত্ব নেয়ার সামর্থ আমার ছিলো না।’

এ বিষয়ে তিনি আরো বলেন, ‘যখন আমি পারছিলাম না ওদের খাবার যোগান দিতে তখন মাইক্রোবায়োলজি এন্ড প্যারাসাইটোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এম এ মান্নান স্যার আমাকে আর্থিক সহায়তার কথা বললে আমি চালিয়ে যাই। এরপর অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল হক বেগ স্যার আর্থিক সহায়তার কথা জানান। আরো কয়েকজন শিক্ষক মহোদয় ও এনিম্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি, শেকৃবি আর্থিক অনুদানের কথা জানালে আমার চিন্তার অবসান ঘটে।’

কিভাবে খাবার সংগ্রহ করে পরিবেশন করা হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে আল ওয়াসিফ বলেন, ‘আগারগাঁও কাঁচা বাজার এবং তালতলা কাঁচা বাজারে গিয়ে দুপুর ২টার মধ্যে খাবার সরবরাহ করি। প্রতিদিনই ২০-২৫ টা কুকুর, ২৫-৩০ টা বিড়াল, ৪০-৫০ টা কাক, ৮-১০ টা চিল খেতে আসে। ওদের ঘেউ-ঘেউ, মিউ-মিউ, কা-কা শব্দে মুখরিত হয়ে যায় ক্যাম্পাস। প্রতিদিন খাবারের তালিকায় রাখা হয় মুরগির মাংস, মাছ, মাছের উচ্ছিষ্ট অংশ, মুরগির চামড়া ও পা, বিস্কুট, ব্রেড, খিচুড়ি,  ভাত ইত্যাদি।’

ভাসমান প্রাণীদের চিকিৎসার ব্যাপারে তিনি বলেন, 'খাওয়ানোর শুরুতে খেয়াল করেছিলাম কুকুর, বিড়াল গুলো রুগ্ন আর শরীরে ক্ষত ছিল, কামড়ের দাগ ছিল। একদিন একটা বিড়াল এর পেটে অনেক বড় একটা ক্ষত দেখলাম। এন্টিবায়োটিক, এন্টিহিস্টামিনিক এবং এন্টি-ইনফ্লাম্যাটরি ড্রাগস ইনজেক্ট করে দিয়েছিলাম। তিনদিন ডোজ চালিয়েছি সাথে নেবানল পাউডার ক্ষত জায়গায় লাগিয়েছিলাম। বিড়ালটি সুস্থ হয়েছিল কয়েক দিন পরে। এখন নিয়মিত খাবার দেওয়ার ফলে প্রাণি গুলোর স্বাস্থ্যের বেশ উন্নতি হয়েছে। সাথে সাথে শরীরের ক্ষত গুলোও হারিয়ে গেছে।’

এ বিষয়ে শেকৃবি এএসভিএম অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল হক বেগ বলেন, ‘এক এলাকার কুকুর অন্য এলাকায় ঢুকতে পারে না। এটা তাদের সহজাত বৈশিষ্ট্য। তাই লকডাউনের শুরু থেকে ক্যাম্পাসের ভেতরের কুকুর, বিড়ালগুলো খাদ্য সংকটে পড়ে।ওয়াসিফ জন্টু, হাবিব, মেহেদিসহ যারা খাবার সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে এটাকে আমি সাধুবাদ জানাই। আমার পক্ষ থেকে সহযোগিতা করেছি, অনেক শিক্ষকরাও অনুদান দিয়েছেন। ওদের বলেছি এ কার্যক্রম ক্যাম্পাস খোলা পর্যন্ত চালিয়ে যাও।’

Green Tea
সর্বশেষ