Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০১ মে ২০২৫,   বৈশাখ ১৮ ১৪৩২

শ্যামলাল গোসাঁই

প্রকাশিত: ১৯:০৫, ২০ জুন ২০২৪

একটি মৃ*ত্যুর ঘটনা এবং বিচ্ছিন্ন কিছু ভাবনার কথা

একটি মৃ*ত্যুর ঘটনা এবং বিচ্ছিন্ন কিছু ভাবনার কথা

একটি মৃ*ত্যুর ঘটনা এবং বিচ্ছিন্ন কিছু ভাবনার কথা

মানুষের মৃ*ত্যু বিচিত্র ধরনের হয়। তবে, কিছু মৃ*ত্যু আছে যেগুলো দশজন মানুষকে ভাবায়, ভাবাতে বাধ্য করে। যে কারণে কিছু মৃ*ত্যুর ঘটনায় মানুষ অনুপ্রেরণা পায়, নিন্দা গায়, গর্ব করে। যদিও মৃ*ত্যুর মূল মজার দিকটি হচ্ছে— এটি এমন এক যাত্রা— যার এটির অভিজ্ঞতা হয়েছে, খোদ তাঁর কাছ থেকে এর বর্ণনা শোনা কখনোই সম্ভব নয়। তবে, এটা ঠিক প্রায় সব মৃ*ত্যুই মানুষকে মর্মাহত করে। যেমনটি আজকে মর্মাহত করেছে মৌলভীবাজারের শ্যামরকোনায় পানিতে ডুবে দুই জনের মৃ*ত্যুর ঘটনা।

শ্যামকোনায় ছাইম এবং হৃদয় নামের দুই জন পানিতে ডুবে মা*রা গেছেন। এদের মধ্যে ছাইম শিশু আর হৃদয় শৈশব পেরোনো কিশোর। হৃদয়ের মা*রা যাওয়ার কথা ছিল না। যদি না সে পানিতে পড়া ছাইম আর তার সাথের জনকে উদ্ধার করতে না যেত। পানিতে পড়ে যাওয়া দুই জনকে উদ্ধার করতে গিয়ে একজনকে উদ্ধার করে ছাইমের সঙ্গে হৃদয় নিজেও প্রা*ণ হারাল। আমি বলবো, এখানে ছাইমদের বাঁচাতে গিয়ে হৃদয় আসলে তাঁর প্রাণটি ত্যাগ করল। যদিও এই কিশোরের প্রা*ণ ত্যাগ নিয়ে কেউ হয়তো দুই কথা লিখবে না। আমি নিজের গরজেই লিখছি। মনে করুন একটি কল্যাণকামী আত্মত্যাগী কিশোর সম্পর্কে জানলাম।

স্থানীয়দের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, ছাইম আর তার সাথের একজন রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় নদীতে পড়ে যায়। বানের পানির প্রবল স্রোত দুই শিশুকে পাড় থেকে দূরে নিয়ে যায়। বিষয়টি পাড়ে থাকা হৃদয়ের নজরে আসলে সে শিশু দুইটিকে উদ্ধার করতে গিয়ে একজনকে উদ্ধারও করে। তবে, হৃদয়ের জীবনে আজকের দিনটিই হয়তো ছিল শেষ দিন। ছাইমকে উদ্ধার করার আগে সে নিজেও প্রবল স্রোতে ভেসে যায়। এবং প্রায় আধঘণ্টা পর স্থানীয়রা শিশু ছাইম ও কিশোরের লা*শ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।

হৃদয় গ্রামের এক সাধারণ কৃষক পরিবারের সন্তান। মাত্র পনের বছর বয়সে পা দিয়েছিল এই কিশোর। আমরা এই সময়কে বলি স্বপ্নিল জীবন। হৃদয়ের সে জীবন শুরুর আগেই শেষ হয়েছে। বিচিত্র এক মৃ*ত্যুর ঘটনা গ্রাস করে নিয়েছে এই কিশোরের জীবন। মারা যেতে যেতে সে বাঁচিয়ে গেছে একটি শিশুকে। আরেকটু সময় পেলে হয়তো দ্বিতীয় শিশুটিকেও বাঁচাতে পারতো, পারতো নিজে বেঁচে ফিরতে। তবে তা হয়নি।

হৃদয়কে নিয়ে ভাবতে ভালো লাগছে এজন্য যে, হৃদয় নামের এই কিশোরটি সেই কিশোরদের দলভুক্ত হয়তো নয়। যারা এখন মানুষের আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। যাদের নাম আমরা দিয়েছি কিশোর গ্যাং। হৃদয় যদি হতো ওরকম কেউ। তাহলে হয়তো শিশু দুইটিকে আজ এভাবে পানিতে পড়ে গেছে দেখে দৌড়ে উদ্ধারের জন্য উত্তাল নদীতে ঝাঁপ দিত না। হয়তো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সেও মোবাইলে একটি ভিডিও তৈরি করতো 'বোকাবাক্সে বন্দী' মানুষদের মতো। প্রা*ণ হারানোর ঝুঁ*কি নিয়ে আজকাল পরের ছেলেকে রক্ষার জন্য ক’জনইবা লাফিয়ে পড়বে প্রবল স্রোতে?

আরও পড়ুন- চূড়ান্ত সত্যের সন্ধানে | দার্শনিক আলাপ 


No photo description available.

লেখক- শ্যামলাল গোসাঁই, কবি ও সংস্কৃতিকর্মী, Email- [email protected]

Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়