Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, রোববার   ২৭ এপ্রিল ২০২৫,   বৈশাখ ১৪ ১৪৩২

প্রকাশিত: ১০:৩২, ৯ আগস্ট ২০১৯
আপডেট: ১০:৩২, ৯ আগস্ট ২০১৯

বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী: পর্ব-৩

শেখ মুজিবুর রহমান :

মুসলিম আইন অনুযায়ী রেণু তাঁর সম্পত্তি পায় না। রেণুর কোন চাচা না থাকার জন্য তাঁর দাদা সম্পত্তি লিখে দিয়ে যান। আমাদের বংশের অনেক ইতিহাস পাওয়া যেত যদি তার জীবনীটা পেতাম। কিন্তু কে বা কারা সেটা গায়েব করেছে বলতে পারব না, কারণ অনেক কথা বের হয়ে যেতে পারে। রেণু অনেক খুঁজেছে, পায় নাই! এ রকম আরও অনেক ছোটখাটো গল্প আছে, কতটা সত্য আর কতটা মিথ্যা বলতে পারি না।

যাহোক, শেখদের দুর্দিন আসলেও তারা ইংরেজদের সহ্য করতে পারত না। ইংরেজকে গ্রহণ করতে না পারায় এবং ইংরেজি না পড়ায় তারা অনেক পেছনে পড়ে গেল। মুসলমানদের সম্পত্তি ভাগ হয়। অনেক বেশি। বংশ বাড়তে লাগল, সম্পত্তি ভাগ হতে শুরু করল, দিন দিন আর্থিক অবস্থাও খারাপের দিকে চলল। তবে বংশের মধ্যে দুই একজনের অবস্থা ভালই ছিল ।

আমার দাদাদের আমল থেকে শেখ পরিবার ইংরেজি লেখাপড়া শুরু করল। আমার দাদার অবস্থা খুব ভাল ছিল না। কারণ দাদারা তিন ভাই ছিলেন, পরে আলাদা আলাদা হয়ে যান। আমার দাদার বড় ভাই খুব বিচক্ষণ লোক ছিলেন । তিনি দেশের বিচার-আচার করতেন। আমার দাদা হঠাৎ মৃত্যুবরণ করেন। আমার বড় চাচা এন্ট্রাস পাশ করে মারা যান। আমার আব্বা তখন এন্ট্রান্স পড়েন। ছোট্ট ছোট্ট ভাই বোন নিয়ে আব্বা মহাবিপদের সম্মুখীন হন। আমার দাদার বড় ভাইয়ের কোন ছেলে ছিল না। চার মেয়ে ছিল। আমার বাবার সাথে তাঁর ছোট মেয়ের বিবাহ দেন এবং সমস্ত সম্পত্তি আমার মাকে লিখে দেন ।

আমার নানার নাম ছিল শেখ আবদুল মজিদ। আমার দাদার নাম শেখ আবদুল হামিদ আর ছোট দাদার নাম শেখ আবদুর রশিদ। তিনি তখন ইংরেজের দেয়া 'খাঁন সাহেব' উপাধি পান। জনসাধারন তাকে 'খান সাহেব' বলেই জানতেন। আমার আব্বার অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হলেও দুই চাচার লেখাপড়া, ফুফুদের বিবাহ সমস্ত কিছুই তার মাথার উপর এসে পড়ল। বাধ্য হয়ে তিনি লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে চাকরির অন্বেষণে বের হলেন। মুসলমানদের তখনকার দিনে চাকরি পাওয়া খুবই দুষ্কর ছিল। শেষ পর্যন্ত দেওয়ানি আদালতে একটা চাকরি পান, পরে তিনি সেরেস্তাদার হয়েছিলেন। যেদিন আমি ম্যাট্রিক পাস করে কলকাতায় ইসলামিয়া কলেজে পড়তে যাই আমার আব্বাও সেইদিন পেনশন নিয়ে বাড়ি চলে যান।

একটা ঘটনা লেখা দরকার, নিশ্চয়ই অনেকে আশ্চর্য হবেন। আমার যখন বিবাহ হয় তখন আমার বয়স বার তের বছর হতে পারে। রেণুর বাবা মারা যাবার পরে ওর দাদা আমার আব্বাকে ডেকে বললেন, “তোমার বড় ছেলের সাথে আমার এক নাতনীর বিবাহ দিতে হবে। কারণ, আমি সমস্ত সম্পত্তি ওদের দুই বোনকে লিখে দিয়ে যাব।” রেণুর দাদা আমার আব্বার চাচা। মুরব্বির হুকুম মানার জন্যই রেণুর সাথে আমার বিবাহ রেজিস্ট্রি করে ফেলা হল । আমি শুনলাম আমার বিবাহ হয়েছে। তখন কিছুই বুঝতাম না, রেণুর বয়স তখন বোধহয় তিন বছর হবে। রেণুর যখন পাঁচ বছর বয়স তখন তার মা মারা যান। একমাত্র রইল। তার দাদা। দাদাও রেণুর সাত বছর বয়সে মারা যান।

তারপর, সে আমার মা'র কাছে চলে আসে। আমার ভাইবোনদের সাথেই রেণু বড় হয়। রেণুর বড়বোনেরও আমার আর এক চাচাতো ভাইয়ের সাথে বিবাহ হয়। এরা আমার শ্বশুরবাড়িতে থাকল, কারণ আমার ও রেণুর বাড়ির দরকার নাই। রেণুদের ঘর আমাদের ঘর পাশাপাশি ছিল, মধ্যে মাত্র দুই হাত ব্যবধান। অন্যান্য ঘটনা আমার জীবনের ঘটনার মধ্যেই পাওয়া যাবে।

সুত্র- অসমাপ্ত আত্মজীবনী , বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়