Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, শুক্রবার   ০৯ মে ২০২৫,   বৈশাখ ২৬ ১৪৩২

বানিয়াচং (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৩:১৯, ২৪ মে ২০২৩

বানিয়াচংয়ে থেমে নেই দেশীয় অস্ত্রের ব্যবহার, ঝরছে প্রাণ

টেটাবিদ্ধ হয়ে সোমবার নিহত যুবক মইনুল হোসেন।

টেটাবিদ্ধ হয়ে সোমবার নিহত যুবক মইনুল হোসেন।

হবিগঞ্জ জেলার ঐতিহ্যবাহী একটি গ্রাম বানিয়াচং। কিন্তু দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে হামলা-প্রতিহামলার কারণে দিনকে দিন ভয়ংকর হয়ে উঠছে পরিস্থিতি। দেশীয় অস্ত্র নিষিদ্ধ হলেও থেমে নেই এর অপব্যবহার। গ্রাম্য দাঙ্গা অতীতের সকল রেকর্ডকে হার মানিয়েছে বানিয়াচং। ফলে আবারও দাঙ্গায় টেটাবিদ্ধ হয়ে করুণভাবে মইনুল হোসেন নামক এক যুবকের মৃ ত্যুর ঘটনা ঘটেছে। 

মইনুল হোসেন বানিয়াচং উপজেলার ১৩নং মন্দরী ইউনিয়নের টুপিয়াজুরী গ্রামের বাসিন্দা। সে ওই গ্রামের নুর ইসলাম মিয়া ছেলে। 

জানা যায়, গত ২২ মে সোমবার নুর ইসলাম মিয়ার আরেক ছেলে তাজুল ইসলাম জনসাধারণের চলাচলের রাস্তায় স্যানেটারি টয়লেট বসান। বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ জানান তার চাচাতো ভাই জুলহাস। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। পরে উভয়পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে মহিলাসহ আহত হন অনন্ত ১০ জন। 

খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষে বুকে টেঁটাবিদ্ধ হন মইনুল ইসলাম। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে, পরে সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য মঙ্গলবার ঢাকা নেওয়ার পথে মঙ্গলবার ভোরে তিনি মারা যান। 

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বানিয়াচং থানার ইন্সপেক্টও (তদন্ত) হানিফ মোহাম্মদ জানান, সোমবার ওই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তাদের মধ্যে জায়গা নিয়ে পূর্ব বিরোধ ছিল। 

উল্লেখ্য, বানিয়াচংয়ে গ্রাম্য দাঙ্গা প্রতিরোধে দেশীয় অস্ত্র নিষিদ্ধ করে গণ বিজ্ঞপ্তি জারি করে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন। এতে ৭দিনের মধ্যে স্বেচ্ছায় দেশীয় অস্ত্র জমা দেয়ার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়। সেই গণ বিজ্ঞপ্তি জারি অনুযায়ী দেশীয় অস্ত্র নিজ উদ্যোগে জমা দেয়ার ৭দিন অতিবাহিত হলেও নিজ উদ্যোগে থানায় কিংবা পুলিশ ফাঁড়িতে কেউ দেশীয় অস্ত্র জমা দেয়নি। 

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বানিয়াচং থানার অফিসার ইনচার্জ অজয় চন্দ্র দেব।

বানিয়াচংয়ে পরপর বেশ কয়েকটি গ্রাম্য দাঙ্গায় দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে অকালে ঝড়ে পড়ে বেশ কয়েকটি তাজা প্রাণ। এ নিয়ে বানিয়াচংয়ের আইন শৃংখলা কমিটির সভায় বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হলে গ্রাম্য দাঙ্গা রোধে কার্যকারী পদক্ষেপ গ্রহনে আইন শৃংখলা সভায় বক্তারা জোরালে পদক্ষেপ গ্রহনের আহবান জানান। 

এরই প্রেক্ষিতে উপজেলা আইন-শৃংখলা কমিটির সিদ্ধান্তের আলোকে ১৪ মে গণ-বিজ্ঞপ্তি জারি করে বানিয়াচং উপজেলায় টেটা, বল্লম, ফিকল ইত্যাদি দেশীয় অস্ত্র জনস্বার্থে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বানিয়াচং উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা আইন শৃংখলা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার পদ্মাসন সিংহ স্বাক্ষরিত গণ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়। গণ বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়, বিজ্ঞপ্তি জারির তারিখ হতে আগামী ৭ দিনের মধ্যে সকল প্রকার দেশীয় অস্ত্র বানিয়াচং থানা অথবা নিকটবর্তী পুলিশ ফাঁড়িতে জমা দিতে বলা হয়েছে। এই সময়ের পর কারো বাড়ীতে অথবা কারো হেফাজতে ওই সকল দেশীয় অস্ত্র পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু প্রশাসনের বেধেঁ দেয়া সময়ের মধ্যে গতকাল পর্যন্ত কোন দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার হয়নি। ইতিমধ্যে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে ঘটেছে বেশ কয়েকটি সংঘর্ষের ঘটনা। 

বানিয়াচংয়ের সচেতন মহল মনে করেন দেশীয় অস্ত্র উদ্ধারে প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় সচেতন যুব সমাজ, স্বেচ্ছাসেবকী সংগঠন ও জনপ্রতিনিধিদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। দেশীয় অস্ত্র নিষিদ্ধের বিষয়টি ব্যাপকভাবে প্রচার না হওয়ায় একেবারে গ্রাম পর্যায়ে এ বিষয়ে এখনো মানুষজনের মধ্যে সচেতনতা তৈরী হয়নি বলেও একাধিক ব্যক্তি অভিমত ব্যক্ত করেন।

আই নিউজ/এইচএ 

Green Tea
সিলেট বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়