Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, বুধবার   ১৬ জুলাই ২০২৫,   শ্রাবণ ১ ১৪৩২

আব্দুর রব, মৌলভীবাজার

প্রকাশিত: ১৫:৫৮, ২৮ ডিসেম্বর ২০২০
আপডেট: ১৭:১৫, ২৮ ডিসেম্বর ২০২০

মন্তব্য প্রতিবেদন

একদিন পর জন্ম হলেই ভর্তি হতে পারছে না শিক্ষার্থীরা

সংগৃহীত

সংগৃহীত

দেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২০২১ সালের ভর্তির আবেদন শেষ হয়েছে। গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত পছন্দের বিদ্যালয়ে আবেদন করেছে শিক্ষার্থীরা। করোনার কারণে এ বছর পরীক্ষার পরিবর্তে লটারির মাধ্যমে ভর্তি করা হবে শিক্ষার্থীদের।

এদিকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের বয়স সংক্রান্ত নীতিতে ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা। 

সাধারণত, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ১০+ বয়সের শিক্ষার্থীকে ভর্তি করানো হয়। এবারের ভর্তি সার্কুলারে কোথাও ১ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে শিক্ষার্থীর বয়স ১১+ হতে হবে বলে উল্লেখ ছিলো না।

তবে ফরম পূরণের সময় দেখা গেলো, যাদের জন্ম তারিখ ১ জানুয়ারি ২০১০ এর পর তাদের আবেদন গ্রহণ করছে না সার্ভার। অর্থাৎ তারা এ বছর সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারবে না। 

কিন্তু বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে কোনো বাঁধা নেই।  এই ধরণের অপরিকল্পিত সিদ্ধান্তের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি বৈষম্যেরও শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ অভিভাবকদের।

সেক্ষেত্রে,  আগামী বছর সেই শিক্ষার্থীকে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করানোর সময় তার বয়স হবে ১১ বছর ১১ মাস ২৮/২৯ দিন। ফলে অভিভাবকরা বাধ্য হয়ে তাদের সন্তানদের বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে হবে অথবা ৫ম শ্রেণিতে পুনরাবৃত্তি করাতে হবে।   

এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ শিক্ষক এবং অভিভাবক।  অভিভাবক ফারুক আহমদ জানান- আমার সন্তানের জন্ম ১০ জানুয়ারি,  তাকে আমি ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে ভর্তি করতে চাই কিন্তু পারছি না। অনেক অভিভাবক তারিখ পরিবর্তন করতে ভর্তি করাচ্ছেন। আমি সেটা করবো না তবে এই সিদ্বান্তের প্রতিবাদ জানাই। আমি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় আমার সন্তানকে ভর্তি করতে চাই।

মৌলভীবাজারের আলী আমজাদ সরকরি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পূর্ণা রায় ভৌমিক  জানান "আমার শিক্ষার্থীরা অপরিকল্পিত সিদ্ধান্তের কারণে কেনো ভর্তি হতে পারবে না, তাদের অপরাধ কি। এই শিক্ষার্থীরা আমার সন্তান, তাদের কষ্টে আমিও কষ্ট পাচ্ছি।

তিনি বলেন, তাকে ১ জানুয়ারির পর পৃথিবীর আলো দেখিয়েছে বলে মা-বাবার অপরাধ হলো!! একজন শিক্ষক সন্তানের দ্বিতীয় জন্মদাতা। সেই হিসেবে আশা করছি এর সরল সমাধান হবে। আর না হয় ধরে নেবো চাকুরীর মতো শিক্ষা এখন "সুযোগ" "অধিকার" নয়।"

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্বাশতী দাশ,  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষুব্ধতা প্রকাশ করে জানান-

"বুকে কেমন যেন চাপা ব্যথা। মনের ভাবটা প্রকাশ করতে না পেরে যন্ত্রণাটা আরো বাড়ছে। করোনাকালে আমাদের কিছু শিক্ষার্থী স্কুলের আয়োজনে,  উপজেলা শিক্ষা অফিসের আয়োজনে, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের আয়োজনে জুম মিটিং এ স্বতঃফূর্ত অংশগ্রহণ করেছে। এইতো সেদিন আমার নুসরাত সচিব স্যারের জুম মিটিং এ সাবলীলভাবে অতিরিক্ত সচিব তাজুল ইসলাম স্যারের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিল। বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে আমার অর্সা কত দরদ দিয়ে জাতীয় সংগীত গাইলো, মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে আলোচনা করলো, আমার আরিশা কত সুন্দর করে কবিতা আবৃত্তি করলো। অনেকেই ভাবতে পারেন এত গর্বের বিষয়, কিন্তু আমি যন্ত্রণা পাচ্ছি কেন?

আমার যন্ত্রণাটা হচ্ছে- আমার এই সোনামণিরা সরকারি মাধ্যমিক স্কুলের ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারছে না, কারণ এদের মধ্যে কারো জন্ম ৫ জানুয়ারি, ২০১০ কারো বা জন্ম ৮ জানুয়ারি, ২০১০। ভর্তির আবেদনের সফটওয়্যার ১ জানুয়ারি, ২০১০ এর পরে জন্মগ্রহণকারী কোনো শিশুর আবেদন গ্রহণ করছে না। যাদের জন্ম ২ জানুয়ারি তারাও দুর্ভাগা। খুব আশা ছিল হয়তো কর্তৃপক্ষ এই শিশুদের কথা ভাবে একটু শিথিল করবেন। কিন্তু আজ ২৭ ডিসেম্বর আবেদন করার সময় শেষ হচ্ছে। এই শিশুরা আমাদের নিজের  সন্তানের থেকে কম নয়, তাইতো এত কষ্ট পাচ্ছি।"

এ ব্যাপারে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা  ফজলুর রহমান জানান, বয়সের নির্দিষ্ট তারিখের ব্যাপারে অনেক অভিভাবক এবং শিক্ষকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে সিদ্ধান্ত বিবেচনার জন্য।

এই ঘটনায় একটি রিট হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাইকোর্টের আইনজীবী এডভোকেট আইনুন নাহার সিদ্দিকা লিপি।

তিনি জানান, ভর্তি প্রক্রিয়ায় এই অপরিকল্পিত সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারে লক্ষ্যে রিট করেছন এক ব্যক্তি। রিটকারী অভিভাবকের নাম মো. মিজানুর রহমান। রিটকারীর আইনজীবী ব্যারিস্টার মঞ্জুরে এলাহী। 

Green Tea
সিলেট বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ