Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, শুক্রবার   ০২ মে ২০২৫,   বৈশাখ ১৮ ১৪৩২

কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৬:২০, ২৮ জুন ২০২২
আপডেট: ১৯:৩৯, ২৮ জুন ২০২২

শ্বশুর বাড়ি গিয়ে লাশ হলেন সাইফ, বউকে নিয়ে হলোনা লন্ডন সফর

আগামী সপ্তাহেই স্ত্রীকে নিয়ে লন্ডনে পাড়ি দেয়ার কথা ছিলো সাইফের

আগামী সপ্তাহেই স্ত্রীকে নিয়ে লন্ডনে পাড়ি দেয়ার কথা ছিলো সাইফের

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কাতার প্রবাসী সাইফ বিন করিম মায়ের পছন্দের কনেকে বিয়ে করে সংসার বেঁধে ছিলেন এক বছর আগে। স্ত্রীকে নিয়ে সিলেটের ওসমানীনগরের গলমুকাপন গ্রামের নানা শ্বশুরের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে ফিরেলেন লাশ হয়ে। সামনের সপ্তাহেই স্ত্রীসহ লন্ডনে যাবার কথা ছিলো তার।

নিহত সাইফ বিন করিম কমলগঞ্জ পৌর এলাকার কুমড়াকাপন গ্রামের ফজলুল করিম বাবুলের ছেলে। গত রবিবার (২৬ জুন) রাতে নানা শ্বশুরের বাড়ি থেকে সাইফের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে ওসমানীনগর থানা পুলিশ।

সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টায় নিহত সাইফ বিন করিমের লাশ জানাজা শেষে দাফন করা হয়।

সাইফ বিন করিম কমলগঞ্জের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা। পরিবারের সদস্যরা জানান, কিছুদিন আগে স্ত্রী তাছমিনাকে সঙ্গে নিয়ে নানা শ্বশুর মুক্তার মিয়ার সিলেটের উসমানীনগরের গলমুকাপন গ্রামে বেড়াতে যান সাইফ। রোববার (২৬ জুন) রাতে তার মৃত্যু সংবাদ পায় তার পরিবার। তাছমিনার এক মামা টেলিফোনে সাইফের বাবাকে জানান সাইফ বসতঘরের সিলিং ফ্যানের সাথে বিছানার চাদর দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।

খবর পেয়ে ছুটে যান সাইফের বাবাসহ স্বজনরা। তার আগেই লাশ নামিয়ে ফেলা হয়। তারা গিয়ে দেখেন নিথর দেহ খাটের মধ্যে রয়েছে। সাইফের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন এবং পরিবারের সদস্যদের কথাবার্তায় সন্দেহ হলে বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়।

খবর পেয়ে রোববার (২৬ জুন) রাতেই লাশ উদ্ধার করে উসমানীনগর থানা পুলিশ। বিয়ের রেজিস্টার অনুযায়ী তাছমিনা ছিলেন তালাকপ্রাপ্ত। তার বাড়ি হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার নবীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চইতপুর গ্রামে। কিন্তু এ নামে কোনো গ্রাম নেই ওই ইউনিয়নে। তবে চৌশতপুর নামে ওই ইউনিয়নে গ্রাম রয়েছে।

তাছমিনার বাবার নাম কামাল আহমেদ, মা রুনা আহমেদ।

জানা গেছে সাইফের নানা বাড়িও উসমানীনগরে। সে হিসেবে তাছমিনার মা রুনা হলেন সাইফের মা শাহানারা করিমের বান্ধবী। তাছমিনার প্রথম সংসার ভেঙে যাবার পর ছেলে সাইফের জন্য বিয়ের প্রস্তাব দেন তিনি। পূর্ব পরিচিত থাকায় বিয়ের সেই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান তাছমিনার মা রুনা।

বিয়ের কথাবার্তা যখন চলে তখন সাইফ বিন করিম ছিলেন কাতার আর তাছমিনা আহমেদ ছিলেন লন্ডনে। কথাবার্তা ফাইনাল হলে সাইফকে দেখতে লন্ডন থেকে কাতার আসেন তাছমিনা। পরে কাতারেই তাদের বাগদান (এনগেজমেন্ট) সম্পন্ন হয়। গত বছরের এপ্রিলে সাইফ দেশে আসলে একই বছরের ১৩ জুন তাছমিনা আহমেদের সাথে ১৫ লাখ টাকা দেন মোহরে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন সাইফ। বিয়ে সম্পন্ন হয় তাছমিনার নানা মুক্তার মিয়ার নিজ বাড়ি সিলেটের উসমানীনগরের গলমুকাপন গ্রামে।

সাইফ বিন করিমের মা শাহানারা করিম গত রোববার বিকেলে ছেলে সাইফের সাথে শেষ কথা বলেন। তখন সাইফ তাকে বলে আম্মু আমি ঘুমাচ্ছি। এ কথা বলেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠেন সাইফের মা।

সাইফের মৃত্যুর সংবাদ রোববার রাতেই তার বাড়িতে পৌঁছলে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। মা-বাবাসহ পরিবারের সদস্য এবং স্বজন প্রতিবেশীদের কান্নায় পরিবশ ভারী হয়ে ওঠে। এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। সদা হাসোজ্জ্বল টগবগে যুবকের এ মৃত্যু সহজে কেউ মেনে নিতে পারছেন না।

সাইফের বন্ধু ও সহপাঠীরা জানান, আগামী সপ্তাহে লন্ডন যাবার কথা ছিলো সাইফের। সে আত্মহত্যা করতে পারে না। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।

এদিকে রোববার রাতেই ওসমানীনগরের গলমুকাপন থেকে নিহত সাইফের মরহেদ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট এম, এ, জি, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায় ওসমানীনগর থানা পুলিশ।

সাইফের পরিবারের সদস্যরা জানান, পুলিশ লাশ উদ্ধারের পর থেকে তাদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে তার স্ত্রী তাছমিনার পরিবার।

কমলগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহেদুল আলম বলেন, সাইফ বিন করিম ছিলেন ছাত্রলীগের একজন নিবেদিত কর্মী ছিলেন। জীবনের তাগিদে সে কাতার চলে যায়। কিছুদিন আগে দেশে আসে। সে আত্মহত্যা করতে পারে না। এটি পরিকল্পিত একট হত্যাকাণ্ড। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবী করেন।

আইনিউজ/এইচএ

আরও পড়ুন
Green Tea
সিলেট বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়