Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, রোববার   ১৮ মে ২০২৫,   জ্যৈষ্ঠ ৩ ১৪৩২

বিশেষ প্রতিবেদক, মৌলভীবাজার

প্রকাশিত: ১৬:০৬, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩
আপডেট: ১৬:০৯, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩

এবারের ইত্যাদিতে মানবিক সমাজকর্মী

৩শ বাংলাদেশীকে ভারতের জেল থেকে মুক্ত করে আনলেন অমলেন্দু কুমার দাশ

বাংলাদেশী বন্দীদের ভারতের কারাগার থেকে মুক্তি করে নিয়ে আসছেন মানবকর্মী অমলেন্দু কুমার দাশ

বাংলাদেশী বন্দীদের ভারতের কারাগার থেকে মুক্তি করে নিয়ে আসছেন মানবকর্মী অমলেন্দু কুমার দাশ

ভারতের কারাগারে বন্দী তিন শতাধিক বাংলাদেশী এবং বাংলাদেশের কারাগারে বন্দি ভারতের ১৯ নাগরিককে মুক্তি করে মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন মৌলভীবাজারের অমলেন্দু কুমার দাশ। স্বেচ্ছায় এবং নিজের বেতনের টাকা খরচ করে তিনি এ কাজ করছেন। বরাবরের মতো এবারের ’ইত্যাদি’ অনুষ্ঠানে হৃদয়ছোঁয়া মানবিক প্রতিবেদনে রয়েছে অমলেন্দু’র মহৎ কাজ। ইত্যাদির এবারের পর্ব ধারণ করা হয়েছে নেত্রকোণায়। ২৯ সেপ্টেম্বর প্রচারিত হবে সেটি।

অমলেন্দু কুমার দাশ মৌলভীবাজার সদর উপজেলার দক্ষিণ বাড়ন্তি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মৌলভীবাজার সদর উপজেলার সহকারী উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। সরকারি চাকুরীর পাশাপাশি তিনি মানবিক কাজ, লোক সাহিত্য ও গবেষণাধর্মী লেখালেখিসহ লোকজ সংস্কৃতি রক্ষায় নানা কজের সঙ্গে জড়িত।

কারাবন্দীদের মুক্ত করার প্রসঙ্গে অমলেন্দু কুমার দাশ জানান, ২০১৭ সাল থেকে অদ্যাবধি ৩ শতাধিক বাংলাদেশি নাগরিককে ভারতের বিভিন্ন কারাগার থেকে মুক্ত করে তাদের স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। এ কাজের জন্যই তাকে মানবিক মানুষ বলা হয়। মানবিক কাজের পিছনে রয়েছে এক বৃদ্ধা মায়ের চোখের জল, অনেক বন্দীর করুণ কাহিনী ও নীরব চাহনি।

ভারতের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে বাংলাদেশে এসে স্বজনদের ধরে কাঁদছেন পাশে মানবকর্মী অমলেন্দু কুমার দাশ। ছবি- আই নিউজ 


ভারতের আসামের পাথারকান্দির জয়ন্তী বিশ্বাস ছেলেকে নিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশে মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়ে মৌলভীবাজার কারাগারে বন্দী হন। আদালত তাদেরকে ১ মাসের জেল প্রদান করেন। কিন্তু সাজার মেয়াদ শেষ হলেও নানান প্রশাসনিক জটিলতায় তারা নিজ দেশে যেতে পারছিলেন না। ১৪ মাস পর আসামের এমএলএ কৃষ্ণেন্দু পালের অনুরোধে অমলেন্দু বাবু প্রায় দুই মাস সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দৌঁড়ঝাপ করে তাদের মুক্তির আদেশ হাতে পান। অবশেষে ১৬ মাসের বন্দী জীবন থেকে মুক্তি পেয়ে মা ছেলেকে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে নিজ দেশে ফিরিয়ে দেন। এসময় মা-ছেলের কান্নাতে সেদিন বর্ডার এলাকার পরিবেশ অন্যরকম হয়। মা-ছেলের ঘরে ফেরার আনন্দে অমলেন্দু বাবুর এ ধরনের কাজে উৎসাহ বেড়ে যায়। 

পরবর্তীতে তিনি মৌলভীবাজার জেলা কারাগারের সকল ভারতীয় বন্দী এবং সিলেট জেলা কারাগারের কয়েকজন বন্দীকে ভারতে নিজ পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেন। এই বন্দীদের অনেকেই ১৪-১৯ বছর পর্যন্ত বাংলাদেশের কারাগারে মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দী ছিলেন।

অমলেন্দু বাবুর এ মহতি কাজ মিডিয়াতে প্রচার হলে ভারতীয় কয়েকজন সংবাদকর্মী ও সমাজসেবক অমলেন্দু বাবুকে জানান, আসামের বিভিন্ন কারাগারে অনেক বাংলাদেশি নাগরিক বন্দী রয়েছেন। এর প্রেক্ষিতে ২০১৮ থেকে এ পর্যন্ত উভয় দেশের আইনী ও প্রশাসনিক জটিলতা নিরসন করে আসাম ও মেঘালয় রাজ্যের বিভিন্ন কারাগারের বন্দীর পরিবারকে খোঁজে ৩ শতাধিক বাংলাদেশি নাগরিককে নিজ দেশে স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন।

তিনি আরও জানান, পুরো কাজটি স্বেচ্ছাশ্রমের মানসিকতা থেকে করছেন। অমলেন্দু বাবু তাঁর বেতনের একটা অংশ এই কাজে ব্যয় করে থাকেন। অসহায় বন্দীদে মুক্ত করা তার নেশায় পরিণত হয়েছে। বন্দীদের মুক্ত করার আনন্দে তিনি সমস্ত কষ্ট ও যন্ত্রণা ভুলে যান। ভুক্তভোগী পরিবারের কাছে অমলেন্দু দাশ একজন মহামানব। সাধারণ মানুষের কাছে তিনি মানবতার ফেরিওয়ালা হিসাবে পরিচিত।

আই নিউজ/এইচএ 

Green Tea
সিলেট বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়