তানভির আরহাম
আপডেট: ১৮:২৩, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২১
সাইফুর রহমান, এক ক্ষণজন্মা পুরুষ (ভিডিও)

সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমান, এক ক্ষণজন্মা পুরুষ। রোববার ৫ সেপ্টেম্বর তার ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৯ সালের এই দিনে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলাকায় এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, বরেণ্য এই রাজনীতিবিদ।
মৌলভীবাজারের উজ্জ্বল নক্ষত্র সাইফুর রহমানের জন্ম ও বেড়ে ওঠা জেলার সদর উপজেলার বাহারমর্দান গ্রামে। নিজ জন্মস্থান মৌলভীবাজার ও সিলেট বিভাগের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য মানুষের মুখে মুখে এখনও উচ্চারিত হয় সাইফুর রহমানের নাম।
মনে আছে অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের কথা? (ভিডিও)
এম সাইফুর রহমান বাণিজ্যমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী ও একাধিকবার অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন।
সাইফুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতিতে যোগ দেন এবং সলিমুল্লাহ হল ছাত্র ইউনিয়নের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকার জন্য তিনি গ্রেফতার হয়ে এক মাস কারাবরণ করেন।
তার জাতীয় রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ১৯৭৬ সালে জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিসভার বাণিজ্য উপদেষ্টা হিসেবে। ১৯৭৭ সালে তিনি জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দলে যোগ দেন। যা তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে রূপান্তরিত হয়। ১৯৭৮ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত তিনি প্রথমে জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিসভার বাণিজ্যমন্ত্রী ও পরে আবদুস সাত্তারের মন্ত্রিসভার অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২৪ মার্চ ১৯৮২ সালে এরশাদ ক্ষমতা দখল করে সামরিক শাসন জারি করলে বিএনপির শীর্ষপর্যায়ের প্রায় সব নেতার সাথে তিনি গ্রেফতার হন।
১৯৯১ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত তিনি টেকনোক্র্যাট অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রার্থী হিসেবে সিলেট-৪ আসন থেকে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১২ জুন ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রার্থী হিসেবে মৌলভীবাজার-৩ ও সিলেট-৪ আসন থেকে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রার্থী হিসেবে তিনি সিলেট-১ ও মৌলভীবাজার-৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত খালেদা জিয়ার দ্বিতীয় মন্ত্রিসভার অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী ছিলেন।
বাংলাদেশে মুক্ত বাজার সংস্কার প্রক্রিয়ার প্রবর্তক হিসেবে সমধিক পরিচিত। তিনি সবচেয়ে বেশি সময়কাল ধরে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন এবং মোট ১২ বার জাতীয় বাজেট পেশ করেন।
তিনি সর্বোচ্চ সময়কালীন বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী। ভাষা আন্দোলনে অবদানের জন্য ২০০৫ সালে তাঁকে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়।
এম সাইফুর রহমানের জন্ম ১৯৩২ সালের ৬ অক্টোবর। তার বাবার নাম মোহাম্মদ আবদুল বাছির, মায়ের নাম তালেবুন নেছা। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় ছিলেন তিনি।
সাইফুর রহমান মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে লেখাপড়ার পর সিলেটের দি এইডেড হাই স্কুল থেকে ১৯৪৯ সালে মেট্রিকুলেশনে উত্তীর্ণ হন। পরে সিলেটের এমসি কলেজ থেকে আইকম পাস করেন। ১৯৫১ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য লন্ডনে যান। তবে ব্যারিস্টারির পরিবর্তে পড়েন চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্সি। ১৯৫৯ সালে ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্স ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ফেলোশিপ অর্জন করেন। এছাড়া তিনি আর্থিক ও মুদ্রানীতি এবং উন্নয়ন অর্থনীতিতে বিশেষায়িত শিক্ষা গ্রহণ করেন।
সাইফুর রহমান পেশায় একজন চার্টার্ড একাউন্ট্যান্ট ছিলেন। ১৯৬২ সালে পেশাজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৬৯ সালে তৎকালীন পাকিস্তান জাতীয় বেতন কমিশনে প্রাইভেট সেক্টর হতে একমাত্র সদস্য মনোনীত হন। তিনি ১৯৭৩ ও ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ জাতীয় বেতন কমিশনের সদস্যও ছিলেন।
তিনি ‘রহমান, রেহমান অ্যান্ড হক’ নামে একটি নিরীক্ষা ফার্ম প্রতিষ্ঠা করেন যা চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্ট শিক্ষার্থীদের জন্য একটি আদর্শ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে তার কৃতিত্বের স্মারক হয়ে আছে।
১৯৯৪ সালে তিনি স্পেনের মাদ্রিদে বিশ্ব ব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সুবর্ণ জয়ন্তী সম্মেলনের গভর্নর নির্বাচিত হন। ১৯৮০ থেকে ১৯৮২ ও ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ মেয়াদে তিনি বিশ্বব্যাংক, এডিবি, আইডিবি, আইএফএডিতে বাংলাদেশের গভর্নর ছিলেন। ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৫ মেয়াদে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন।
সাইফুর রহমান ১৯৬০ সালে চট্টগ্রামের মেয়ে বেগম দূররে সামাদ রহমানকে বিয়ে করেন। তিনি তিন ছেলে ও এক কন্যা সন্তানের জনক। ২০০৩ সালে তার স্ত্রী ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর বড় ছেলে এম নাসের রহমান সাবেক সংসদ সদস্য।
২০০৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তিনি এক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। তার শেষ ইচ্ছানুযায়ী বাহারমর্দানে তাকে দাফন করা হয়।
তথ্যসূত্র : উইকিপিডিয়া ও বাংলাপিডিয়া
- মেয়ের বাড়িতে ইফতার: সিলেটি প্রথার বিলুপ্তি চায় নতুন প্রজন্ম
- অবশেষে ক্লাস করার অনুমতি পেল শ্রীমঙ্গলের শিশু শিক্ষার্থী নাঈম
- দেশের চতুর্থ ধনী বিভাগ সিলেট
- শ্রীমঙ্গল টু কাতারে গড়ে তুলেছেন শক্তিশালি নেটওয়ার্ক
মৌলভীবাজারে অনলাইন জুয়ায় রাতারাতি কোটিপতি সাগর - এসএসসির ফলাফলে বিভাগে ৩য় স্থানে মৌলভীবাজার
- বিজ্ঞাপন
মৌলভীবাজারে হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসায় লাইফ লাইন হাসপাতাল (ভিডিও) - মৌলভীবাজারে ট্যুরিস্ট বাসের উদ্বোধন বৃহস্পতিবার
- ১ ঘন্টার জন্য মৌলভীবাজারে শিশু কর্মকর্তা হলেন তুলনা ধর তুষ্টি
- মৌলভীবাজার শহরে একদিনে ৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত
- বন্ধ থাকবে মৌলভীবাজারের ‘এমবি’