নিজস্ব প্রতিবেদক
উচ্চাভিলাসী বাজেটই দিয়েছি, ব্যাখ্যা করলেন প্রধানমন্ত্রী

ছবি- পিআইডি
এবার আমরা উচ্চাভিলাসী বাজেটই দিয়েছি বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, অনেকে বলছেন- বাজেট একটু বেশি আশাবাদী, বা উচ্চাভিলাসী। একটা কথা মনে রাখতে হবে সবসময় আমাদের একটা লক্ষ্য থাকতে হবে। আজকে কোভিড-১৯ এর জন্য সবকিছু স্থবির। তবে আমরা আশাবাদী, এ অবস্থা থাকবে না। এর থেকে উত্তোরণ ঘটবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে যদি হঠাৎ সে অবস্থার উত্তোরণ ঘটে যায় তাহলে আগামীতে কি করবো, সেটা চিন্তা করেই এই পদক্ষেপটা নিয়েছি। সেখানে কোভিড যদি শেষ না হয় তাহলে হয়তো আমরা বাস্তবায়ন করতে পারবো না। কিন্তু আমাদের প্রস্তুতিটা থাকা দরকার বলে আমরা মনে করি। সেজন্য উচ্চাভিলাসী বাজেটই আমরা দিয়েছি।
সোমবার জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন তিনি। করোনা উপলক্ষে নেয়া সরকারের যাবতীয় ব্যবস্থাও সংসদে তুলে ধরেন তিনি।
শুরুতেই স্বাধীনতার মহান স্থপতি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। স্মরণ করেন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাত্রিতে শহিদ মা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের। শ্রদ্ধা জানান জেলখানায় নিহত জাতীয় চার নেতা, মহান মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নির্যাতিতা ২ লাখ মা-বোনকে।
এ সময় সদ্য প্রয়াত অভিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান ও বর্ষীয়ান জননেতা মোহাম্মদ নাসিম, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আবদুল্লাহসহ কোভিড-১৯-এ প্রাণ হারানো সবার আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী। সমবেদনা জানান তাদের পরিবারের প্রতি। আর যারা এখনো আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন তাদের আশু সুস্থতা কামনা করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চলতি ২০২০ সালে উদযাপিত হচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। আগামী বছর ২০২১ সালে জাতি পালন করতে যাচ্ছে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। কিন্তু এই মাহেন্দ্রক্ষণে গোটা বিশ্ব এক ক্রান্তিকালের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯-এর কারণে বিশ্ব অথর্নীতি আজ মহামন্দার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ২০২০ সালে বৈশ্বিক অর্থনীতি ৪.৯ শতাংশ সঙ্কুচিত হবে মর্মে প্রাক্কলন করেছে। তাছাড়া করোনার প্রভাবে বৈশ্বিক পণ্য বাণিজ্য ১৩-২০ শতাংশ হ্রাস, বিশ্বব্যাপী ১৯ কোটি ৫০ লাখ কর্মীর পূর্ণকালীন চাকরি হ্রাস, বৈশ্বিক এফডিআই প্রবাহ ৫-১৫ শতাংশ হ্রাস এবং বৈশ্বিক রেমিট্যান্স ২০ শতাংশ হ্রাস পাবে মর্মে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় ৮ মার্চ এবং ভাইরাসের বিস্তারকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে ২৬ মার্চ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত দীর্ঘ ৬৬ দিন সাধারণ ছুটি কার্যকর ছিল। গণপরিবহন এবং কল-কারখানা এ সময়ে বন্ধ থাকে এবং উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়নের গতি মন্থর হয়। এর ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও কোভিড-১৯ এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এ সব বিবেচনায় নিয়ে চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার সংশোধন করে ৫.২ শতাংশ প্রাক্কলন করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আশা করা যায়, ২০২১ সালে বিশ্ব এবং অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি কোভিড-১৯ প্রভাব থেকে ধীরে ধীরে বের হয়ে আসবে। এই বাস্তবতায় বাংলাদেশের অর্থনীতি তার পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসবে ধরে নিয়ে আগামী ২০২০-২১ অথর্বছরের বাজেটে প্রবৃদ্ধির হার প্রাক্কলন করা হয়েছে ৮.২ শতাংশ। একইসঙ্গে নিম্ন মূল্যস্ফীতি ধরে রাখার পাশাপাশি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।
প্রবৃদ্ধির হার ৮.২ শতাংশ প্রাক্কলনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ যে অনুমানসমূহ বিবেচনায় নেয়া হয়েছে সেগুলো তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে আমাদের অর্থনীতির উৎপাদন ব্যাহত হলেও অর্থনৈতিক অবকাঠামোর কোনো ক্ষতি হয়নি, যা প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা যুদ্ধ-বিগ্রহের সময় হয়ে থাকে। সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির ফলে কর্মসৃজন ও ব্যক্তি আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়বে এবং প্রণোদনার প্যাকেজসমূহ সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়িত হলে উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থা মহামারি পূর্বাবস্থায় চলে আসবে। অক্টোবর/নভেম্বর মাসের মধ্যে করোনাভাইরাস প্রতিষেধক টিকা বাজারে চলে আসলে ইউরোপ-আমেরিকায় জীবনযাত্রা দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে যাবে এবং আমাদের রফতানি আয় কোভিড পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরে আসবে। বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে, ফলে বৈদেশিক কর্মসংস্থান এবং প্রবাস আয়ে বর্তমান সংকট কেটে যাবে।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের সঙ্গে সঙ্গেই এ সংকট মোকাবিলায় নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। একইসঙ্গে অর্থনীতির উপর সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাব উত্তরণে একটি সামগ্রিক কর্মপন্থা নির্ধারণ করেছি। যার মধ্যে কিছু কাজ দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়ন করেছি, কিছু স্বল্পমেয়াদে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছি এবং কিছু কাজ দীর্ঘমেয়াদে বাস্তবায়ন করবো।
তিনি আরো উল্লেখ করেন, আমাদের এ কর্মপন্থার চারটি প্রধান কৌশলগত দিক রয়েছে। এগুলো হলো-
(ক) সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি করা: কর্মসৃজনকে প্রাধান্য দেয়া ও বিলাসী ব্যয় নিরুৎসাহিত করা এবং কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যয় পিছিয়ে দেয়া।
(খ) আর্থিক সহায়তার প্যাকেজ প্রণয়ন: বাজেট বরাদ্দ এবং ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে বিনা ও স্বল্প সুদে কতিপয় ঋণ সুবিধা প্রবর্তন করা যাতে অর্থনৈতিক কর্মকা- পুনরুজ্জীবিত হয়, কর্মসংস্থান ঠিক থাকে এবং উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
(গ) সামাজিক সুরক্ষার আওতা সম্প্রসারণ: হতদরিদ্র, কর্মহীন হয়ে পড়া নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠী এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত জনগণকে সুরক্ষা দিতে সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি করা।
(ঘ) বাজারে মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি করা: অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড দ্রুত পুনরুজ্জীবিত করা। একইসঙ্গে মূল্যস্ফীতি যাতে না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা।
শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশব্যাপী সাধারণ ছুটি, কলকারখানা বন্ধ থাকা এবং সর্বোপরি ব্যবসা বাণিজ্য স্থবির থাকায় দেশে বিপুল সংখ্যক মানুষ সাময়িকভাবে কর্মহীন হয়ে পড়ে। সে কারণে করোনাভাইরাসের অর্থনৈতিক প্রভাব কার্যকরভাবে মোকাবিলা করা, জরুরি স্বাস্থ্যসেবা খাতের ব্যবস্থাপনা, কর্মসংস্থান টিকিয়ে রাখা এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে এ পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ ৩ হাজার ১১৭ কোটি টাকার ১৯টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি।
প্রণোদনা প্যাকেজসমূহ সংক্ষেপে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। সেগুলো হলো-
(১) রফতানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের বেতন-ভাতা অব্যাহত রাখার স্বার্থে ৫ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল প্রদান করেছিলাম। যার মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক শ্রমিক কর্মচারির কর্মসংস্থান টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়েছে। এ তহবিল থেকে ৩৫ লাখ শ্রমিক-কর্মচারির এপ্রিল ও মে মাসের বেতন-ভাতা পরিশোধে সমুদয় অর্থ শেষ হয়ে যায়। পরবর্তীতে বিশেষ বিবেচনায় ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ঋণ সুবিধা হতে মাত্র ২ শতাংশ সুদে আরো ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা জুন মাসের বেতন-ভাতা প্রদানের জন্য প্রদান করা হয়েছে। অর্থাৎ রফতানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য মোট ৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্রদান করা হয়েছে।
(২) ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবসায় টিকিয়ে রাখতে ৩০ হাজার কোটি টাকার ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ঋণ সুবিধা প্রণয়ন করেছি। এ ঋণ সুবিধার সুদের হার হবে ৯ শতাংশ; এর মধ্যে অর্ধেক ৪.৫০ শতাংশ ঋণ গ্রহিতা এবং অবশিষ্ট ৪.৫০ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসেবে প্রদান করবে। এ সুবিধার ফলে শিল্প ও সেবা খাতের আনুমানিক ৬০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান টিকে থাকবে।
(৩) কুটির শিল্পসহ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যও ২০ হাজার কোটি টাকার আরো একটি স্বল্প সুদের ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ঋণ সুবিধা চালু করেছি। ৯ শতাংশ সুদের এ ঋণ সুবিধার ৫ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসেবে প্রদান করবে। অবশিষ্ট ৪ শতাংশ প্রদান করবে ঋণ গ্রহিতা। এর মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের ২৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান ধরে রাখা সম্ভব হবে।
(৪) শিল্পের কাঁচামাল আমদানি সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের আকার আমরা ৩.৫ বিলিয়ন ডলার হতে ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত এবং এর সুদের হার কমিয়ে ২ শতাংশ নির্ধারণ করেছি।
(৫) রফতানিকারকদের প্রি-শিপমেন্ট খাতের ব্যয় অর্থায়নের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে ৫ হাজার কোটি টাকার নতুন একটি রিফাইন্যান্স স্কিম চালু করেছি।
(৬) করোনা রোগীদের সেবা প্রদানের কাজে প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সবাইকে দুই মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ বিশেষ সম্মানী প্রদান করা হবে। এ খাতে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছি।
(৭) করোনা রোগীদের সেবা প্রদানে সরাসরি নিয়োজিত ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীসহ এ সংক্রান্ত সরকার ঘোষিত নির্দেশনা বাস্তবায়নে মাঠ প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী এবং প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত প্রজাতন্ত্রের অন্যান্য কর্মচারী দায়িত্ব পালনকালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে পদমর্যাদা অনুযায়ী ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা এবং মৃত্যুবরণ করলে তাদের পরিবারকে এর পাঁচগুণ ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে। এ খাতে ৭৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
(৮) হঠাৎ কর্মহীন হয়ে পড়া দরিদ্র-অসহায় মানুষের মাঝে আমরা খাদ্য বিতরণ করছি। এ লক্ষ্যে মানবিক সহায়তা হিসেবে দেশব্যাপী মোট ৪ লাখ মেট্রিক টন চাল ও ১ লাখ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ রেখেছি। এ পর্যন্ত ১ কোটি ৫৯ লাখ পরিবারের মাঝে বিনামূল্যে চাল বিতরণ করা হয়েছে।
(৯) নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর মধ্যে আমরা খোলাবাজারে মাত্র ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রয় শুরু করেছি; এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৬ হাজার মেট্রিক টন চাল বিক্রয় করেছি এবং এ কার্যক্রম এখনো অব্যাহত আছে। এ বাবদ ২৫১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
(১০) করোনাভাইরাসজনিত কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া দেশের অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দিতে আমরা সারাদেশে নির্বাচিত ৫০ লাখ উপকারভোগীর প্রত্যেককে ২ হাজার ৫০০ টাকা করে অনুদান ট্রেজারি থেকে সরাসরি তাদের ব্যাংক বা মোবাইল অ্যাকাউন্টে প্রদান করছি।
(১১) দেশের অতিদরিদ্র ১০০টি উপজেলায় বয়স্ক ভাতা এবং বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতা কর্মসূচির আওতা শতভাগে উন্নীত করা হবে। এর আওতায় নতুন ৫ লাখ বয়স্ক ভাতা এবং ৩ লাখ ৫০ হাজার বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতা বাড়ানো হবে। এছাড়াও প্রতিবন্ধী ভাতা কর্মসূচির আওতায় সব প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করে আরো ২ লাখ ৫৫ হাজার নতুন ভাতাভোগী যুক্ত হবে।
(১২) জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সব গৃহহীন মানুষের জন্য গৃহ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি। আগামী অর্থবছরে এ কর্মসূচিতে ২ হাজার ১৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
(১৩) কৃষকের উৎপাদিত ধান-চালের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করা ও বাজারে চালের দাম স্থিতিশীল রাখতে চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে সরাসরি ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা আরো ২ লাখ টন বাড়িয়ে মোট ১৯ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন ধান-চাল সংগ্রহ করা হচ্ছে।
(১৪) ধান কাটা ও মাড়াই কাজ যান্ত্রিকীকরণে আমরা ২০০ কোটি টাকার প্রণোদনা এরইমধ্যে প্রদান করেছি। এছাড়াও আগামী অর্থবছরে ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকার একটি নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
(১৫) কৃষির সার্বিক উন্নয়ন, কৃষককে প্রণোদনা প্রদান এবং দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে কৃষি খাতে ভর্তুকির পরিমাণ বাড়িয়ে ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা করেছি।
(১৬) কৃষকের ঋণ প্রাপ্তি সহজ করার লক্ষ্যে ৫ হাজার কোটি টাকার একটি কৃষি পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠন করেছি।
(১৭) নিম্ন আয়ের পেশাজীবী, কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য ৩ হাজার কোটি টাকার অপর একটি পুনঃঅর্থায়ন স্কিম আমরা গঠন করেছি।
(১৮) বিদেশ ফেরত প্রবাসী শ্রমিক, প্রশিক্ষিত তরুণ এবং বেকার যুবকদের ব্যবসা ও আত্মকর্মসংস্থানমূলক কাজে স্বল্প সুদে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যে কর্মসংস্থান ব্যাংক, প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক ও পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনকে মোট ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করেছি। এতে আনুমানিক ৯ লাখ বেকার যুবকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
(১৯) সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণের বিপরীতে এপ্রিল ও মে মাসের সুদ আদায় স্থগিত করা হয়েছে। এ দু’মাসের মোট সুদের মধ্যে সরকারের পক্ষ হতে ২ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি প্রদান করবো এবং ঋণ গ্রহীতাগণ অবশিষ্ট অংশ সমান ১২টি কিস্তিতে পরিশোধ করবেন। এ কর্মসূচিতে প্রায় ১ কোটি ৩৮ লাখ ঋণ গ্রহিতা উপকৃত হবেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের ব্যাপক জনগোষ্ঠী যেন উপকৃত হয় সে লক্ষ্য নিয়েই পরিকল্পিতভাবে এবং যথাযথ সময়ের পূর্বেই প্রতিটি প্রণোদনা প্যাকেজ প্রণয়ন করা হয়েছে। উল্লিখিত প্রণোদনা প্যাকেজসমূহ বাস্তবায়ন শুরু হওয়ায় এরইমধ্যে ৫ কোটি ৭০ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষভাবে সুবিধা পেয়েছে এবং ১৯টি প্যাকেজ সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হলে ১২ কোটি ৫৫ লাখ মানুষ সুবিধা পাবে। এছাড়াও প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ কর্ম সুরক্ষা ও নতুন কর্ম সৃজন হবে।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯-এর প্রভাবে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে যে সাময়িক প্রয়োজন উদ্ভূত হয়েছে তা মেটানো এবং অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে যে ক্ষয়-ক্ষতি সৃষ্টি হবে তা পুনরুদ্ধারের কৌশল বিবেচনায় নিয়ে অর্থমন্ত্রী ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, এটি আওয়ামী লীগ সরকারের ১৭তম এবং বর্তমান মেয়াদের দ্বিতীয় বাজেট। আর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে সরকার পরিচালনা করেছিলেন সেখানে তিনটি বাজেট দেয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। সে হিসেবে এটি আওয়ামী লীগের ২০তম বাজেট। যেটি আওয়ামী লীগ সরকার এ দেশকে উপহার দিয়েছে। এ বাজেটে অর্থনৈতিক পুনর্গঠন এবং করোনাভাইরাস মোকাবিলায় জীবন ও জীবিকা রক্ষার উপর প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। তাছাড়া বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ দেয়ার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য, কৃষি, কর্মসৃজন ও সামাজিক নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে।
‘এছাড়া নির্বাচনী ইশতেহার, ২০১৮ এবং টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ও লক্ষ্যসমূহ অর্জনের প্রয়াস চালানো হবে। আমরা দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০২১-৪১) অনুমোদন করেছি। এ পরিকল্পনার মাধ্যমে ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে উত্তরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
হয়তো তখন আমরা বেঁচে থাকবো না কিন্তু কাজ করে যাচ্ছি, কর্মপন্থা দিয়ে যাচ্ছি ভবিষ্যতে যারা আসবে তারা যেন এটা অনুসরণ করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যায়।’
তিনি আরো বলেন, আমরা আগামী অর্থবছর হতে ৫ বছর মেয়াদি ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবো যার মূল প্রতিপাদ্য হবে দারিদ্র্য ও আয় বৈষম্য কমিয়ে এনে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে আরো অন্তর্ভুক্তিমূলক করা।
বাংলাদেশ বিগত ১২ বছরে গড়ে ১.৪ শতাংশ হারে দারিদ্র্য বিমোচনে সক্ষম হলেও কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাবে চলতি অর্থবছরে এ ধারায় কিছুটা হয়তো ছন্দপতন হতে পারে। এ মহামারির কারণে অর্থনৈতিক কার্যক্রম থমকে যাওয়ার প্রভাবে আমাদের দেশে দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা অনেকে করেছেন। কিন্তু অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে আমরা যে সুবিশাল আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করে বাস্তবায়ন শুরু করেছি, তার মাধ্যমে এ সম্ভাবনাকে অনেকটাই রোধ করতে সক্ষম হবো বলে বিশ্বাস করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের অতিদরিদ্র পরিবারসমূহকে সরাসরি নগদ অনুদান, বিনামূল্যে খাদ্য সামগ্রি বিতরণ, রফতানিমুখী শিল্পের শ্রমিক-কর্মচারিদের চাকরি সুরক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের পরিধি বাড়ানো ইত্যাদি সময়োপযোগী পদক্ষেপের দ্বারা আমরা দারিদ্র্য হারের বৃদ্ধিকে রোধ করতে সক্ষম হবো। আগামী অর্থবছরে স্বাভাবিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করার মাধ্যমে আমরা দারিদ্র্য বিমোচনের হার পূর্বের ধারায় ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবো ইনশাল্লাহ।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মোকাবিলা এবং এর অর্থনৈতিক ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য আমরা গতানুগতিক বাজেট হতে সরে এসে সরকারের অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রে কাঠামোগত পরিবর্তন নিয়ে এসেছি। স্বাস্থ্য খাতকে এবার সর্বাপেক্ষা অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে, এবং করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে এখাতে অতিরিক্ত বরাদ্দ, প্রণোদনা ও ক্ষতিপূরণ ইত্যাদির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
‘কোভিড-১৯ মোকাবিলায় চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে জনজীবনকে সুরক্ষার লক্ষ্যে ন্যাশনাল প্রিপেয়ার্ডনেস অ্যান্ড রেসপন্স প্ল্যান প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন আরম্ভ করা হয়েছে। কোভিড-১৯ মোকাবিলায় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের আওতায় বর্তমানে ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বিশেষ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তাছাড়া কোভিড-১৯ মোকাবিলায় জরুরি চাহিদা মেটানোর জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বাজেট বরাদ্দের দিক দিয়ে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অবস্থান পঞ্চম স্থানে উঠে এসেছে যা গত অর্থবছরে ছিলো অষ্টম স্থানে।’
শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অত্যন্ত অল্প সময়ে ২ হাজার ডাক্তার ও ৬ হাজার নার্স নিয়োগ দিয়েছি। আরো ২ হাজার ডাক্তারের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে, যাদের শিগগিরই নিয়োগ দেয়া হবে। হেল্থ টেকনোলজিস্ট, কার্ডিওগ্রাফার এবং ল্যাব এটেনডেন্টের ৩ হাজার নতুন পদ সৃষ্টি করা হয়েছে।
এছাড়াও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবায় সরাসরি নিয়োজিত ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সম্পূর্ণ সরকারি খরচে হোটেলে থাকা, খাওয়া ও যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, মেডিকেল যন্ত্রপাতি, টেস্ট কিট ও সরঞ্জামাদি ক্রয় এবং করোনা চিকিৎসার সুবিধা আরো বাড়ানোর লক্ষ্যে আমরা দ্রুততম সময়ে ২ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছি। আরো একটি প্রকল্প বর্তমানে চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। এগুলো বাস্তবায়নের ফলে করোনা মোকাবিলার সামর্থ্য আরো বাড়বে।
২৮ জুন ২০২০ তারিখ পর্যন্ত সমগ্র বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মোট রোগীর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ১ লাখ ২ হাজার জন। তার মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন ৫ লাখ ১ হাজার ৬৪৪ জন। বিশ্বে আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুর হার ৫.০১ শতাংশ। একই সময়ে বাংলাদেশে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৮৭ জন রোগী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১ হাজার ৭৩৮ জন। ৫৫ হাজার ৭২৭ জন সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি মৃত্যুও আমাদের কাছে গ্রহণ যোগ্য নয়। আমরা চাই না এভাবে একজনও মৃত্যুবরণ করুক। চেষ্টাকরে যাচ্ছি কীভাবে মানুষকে সুরক্ষা দেয়া যায় এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য বার বার জনগণকে আমরা আহ্বান জানাচ্ছি। নিজেকে সুরক্ষিত রাখা এবং অপরকে সুরক্ষিত রাখাটা সবার দায়িত্ব। তাই আশা করি- সবাই নিজ নিজ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবে।
আক্রান্তের তুলনায় বাংলাদেশে মৃত্যুর হার ১.২৬ শতাংশ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুর হার ভারতে ৩.০৮, পাকিস্তানে ২.০৩, যুক্তরাজ্যে ১৪.০৩ এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৫.০ শতাংশ। এ পরিসংখ্যান হতে দেখা যায়- যথাযথ কার্যব্যবস্থা গ্রহণ করায় বাংলাদেশে করোনাভাইরাসজনিত মৃত্যুহার নিম্ন পর্যায়ে রাখতে পেরেছি।
আগামী বাজেটে আমাদের দ্বিতীয় সর্ব্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাত কৃষি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এতে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আমাদের উল্লেখযোগ্য সাফল্যের মধ্যে চাল উৎপাদনে তৃতীয় স্থান অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি।
তিনি বলেন, এফএও এরইমধ্যে তাদের একটি পর্যালোচনা দিয়েছে। সেখানে আমাদের প্রায় ৩ কোটি ৯৯ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য উৎপাদন হয়েছে। যা আমাদের চাহিদার চেয়েও ২৫ লাখ মেট্রিক টন উদ্বৃত্ত।
তিনি আরো বলেন, করোনাত্তোর কৃষিখাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উৎপাদন, বাজারজাতকরণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করার মাধ্যমে খাদ্য সংকট যাতে তৈরি না হয় সেদিকে নজর দেয়াই আমাদের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। করোনা-পরবর্তী পরিস্থিতিতে কোনোভাবেই যাতে খাদ্য সংকট সৃষ্টি না হয় সে জন্য এক ইঞ্চি আবাদি জমিও ফেলে না রাখার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণে কৃষি মন্ত্রণালয় ও তার সব সহযোগী সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা প্রদান করেছি।
‘দেশবাসীকে আহ্বান জানাবো- যার যেখানে যেটুকু জমি আছে সেখানে যে যা পারেন তাই উৎপাদন করেন। উৎপাদন বাড়ান। নিজের খাদ্য নিরাপত্তা সুরক্ষিত করেন। সরকার যা যা করার তা করবে।’
কৃষি খামার যান্ত্রিকীকরণে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এবং খাদ্যশস্য সংরক্ষণের স্থান বৃদ্ধি ও মান উন্নয়ন করা হবে বলে জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি বলেন, আগামী অর্থবছরে রাসায়নিক সারের বিক্রয়মূল্য অপরিবর্তিত রাখা হবে ও কৃষি প্রণোদনা প্রদান অব্যাহত থাকবে।
শেখ হাসিনা বলেন, চলতি বোরো মৌসুমে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ধান কাটার লক্ষ্যে হারভেস্টার মেশিন ক্রয়ে আমরা ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ভর্তুকি প্রদান করেছি। পাশাপাশি ছাত্রলীগের কর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছিলাম তারা যেন তাদের নিজ নিজ এলাকায় যেয়ে কৃষকদের ধান কাটায় সহায়তা করে। ছাত্রলীগের কর্মীরা ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে কৃষকের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং বর্ষা মৌসুমের পূর্বেই ধান কেটে ঘরে তুলতে সহায়তা প্রদান করেছে। একইসঙ্গে যুবলীগ, কৃষকলীগ ও যুব মহিলা লীগের কর্মীরাও স্ব-স্ব এলাকায় কৃষকদের ধান কাটায় সহায়তা প্রদান করেছে।
তিনি আরো বলেন, প্রতি বছরের মতো এ বছরেও পহেলা আষাঢ় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের ৫৫ লাখ কর্মীর প্রত্যেককে একটি ফলজ, একটি ঔষধি এবং একটি বনজ বৃক্ষ অর্থাৎ তিনটি করে গাছ লাগানোর আহ্বান জানিয়েছি। এর ফলে দেশে বৃক্ষ আচ্ছাদনের পরিমাণ দ্রুত বৃদ্ধি পাবে।
করোনাভাইরাসের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী যোগাযোগ ও পণ্য পরিবহণ ব্যবস্থা সীমিত হয়ে আসায় খাদ্যশস্যসহ নিত্য-প্রয়োজনীয় পণ্যের সংকট ও মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। সংকটের শুরু থেকেই এ বিষয়ে যথেষ্ট সজাগ ছিলাম।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত এক দশকে আমাদের সরকারের অব্যাহত প্রচেষ্টার ফলে সরকারি গুদামে খাদ্যশস্য ধারণক্ষমতা প্রায় ২২ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত করতে পেরেছি এবং এর ফলে করোনা সংকটের শুরুতে সরকারি গুদামে রেকর্ড পরিমাণ ১৭ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুদ ছিল। দীর্ঘ ৬৬ দিন সারাদেশে ছুটি ও চলাচল সীমিত থাকলেও দেশের কোথাও খাদ্য ঘাটতি বা নিত্য-প্রয়োজনীয় দ্রব্যের সংকট হতে দেইনি। উপরন্তু দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য খাদ্য সহায়তা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছি।
আগামী অর্থবছরেও খাদ্যশস্যের সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পরিমাণ ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছি- বলে যোগ করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, চলতি বোরো মৌসুমে আমরা ১১ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল এবং সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ৮ লাখ মেট্রিক টন ধান ক্রয়ের উদ্যোগ নিয়েছি যা গত বোরো মৌসুমের তুলনায় দ্বিগুণ।
‘দেশবাসীকে এই বলে আশ্বস্ত করতে চাই, সামনে যে সংকটই আসুক না কেন আওয়ামী লীগ সরকার তা শক্তভাবে মোকাবিলা করবে এবং দেশের কোনো মানুষকে অভুক্ত থাকতে দেবে না। কারণ আমাদের খাদ্য চাহিদা ৩ কোটি ৭৫ লাখ মেট্রিক টন। সেখানে উৎপাদন হয়েছে ৩ কোটি ৯৯ লাখ মেট্রিক টন। ২৫ লাখ উদ্বৃত্ত রয়েছে এবং এই উৎপাদন অব্যাহত রাখবো। কাজেই আল্লাহর রহমতে আমাদের কোনো অসুবিধা হবে না।’
করোনাভাইরাসের প্রভাবে সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকায় নিম্ন আয় ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কাযর্ক্রমের আওতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আগামী অর্থবছরে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা মহিলা ভাতা এবং অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা ভোগীর সংখ্যা ১১ লাখ ৫ হাজার জন বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে গ্রামীণ দারিদ্র্য বিমোচনের কৌশল হিসেবে তৎকালীন ১৯টি থানায় ‘পল্লী সমাজসেবা কার্যক্রম’ শুরু করেন যা বর্তমানে দেশের সব জেলায় প্রত্যেক উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে সফলভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
‘গ্রামীণ অর্থনীতিকে সচল করা এবং গ্রামে বসবাসরত দরিদ্র, দুস্থ ও অসহায় মানুষের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে আগামী অর্থবছরে পল্লী সমাজসেবা কার্যক্রম এর জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় মোট উপকারভোগীর সংখ্যা হলো ১২ কোটি ৩৩ লাখ ৫৫ হাজার জন। যাদের মূল তিনটি কার্যক্রমে বিভক্ত করা যায়। (ক) বিভিন্ন প্রকার ভাতা পাচ্ছেন ১ কোটি ৭ লাখ ২৬ হাজার; (খ) খাদ্য সহায়াতা পাচ্ছেন ৮ কোটি ৭২ লাখ ৭১ হাজার; এবং (গ) উপবৃত্তি কার্যক্রমের আওতায় আছেন ২ কোটি ৫৩ লাখ ৫৮ হাজার জন।
‘সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে আগামী অর্থবছরে ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে যা মোট বাজেট বরাদ্দের ১৬.৮ শতাংশ এবং জিডিপি’র ৩.০১ শতাংশ।’
তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে সৃষ্ট দুর্যোগে দেশের সাধারণ মানুষের কষ্ট লাঘবে মানবিক সহায়তা হিসেবে বিস্তৃত পরিসরে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রেখেছি। যার আওতায় এ পর্যন্ত সারাদেশে দেড় কোটির বেশি পরিবারকে ত্রাণ সহায়তা দিয়েছি। এ যাবত সারাদেশে ১ কোটি ৫৯ লাখ ৩০ হাজার পরিবারের মাঝে ১ লাখ ৮৪ হাজার ১২২ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। চালের পাশাপাশি, নগদ অর্থ বরাদ্দ দিয়েছি প্রায় ১২৩ কোটি টাকা; এতে উপকারভোগী পরিবার সংখ্যা ৯৫ লাখ ৭৯ হাজার। শিশু খাদ্য সহায়ক হিসেবে বরাদ্দ দিয়েছি ২৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা এবং এতে ৭ লাখ ৭৭ হাজার ৫২৫টি পরিবার উপকৃত হয়েছে।
সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের সময়ে যথেষ্ট প্রস্তুতি থাকায় এবং দ্রুত ত্রাণ তৎপরতা শুরু করতে পারায় আমরা তা সফলভাবে মোকাবিলা করতে পেরেছি- যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এর বাইরেও জেলা প্রশাসকদের কাছে ইউনিয়ন অনুযায়ী প্রতিটি ইউনিয়নের জন্য দুধসহ শিশু খাদ্য কেনায় বরাদ্দ দিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা খাতকে সব সময়ই অগ্রাধিকার প্রদান করে থাকি। তবে এবার শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রমের গুণগত মান উন্নয়নই হবে আমাদের মূল লক্ষ্য। ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষা খাতে ৯৫ হাজার ৩০৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, যা জিডিপির ৩.১ শতাংশ এবং মোট বাজেট বরাদ্দের ১৭ শতাংশ।
তিনি বলেন, করোনার এই মহামারির মধ্যেও বিশেষ ব্যবস্থায় ১ কোটি ৩৭ লাখ প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা প্রদান করেছি। এছাড়াও মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নতুন পোশাক, জুতা ও ব্যাগ ক্রয়ের জন্য ১ হাজার টাকা করে আগামী ডিসেম্বর মাসে প্রদান করা হবে। নন এমপিও ভুক্ত যারা তাদের জন্যও ৪৬ কোটি টাকার ওপরে বরাদ্দ দিয়েছি।
তিনি আরো বলেন, অবকাঠামো খাতে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নসহ ব্যাপকভাবে সরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং যোগাযোগ, বন্দর ইত্যাদি অবকাঠামো গড়ে তোলার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছি। আগামী অর্থবছরের মধ্যে দেশের শতভাগ এলাকা বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় নিয়ে আসবো। ভবিষ্যত বিনিয়োগ ও চাহিদা মেটাতে ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের মহাপরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক/মহাসড়কগুলোকে পর্যায়ক্রমে ৪ লেনে উন্নীতকরণ, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু বাস্তবায়ন, দেশের প্রথম মেট্রোরেল নির্মাণ, কর্ণফুলি নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেলের নির্মাণ কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। এসব নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে তা আমাদের জাতীয় অর্থনীতির জন্য ব্যাপক সুফল বয়ে আনতে সক্ষম হবে।
তিনি বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত থাকবে। এক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। দুর্নীতি সমূলে উৎপাটন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ।
প্রধানমন্ত্রী সংসদকে জানান, দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এবং অর্জনসমূহ সমুন্নত রাখতে সরকার দুর্নীতি বিরোধী লড়াই অব্যাহত রাখবে।
‘দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি বেগবান করার জন্যে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির বিকল্প নেই।’
তিনি বলেন, বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সারাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহে প্রায় এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এছাড়া বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য ব্যবসা-বাণিজ্যের খরচ যৌক্তিকভাবে কমিয়ে আনা ও ব্যবসা সহজীকরণ সূচকে উৎকৃষ্ট অবস্থান অর্জন করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দিয়েছি।
তিনি আরো বলেন, প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, শিল্প ও ব্যবসা খাতকে প্রতিযোগিতা সক্ষম করার লক্ষ্যে সুদের হার এক অঙ্কে নামিয়ে আনবো। আমরা এরইমধ্যে তা করেছি। বিগত এপ্রিল ২০২০ থেকে নতুন ঋণের ক্ষেত্রে সুদের হার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ কার্যকর হয়েছে। এর ফলে ঋণের ব্যয় হ্রাস পাওয়ায় বেসরকারি বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ভূমি ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। গত ১ জুলাই ২০১৯ থেকে দেশব্যাপী নামজারির প্রচলিত পদ্ধতির পরিবর্তে ই-নামজারি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ফলে জনগণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে ঘরে বসেই নামজারি করতে পারছেন।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এবং মুদ্রাস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এবং মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা ৫০ হাজার টাকা বৃদ্ধি এবং করহার কিছুটা হ্রাস করার প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থাৎ বার্ষিক আয়ের ৩ লাখ টক পর্যন্ত করমুক্ত থাকবে।
এছাড়াও কর্পোরেট ট্যাক্সের হার ২.৫ শতাংশ হ্রাস করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে নিম্ন-আয়ের মানুষের জীবনযাত্রায় স্বাচ্ছন্দ আসবে এবং বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি উল্লেখ করেন, করোনাভাইরাস জনিত অর্থনৈতিক অভিঘাত হতে উত্তরণের লক্ষ্যে আমরা ১৯টি প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন করছি। এ প্যাকেজসমূহ বাস্তবায়ন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যয় নির্বাহের জন্য উন্নয়ন সহযোগীদের নিকট বাজেট সাপোর্ট চেয়েছিলাম। প্রণোদনা প্যাকেজসমূহ অর্থনৈতিক অভিঘাত উত্তরণে অত্যন্ত কার্যকর ও সময়োপযোগী উল্লেখ করে উন্নয়ন সহযোগীরা তা বাস্তবায়নে দ্রুত সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, উন্নয়ন সহযোগীরা এরইমধ্যে ৫.১৬ বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং গতকাল পর্যন্ত ১.৭৪ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ ১৪ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা সরকারি খাতে জমা হয়েছে। অত্যন্ত স্বল্প সময়ে আমাদের আহ্বানে সাড়া দেয়ার জন্য আমি এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক, আই এম এফ, এ আই আই বি, বিশ্বব্যাংক, জাপান, ইইউসহ সব উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও দেশকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সেইস সঙ্গে অর্থমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রণালয়ের সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, দেশ গঠনে তরুণ সমাজই মূল ভূমিকা পালন করে থাকে। আমাদের ভাষা আন্দোলন, ৬ দফা আন্দোলন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রতিটি ক্ষেত্রে বিতরণ সমাজের একটা বিরাট ভূমিকা রয়েছে। আমাদের চ্যালেঞ্জ হলো। প্রতি বছর আনুমানিক যে ২০ লাখ তরুণ শ্রম বাজারে যুক্ত হচ্ছে তাদের জন্য উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষেই এ বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। বাজেট বাস্তবায়নে অতীতে কখনো ব্যর্থ হইনি এবং ভবিষ্যতেও হবো না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কখনো হতাশায় ভুগি না। আমরা সব সময় একটা লক্ষ্য নির্ধারণ করে সুনির্দিষ্ট কর্ম পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাই। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় কখনো কখনো সে পরিকল্পনা প্রয়োজন অনুযায়ী পুনঃনির্ধারণ করতে হয় এবং সে কারণেই আজকে বাজেট ঠিক রেখেছি এবং প্রণয়নও করেছি। আশাকরি এটা আমরা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হব।
তিনি বলেন, আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ উন্নত দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আর তার মধ্যেই আমরা প্রাণঘাতী কোভিড-১৯ এর মতো বৈশ্বিক মহামারির মোকাবিলা করছি। আম্ফানের মতো ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা করেছি। হয়তো আগামীতে বন্যা আসবে সেটাও মোকাবিলা করতে হবে। সেই প্রস্তুতিও আছে, আমরা নিচ্ছি।
‘আমি দৃঢ়ভাবে আশাবাদী- আমরা সফলভাবে এ মহামারির অর্থনৈতিক প্রভাব কাটিয়ে উঠে উন্নয়নের অভিযাত্রায় পুনরায় শামিল হবো। কারণ, বিশ্ব মানদণ্ডে আমাদের রয়েছে শক্তিশালী আর্থ-সামাজিক অবস্থান।
গত ২ মে, ২০২০ দ্যা ইকনোমিস্ট একটি গবেষণা প্রতিবেদনে চারটি মানদণ্ডের ভিত্তিতে সবল অর্থনীতির ৬৬টি দেশের তালিকা করেছে। সেখানে বাংলাদেশ শক্তিশালী নবম অবস্থানে রয়েছে।’
চলতি জুন মাসেই আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রেকর্ড ৩৫ বিলিয়ন এবং প্রবাস আয় ১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে বলেও জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাসকে কার্যকরভাবে মোকাবিলা করে এবং আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য পেশকৃত জনবান্ধব, উন্নয়নমুখী ও সুষম এই বাজেট এর সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এগিয়ে যাবো, ইনশাআল্লাহ। যত বাধা আসুক তা অতিক্রম করে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
আইনিউজ/এসবি
- কাল থেকে যেসব শাখায় পাওয়া যাবে নতুন টাকার নোট
- 'জাতীয় মুক্তি মঞ্চ' গঠনের ঘোষণা
- এক বছরেই শক্তি, ক্ষিপ্রতা জৌলুস হারিয়ে 'হীরা' এখন বৃদ্ধ মৃত্যুপথযাত্রী
- ওয়াহিদ সরদার: গাছ বাঁচাতে লড়ে যাওয়া এক সৈনিক
- ভারতবর্ষে মুসলিম শাসনের ইতিকথা (প্রথম পর্ব)
- এবার ভাইরাস বিরোধী মাস্ক বানিয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিলো বাংলাদেশ
- মায়েরখাবারের জন্য ভিক্ষা করছে শিশু
- ২৫ কেজি স্বর্ণ বিক্রি করল বাংলাদেশ ব্যাংক
- ঈদে মিলাদুন্নবী ২০২৩ কত তারিখ
- তালিকা হবে রাজাকারদের