সোশ্যাল মিডিয়া ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৮:০৮, ৩১ মে ২০২০
আপডেট: ১৮:১২, ৩১ মে ২০২০
আপডেট: ১৮:১২, ৩১ মে ২০২০
গ্রামের কবরে ঠাঁই দিতে এক করোনাযোদ্ধার আর্তি

ডা. শাহজাদ হোসেন মাসুম
গ্রামের কবরে ঠাঁই দিতে আর্তি জানিয়েছেন করোনায় মোকাবেলায় কাজ করা দেশের প্রথম সারির এক যোদ্ধা। তিনি রাজধানীতে করোনা চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত- কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপতালের চিকিৎসক ডা. শাহজাদ হোসেন মাসুম।
আছেন এনেসথেশিয়লজি ও আই সি ইউ বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্বে।
এক ফেসবুক স্ট্যাস্টাসে ডা. মাসুম লিখেন- ‘মার্চ মাসের শুরুতে এই হাসপাতালকে করোনা চিকিৎসার জন্য নির্দিষ্ট করা হয়। তখন থেকে আমি এই হাসপাতালের সবচেয়ে সংবেদনশীল বিভাগের প্রধান হিসাবে কাজ করছি। আমার নেতৃত্বে এই আই সি ইউ তে চল্লিশজন চিকিৎসক ও পয়তাল্লিশজন নার্স কোভিড রোগিদের নিবিড় চিকিৎসা দিয়ে আসছেন। এই সময়কালে আমি সকল ভয়ভীতি ত্যাগ করে রোগিদের সেবায় আত্মনিয়োগ করেছি। আমি জানি যেকোন সময় আক্রান্ত হতে পারি এবং বয়স ও শারীরিক কারণে মৃত্যুর মুখোমুখি হতে পারি। তবু কখনোই আমি আমার কর্তব্যে বিন্দুমাত্র অবহেলা করিনি।’
নিজ গ্রামের মানুষের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন- ‘আমি এই গ্রামের সন্তান। আমার বাবার নাম সুরুজ মিয়া। যাঁকে অনেকেই দারোগা সাহেব বলে জানেন। এই গ্রামে আমাদের পৈতৃক ভিটা। বাড়ির সামনে দীঘির পারে আমাদের পারিবারিক কবরস্থান। যেখানে আমার মা, চাচা, চাচী চিরনিদ্রায় শায়িত। আমার দায়িত্বের কারণে আমি যদি মৃত্যুবরণ করি আমার কোন আফসোস নেই, আমি ধরে নিব আল্লাহ আমার জন্য এটাই নির্ধারিত রেখেছেন। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী আমার দাফন আন্জুমানে মফিদুল ইসলাম সরকার নির্ধারিত কবরস্থানে করার কথা।
কিন্তু আপনাদের কাছে আমার আবেদন, যদি এটা ঘটেই তবে গ্রামবাসী যেন আমার কবরটি আমার পারিবারিক গোরস্থানে করার অনুমতি দেন। আমার আর কিছুই চাওয়ার নেই। দেশের জন্য আমার কর্তব্যের বিনিময়ে আমি আপনাদের কাছে এইটুকু চাই। আমার পরিবার করোনা ছড়াবে না, এরকম নিরাপদভাবে এই ব্যাবস্থা করতে সক্ষম হবেন।’
দেশের এ গর্বিত সন্তান বলেন- ‘মাঝে বছর দশেক আমি মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে কাজ করেছি, এনেসথেশিয়া বিভাগের প্রধান হিসাবে। ২০০৪ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত। তখন কেউ কেউ আমার সাথে পরিচিত হয়েছেন। আমি ২০১৩ সন থেকে ঢাকায় সরকারি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে এনেসথেশিয়া বিভাগের প্রধান হিসাবে কাজ করছি।’
তিনি তার গ্রামের একটি ফেসবুক এডমিনের উদ্দেশ্যে বলেন- ‘আমি এখানে একটা পোস্ট দিতে চাই। আমার আত্মীয়রা ছাড়া কেউ আমাকে চিনবেন না। কারণ বাবার চাকরীর জন্য জন্ম থেকেই আমি সিলেটের বাইরে ছিলাম। আশা করি আমার লেখাটি এডমিন এখানে পোস্ট করবেন। আমার জন্য দোয়া করবেন যেন আমি আপনাদের গর্বিত করতে পারি। সকলের মঙ্গল কামনা করি।’
ডা. শাহজাদ হোসেন মাসুমের গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার সরখরনগর গ্রামে। জেলা শহরের টিবি হাসপাতাল সড়কে তাদের বাসা।
ডা. শাহজাদ হোসেন মাসেুমের এই পোস্টটি তার গ্রাম সরখরনগরের ফেসবুকে পেজে দেয়া আছে।
এ ব্যাপারে ডা. মাসুম আই নিউজকে বলেন- ‘মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছি, বিষয়টা এমন নয়। কিন্তু যদি তেমনটা ঘটে যায়, তাহলে যেন আমার ঠাঁই হয় গ্রামের কবরে। সংক্রমণের ভয়ে বা ঘৃণায় যেন লাশটা ফিরিয়ে না দেন। সেজন্যই আমার এ আর্তি।’
সরখরনগর গ্রামের পেজে যে পোস্টটি দিয়েছেন ডা. শাহজাদ হোসেন মাসুম, সেটা হুবহু দেয়া হলো:
আমাদের গ্রামের একজন আলোকিত সন্তান উনার লেখা পাঠিয়েছেন। আমরা আপনাকে পেয়ে অনেক গর্বিত ! আল্লাহ আপনাকে সুস্থ রাখুক এটাই আমাদের কামনা। নিচে লেখাটি হুবহু দেয়া হল ---
আমি এখানে একটা পোষ্ট দিতে চাই। আমার আত্মীয়রা ছাড়া কেউ আমাকে চিনবেন না। কারন বাবার চাকরীর জন্য জন্ম থেকেই আমি সিলেটের বাইরে ছিলাম। মাঝে বছর দশেক আমি মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে কাজ করেছি, এনেসথেশিয়া বিভাগের প্রধান হিসাবে। ২০০৪ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত। তখন কেউ কেউ আমার সাথে পরিচিত হয়েছেন। আমি ২০১৩ সন থেকে ঢাকায় সরকারি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে এনেসথেশিয়া বিভাগের প্রধান হিসাবে কাজ করছি।
মার্চ মাসের শুরুতে এই হাসপাতালকে করোনা চিকিৎসার জন্য নির্দিষ্ট করা হয়। তখন থেকে আমি এই হাসপাতালের সবচেয়ে সংবেদনশীল বিভাগের প্রধান হিসাবে কাজ করছি। আমার নেতৃত্বে এই আই সি ইউ তে চল্লিশজন চিকিৎসক ও পয়তাল্লিশজন নার্স কোভিড রোগিদের নিবিড় চিকিৎসা দিয়ে আসছেন। এই সময়কালে আমি সকল ভয়ভীতি ত্যাগ করে রোগিদের সেবায় আত্মনিয়োগ করেছি। আমি জানি যেকোন সময় আক্রান্ত হতে পারি এবং বয়স ও শারীরিক কারনে মৃত্যুর মুখোমুখি হতে পারি। তবু কখনোই আমি আমার কর্তব্যে বিন্দুমাত্র অবহেলা করিনি।
আমি এই গ্রামের সন্তান। আমার বাবার নাম সুরুজ মিয়া। যাঁকে অনেকেই দারোগা সাহেব বলে জানেন। এই গ্রামে আমাদের পৈতৃক ভিটা। বাড়ীর সামনে দীঘির পারে আমাদের পারিবারিক কবরস্থান। যেখানে আমার মা, চাচা, চাচী চিরনিদ্রায় শায়িত। আমার দায়িত্বের কারনে আমি যদি মৃত্যু বরন করি আমার কোন আফসোস নেই, আমি ধরে নিব আল্লাহ আমার জন্য এটাই নির্ধারিত রেখেছেন। সরকারী নিয়ম অনুযায়ী আমার দাফন আন্জুমানে মফিদুল ইসলাম সরকার নির্ধারিত কবরস্থানে করার কথা। কিন্তু আপনাদের কাছে আমার আবেদন, যদি এটা ঘটেই তবে গ্রামবাসী যেন আমার কবরটি আমার পারিবারিক গোরস্থানে করার অনুমতি দেন। আমার আর কিছুই চাওয়ার নেই। দেশের জন্য আমার কর্তব্যের বিনিময়ে আমি আপনাদের কাছে এইটুকু চাই। আমার পরিবার করোনা ছড়াবে না এরকম নিরাপদভাবে এই ব্যাবস্থা করতে সক্ষম হবেন। আশা করি আমার লেখাটি এডমিন এখানে পোষ্ট করবেন। আমার জন্য দোয়া করবেন যেন আমি আপনাদের গর্বিত করতে পারি। সকলের মঙ্গল কামনা করি।
ডা. শাহজাদ হোসেন। বিভাগীয় প্রধান., এনেসথেশিয়লজি ও আই সি ইউ বিভাগ, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, এয়ারপোরট রোড
ঢাকা।
এইচকে/ আই এন
আরও পড়ুন
সোশ্যাল মিডিয়া বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
- ঢাকার হানিফ, চট্টগ্রামের মহিউদ্দিন, সিলেটের ছিলেন কামরান
- নৌযান দুর্ঘটনায় পরিবারকে হারানো সেই মিমের দায়িত্ব নিলেন ব্যারিস্টার আহসান হাবীব
- পুলিশের চোখের জলে উন্মোচন হল জোড়া খুনের রহস্য
- গ্রামের কবরে ঠাঁই দিতে এক করোনাযোদ্ধার আর্তি
- রোজাদার রিকশাওয়ালাকে মারতে মারতে অজ্ঞান করলেন প্রভাবশালী পথচারী
- হাসি ভরা মুখ নিয়ে ভাইরাল কানাডার যুবক
- গরীবের ডাক্তারকে পিটিয়ে মেরে ফেললাম আমরা!
- সেই রিকশাচালকের চোখের পানি আনন্দাশ্রুতে পরিণত করলেন এক তরুণ ব্যারিস্টার
- কষ্ট লাঘবকারি চিকিৎসার আকুতি চিকিৎসকের
- ভুলে মুনিয়ার বদলে বসুন্ধরার আনভীরের ব্লার ছবি, চ্যানেল আইয়ের দুঃখ প্রকাশ
সর্বশেষ
জনপ্রিয়