শামীমা রিতু
নিসর্গের ভাবনা
ধূসর আকাশের দিকে তাকালে শৈশবের সোনা ঝরা দিন গুলোর কথা খুব মনে পড়ে। যে সময়টাতে পাখির সাথে ঘুমাতাম আর পাখির ডাকেই জেগে উঠতাম। ছোটবেলা নানুবাড়িতে থাকতাম। বিশাল বাড়িটার বেশিরভাগ অংশ জুড়ে ছিল আম, জাম, সুপারি,কাঁঠাল,নারকেল, লিচু, অড়বরই প্রভৃতি ফলদ আর বনজ বৃক্ষরাজি। সেই সাথে উপহার হিসাবে ছিল নাম না জানা অসংখ্য ফুল।
বাড়ির দুই পাশে প্রাকৃতিক প্রাচীর হিসাবে ছিলো ঘন বাঁশঝাড়। কথায় বলে- যেখানে ফুল সেখানে প্রজাপতির বাস। তাই বাড়িটাতেও পাখি, কীটপতঙ্গ, সাপ-খোঁপও ছিলো। কচুবনে নানু যখন কচুর লতি তুলতেন, ভীতু আমি ভাবতাম এই বুঝি জোঁক-বিছে বেড়িয়ে এলো!
পাশের বাড়ি মস্ত তেতুঁল গাছটার বিরাট সব ডালপালা নানুবাড়িতে পড়েছিল।সন্ধ্যা হলেই ভাবতাম এ গাছে কোন অশরীরী আত্মা দোল খাবে।ঘর থেকে বেরোতাম না। আসমি, ইয়াসমিন এ ভয়কে আরো বাড়িয়ে দিতো।এখন মনে হলে হাসি পায়। কী বোকাটাই না ছিলাম।কতো রকমের পাখি চারদিকে গিজ গিজ করতো।খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে চোখ কচলে কচলে মক্তবে যাওয়ার পথে তালগাছের ডগায় বাবুই পাখির বাসা দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতাম।একটুখানি পাতার ডগায় এত বড় বাসা কিভাবে বানায় বাবুই! কী অপূর্ব দৃশ্য!
পুকুর ঘাটে সকাল-বিকাল মাছেদের মেলা বসতো। নানু মুড়ি ছিটিয়ে দিতেন মাছেদের জন্য।পাশেই মুর্তাঝোঁপে চলতো টুনটুনি, মাছরাঙা,বক,নানা জাতের ফড়িং আর ঘুঘুদের ক্যাচাল।
দিন বদলে গিয়েছে। নানু পৃথিবী ছেড়েছেন দুই দশক আগে। ডালিম ফুলের মধু খেতে ভ্রমররা আর আসেনি। আসবে কি করে, গাছটাই তো নেই। বাঁশঝাড়ের বিশেষ কোন চিহ্ন এখন আর দেখা যায়না। পাখিরা গান গায়না এখানে। যান্ত্রিক জীবন তেঁতুল গাছের অশরীরী ভয়ের পরিবর্তে অন্তর্জালে 'সাইবার বুলিং' নামের ভয়ে আতঙ্কে থাকি। মুর্তার ঝোঁপের পাখিদের ক্যাচাল আর মোল্লানানার টিলা থেকে ভেসে আসা শেয়ালের ডাক সবই বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। আমাদের আয়েশী জীবনকে আরো বিলাসী করতে গিয়ে পুকুরে মাছ নেই, কিছুদিন পর হয়তো তার অস্তিত্বও থাকবেনা। যে রকম অস্তিত্ব নেই কচুবন, বাতাবি লেবু কিংবা দেশি টক আমড়া গাছের। নৃত্য করতে ভুলে গিয়েছে ফড়িংরাও।
প্রকৃতিকে প্রকৃতি থেকে বিলীন করতে করতে একদিন নিজের অজান্তে আমরাই আমাদের বিলুপ্ত করবো। যদি এভাবে প্রকৃতি ধ্বংস করি তবে সবুজ কে হারাতে হারাতে ধূসর পৃথিবীর বুকে হারিয়ে যাবো। সোনার বাংলার মাটি, সোনার চেয়ে খাঁটি- আমরাই পারি আমাদের মাটি থেকে খাঁটি সোনায় আমাদের প্রজন্মকে মুড়িয়ে দিতে।
লেখক- শামীমা রিতু, রেডিও প্রেজেন্টার, রেডিও পল্লীকণ্ঠ, মৌলভীবাজার
- ঢাকার হানিফ, চট্টগ্রামের মহিউদ্দিন, সিলেটের ছিলেন কামরান
- নৌযান দুর্ঘটনায় পরিবারকে হারানো সেই মিমের দায়িত্ব নিলেন ব্যারিস্টার আহসান হাবীব
- পুলিশের চোখের জলে উন্মোচন হল জোড়া খুনের রহস্য
- ছেলেকে উচ্চশিক্ষিত বানাতে চা শ্রমিক মায়ের অদম্য যুদ্ধের গল্প
- পুলিশ কর্মকর্তার ডায়েরি-২
জাদরেল বাবার দুই মেয়ে অপহরণের নাটকীয় কাহিনী - গ্রামের কবরে ঠাঁই দিতে এক করোনাযোদ্ধার আর্তি
- রোজাদার রিকশাওয়ালাকে মারতে মারতে অজ্ঞান করলেন প্রভাবশালী পথচারী
- হাসি ভরা মুখ নিয়ে ভাইরাল কানাডার যুবক
- কষ্ট লাঘবকারি চিকিৎসার আকুতি চিকিৎসকের
- সেই রিকশাচালকের চোখের পানি আনন্দাশ্রুতে পরিণত করলেন এক তরুণ ব্যারিস্টার