Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, শুক্রবার   ০১ আগস্ট ২০২৫,   শ্রাবণ ১৬ ১৪৩২

হেলাল আহমেদ

প্রকাশিত: ১৪:৪১, ৩ জুলাই ২০২৩

সুনামগঞ্জের বন্যার পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে ক্রমশ 

হাওরে পানি বাড়ায় ভেঙে গেছে সুরক্ষা বাঁধ। ছবি- সংগৃহীত

হাওরে পানি বাড়ায় ভেঙে গেছে সুরক্ষা বাঁধ। ছবি- সংগৃহীত

সিলেটের সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে ক্রমশ। বিগত কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টির ফলে জেলার প্রায় সব কয়টি নদনদীর পানি বেড়েছে। এতে করে তলিয়ে গেছে সুনামগঞ্জের বেশকিছু নিম্নাঞ্চল। ভিটামাটি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে ছুটছেন সুনামগঞ্জের অনেক এলাকার মানুষ। 

সুনামগঞ্জের বন্যার পরিস্থিতি খারাপে টানা বৃষ্টির পাশাপাশি ভারত থেকে আসা ঢলের পানির প্রভাব প্রকট। ভারতেও কিছুদিন ধরে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণে উজান থেকে ধেয়ে আসছে পানি। সুনামগঞ্জের প্রধান নদী সুরমা। এই নদীর পানি এরিমধ্যে বেড়ে গিয়ে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। 

সুনামগঞ্জ সদরের পৌর এলাকায় অনেককেই বাসাবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে যেতে দেখা গেছে। কেননা, অনেকের ঘরে পানি প্রবেশ করেছে। অনেকে আবার আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। 

আশ্রয়কেন্দ্রে উঠা সুনামগঞ্জ পৌর এলাকার নতুন হাছননগরের নার্গিস বেগম বলেন, ঘরে কোমড় পানি উঠে গেছে। বাচ্চা-কাচ্চা সামলানো খুব কঠিন হয়ে গেছে। তাই মা-বাবা, ভাই-বোন নিয়ে কলেজে এসেছি। ঘরে পানি উঠে আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। এতক্ষণে নিশ্চিত ঘরে বুক সমান পানি উঠে গেছে।

এদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যা মোকাবিলায় ৪৪৯ মেট্রিক টন জিআর চাল, ২২ লাখ টাকা ও দুই হাজার শুকনা খাবার মজুত রাখা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক জাকির হোসেন বলেন, নিম্নাঞ্চলের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়লে তাদের উদ্ধারে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

অবস্থার অবনতি হয়েছে সিলেটেও 
অতিমাত্রায় বৃষ্টির ফলে সিলেট সদরেও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। পানি অস্বাভাবিক বেড়ে গিয়ে কোথাও কোথাও বিপদসীমা অতিক্রম করে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। এমতাবস্তায় চলতি জুলাই সিলেটে আরেকটি বন্যার আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

বিগত কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশে টানা বৃষ্টির পাশাপাশি ভারতেও ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় পানি নেমে আসছে উজান থেকে। এতে সিলেটের নদীগুলোতে ভয়ংকরভাবে বেড়ে চলেছে বানের পানি। বিশেষ করে সিলেটের সুরমা, কুশিয়ারা, খোয়াই, ধলাইসহ বেশকিছু নদীতে পানি ক্রমশ বাড়ছেই। 

দেশের বিভিন্ন নদনদীতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১০৯টি পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে ৬৯টিতেই পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ অবস্থায় স্থানীয়দের মধ্যে বন্যার আশঙ্কা থাকলেও আগামী বুধবার থেকে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে বলে আশা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

এদিকে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য মতে, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা ও পদ্মায় পানির উচ্চতা স্থিতিশীল রয়েছে। তবে ভারতের গঙ্গায় পানি বাড়ছে, যার প্রভাব পড়বে এসব নদীতে। এ ছাড়া দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সব প্রধান নদ-নদীতে পানি বাড়ছে।

আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তার কাছাকাছি অঞ্চলের উজানে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে এ অঞ্চলের সুরমা, পুরাতন সুরমা, যাদুকাটা, সারিগোয়াইন, খোয়াই, সোমেশ্বরী, ভোগাই ও কংসের পানি দ্রুত বেড়ে সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা জেলার কিছু নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ওসমানী মেডিকেল হাঁটুসমান পানি, বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের শঙ্কা
 পাশাপাশি পানি ঢুকেছে স্বাস্থ্যে বিভাগের মানুষের সবচেয়ে বড় ভরসার স্থল সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। হাসপাতালে পানি সামান্য ঢুকলেও বেশি ঢুকেছে মেডিকেল কলেজ ভবনে। এ ভবনের নিচতলার প্রতিটি কক্ষে হাটুসমান পানি জমেছে এবং সময় যত বাড়ছে পানিও তত বাড়ছে।

ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগে পানি। ছবি- আই নিউজ 


রোববার (২ জুলাই) বিকাল ৩টার দিকে ওসমানী হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগে পানি ঢুকে গেছে। পানি ঢুকেছে নতুন বিল্ডিংয়েও। তবে কোনো যন্ত্রাংশ পানিতে ডুবেনি। তবে মেডিকেল কলেজের সবকটি নিচতলার সব ক’টি কক্ষ পানিতে তলিয়ে গেছে। 

বিষয়টি নিশ্চিত করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ‘হাসপাতালের পিছনের নালা উপচে হু হু করে পানি ঢুকছে। মেডিকেল কলেজের নিচতলা পুরোটাতেই পানি ঢুকেছে। একেকটি কক্ষে হাটুসমান পানি।’

আই নিউজ/এইচএ 

Green Tea
সিলেট বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ