Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, শুক্রবার   ১১ জুলাই ২০২৫,   আষাঢ় ২৭ ১৪৩২

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২০:৫৬, ৩১ আগস্ট ২০২০
আপডেট: ০১:১৪, ১ সেপ্টেম্বর ২০২০

মৌলভীবাজারে গাঁজা খাইয়ে তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ, মামলা

মৌলভীবাজারে একটি বাসায় গাঁজা পার্টির আয়োজন করে তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় সোমবার (৩১ আগস্ট) দুপুরে ধর্ষিতা বাদী হয়ে মৌলভীবাজার মডেল থানায় এই মামলা দায়ের করেন।

সজীব তুষারকে প্রধান আসামী করে এবং রায়হান আনসারী ও মারজিয়া প্রভাকে ধর্ষণের সহযোগী উল্লেখ করে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মৌলভীবাজার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াছিনুল হক।

এদিকে এই ঘটনায় গত এক সপ্তাহ ধরে তীব্র সমালোচনা, প্রতিবাদ ও নিন্দার ঝড় বইছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বিষযটি নিয়ে ক্ষুব্ধ শহরের তরুণেরাও।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ঘটনাটি ঘটে গত ৩ আগস্ট রাতে মৌলভীবাজার শহরের সোনাপুর এলাকায় মাহমুদ এইচ খান নামে এক তরুণের বাসায়। তিনি একজন সংবাদকর্মী হিসেবে পরিচিত। এই পার্টিতে উপস্থিত ছিলেন ৫ জন, এরা সবাই তরুণ।

জানা যায়, ঘটনার পরপর এই ৫ জন মিলে নিজেদের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা করলে তা ব্যর্থ হয়।

প্রায় ২০ দিন পর এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দেন মাহমুদ এইচ খান। 

এই মামলার পূর্বেই সামাজিক মাধ্যমে রটে যাওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে সজীব তুষার এবং রায়হান আনসারীকে নিজ নিজ সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়। ৩০ আগস্ট সন্ধ্যায় মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবে এক জরুরি সভা ডেকে মাহমুদ এইচ খানের সহযোগী সদস্যপদ বাতিল করা হয়।

মাহমুদ এইচ খানের ফেসবুক স্ট্যাটাসের অভিযোগ থেকে জানা যায়- মাহমুদ এইচ খানের মৌলভীবাজারের বাসায় গত ৩ আগস্ট ডিনার পার্টির আয়োজন করা হয়। পার্টিতে উপস্থিত হন ছাত্রফ্রন্ট মৌলভীবাজার জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক (বহিষ্কৃত) সজীব তুষার, বাসদ কর্মী (বাসদ মৌলভীবাজার জেলা বর্ধিত ফোরামের বহিষ্কৃত সদস্য) আয়কর আইনজীবী রায়হান আনসারী ও নারী সুরক্ষা আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা মারজিয়া প্রভা।

মাহমুদ এইচ খান ওই স্ট্যাটাসে অভিযোগ করেন- বাসায় আড্ডার ফাঁকে কবি তুষার সাথে করে আনা গাঁজা বের করে সবাইকে নিয়ে সেবন করেন। ইচ্ছাকৃতভাবে মেয়েটিকে বেশি গাঁজা খাওয়ান তিনি। গাঁজা খাওয়ানো নিয়ে মাহমুদ এইচ খান প্রতিবাদ করলেও মারজিয়া প্রভা ও রায়হান আনসারী মাহমুদকে থামিয়ে দিয়ে মেয়েটিকে গাঁজা খেতে প্ররোচিত করেন। একটা পর্যায়ে মেয়েটি অসুস্থ হয়ে ঘুমানোর ইচ্ছে প্রকাশ করলে তুষার তাকে রুম ও বিছনা দেখিয়ে দেয়ার কথা বলে, রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে মেয়েটিকে ইচ্ছের বিরুদ্ধে ধর্ষণ করেন। এসময় মেয়েটিকে নিয়ে রুমে যাওয়া হয়েছে টের পেয়ে মাহমুদ বিষয়টি রায়হান ও প্রভাকে জানান। এবং তাদের (রায়হান-প্রভা) সম্পর্কে জানতে চান। তখন প্রভা ও রায়হান জানান তাদের কোর্ট মেরিজের সম্পর্ক রয়েছে, তারা বিবাহিত দম্পতি। কিন্তু মাহমুদের সন্দেহ হলে তিনি দরজা খুলে মেয়েটিকে বের করে আনতে উদ্যত হন। তখন রায়হান বখত আনসারী ও মারজিয়া প্রভা তাকে আটকে দেন এবং ভুল বুঝান। এসময় মাহমুদ সন্দেহ প্রকাশ করে কবি তুষারকে নিয়ে রায়হান আনছারী ও মারজিয়া প্রভাকে বাসা থেকে বেরিয়ে যেতেও বলেন। সকালে মেয়েটি উপস্থিত সবার সামনে ধর্ষণের ঘটনাটি জানিয়ে অভিযোগ করেন।

তবে এই ধর্ষনে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সজিব তুষার। তিনি বলেন, ‘আমি ধর্ষণ করিনি।’

এই বিষয়ে মারজিয়া প্রভা ও তার বন্ধু রায়হান আনসরী এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘মাহমুদ এইচ খান যে অভিযোগ এনেছে তা ভ্রান্ত এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। মাহমুদ এইচ খান তার পোস্টে তার নিজের মত করে আংশিক আলাপ দিয়ে ঘটনাটিকে সাজিয়েছেন। সেদিন রাতে মেয়েটি যখন আসে তখন থেকেই সজিব তুষারের সঙ্গে আমরা মেয়েটিকে কয়েকবার অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখতে পেয়েছি। মেয়েটি স্বেচ্ছায় গাঁজা খেতে নিজেই নিয়ে এসেছিলেন। এরপর পুরোপুরি স্বেচ্ছায় তিনি ঘরের ভিতর সজিব তুষারের সঙ্গে প্রবেশ করেন। এরপর একাধিকবার মেয়েটি পানি এবং পুনরায় গাঁজা খেতে বের হন। এবং স্বেচ্ছায় ঘরে ঢুকেন। তখন মাহমুদ নিজেই সেখানে তুষার এবং মেয়েটির সাথে আলাপ করে। মেয়েটি তখন কোন অভিযোগ আমাদের কাছে দেন নি।। এমনকি পরবর্তীদিন বিকাল তিনটা পর্যন্ত মেয়েটি আমাদের সঙ্গে থেকেছেন, খাওয়া দাওয়া গোসল সেরেছেন। তখনো তাকে তুষারের সাথে স্বাভাবিক ঘনিষ্ঠ অবস্থায় খুনসুটি করতে দেখতে পাওয়া যায়। ৫ আগস্ট মাহমুদের কাছ থেকে আমরা মেয়েটির অভিযোগ শুনতে পারি।’

মারজিয়া প্রভা ও রায়হান আনসরী বলন, ‘মেয়েটি নিজে নয়, মাহমুদ এই বিষয়ে আমাদের সাথে কথা বলে এবং বিষয়টি নিয়ে মেয়েটির সাথে আলাপ করতে বলেন। মেয়েটির সাথে ৬ আগস্ট আলাপ করা হলে মেয়েটি বলেন- তিনি ঘটনাটি বাদ দিতে চান।। এরপর স্বভাবতই আমরা আর আগাইনি। হুট করে ২৪ আগস্ট আমাদের সাথে পুর্ব পরিকল্পনার মাধ্যমে ফেসবুকে মব ট্রায়ালের আয়োজন করে মাহমুদ এইচ খান। আমরা বারংবার বিষয়টি নিয়ে বসার জন্য আহবান জানালেও তারা এড়িয়ে যায়। দেখা যাচ্ছিল ধর্ষণের যে অভিযোগ তারা এনেছিলেন, তা আইনি নয়, কেবল সোশ্যাল মিডিয়াভিত্তিক ট্রায়ালের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে চেয়েছিলেন। এই উদ্দেশ্য অবশ্যই সৎ নয়। এই মিথ্যাচার, প্ল্যান করা ফাঁদ পেতে আমাদের সামাজিক, পারিবারিক এবং রাজনৈতিক সম্মানহানির জন্য মাহমুদের বিরুদ্ধে আমরা মানহানির অভিযোগ আনছি এবং বিষয়টি তদন্তের মাধ্যমে সত্যিকার ভিকটিমের বিচার এবং অপরাধীর শাস্তি আশা করছি ‘

মামলার বাদী ধর্ষণের শিকার মেয়েটি বলেন, আমি প্রথমে পরিবারের মানসম্মান ও সামাজিক অবস্থান চিন্তা করে মামলা করিনি। আমার পরিবারকে জানানোর পর তারাও মামলায় সম্মতি দেয়নি। পরে যখন দেখলাম আমাকে উল্টো দোষ দেওয়া হচ্ছে এবং একটি ধর্ষণের ঘটনাকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে তখন আমার কাছে বেশি আঘাত লাগে। তখন পরিবারের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে আমি মামলা করি। সত্য জানানোর জন্য মামলা দেওয়া তখন জরুরি ছিল। আশা করছি সঠিক বিচার পাব এবং আসল সত্য বের হয়ে আসবে।

আইনিউজ/আরডি

Green Tea
সিলেট বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ