মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
আপডেট: ১৪:২৫, ২০ ডিসেম্বর ২০২০
মৌলভীবাজারে স্বজন হারানোর দিনে শহীদদের স্মরণ
সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের গণকবরের পাশে নির্মিত ২০ ডিসেম্বর নিহত শহীদদের স্মৃতিফলকে পুষ্পস্তবক অর্পণ
আজ ২০ ডিসেম্বর, মৌলভীবাজারবাসীর স্বজন হারানো একটি দিন, স্থানীয় শহীদ দিবস। ১৯৭১ সালের এদিনে পুরো দেশ যখন বিজয়ের আনন্দে ভাসছিল, ঠিক তখন মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে রহস্যজনকভাবে মাইন বিস্ফেরাণে মারা যান অর্ধ শতাধিক ঘরে ফেরা মুক্তিযোদ্ধা।
দিবসটি উপলক্ষে আজ রোববার (২০ ডিসেম্বর) সকালে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন শেষে পুস্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান- সংসদ সদস্য নেছার আহমদ, জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা খোদেজা খাতুন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মামুনুর রশীদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিয়াউর রহমান, সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার জামাল উদ্দিন, জেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি অপূর্ব কান্তি ধর প্রমুখ।
শ্রদ্ধা জানায় জেলা প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, জেলা আওয়ামী লীগ, ছাত্র ইউনিয়নসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা জসীম উদ্দীন মাসুদ।
শহীদদের স্মরণে দিনব্যাপী স্মৃতিচারণ ও সাস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে ।
সেদিনের ঘটনা
একাত্তর সালের এই দিনে পুরো দেশ যখন বিজয়ের আনন্দে ভাসছিল, ঠিক তখন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে রহস্যজনকভাবে মাইন বিস্ফেরাণে মারা যান প্রায় অর্ধশতাধিক ঘরে ফেরা মুক্তিযোদ্ধা।
মাইন বিস্ফোরণে অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া, মুক্তিযুদ্ধকালীন মহকুমা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক আজিজুর রহমান ২০১৯ সালে ২০ ডিসেম্বর এ প্রতিবেদকের কাছে ঘটনাটির বর্ণনা করেন এভাবে :
২০ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হয়েছে মাত্র ৪ দিন। যুদ্ধজয়ী মুক্তিযোদ্ধারা মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে এসে জড়ো হয়ে ঘরে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এদিকে বিভিন্ন স্থানে পাক হানাদার বাহিনীর ফেলে যাওয়া ও পুঁতে রাখা মাইন ও গ্রেনেড উদ্ধার করে এনে বিদ্যালয়ের এক পাশে জড়ো করে রাখা হয়। দুপুরে ক্যাম্পে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধারা যখন দুপুরের খাবার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন হঠাৎ এক বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে মৌলভীবাজার শহর। রহস্যজনকভাবে পরপর অর্ধশত বিকট শব্দে মাইন বিস্ফেরাণ ঘটে।
ক্যাম্পে অবস্থানরত অর্ধশতাধিক মুক্তিযোদ্ধাদের দেহ ছিন্ন বিছিন্ন হয়ে এদিকে সেদিক ছিটকে পড়েছিল।
যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলেও মৌলভীবাজারবাসী মধ্যে আবার যুদ্বের আতংক ফিরে আসে। বিস্ফোরণে সেদিন মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ঘরের টিনের চাল উড়ে গিয়েছিল। ঘরের দালান বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছিল।
মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের গণকবরের পাশে নির্মিত ২০ ডিসেম্বর নিহত শহীদদের স্মৃতিফলক। ছবি : আব্দুর রব
রহিম ব্কস খোকা, উয়নুর আলী, আছকর আলী, জহির মিয়া, আছলাম আলী, শাহ আব্দুল আজিজ, কাজল পাল, ইব্রাহিম আলী, রবীন্দ্র ভট্টাচার্য্য, প্রদীপ চন্দ্র দাস, সত্যেন্ত্র চন্দ্র দাস, নন্দলাল বাউড়ি, মুহাম্মদ আব্দুল, তরণী মোহন দেব, ক্ষিতিস চন্দ্র দেব, সুলেমান মিয়া, আব্দুল খালিক, আব্দুল জব্বার, তারা মিয়া, মাখন চন্দ্র পাল, কানু চন্দ্র দাসসহ ক্যাম্পে অবস্থানরত অর্ধশতাধিক মুক্তিযোদ্ধাদের দেহ ছিন্ন বিছিন্ন হয়ে এদিকে সেদিক ছিটকে পড়েছিল।
যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলেও মৌলভীবাজারবাসী মধ্যে আবার যুদ্বের আতংক ফিরে আসে। বিস্ফোরণে সেদিন মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ঘরের টিনের চাল উড়ে গিয়েছিল। ঘরের দালান বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছিল।
সেদিন এ ক্যাম্পে ঘটনার সময় উপস্থিত কোন মুক্তিযোদ্ধার দেহই আর পূর্ণাঙ্গ পাওয়া যায়নি বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। এ ঘটনার পর মুক্তিযোদ্ধাদের ছিন্ন ভিন্ন দেহাবশেষ কুড়িয়ে এনে একত্র করে মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ দ্যিালয় মাঠের দক্ষিণ-পূর্ব পাশে সমাহিত করা হয়। সমাধির পাশেই মৌলভীবাজারের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয় ১৯৭৫ সালে। শহীদ মিনারের পাশে তৈরী করা হয়েছে ৭১ এর ২০ ডিসেম্বর নিহত শহীদদের উদ্দেশ্যে নির্মিত স্মৃতিফলক। স্মৃতিফলকের গায়ে শহীদদের নাম লিখে রাখা হয়েছে।
তবে স্মৃতিফলকে ২০ ডিসেম্বরে শহীদদের নামের পূর্ণাঙ্গ তালিকা নেই বলে মুক্তিযোদ্ধারা অভিযোগ করেছেন। সেদিন এ ক্যাম্পে কতজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন তার পূর্ণাঙ্গ তালিকাও কারো কাছে নেই। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদে খোজাখুজি করে সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ করে এ তালিকা তৈরী করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
মাইন ও গ্রেনেড বিস্ফোরণের রহস্য আজো উদঘাটন হয়নি। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সংগঠন ও শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে তদন্তের দাবি করা হলেও কেউই সে দাবি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়নি।
মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের গণকবরের পাশে নির্মিত ২০ ডিসেম্বর নিহত শহীদদের স্মৃতিফলক। ছবি : আব্দুর রব
জানা গেছে, এই ক্যাম্পের অধিকাংশই ছিলেন গেরিলা বাহিনীর সদস্য। যাদের নাম পাওয়া গেছে স্মৃতিস্তম্ভটিতে তাদের নাম লিখা আছে, তাঁরা হলেন সুলেমান মিয়া, রহিম বক্স খোকা, ইয়ানুর আলী, আছকর আলী, জহির মিয়া, ইব্রাহিম আলী, আবদুল আজিজ, প্রদীপ চন্দ্র দাস, শিশির রঞ্জন দেব, সত্যেন্দ্র দাস, অরুণ দত্ত, দিলীপ দেব, সনাতন সিংহ, নন্দলাল বাউরী, সমীর চন্দ্র দাস, কাজল পাল, হিমাংশু কর, জিতেশ চন্দ্র দেব, আবদুল আলী, নুরুল ইসলাম, মোস্তফা কামাল, আশুতোষ দেব, তরণী দেব ও নরেশ চন্দ্র ধর।
আইনিউজ/এইচক
- মেয়ের বাড়িতে ইফতার: সিলেটি প্রথার বিলুপ্তি চায় নতুন প্রজন্ম
- অবশেষে ক্লাস করার অনুমতি পেল শ্রীমঙ্গলের শিশু শিক্ষার্থী নাঈম
- দেশের চতুর্থ ধনী বিভাগ সিলেট
- শ্রীমঙ্গল টু কাতারে গড়ে তুলেছেন শক্তিশালি নেটওয়ার্ক
মৌলভীবাজারে অনলাইন জুয়ায় রাতারাতি কোটিপতি সাগর - বিজ্ঞাপন
মৌলভীবাজারে হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসায় লাইফ লাইন হাসপাতাল (ভিডিও) - মৌলভীবাজারে ট্যুরিস্ট বাসের উদ্বোধন বৃহস্পতিবার
- ১ ঘন্টার জন্য মৌলভীবাজারে শিশু কর্মকর্তা হলেন তুলনা ধর তুষ্টি
- মৌলভীবাজার শহরে একদিনে ৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত
- বন্ধ থাকবে মৌলভীবাজারের ‘এমবি’
- করোনা জয় করে সুস্থ হয়েছেন মৌলভীবাজারের ৩ চিকিৎসক