Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, শুক্রবার   ০৯ মে ২০২৫,   বৈশাখ ২৬ ১৪৩২

আই নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৩:২৪, ৩১ মার্চ ২০২৩
আপডেট: ১৫:১৮, ৩ এপ্রিল ২০২৩

মুন্সিবাজার বণিক সমিতির ফান্ডে অনিয়মের অভিযোগ

রাজনগরের মুন্সিবাজার বণিক সমিতির নবনির্বাচিত ১২ সদস্যের কেউ দায়িত্ব গ্রহন করেননি। গতকাল বৃহস্পতিবার মুন্সিবাজারস্থ সমিতির কার্যালয়ে বর্তমান পরিচালনা কমিটি নবনির্বাচিত কমিটির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর সভা এক পর্যায় পন্ড হয়ে যায়। নবনির্বাচিত কমিটির একাধিক সদস্য জানান, বর্তমান পরিচালনা কমিটি দায়িত্ব হস্তান্তর করার সময় সমিতির সদস্যদের গত ১০ বছরের জমানো চাঁদার পরিপুর্ণ হিসেব দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।

সমিতির ফান্ডে প্রায় ২৬ লক্ষ টাকা থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে ফান্ডে নগদ আছে ৪৭ হাজার টাকা৷ এ অবস্থায় বাকি টাকার সন্তোষজনক হিসেব দিতে না পাড়ায় নবনির্বাচিত কমিটির সভাপতি,  সাধারণ সম্পাদকসহ সবাই দায়িত্ব নিতে অপারগতা জানান। দায়িত্ব হস্তান্তর সভায় নবনির্বাচিত কমিটি ও বর্তমান কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্তদের মাঝে কিছুটা হট্টগোল দেখা দিলে এক পর্যায় সমিতির দায়িত্ব গ্রহন না নিয়েই কার্যালয় ত্যাগ করেন নবনির্বাচিত কমিটির সবাই। এসময় তারা ফেসবুক লাইভে জানান, সমিতির ফান্ডে স্বচ্ছতা না আসা পর্যন্ত তারা দায়িত্ব গ্রহণ করবেন না৷ 

নবনির্বাচিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক বদরুল হোসেন বাবলু জানান, বর্তমান কমিটি ফান্ডে দেখিয়েছেন শুধু সদস্য চাঁদা বাবদ প্রায় ২৬ লক্ষ টাকা ছিলো৷ কিন্তু বর্তমানে সমিতির ফান্ডে নগদ ৪৭ হাজার, ঋন বিতরণ ৬০ হাজার টাকা এবং  সমিতির একটি এম্বুলেন্স আছে৷ কিন্তু এম্বুলেন্স বিক্রি করেলে এখন ৯লাখ টাকাও পাওয়া যাবে না৷ এতে সমিতির সদস্যদের ২৬ লাখ টাকা ফেরত দেয়া যাবে না। এছাড়া এম্বুলেন্সের আয়সহ অন্যান্য আয়ের হিসাব তারা (বর্তমান কমিটি) দিতে পারেননি জানিয়ে বাবলু আরও জানান, ৮-৯ লাখ টাকার সম্পদ নিয়ে সদস্যদের ২৬ লাখ টাকা আমরা দিতে পারবো না৷ তাই আমরা ১২ জনের কমিটি সিদ্ধান্ত জানিয়েছি, বর্তমান কমিটি তারা এম্বুলেন্স বিক্রিসহ সব টাকা একত্রিত করে সদস্যদের ফেরত দিতে। আয় ব্যয়ের হিসেবে স্বচ্ছতা নেই জানিয়ে এমন জোড়াতালির হিসেব নবনির্বাচিত কমিটি গ্রহন করবে না বলেও জানান তিনি। 

এসময় নবনির্বাচিত সভাপতি বরকতুজ্জামান জানান, বর্তমান কমিটি ১ মাসের মধ্যে সদস্যদের জমাকৃত টাকা তাদেরকে বুঝিয়ে দিলে আমরা দায়িত্ব গ্রহন করবো। পরে আমরা দায়িত্ব নিয়ে নতুন করে সদস্যদের কাছ থেকে চাঁদা সংগ্রহ করবো এবং সমিতি চালাবো। 

এ বিষয়ে সমিতির বর্তমান সভাপতি সাতির মিয়া জানান, 'নবনির্বাচিত কমিটিকে ফুলের তোড়া দিতে গিয়ে কিছুটা এলোমেলো হয়েছে, এরপর থেকে সভায় হট্টগোল শুরু। সেখান থেকেই ঘটনার সুত্রপাত। এরপর আমাদের কমিটির সাধারণ সম্পাদক আয়ুব মিয়া খাতাপত্রে হিসেব বুঝিয়ে দিতে গেলে তাকে কোনো কথা বলতে দেয়া হয়নি৷ তাঁর প্রতিটি কথায় বাধা দেওয়া হয়েছে। আমি মনে করেছিলাম বর্তমান কমিটি ভালো হবে কিন্তু তারা একটা ভুল বুঝাবুঝি মাঝে এখনো আছে৷'

সমিতির সব হিসাব হালনাগাদ ছিলো। এখনো আছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, 'আমাদের সব কথা শুনে যদি নতুন কমিটি কথা বলতেন তাহলে এই সমস্যা সৃষ্টি হতোনা।' এই জটিলতায় নবনির্বাচিত কমিটির সভাপতি মো. বরকতুজ্জানে দায়ী করে সাতির মিয়া বলেন, 'তিনি (বরকতুজ্জামান) বেশি সেক্রেটারি (আয়ুব মিয়া) সাহেবের সাথে তর্কে-বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন তাই হিসাব দেওয়া হয়নি৷'

সমিতির বর্তমান সম্পদ একটি এম্বুলেন্স আছে জানিয়ে তিনি আরও জানান, 'আমাদের আগের কমিটি ২৩ লক্ষ টাকা দিয়ে একটি এম্বলেন্স ক্রয় করেছিলো৷ সেই সময় ৫লক্ষ টাকা ঋণ ছিলো, আমরা দায়িত্ব নিয়ে সেই ঋণ পরিশোধ করেছি৷ সমিতির টাকায় এম্বুলেন্স ক্রয় হয়েছে, এম্বুলেন্স এখনো আছে৷ এম্বুলেন্সে লাভ হলেও সমিতির লস হলেও সমিতির। পুরো ফান্ডের হিসেব খাতাপত্রে আছে৷ ঈদের পর সদস্যদের নিয়ে বর্তমান কমিটির কাছে হিসেব তুলে দেয়ার কথা জানান তিনি৷' 

উল্লেখ্য, রাজনগরের মুন্সিবাজারের প্রায় ৬ শত ব্যবসায়ীদের নিয়ে মুন্সিবাজার বনিক বহুমাত্রিক সমবায় সমিতি লি. প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতি সপ্তাহে সদস্যরা ২০টাকা হারে সমিতির ফান্ডে চাঁদা জমা দিতেন। সেই চাঁদার পরিমান দাঁড়ায় প্রায় ২৬ লাখ টাকা। সেই টাকা থেকে একটি এম্বুলেন্স ক্রয় করা হয়েছিলো। বর্তমানে এম্বুলেন্স ছাড়া নগদ টাকা আছে ৪৭ হাজার। আর ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। 

গত ১৬ মার্চ উৎসবমুখর পরিবেশে সদস্যদের ভোটে সভাপতি, সাধারণ  সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষসহ ৭টি পদে ১২ জনে কমিটি নির্বাচিত হন। নবনির্বাচিত কমিটি সমিতির ফান্ডে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ এনে দায়িত্ব গ্রহন করেন নি৷ এ অবস্থায় মুন্সিবাজার ব্যবসায়ীদের মধ্যে সমিতি নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা সমালোচনাসহ ক্ষোভ বিরাজ করছে। 

আইনিউজ/এইউএস

Green Tea
সিলেট বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়