Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, রোববার   ০৬ জুলাই ২০২৫,   আষাঢ় ২২ ১৪৩২

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১১:২৯, ১৬ নভেম্বর ২০২২

দিরাই আ. লীগ সম্মেলনে সংঘর্ষের নেপথ্যে দলীয় গ্রুপিং

দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সংঘর্ষের ছবি

দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সংঘর্ষের ছবি

দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সংঘর্ষ ও কেন্দ্রীয় নেতাদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় লজ্জিত দিরাইবাসী। ঘটনার পর দুইপক্ষ সুনসান নিরব থাকলেও ভেতরে ভেতরে উত্তেজনা রয়েছে। স্থানীয় বিশিষ্টজনরা বলেছেন, দলের বিভেদ মিটমাট আগেই করতে পারতেন দায়িত্বশীলরা। তাহলে এমন ঘটনা নাও ঘটতে পারতো।

কেউ কেউ বলেছেন, অতিথি হয়ে আসা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ আক্রমণ ঠেকাচ্ছেন চেয়ার মাথার উপরে তুলে, এই ছবি দেখে বিব্রত হয়েছেন তারা। পাশের ভবনের উপর থেকে অসংখ্য রামদা সরবরাহ করছে কারা? প্রশ্ন ওঠেছে এ নিয়েও।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ হওয়া সেদিনের সংঘর্ষের একটি ভিডিওতে দেখা যায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক চেয়ার মাথায় নিয়ে মাইকে বলছেন, ‘মোশারফ সাহেব, আমি আহমেদ হোসেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বলছিলাম, আপনার লোকদের থামান, শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে বলছি।’ তবুও কাউকে থামতে দেখা যায় নি।

সংঘর্ষের পাশে বিএডিসি ভবন থেকে বহুসংখ্যক রামদা ছুড়ে নীচে দেওয়া হচ্ছিল। এগুলো তাহলে আগে এনে রাখা হয়েছিল। এটি কারা করলো, নিশ্চয়ই তাদের আগের প্রস্তুতি ছিল। এটি পুলিশ বা গোয়েন্দা সংস্থা জানলো না কেন? এই প্রশ্নও আছে স্থানীয় রাজনৈতিক কর্মীদের মাঝে।

স্থানীয় একজন সমাজকর্মী আওয়ামী লীগের ভোটার নিজের পরিচয় গোপন রাখার শর্তে গণমাধ্যমকে বলেছেন- কমপক্ষে তিন হাজার মানুষের মিছিল নিয়ে মোশারফ মিয়ার পক্ষ মঞ্চে আসছিল। তার আলাদা জমায়েত করার সময়ই নেতৃবৃন্দ হস্তক্ষেপ করতে পারতেন। ঝামেলা মিটমাট করতে পারতেন। তাহলে এমন ঘটনা হয়তো ঘটতো না।

দিরাই বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাফর ইকবাল বললেন, প্রয়াত জাতীয় নেতা সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের নির্বাচনী এলাকা দিরাই উপজেলার বাসিন্দারা অপেক্ষাকৃত রাজনীতি সচেতন হিসাবেই পরিচিত। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে এখানকার মানুষ ভালোভাবেই চিনেন। তিনি মাথায় চেয়ার তুলে দলের কর্মীদের ইটপাটকেল ঠেকাচ্ছেন। এটি দিরাইবাসীর জন্য লজ্জার, যারা বুঝেন তাঁরা লজ্জিত হয়েছেন।’

দিরাই আ.লীগের রাজনৈতিক কোন্দল শুরু যেভাবে
দিরাইর রাজনৈতিক ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, ১৯৮৬ ও ১৯৯১- এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে জয়ী হন বাবু সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত। ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে সুরঞ্জিত প্রথমে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং পরে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হন। ওই সময় থেকেই দিরাইয়ে দলীয় কোন্দল শুরু হয়।

সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের জীবদ্দশায়ই দিরাইয়ে দলের গ্রুপিংয়ের বলি হয়েছিলেন যুবলীগ নেতা নান্টু রায়। দলীয় প্রতিপক্ষের ছোড়া গুলিতে মারা গিয়েছিলেন নান্টু। এরপর স্থানীয়ভাবে পরিচিত সুরঞ্জিতের প্রতিপক্ষ গ্রুপ (প্রয়াত সামাদ আজাদের সমর্থকরা) কোনঠাসা হয়ে পড়েন। এদের অনেকেই বিএনপিতে যোগ দেন। দিরাই-শাল্লার আওয়ামী রাজনীতির কোন্দলও কিছুটা নিরসন হয়েছিল।

দিরাই পৌরসভার বিগত পৌর নির্বাচনে দলীয় কোন্দল আবার চাঙা হয়। দলের মনোনীত প্রার্থী বিশ্বজিত রায়কে চ্যালেঞ্জ করে বিদ্রোহী প্রার্থী হন সাবেক পৌর মেয়র মোশারফ মিয়া। তিনি পরাজিত হলেও দ্বন্দ্ব শেষ হয় নি। স্থানীয় রাজনীতির একাংশের নেতৃত্ব দেন মোশারফ মিয়া এবং অপরপক্ষের নেতা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায়।

জেলা পরিষদ নির্বাচনে ফের চাঙ্গা হয় দলীয় গ্রুপিং
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জেলা পরিষদ নির্বাচনে এই গ্রুপিং আরও চাঙ্গা হয়। প্রদীপ রায় দলীয় সমর্থিত প্রার্থী খায়রুল কবির রুমেনের পক্ষে এবং মোশারফ দায়িত্ব নেন জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি বিদ্রোহী প্রার্থী নুরুল হুদা মুকুটের।

জেলা পরিষদ নির্বাচনের আমেজ যেতে না যেতেই উপজেলা সম্মেলন হওয়ায় দুই পক্ষই সম্মেলনে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করে। মোশারফ সমর্থকরা সম্মেলন মঞ্চে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেবার ঘোষণা দেয় আগে থেকেই। তারা আলাদা জমায়েত করে মিছিল নিয়ে সম্মেলনস্থলে আসার পরই এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

প্রয়াত জাতীয় নেতা সুরঞ্জিতের সহধর্মিনী স্থানীয় সংসদ সদস্য ড. জয়া সেন গুপ্তা বললেন, বিষয়টি আগে থেকেই পুলিশ প্রধানকেও জানানো হয়েছিল। সম্মেলনস্থলে ১৫ টি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়। বলা হয়েছিল যারাই গোলযোগ করার চেষ্টা করবে, ক্যামেরায় ধরা পড়বে। তবুও ঘটনা ঘটে গেল।

আগে থেকে কেন বিরোধ মেঠানো হলো না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সমঝোতা কার সঙ্গে করা হবে। মোশারফ আমাকে কথায় কথায় ইয়াবা ব্যবসায়ী, কাবিটা চোর বানায়, আমি তাকে পাল্টা কিছুই বলছি না। সে দলের কাজে আসে না। আওয়ামী লীগের লোক হয়ে দলের সভানেত্রীর পাঠানো প্রতিনিধিদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়ে তারা। আমার মুখ রাখেনি এরা, আমি লজ্জিত-দুঃখিত।

তিনি বলেন, তবে আশার বিষয় হচ্ছে। এতো কিছুর পরও শেখ হাসিনার হাত ছাড়ছে না দিরাইবাসী। ঘটনার পর বড় সমাবেশ সেটাই প্রমাণ করেছে।

বিএডিসি ভবনের ছাদ থেকে নীচে রামদা দেওয় হচ্ছিল
সংঘর্ষের সময় পাশের বিএডিসি ভবন থেকে তিন চার তরুণ অসংখ্য রামদা নীচে আরও কিছু তরুণকে দেবার জন্য ফেলছিল। এরা কারা? জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায় বললেন,‘আমাদের কেউ এই কাজ করে নি। আমরা রাখলে মঞ্চের পাশেই রাখতাম, ওখানে রাখতাম না। ভিডিও ফুটেজ দেখলেই বুঝা যাবে, এরা কারা।

এই ব্যাপারে কথা বলার জন্য গণমাধ্যম মোশারফ মিয়ার মুঠোফোনে কয়েকবার ফোন দিলেও তার মেয়ে ফোন রিসিভ করে জানিয়েছেন তিনি ফোন বাড়িতে রেখে অন্যত্র গেছেন।

দিরাই থানার ওসি সাইফুল আলম বললেন, এ ধরণের কোন ভিডিও ফুটেজ আমরা দেখি নি। সংঘর্ষের ঘটনায় থানায় কোন মামলা হয়নি বলেও জানালেন তিনি।

আইনিউজ/এইচএ

আইনিউজে আরও পড়ুন-

বিশ্বের মজার মজার গল্প আর তথ্য সম্বলিত আইনিউজের ফিচার পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

দেখুন আইনিউজের ভিডিও গ্যালারি

দিনমজুর বাবার ছেলে মাহির বুয়েটে পড়ার সুযোগ || BUET success story of Mahfujur Rhaman || EYE NEWS

হানিফ সংকেত যেভাবে কিংবদন্তি উপস্থাপক হলেন | Biography | hanif sanket life documentary | EYE NEWS

আশ্চর্য এন্টার্কটিকা মহাদেশের অজানা তথ্য | Antarctica continent countries | facts। Eye News

Green Tea
সিলেট বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়