Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, রোববার   ০৩ আগস্ট ২০২৫,   শ্রাবণ ১৯ ১৪৩২

ইয়ানূর রহমান, যশোর 

প্রকাশিত: ১২:০৪, ১৭ জুলাই ২০২৩

যশোরে

সাংবাদিক শামছুর রহমান হ ত্যার দেড়যুগ, মেলেনি কোনো সুরাহা 

সাংবাদিক শামছুর রহমান। ছবি- আই নিউজ

সাংবাদিক শামছুর রহমান। ছবি- আই নিউজ

নানা কারণে এই মামলাটি ‘লালফিতায়’ আটকে রয়েছে যশোরের প্রথিতযশা সাংবাদিক শামছুর রহমান কেবল হ ত্যা মামলাটি। যে কারনে গত দেড়যুগ ধরে কোনো সুরাহা হচ্ছে না। এ কারণে হ ত্যা কাণ্ডের ২৩ বছরেও খুনিরা বিচারের মুখোমুখি হয়নি। আইনের মারপ্যাঁচে প্রায় দুই যুগে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়ায় ক্ষুব্ধ নিহতের পরিবার ও যশোরের সাংবাদিক সমাজ। 

রোববার (১৬ জুলাই) ছিল এই গুণি সাংবাদিকের ২৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী। সাংবাদিক শামছুর রহমান কেবল ২০০০ সালের ১৬ জুলাই রাতে জনকণ্ঠ যশোর অফিসে কর্মরত অবস্থায় আততায়ীর গুলিতে নি হ ত হন। আইনজীবীদের অভিমত, সরকার উদ্যোগ নিলে এ হ ত্যা কাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া এখনো শুরু শুরু করা সম্ভব।  

যশোরের আদালত সূত্র জানায়, ২০০০ সালের ১৬ জুলাই রাতে সাংবাদিক শামছুর রহমান কেবল খু ন হওয়ার পর ২০০১ সালে সিআইডি এই মামলায় ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। এরপর মামলার বর্ধিত তদন্ত করে আরেক সাংবাদিক নেতা ফারাজী আজমল হোসেনকে নতুন করে আসামি করে চার্জশিট দেন তদন্ত কর্মকর্তা। একইসাথে মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী বাদ দিয়ে সাক্ষী করা হয় আসামিদের ঘনিষ্টজনদেরকে। এ কারণে একদিকে মামলার বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়; অন্যদিকে দুর্বল হয়ে যায় চার্জশিট। 

বিতর্কিত ওই বর্ধিত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর ২০০৫ সালের জুন মাসে যশোরের স্পেশাল জজ আদালতে এই মামলার চার্জ গঠন হয়। ওই বছরের জুলাই মাসে বাদীর মতামত ছাড়াই মামলাটি খুলনার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। এ অবস্থায় মামলার বাদী শহীদ সাংবাদিক শামছুর রহমানের সহধর্মিণী সেলিনা আকতার লাকি বিচারিক আদালত পরিবর্তনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বরে হাইকোর্টে আপিল করেন।

আপিল আবেদনে তিনি বলেন, মামলার অন্যতম আসামি খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী হিরক পলাতক রয়েছে। হিরকসহ সংশ্লিষ্ট মামলার অন্যান্য আসামিদের সাথে খুলনার সন্ত্রাসীদের সখ্য রয়েছে। ফলে তার পক্ষে খুলনায় গিয়ে সাক্ষ্য দেয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। বাদীর এই আপিল আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ‘মামলাটি কেন যশোরে ফিরিয়ে দেয়া হবে না’ তার জন্য সরকারকে রুলনিশি জারি করেন। এরপর মামলায় বর্ধিত তদন্তে সংযুক্ত আসামি ফারাজী আজমল হোসেন রিট করেন উচ্চ আদালতে। সেই রিটের নিষ্পত্তি না হওয়ায় মামলার সমস্ত কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে।

আইনজীবীরা জানিয়েছেন, সরকার উদ্যোগ নিয়ে উচ্চ আদালতে বাদীর আপিল এবং ফারাজী আজমল হোসেনের রিট নিষ্পত্তি করলে নিম্ন আদালতে এই মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব। উচ্চ আদালত থেকে নির্দেশনা না আসলে নিম্ন আদালতে এই মামলার কোনো কার্যক্রমই পরিচালনা করা যাবে না।

উচ্চ আদালতের নির্দেশের কারণে শামছুর রহমান হত্যা মামলার বিচারকাজ বন্ধ হয়ে আছে উল্লেখ করে যশোরের পিপি এম ইদ্রিস আলী জানান, আপিলের দ্রুত নিষ্পত্তি হলে মামলার কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব। কিন্তু বাস্তবতা হলো বহু বছর ধরেই হাইকোর্টের নির্দেশনায় এই মামলার কার্যক্রম বন্ধ আছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা পেলে খুলনার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল মামলার কার্যক্রম শুরু করতে পারবে।

নিহতের সহোদর ও যশোর সাংবাদিক ইউনিয়ন জেইউজে’র সাবেক সভাপতি সাজেদ রহমান জানান, একাধিকবার প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতকালে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে শামছুর রহমান হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিটি গুরুত্বের সাথে তোলা হয়। এছাড়া, তারা একই দাবিতে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপিও দেন। কিন্তু এ নিয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি।

উল্লেখ্য, এ মামলার চার্জশিটভুক্ত ১৬ জনের মধ্যে খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী মুশফিকুর রহমান হিরক পুলিশের খাতায় পলাতক রয়েছে। আরেক আসামি খুলনার ওয়ার্ড কমিশনার আসাদুজ্জামান লিটু র‍্যাবের ক্রসফায়ারে, কোটচাঁদপুর
উপজেলা চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন কালু হৃদরোগে এবং যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটির আনারুল প্রতিপক্ষের হামলায় মারা গেছেন। বাকি আসামিরা জামিনে রয়েছেন।

এদিকে, দীর্ঘদিনেও চাঞ্চল্যকর এ মামলাটির বিচার কার্যক্রম শেষ না হওয়ায় নিহতের পরিবার ও সাংবাদিক সমাজের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

শামছুর রহমানের ২৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে রোববার যশোরের বিভিন্ন সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেন। প্রেসক্লাব যশোর, যশোর সাংবাদিক ইউনিয়ন ও সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরসহ অন্যান্য সংগঠনের
নেতৃবৃন্দ এদিন সকালে প্রেসক্লাবে জমায়েত হয়ে কালো ব্যাজ ধারণ করেন। এরপর শোকর‍্যালি করে শহীদের কবরে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন তারা। 

পরে প্রেসক্লাবের আয়োজনে আলোচনা ও দোয়া মাহফিল এবং যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের আয়োজনে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।

আই নিউজ/এইচএ 

Green Tea
সারাবাংলা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ