নিজস্ব প্রতিবেদক
মারাত্মক আকার ধারণ করেছে টিএসপি কারখানার নির্গত গ্যাস

সংগৃহীত ছবি
চট্টগ্রামের ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি) কারখানা থেকে নির্গত সালফিইউরিক গ্যাস আতঙ্কে আছে পতেঙ্গার মানুষ। করোনার মধ্যে শ্বাসকষ্টে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকেই। দেখা দিয়েছে নানা পার্শপ্রতিক্রিয়া। এরই মধ্যে কারখানার নির্গত গ্যাসে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন অনেকে। ঝলসে গেছে জমির ফসল। এছাড়া গৃহপালিত পশুর মধ্যেও নানা রোগ বেড়েছে। গত তিনদিন ধরে মারাত্মক আকার ধারণ করা দূষণে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এলাকায়।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, প্রবল বর্ষা ও শীত মৌসুমে কারখানার এসিড কিংবা গ্যাস নির্গত হওয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটেও এর কোনো স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হয়নি প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে। এদিকে উৎপাদনের সময় কারখানায় জমে যাওয়া এসিডগুলো বিশেষ চেম্বার বা প্ল্যান্টের মাধ্যমে নষ্ট করার নিয়ম থাকলেও প্রতিষ্ঠার সময় এমন প্ল্যান্ট টিএসপিতে স্থাপনই করা হয়নি। ৪৭ বছর আগে নির্গত গ্যাস বা এসিড নিয়ন্ত্রণের যন্ত্র স্ক্রাবার মেশিন বসানো হলেও সেটির কার্যকারিতা নিয়েও এখন নানা প্রশ্ন উঠেছে।
জানা যায়, এই গ্যাসে রয়েছে সালফার। বছরজুড়ে এমন দূষণ চলে। তবে গত মঙ্গলবার চট্টগ্রামের পতেঙ্গার পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। ফলে বিভিন্ন বয়সীর মধ্যে শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। চারজন হাসপাতালে ভর্তি হন। তারা হলেন- ওমর সাইদ (২২), মো. জহির (২৫), মনির হোসেন (২০) ও শারমিন আক্তার (১৮)।
তবে স্থানীয়রা জানান, গ্যাস লিকেজের কারণে আরো মানুষও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। যদিও এ ঘটনায় বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। তবে ক্ষতির মুখে পড়েছে পতেঙ্গা এলাকায় বহু সংখ্যক ফসলের জমির।
ওই হাসপাতালের কর্মকর্তা আশরাফুল্লাহ আকাশ বলেন, রাত সাড়ে ১২টার দিকে শ্বাসকষ্ট নিয়ে চারজন ভর্তি হন। এদের মধ্যে একজনের অবস্থা খারাপ ছিল। যদিও পরবর্তীতে চিকিৎসা শেষে বুধবার বিকেলে বাসায় ফিরেছেন।
স্থানীয়রা জানান, রাত ১১টার পর থেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ে টিএসপি কারখানার আশপাশের মানুষগুলো। শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা দেখা যায়। এর মধ্যে ৫ থেকে ৭ জনের অধিক মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদেরকে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এ বিষয়ে টিএসপি কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী আতাউর রহমান বলেন, ঘটনার পরদিনই চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন হাতে পেলে বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া যাবে। যদিও প্রাথমিকভাবে কয়েকটি বিষয়ে নজর দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে যখন প্ল্যান্ট চালু করা হয়েছিল ওই সময়ে স্ক্র্যাবার গ্যাসটা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছিল কিনা কিংবা কারো গাফেলতি আছে কিনা- সেটা খোঁজা হচ্ছে। ৪৭ বছরের পুরোনো প্ল্যান্ট এটি। এরপরও সর্বাত্মক সতর্কতার সঙ্গে কাজ করা হচ্ছে। তবে এ ঘটনার সঙ্গে যদি কারো গাফেলতির প্রমাণ পাওয়া যায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কারখানা সংশ্লিষ্টরা জানান, কারখানাটিতে সার উৎপাদন করতে কয়েক ধাপে কাঁচামাল থেকে পণ্য উৎপাদন করে থাকে। কাঁচামাল সালফার থেকে সাফিউরিক এসিড তৈরির মাধ্যমেই সার উৎপদন হয়ে থাকে কারখানাটিতে। প্রথম পর্যায়ে সালফার পুড়িয়ে তা সালফার ডাই-অক্সাইড হয়। এরপর ডাই-অক্সাইড থেকে ট্রাই অক্সাইড গ্যাস তৈরি হয়। এরপরই ট্রাই-অক্সাইড থেকে সালফার এসিডে রূপান্তর হয়ে থাকে। এ রূপান্তরের মাঝেই ট্রাই-অক্সাইড পানির সঙ্গে মিশে পুরোপুরি এসিডে রূপ নেয়। তবে কয়েক ধাপের এই কাজটি করতে হলে প্রশিক্ষিত কর্মীর প্রয়োজন হয়। যদিও প্ল্যান্ট ৩ থেকে ৫ ঘণ্টা পর্যন্ত বন্ধ থাকে তখন ঠান্ডা হয়ে যাওয়া প্ল্যান্ট চালু করলেও এসিড নির্গত হয়। পুরোনো কৌশলে নির্গত গ্যাস বাতাসে ছাড়ার ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট সময়কেও গুরুত্ব দিতে হয়। গতির কৌশল পরিবর্তন হলে এমন ঘটনা ঘটে থাকে।
অপ্রশিক্ষিত শ্রমিক দিয়ে প্ল্যান্ট পরিচালনা, গ্যাস বা এসিড নিয়ন্ত্রণের যন্ত্র স্ক্র্যাবার মেশিন ঠিকঠাক মতো কাজ না করা অথবা স্ক্র্যাবারের মধ্যে সঠিক সময়ে কেমিক্যাল না দেওয়া, অপারেটরের গাফেলতি, বাতাসের গতি না বুঝে গ্যাস নির্গত করা এবং কুয়াশার কারণে এমন ঘটনা ঘটতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা বলেন, গত ১৭ বছর আগে একযোগে পেপার মিল্স, গ্ল্যাস ফ্যাক্টরিসহ দেশের আটটি কারখানা পে-অফ করে দেয় তৎকালীন মন্ত্রণালয়। শ্রমিক-কর্মচারীরা কোর্টে মামলা দায়ের করলে আদালত সব শ্রমিকদের পুনরায় শিল্পমন্ত্রণালয়ের আওতাধীন অন্য কারখানাতে নিয়োগ দিতে বলে। বর্তমানে টিএসপি কমপ্লেক্সে এমন শতাধিক শ্রমিক-কর্মচারী কাজে রয়েছেন যারা সার কারখানায় প্রশিক্ষিত নয়। এদের কয়েকজন ওইদিন রাতে আলোচ্য প্ল্যান্টটিতে (এসএস-২) কর্মরত ছিলেন।
তবে অদক্ষ এসব কর্মীর কারণেই অনাকাঙ্গিত গ্যাস নির্গমণের ঘটনা ঘটেছিল কিনা সে বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি টিএসপি’র এমডি আতাউর রহমান। তিনি বলেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
- বরিশালে সন্ধ্যা নদীতে জেলের জালে ধরা পড়লো হাঙর
- বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ২০২৩ ফলাফল : নৌকা ৮৭৭৫৩, হাতপাখা ৩৪৩৪৫
- প্রেমের টানে বরিশালে, ‘দেশি প্রেমিকের’ হাতে মার খেয়ে পালালেন ভারতীয় প্রেমকান্ত
- গাজীপুর সিটি নির্বাচন প্রাপ্ত ফলাফল
- কুড়িয়ে পাওয়া পাঁচ লক্ষ টাকার প্রকৃত মালিককে খুঁজতে এলাকায় মাইকিং
- সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জেতা স্বপ্ন-সোহাগী ঠাকুরগাঁওয়ের গর্ব
- চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিতে কর্মচারীরা
- বাড়িতে ফোন দিয়ে জানলেন তিনি বাঘের থাবায় মারা গেছেন, চলছে দাফনের প্রস্তুতি
- নির্বাচন ফলাফল লাইভ ২০২৪ | BD election result 2024
- দেলোয়ার হোসেন সাঈদী মারা গেছেন