Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫,   আশ্বিন ৩ ১৪৩২

রুপম আচার্য্য

প্রকাশিত: ২২:৫৪, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আপডেট: ২৩:২৭, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নৃত্যাঙ্গণ শ্রীমঙ্গল -এর পঞ্চম প্রযোজনা

শ্রীমঙ্গলে নৃত্যনাট্য ‘রণরঙ্গে দেবাদৃতা’ মঞ্চায়ন

মঞ্চে অনুষ্ঠিত নৃত্যানাট্যে দেবী দুর্গার মহিষাসুর বধের দৃশ্য ফুঠে উঠে। ছবি: আই নিউজ

মঞ্চে অনুষ্ঠিত নৃত্যানাট্যে দেবী দুর্গার মহিষাসুর বধের দৃশ্য ফুঠে উঠে। ছবি: আই নিউজ

হিন্দুধর্মের মূল ধর্মগ্রন্থ বেদ -এর বিভিন্ন গল্প অবলম্বনে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে এক মহাকাব্যিক দেবীগাথাঁ নির্ভর নৃত্যনাট্য ‘রণরঙ্গে দেবাদৃতা’ মঞ্চায়িত হয়েছে। যেখানে দেবীর সৌরভময় রূপ, রসাত্মক ভাব, রুদ্রশক্তি ও দেবী দুর্গার মহিষাসুর বধের মতো দৃশ্যগুলো ফুঠে উঠে।

বুধবার রাতে শহরের জেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে আসন্ন মহালয়া উপলক্ষে শারদ উৎসবের আয়োজন করেন নৃত্যাঙ্গণ-শ্রীমঙ্গল। অনুষ্ঠানের শুরুতে মঞ্চে উপস্থিত থেকে আগত অতিথিরা  প্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন। পরে নৃত্যানুষ্ঠান ‘নৃত্যলহড়ী’ পরিবেশন করে নৃত্যাঙ্গণের শিল্পীরা।

অনুষ্ঠিত ‘রণরঙ্গে দেবাদৃতা’ নৃত্যনাট্যতে দেবীর ২৩ টি রুপ দেখানো হয়। একটি পৌরাণিক দেবী গাঁথা গল্প অর্থাৎ দেবী দুর্গার মহিষাসুর বধের গল্প, যা হিন্দু পুরাণ অনুসারে স্কন্দ পুরাণের চণ্ডীপাঠ মহাকাব্যে বর্ণিত রয়েছে। এই গল্পে, দেবী মহিষের মাথা ও মানুষের শরীর বিশিষ্ট এক শক্তিশালী অসুর মহিষাকে বধ করেন এবং তিনি বহুমুখী দেবী হিসেবে পরিচিত। 

নৃত্যনাট্য ‘রণরঙ্গে দেবাদৃতা’র বিভিন্ন রুপে নৃত্য ও অভিনয়ে যারা ছিলেন। শিব রুপে সাজু দেব, মহামায়া রুপে অনিতা দেব, দুর্গা রুপে টুম্পা দেব, পার্বতী রুপে অন্বেষা দেবনাথ দোলা, অন্নপূর্ণা রুপে প্রজ্ঞা পারমিতা দাশগুপ্তা, ত্রিপুরা সুন্দরী রুপে তমা দেব পায়েল, কৌশিকী রুপে সঙ্গীতা দেব, ভন্ডাসুর ও ভস্মাসুর রুপে দীপঙ্কর পাল দ্বীপ, চামুন্ডা রুপে অংশিতা রায় অথৈ, চন্দ্র রুপে কিশোর বৈদ্য ও মুন্ড রুপে দিপক চক্রবর্তী, ভদ্রকালী রুপে শ্রেয়া সেন, অসুর রুপে আকাশ রায়, মহিষাসুর রুপে রূপন সূত্রধর, ছিন্নমস্তা রুপে অগ্নিলা ধর, মহাকালী রুপে সৃষ্টি দে, লক্ষী রুপে প্রীতি পাল, সরস্বতী রুপে সুচিস্মিতা ধর পৃথা, ব্রম্মা রুপে যীশু দেব, বিষ্ণু রুপে অনির্বাণ পাল অলক এবং গণেশ রূপে ঋদভিকা দেব স্তুতি।

অন্নপূর্ণা রুপে ছিলেন প্রজ্ঞা পারমিতা দাশগুপ্তা। তিনি বলেন, 'অন্নপূর্ণা দেবী দুর্গা ও পার্বতীর এক রূপ। মা অন্নপূর্ণা অন্নদা নামেও পরিচিত। মা অন্নপূর্ণা কে বলা হয় অন্নদাত্রী। তিনি শক্তির অপর রূপ। তিনি ভগবান শিবের স্ত্রী এবং তাঁরই এক বিশেষ প্রকাশ, যিনি শিবের ভিক্ষার ঝুলি অন্ন দিয়ে পরিপূর্ণ করেন। এই চরিত্রে এটা আমার চতুর্থ পরিবেশনা। এই চরিত্রের সাথে মনে হচ্ছে আমি অতপ্রতভাবে জড়িয়ে গেছি। চরিত্রের প্রতিটি অংশে নিজেকে দেবী অন্নপূর্ণার বিভিন্ন রুপ প্রকাশ করতে হয়েছে। আসন্ন মহালয়াকে সামনে রেখে আমাদের নৃত্যাঙ্গনের এই পরিবেশনা যে এতোটা সারা পাবে তা ছিলো আমাদের কল্পনাতীত। সকলের থেকে এতো এতো অভিনন্দন ও শুভকামনা পেয়ে আমি খুবই আনন্দিত।'

ত্রিপুরা সুন্দরী রুপে ছিলেন তমা দেব পায়েল। তিনি বলেন, ‘পঞ্চম বারের মতো অনুষ্ঠিত হলো নৃত্যাঙ্গণের আয়োজনে মহালয়ার আগমনী অনুষ্ঠান। আমি ত্রিপুরা সুন্দরী রুপে নৃত্য পরিবেশন করেছি নৃত্যনাট্য রণরঙ্গে দেবাদৃতায়। আমার খুবই ভালো লেগেছে, সাজু দেব স্যারের উদ্যােগে এতো সুন্দর একটি অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হলো। আমরা খুব আনন্দিত।’

পার্বতী রুপে ছিলেন অন্বেষা দেবনাথ দোলা। তিনি বলেন, ‘পার্বতী হিন্দুধর্মের একজন প্রধান দেবী, যিনি শিবের স্ত্রী এবং শক্তি বা সৃষ্টির প্রতীক। আজ আমি পার্বতী চরিত্রে ছিলাম। আজকে ছিল আমাদের সাজু দেব স্যারের পরিচালনায় নৃত্যনাট্য রণরঙ্গে দেবাদৃতা। সবার আশীর্বাদে আমাদের প্রোগ্রাম অনেক ভালো হয়েছে। এভাবেই সবসময় পাশে থাকবেন।’

দুর্গা রুপে নৃত্য ও অভিনয় করেন টুম্পা দেব। তিনি বলেন, ‘মা দুর্গার আগমনী অনুষ্ঠান উপলক্ষে নৃত্যাঙ্গণের রণরঙ্গে দেবাদৃতায় আমি দশভুজা দুর্গার চরিত্র করেছি। প্রতিবছরই নৃত্যাঙ্গণ মহামায়া মা দুর্গার আগমন উপলক্ষে একেকটা থিম নিয়ে কাজ কাজ করে। সেখানে মা দুর্গার চরিত্র করতে পেরে আমার ভালো লেগেছে। জানি না কতটুকু তুলে ধরতে পেরেছি, তবে চেষ্টা করেছি।’

নৃত্যাঙ্গন-শ্রীমঙ্গল এর পরিচালক সাজু দেব বলেন, 'প্রতি বছরের ন্যায় এবারও নৃত্যাঙ্গণ আয়োজন করেছে একটি শারদ উৎসব। মহালয়াকে সামনে রেখে আমরা এটা প্রতিবছর করে থাকি, এবারও করেছি। এটি আমাদের পঞ্চম প্রযোজনা। দেবীর বিভিন্ন রুপের কাহিনী অবলম্বনে একটি নৃত্যনাট্য ছিল, যার নাম ‘রণরঙ্গে দেবাদৃতা’। পরিচালনায় ছিলাম আমি। অনুষ্ঠানটি সুন্দরভাবে আমরা পরিচালনা করেছি। দর্শকের সমাগম ছিল খুবই ভালো। কানায় কানায় ভরপুর ছিল দর্শক।’

এদিকে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনার পরপরই মঞ্চে নৃত্য পরিবেশন করেন ঢাকা থেকে আসা আগত অতিথি শিল্পী মুনমুন আহমেদ, সাইফুল ইসলাম সাকী, রাফিয়াত নাসির কথা। তাঁদের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনায় দর্শক মন্ত্রমুগ্ধ ছিলেন। এই মনোমুগ্ধকর মুহূর্তগুলোতে দর্শকরা শিল্পীদের প্রতিভায় এতটাই মুগ্ধ হন যে তারা পরিবেশনার সময় অন্য কিছু চিন্তা করতে পারেননি এবং করতালি দিয়ে তাদের পরিবেশনা উপভোগ করেন।

অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা রেওয়াজ পারফরমার্স স্কুলের প্রিন্সিপাল নৃত্য পরিচালক মুনমুন আহমেদ, ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অয়ন চৌধুরী, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী এস কে দাশ সুমন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নৃত্যকলা বিভাগের খণ্ডকালীন শিক্ষক নৃত্যশিল্পী সাইফুল ইসলাম সাকী, আনন্দলোক বসুন্ধরা -এর নৃত্য প্রশিক্ষক রাফিয়াত নাসির কথা প্রমুখ।

আই নিউজ

Green Tea
বিনোদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ