৭ মার্চের ভাষণ নিরস্ত্র বাঙালিকে সশস্ত্র বাঙালি বানিয়েছিল

আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বাঙালি একটি নিরস্ত্র জাতি ছিল, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের একটি ভাষণের মাধ্যমে নিরস্ত্র বাঙালি সশস্ত্র বাঙালিতে রূপান্তরিত হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে বলেছিলেন- তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থেকো, শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে। সেদিন নিরস্ত্র বাঙালি সশস্ত্র বাঙালিতে রূপান্তরিত হয়েছিল। 

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ এমন একটি ভাষণ ছিল, যার লাঠি আছে সে লাঠি নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিল, যার ঘরে দা আছে, লাইসেন্স করা বন্দুক আছে তা নিয়েই বেরিয়ে পড়েছিল। যে ভাষণ আজও যে কেউ শুনলে যেভাবে উদ্দীপ্ত হয়, গায়ের লোম যেভাবে খাড়া হয়ে যায়, এমন কোন নেতার ভাষণ বিশ্ব ইতিহাসে প্রকৃতপক্ষে কেউ দেননি।

শনিবার দুপুরে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর মতো এমন আবেদনময় ও উদ্দীপ্ত করার ভাষণ পৃথিবীর ইতিহাসে কেউ দেননি। ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধুর কোন নোট ছিল না, তিনি একনাগাড়ে বলে গেছেন। পৃথিবীতে অনেক ভাষণ আছে অনেক অর্থবহ। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তাঁর এ ভাষণে একটা নিরস্ত্র জনগোষ্ঠীকে সশস্ত্র জনবাহিনীতে রূপান্তর করে প্রকৃতপক্ষে স্বাধীনতা ঘোষণা করে দিয়েছিলেন।

বিএনপির ৭ মার্চ পালনের ঘোষণায় তাদের অভিনন্দন জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, এতদিন পর বিএনপির বোধোদয় হলো। মির্জা ফখরুল সাহেব বলেছেন- ৭ মার্চ ইতিহাস। এ ইতিহাসকে আমাদের স্বীকার করতে হবে। আমি ফখরুল সাহেবদের বলবো, বাকি যে ইতিহাস বিকৃত করেছিলেন, ভুল স্বীকার করে সেগুলোও স্বীকার করে নেন। তাহলে জাতি আপনাদের সাধুবাদ দেবে।

তিনি আরও বলেন, বিএনপির এখন নানা ধরনের মিছিল আছে। যেমন- দৌড় মিছিল, চোরাগোপ্তা মিছিল ও হঠাৎ মিছিল। গতকাল বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রিজভীও নাকি একটি চোরাগোপ্তা মশাল মিছিল করেছেন। তাদের বলব, এভাবে চোরাগোপ্তা মিছিল ও মানুষের ওপর চোরাগোপ্তা হামলা করে লাভ হবে না। সত্যিকার অর্থে জনগণের কাছে যদি যেতে চান তাহলে ইতিহাসকে মেনে নিন, যেভাবে ৭ মার্চকে মেনে নিয়েছেন। এতদিনের অপরাজনীতির জন্য জনগণের কাছে ক্ষমা চান।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি ও তাদের মিত্ররা মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর জন্য মায়াকান্না করছে। তার মৃত্যুতে আমি নিজেও ব্যথিত। কিন্তু মুশতাক আহমেদ কেন গ্রেফতার হয়েছিলেন? তিনি করোনা মহামারি নিয়ে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের পোস্ট দিচ্ছিলেন। একটি পেজ থেকে নানাভাবে গুজব ছড়াচ্ছিলেন, সে কারণে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। জামিন কেন পাননি, সেটি কোর্ট বলতে পারবেন, এ এখতিয়ার কোর্টের। তার মৃত্যুটা স্বাভাবিক, তদন্তে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এভাবে ছেলেধরা নিয়েও গুজব ছড়ানো হয়েছিল।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে যখন কোনো অর্জন হয়, আমরা যখন মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ পেলাম, তখন একটি পক্ষ লেগে গেল অন্য বিষয় নিয়ে মাঠ গরম করার জন্য। অথচ এটি নিয়ে একটি অভিনন্দনও তাদের মুখ থেকে আসেনি। এটি তাদের চিন্তার দৈন্য।

তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন একটি উন্নত রাষ্ট্র রচনা করার জন্য। সে স্বপ্ন পূরণ করে যেতে পারেননি বঙ্গবন্ধু। তিনি যদি বেঁচে থাকতেন আজ মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও সিঙ্গাপুরের আগেই বাংলাদেশ উন্নত দেশের কাতারে নাম লেখাতো। বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সাঁই সাঁই করে উন্নত দেশের কাতারে নাম লেখাতে এগিয়ে যাচ্ছে। স্বল্প আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর বছরে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে জাতিসংঘ ফাইনাল রিকমেন্ডেশন দিয়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এটি আমাদের দেশের জন্য সবচেয়ে বড় অর্জন। 

চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে অনুষ্ঠিত সভায় আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রাবন্ধিক ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক মো. শামসুল হক। উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এমএ সালামের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সম্পাদক দেবাশীষ পালিতের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মো. আতাউর রহমান, সহ-সভাপতি অধ্যাপক মো. মঈন উদ্দিন প্রমুখ। 

আইনিউজ/আরআর