Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, শনিবার   ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫,   আশ্বিন ১২ ১৪৩২

শরীয়তপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৭:২১, ২১ মার্চ ২০২১

শরীয়তপুরে জোড়া খুনের মামলা: ৬ জনের মৃত্যুদণ্ড

সংগৃহীত

সংগৃহীত

শরীয়তপুর জেলা জজ আদালতের সাবেক পিপি (সরকারি কৌঁসুলি) হাবীবুর রহমান ও তার ভাই মনির হোসেন হত্যার ঘটনায় করা মামলায় ছয়জনের ফাঁসি ও সাতজনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে।

রোববার (২১ মার্চ) দুপুর আড়াইটার দিকে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. শওকত হোসাইন এই রায় ঘোষণা করেন।

ফাঁসিতে দণ্ডিত হয়েছেন- শহীদ তালুকদার, সফিক কোতোয়াল, শহীদ কোতোয়াল, শাহীন কোতোয়াল, সলেমান সরদার ও মজিবুর তালুকদার। যাবজ্জীবনে দণ্ডিত হয়েছেন সরোয়ার হোসেন বাবুল তালুকদার, বাবুল খান, ডাবলু তালুকদার ও টোকাই রশিদ। তাদের সকলকে দশ হাজার টাকা করে জরিমানা ও অনাদায়ে ছয় মাস জেল দেয়া হয়েছে।

এছাড়া মন্টু তালুকদার, আসলাম সরদার, জাকির হোসেন মজনুর দুই বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

আদালত সূত্রে জানা যায়, গত ৯ মার্চ ও ১৮ মার্চ ছিল রায়ের দিন। কিন্তু রায় প্রস্তুত করতে না পারায় আজ জেলা ও দায়রা আদালতের বিচারক রায় ঘোষণা করেন।

মামলার এজাহার ও বাদীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরীয়তপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন জাজিরা উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মোবারক আলী সিকদার। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গ। তখন আওরঙ্গের পক্ষে অবস্থান নেয় স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ।

১ অক্টোবর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে জাজিরা উপজেলার কয়েকটি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত হয়। স্থগিত হওয়া সেই নির্বাচন নিয়ে ৫ অক্টোবর শহরে হাবীবুর রহমানের বাসভবনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে সভা চলছিল। সেখানে হামলা চালান আওরঙ্গ-সমর্থক যুবলীগের সাবেক নেতা সরোয়ার হোসেন বাবুল তালুকদারের লোকজন। তার ভাই মন্টু তালুকদার সেখানে গুলিবিদ্ধ হন। কিছুক্ষণ পর ওই বাসভবনে আবার হামলা হয়। তখন হাবীবুর রহমান ও তার ভাই মনির হোসেন খুন হন।

হাবীবুর রহমান তখন আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মনির হোসেন ছিলেন পৌরসভা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।

পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, হাবীবুর রহমানের স্ত্রী জিন্নাত রহমানের করা হত্যা মামলায় আওরঙ্গকে প্রধান আসামি করা হয়। মোট ৫৫ ব্যক্তিকে আসামি করেন তিনি।

পুলিশ তদন্ত শেষে আওরঙ্গের নাম বাদ দিয়ে ২০০৩ সালে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। মামলার বাদী তখন আদালতে নারাজি দেন। আদালত ওই আবেদন নামঞ্জুর করেন।

এরপর জিন্নাত রহমান উচ্চ আদালতে রিট করেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে জিতে সাংসদ হয়েছিলেন আওরঙ্গ। তিনি নানাভাবে প্রভাব বিস্তার শুরু করেন।

২০১৩ সালের ৩ আগস্ট সড়ক দুর্ঘটনায় আওরঙ্গ মারা যান। এরপর উচ্চ আদালত মামলাটি পুনরায় তদন্ত করে অভিযোগপত্র দাখিলের নির্দেশ দেন পুলিশকে।

পুলিশ ২০১৩ সালের অক্টোবরে আদালতে ৫৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে। আওরঙ্গ ছাড়াও ওই মামলার এজাহারভুক্ত আসামি শাহজাহান মাঝি ও স্বপন কোতোয়াল মৃত্যুবরণ করেছে।

শরীয়তপুর জেলা জজ আদালতের পিপি মীর্জা মো. হজরত আলী বলেন, দুই ঘণ্টা যুক্তিতর্কের পর এ রায় ঘোষণা করেন বিচারক। মামলাটি গত ২০২০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর প্রথম সাক্ষী গ্রহণ শুরু হয়। মামলায় বাদী পক্ষের ২৮ জন ও আসামি পক্ষের ২৫ জন সাক্ষী প্রদান করেন।

বর্তমানে ৫২ জন আসামির মধ্যে ২৬ জন জেল হাজতে, ১৩ জন জামিনে ও ১৩ জন পলাতক রয়েছেন। এ রায়ে বাদী পক্ষ সন্তুষ্ট হতে পারেননি। 

তবে, রায়ে অসন্তোষ জানিয়ে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে বলে জানিয়েছে আসামিপক্ষ ও আসামি পক্ষের আইনজীবী মাসুদুর রহমান।

হাবীবুর রহমানের ছেলে জজ কোর্টের এপিপি ও শরীয়তপুর পৌরসভার মেয়র পারভেজ রহমান জন বলেন, আমার বাবা ও চাচাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ রায়ে আমি সন্তুষ্ট হতে পারিনি।

আইনিউজ/এসডিপি 

Green Tea
সারাবাংলা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ