Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৯ জুলাই ২০২৫,   শ্রাবণ ১৪ ১৪৩২

সাজু মারছিয়াং শ্রীমঙ্গল

প্রকাশিত: ১৯:৪৬, ১৮ জুন ২০২৩

ট্রেন চলাচলে ঝুঁকি

লাউয়াছড়া বনের ঝুঁকিপূর্ণ ৪৩টি গাছ কাটার উদ্যোগ

৪৩টি ঝুঁকিপুর্ণ গাছ চিহ্নিত করেছে বন ও রেল বিভাগ। ছবি- সাজু মারছিয়াং

৪৩টি ঝুঁকিপুর্ণ গাছ চিহ্নিত করেছে বন ও রেল বিভাগ। ছবি- সাজু মারছিয়াং

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভিতর দিয়ে যাওয়া রেললাইনের পাশের ৪৩টি ঝুঁকিপুর্ণ গাছ চিহ্নিত করেছে বন ও রেল বিভাগ। ঝড়-তুফান সহ যেকোন সময়ে গাছগুলো রেললাইনে পড়ে রেল দুর্ঘটনার আশংকা জানিয়ে বন বিভাগকে গাছগুলো কাটার অনুরোধ জানিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। তবে সংরক্ষিত বনে কোন অজুহাত দেখিয়ে গাছ না কাটার দাবী জানিয়েছে পরিবেশ কর্মীরা।

এর আগে গেল মে মাসের ২০ তারিখ ভোরে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভিতরে ট্রেনের সামনে গাছ পড়ে ট্রেনের ইঞ্জিন ও দুটি বগি লাইনচ্যুত হয়। পরে প্রায় ১৫ ঘন্টা পর সিলেটের সাথে সারাদেশের রেল যোগাযোগ চালু হয়। এরপরই সম্প্রতি শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ রেলপথের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভিতর দিয়ে যাওয়া রেললাইনের পাশ থেকে ঝুঁকিপুর্ন গাছ চিহ্নিত করতে বনবিভাগ ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ লাউয়াছড়া পরিদর্শন করে।

সরেজমিনে শনিবার (১৭ জুন) লাউয়াছড়া উদ্যানের ভিতর দিয়ে যাওয়া রেললাইন ধরে হেঁটে দেখা গেছে, ছোট বড় অনেকগুলো গাছের গুড়ায় মাটি সরে গেছে। অনেক গাছের শিকড় বের হয়ে এসেছে। কয়েকটি গাছ রেললাইনের দিকে হেলে পড়েছে। তবে প্রতিটি ঝুকিপূর্ণ বড় গাছের সাথে ছোট বড় অনেক গাছ রয়েছে। এই বড় গাছ কাটতে গিয়ে এগুলোর ক্ষতি হবার সম্ভাবনা রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ গাছগুলোর তালিকার মধ্যে চিকরাশি, চাপালিশ, বনাকসহ বেশ কয়েক প্রজাতির গাছ রয়েছে।

ঝুঁকিপূর্ণ গাছগুলোর তালিকার মধ্যে চিকরাশি, চাপালিশ, বনাকসহ বেশ কয়েক প্রজাতির গাছ রয়েছে। ছবি- সাজু মারছিং 


মৌলভীবাজার বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) শ্যামল কুমার মিত্র বলেন, রেলওয়ে ও বন বিভাগের চিহ্নিত করা গাছগুলো কাটার জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ আমাদের জানিয়েছে। আমরা প্রাথমিক তদন্তে ৪৩ টি গাছ পেয়েছি। এখন কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অথবা এসিল্যান্ড , রেলওয়ের প্রকৌশলী ও বন বিভাগের আমি (এসিএফ) অথবা রেঞ্জার মিলে ফাইনালি একটা তদন্ত করে আমাদের বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকে পাঠাবো। তিনি বলেন, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে অনেক বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীর বসবাস। তাই শুধু গাছ কাটলেই হবে না, প্রতিটি গাছ আসলেই ঝুঁকিপূর্ণ কি না, গাছের এই প্রজাতিটি মহাবিপন্ন কি না সেটা দেখতে হবে। আমরাও চাই না লাইয়াছড়ার ভিতর থেকে কোন গাছ কাটা হোক।

বাংলাদেশ রেলওয়ের গণপূর্ত বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী ফিরোজ গুলজার গতকাল শনিবার বলেন, লাউয়াছড়ায় কিছুদিন আগে রেল দুর্ঘটনার পর রেলওয়ে ও বন বিভাগ যৌথভাবে লাউয়াছড়ার ভিতর দিয়ে যাওয়া রেল লাইনের দুই পাশের ঝুঁকিপূর্ণ গাছগুলো দেখে দেখে ৪৩টি গাছ মার্ক করে এসেছে। এই গাছগুলো খুবই ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। আমরা রেলওয়ে বিভাগ থেকে বন বিভাগকে অই গাছগুলো কাটার জন্য চিঠি লিখেছি। গাছগুলো যেকোন সময় চলন্ত ট্রেনে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এখন ঝড় তোফানের সময় বনের ভিতর দিয়ে খুবই সাবধানে ট্রেন চালাতে হচ্ছে।

তবে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে গাছ কাটার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন স্থানীয় পরিবেশকর্মীরা। তারা বলছেন রেল লাইনের জন্য গাছ কাটা প্রকৃত সমাধান নয়; লাউয়াছড়ার মতো একটি বনাঞ্চলের মধ্য দিয়ে রেল লাইন থাকাটাই একটি সমস্যা বলে দাবী তাদের। 

লাউয়াছড়া জীব বৈচিত্র রক্ষা আন্দোলনের আহবায়ক জলি পাল বলেন, আমরা লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভিতর থেকে রেল ও সড়ক পথ সরানোর দাবীতে আন্দোলন করে আসছি। রেল ও সড়ক পথটি লাউয়াছড়ার ঠিক মাঝামাঝি পড়েছে। একটা সংরক্ষিত বন থেকে এগুলো সরানোর পরিবর্তে বার বার গাছ কাটার সীদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, ২০১৬ সালে লাইয়াছড়ার ২৫ হাজার গাছ কাটার উদ্যোগ নিয়েছিলো সরকার। পরে আন্দোলনের মুখে সেই সীদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। এই ৪৩ টি গাছ কাটতে গিয়ে বনের অনেক গাছ কাটা পড়বে বলে আমরা মনে করি। রেলওয়ে ও বন বিভাগের এই সীদ্ধান্ত আমরা প্রত্যাখ্যান করি। এবং গাছ কাটা বন্ধের দাবী জানাই।

আই নিউজ/এইচএ 

Green Tea
সিলেট বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ