নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট: ২২:৩৪, ১৫ জুন ২০২১
মৌলভীবাজারের খাসিয়া পুঞ্জিগুলো পরিদর্শন করে নাগরিক প্রতিনিধিদলের সুপারিশ
সাম্প্রতিক সময়ে মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা ও কুলাউড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী আদিবাসী পানপুঞ্জি গুলোতে বহিরাগতরা প্রবেশ করে জবরদখল করেছে বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। নির্বিচারে ধ্বংস করেছে পানবাগান এবং কেটে ফেলেছে বহু দেশি গাছ। এমন পরিস্থিতিতে রাজধানী ঢাকা থেকে মানবাধিকারকর্মী, পরিবেশকর্মী, শিক্ষক, আদিবাসী সংগঠক, গবেষক, সাংবাদিকদের এক নাগরিক প্রতিনিধিদল গত ৭-৮ জুন ২০২১ ক্ষতিগ্রস্থ পুঞ্জিগুলো পরিদর্শন করে।
এই পরিদর্শনে দেখা অভিজ্ঞতা সমূহ নিয়ে মঙ্গলবার (১৫ জুন) এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। পরিদর্শক দলের অন্যতম ও নাগরিক উদ্যোগের নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে উক্ত সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন প্রতিনিধি দলের সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. জোবাইদা নাসরীন।
প্রতিনিধি দলের সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌসের সঞ্চালনায় উক্ত সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য ও প্রচার সম্পাদক দীপায়ন খীসা, বাপা’র কেন্দ্রীয় সদস্য– আমিনুর রসুল। এছাড়া সংযুক্ত ছিলেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, গবেষক ও লেখক পাভেল পার্থ এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা।
মূল বক্তব্যে জোবাইদা নাসরীন বলেন, মৌলভীবাজার, সিলেট ও হবিগঞ্জের খাসি ও মান্দিরা ঐতিহ্যগতভাবে বনবিভাগ, চা-বাগান এবং কিছু খাসজমি এলাকায় বসবাস করেন। খাসিদের বিশেষ পানজুম স্থানীয় বাস্তুতন্ত্রে এক সবুজ আবহ তৈরি করে। কেবল জীবনজীবিকা নয় এই পানজুম ব্যবস্থাপনা পরিবেশ সংরক্ষণে রাখছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। সরেজমিনে আমরা দেখেছি, পানপুঞ্জিগুলো তুলনামূলকভাবে উদ্ভিদপ্রজাতিতে বেশ বৈচিত্র্যময় এবং সেখানকার প্রাকৃতিক ছড়া আবর্জনামুক্ত। জানতে পেরেছি পরিবেশ পরিচ্ছন্নতার শিক্ষা আদিবাসী শিশুরা ছোটবেলা থেকেই শিখে থাকে। পানপুঞ্জির পরিবেশবান্ধব চাষপদ্ধতিকে গুরুত্ব দিয়ে সংরক্ষণ করা জরুরি এবং এক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় প্রণোদনা ও বরাদ্দও জরুরি।
বড়লেখায় খাসিয়াপুঞ্জি পরিদর্শনে নাগরিক প্রতিনিধিদল
এছাড়া মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক ‘পুঞ্জিবাসী আদিবাসী জীবনজীবিকার সুরক্ষাই প্রথম অগ্রাধিকার’ বলে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তার বরাত দিয়ে জোবাইদা নাসরীন আরো বলেন, আমরা প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষের আশ্বাস ও তৎপরতার ওপর শতভাগ আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে চাই। আমরা দেখতে চাই রাষ্ট্র রাজনৈতিকভাবে পানপুঞ্জির ভূমি সংকটের স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত করেছে। চা-বাগান কর্তৃপক্ষ, চা-বোর্ড, ভূমি মন্ত্রণালয়, বনবিভাগ, আদিবাসী সংগঠন, গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজ সকলের মতামত ও পরামর্শেই এই সংকটের গ্রহণযোগ্য সমাধান সম্ভব বলেও মনে করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, দেশের ভিন্ন সত্তার পরিচয়ে বসবাস করা জাতিসত্তার উপর এই ধরণের নিপীড়ন বারবার হতে পারে না। এগুলো সিস্টেমেটিক এটেম্প। ২০০৮, ২০১৪ সালের ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের মেনিফেস্তোতে উল্লেখ আছে যে আদিবাসীদের ভূমি অধিকারের স্বীকৃতি দেওয়া হবে। এই পলিসির দ্রুত পরিবর্তন হবে বলে আমরা মনে করি না। চা বাগানের ভিতরে যত আদিবাসী ভূমি লীজ হিসাবে নেয়া হয়েছে সেগুলোকে লীজের আওতা বহির্ভূত করে দেয়ার আহ্বানও জানান তিনি।
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারর সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং মৌলভীবাজারের প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ভূমি ও বন আইন দিয়ে আদিবাসীদের ভূমি সমস্যা সমাধান করা যাবে না। এটার জন্য নতুন ভাবে ভূমি ও বন-নীতি করা লাগবে। সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন করতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত এই কমিশন গঠন করা না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত সমতলের আদিবাসীদের ‘স্ব স্ব জমি থেকে উচ্ছেদ করা যাবে না মর্মে’ আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলের প্রশাসনকে আইন অথবা ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে একটি ‘গভর্মেন্ট অর্ডার’ পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। যদিনা আমরা এই আদিবাসী ও নিপীড়িতদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই আরো অনেক বেশী মানবিক হতে হবে বলেও মনে করেন এই আদিবাসী নেতা।
পাভেল পার্থ বলেন, গত ৩৫ বছরে চা বাগান ও পান পুঞ্জি নিয়ে যে যতগুলো খবর বেরিয়েছে ততগুলো বিশ্লেষণ করে দেখেছি যে, সাংবাদিক বন্ধুরা কেবলমাত্র ঐ অঞ্চলে কোনো গাছ কাটা বা জুম দখল করার ঘটনা ঘটলে পরে সাংবাদিকরা সামনে নিয়ে আসেন। কিন্তু এই অঞ্চলের আদিবাসীদের পানজুম যে পরিবেশ বান্ধব তা দেখানোর চেষ্টা করেছে না। তিনি পান পুঞ্জিগুলোতে খাসি আদিবাসীরা যে উৎপাদন ব্যবস্থা টিকিয়ে রেখেছে তার স্বীকৃতিরও দাবী করেন। এজন্য এ বিষয়ে অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সেখানে যাওয়ার আহ্বানও জানান।
সংবাদ সম্মেলনের সভাপতি ও নাগরিক উদ্যোগের নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন বলেন, মৌলভীবাজারে ৬৫ টি খাসি পুঞ্জি আছে। অনেক চা বাগানের শ্রমিক আছে। এদের নিয়ে যথেষ্ট তথ্য ও গবেষণা নেই। যদি তথ্য না থাকে তাহলে আমাদের আগামী ৩০ সাল নাগাদ যে লক্ষমাত্রা (এসডিজি) আছে সেটা কীভাবে বাস্তবায়ন করবো। যাদেরকে আমরা চিহ্নিতই না করি তাহলে তাদেরকে কীভাবে আমরা উন্নয়নের ধারায় নিযে আসবো। বাংলাদেশে এই আদিবাসী ও মাইনোরিটিদের জন্য কোনো ধরণের কমিশন ও পলিসি নেই। যার ফলে বিগত ৫০ বছরে তাদেরকে আমরা একটা ‘ভালনারেবল’ পরিস্থিতির মধ্যে রেখে দিয়েছি। এই আদিবাসী ও মাইনোরিটিদের নিয়ে একটা ভালো গবেষণা করারও দাবী করেন তিনি।
মৌলভীবাজারের খাসি ও চা শ্রমিকরা যে পরিবেশে আছে সেটা আধুনিক দাসত্ব রূপ হিসাবে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, সরকারের এবারের (২০১৮ সালের) মেনিফেস্তোতে রয়েছে মাইনোরিটি মন্ত্রণালয় হবে। কিন্তু মাইনোরিটি মন্ত্রণালয় না হোক অন্তত মাইনোরিটি কমিশন গঠন করতে হবে। এই আদিবাসীদের প্রতি মানবিক নয়, ‘সংবিধান যেখানে সবাইকে সমান হিসাবে’ নিশ্চয়তা দিয়েছে সেখানে ‘মানবিকভাবে দেখার’ কোনো প্রশ্ন ওঠে না। এটা সবার অধিকার বলেও মনে করেন তিনি। এছাড়া উক্ত অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন বাপা’র কেন্দ্রীয় সদস্য আমিনুর রসুল।
নাগরিক প্রতিনিধিদলের সুপারিশ
উক্ত সংবাদ সম্মেলনে ৬ দফা সুপারিশনামা প্রস্তাব করা হয়। প্রস্তাবনা সমূহ হলো-
- পানপুঞ্জি জবরদখল, গাছ কাটা ও পানজুম ধ্বংসের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের আইন ও বিচারের আওতায় আনতে হবে।
- ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে সুনির্দিষ্ট ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে।
- পানপুঞ্জির নাগিরকদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বাসস্থানসহ মৌলিক নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
- পানপুঞ্জির নাগরিকদের জীবন ও জীবিকার সামগ্রিক নিরাপত্তা বিধান করতে হবে।
- পানপুঞ্জি গুলোর গাছকাটা, উচ্ছেদ ও জবরদখল এগুলো সবই ধারাবাহিক নিপীড়নের ফলাফল। এক্ষেত্রে এসব অঞ্চলে ভূমি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ভিন্নভাবে ভাবা জরুরি। পানপুঞ্জির জায়গা গুলো চাবাগান থেকে ইজারা বন্দোবস্তী বাতিল করে পুঞ্জিবাসীদের জন্য বন্দোবস্তী দেয়া যেতে পারে।
- চাবাগান সম্প্রসারণের নামে কোনো পানপুঞ্জির গাছ কাটা যাবে না এবং পুঞ্জির জায়গা ও পানজুম দখল করা যাবে না।
আইনিউজ/সাজু মারছিয়াং /এসডি
- মেয়ের বাড়িতে ইফতার: সিলেটি প্রথার বিলুপ্তি চায় নতুন প্রজন্ম
- অবশেষে ক্লাস করার অনুমতি পেল শ্রীমঙ্গলের শিশু শিক্ষার্থী নাঈম
- দেশের চতুর্থ ধনী বিভাগ সিলেট
- শ্রীমঙ্গল টু কাতারে গড়ে তুলেছেন শক্তিশালি নেটওয়ার্ক
মৌলভীবাজারে অনলাইন জুয়ায় রাতারাতি কোটিপতি সাগর - বিজ্ঞাপন
মৌলভীবাজারে হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসায় লাইফ লাইন হাসপাতাল (ভিডিও) - মৌলভীবাজারে ট্যুরিস্ট বাসের উদ্বোধন বৃহস্পতিবার
- ১ ঘন্টার জন্য মৌলভীবাজারে শিশু কর্মকর্তা হলেন তুলনা ধর তুষ্টি
- মৌলভীবাজার শহরে একদিনে ৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত
- বন্ধ থাকবে মৌলভীবাজারের ‘এমবি’
- করোনা জয় করে সুস্থ হয়েছেন মৌলভীবাজারের ৩ চিকিৎসক